আহমেদ শরীফ শুভ
জন্ম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে। পৈত্রিক নিবাস কুমিল্লা। একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, চিকিৎসক, সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি একজন অস্টেলিয় প্রবাসী। প্রকাশিত গ্রন্থ: রাজকন্যার আহ্নিক, স্বপ্নে দেখি তোমার মুখ, বিহঙ্গ উড়িয়ে দাও, তৃষ্ণা ও জলে।
আহমেদ শরীফ শুভ

অস্ত্র

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

ক্যাপ্টেন সরফরাজ ইশারায় সেন্ট্রি দু’জনকে সরে যেতে বলে। হুইস্কির বোতল আর সাবমেশিন গান দু’টোই টেবিল থেকে নামিয়ে পায়ের কাছে রাখে। বেশি ভয় না দেখানোই ভালো। অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে— ভয় দেখিয়ে ভোগ করা গেলেও উপভোগে ঘাটতি থেকে যায়। তা ছাড়া এই মেয়েটি বশ মেনেছে বলেই মনে হচ্ছে। বাড়তি ভয় দেখিয়ে তাকে আড়ষ্ট করে উপভোগটা তাই কমাতে চায় না। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পরিনতি কি তা তো ক্যাম্পে আটক সব মেয়েই জানে।

ওদের যেদিন ধরে আনে সেদিন সরফরাজ তার অধীনস্ত সৈন্যদের ডেকে হাতের সাবমেশিন গানটি দেখিয়ে বলেছিল— ‘আমরা শুধু এই এক অস্ত্র নিয়েই যুদ্ধ করছি না। আমাদের আরো একটি অস্ত্র আছে।’ তারপর প্যান্টের জীপারটা একটু টেনে ধরে অশ্লীল একটা ইঙ্গিত করে বলেছে— ‘এটা আমাদের আরেকটা অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে আমরা এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সাচ্চা মুসলমান পয়দা করবো’।

বাসন্তী হিন্দু— এটা জানতে পেরে সরফরাজের চোখে মুখে বিদ্যুতের ঝলক ফুটেছিল। আজ সাবমেশিন গানের দরকার না হলেও অন্য অস্ত্রটা বেশ আয়েশ করেই ব্যবহার করা যাবে। মালাউনের ফ্যাকটরিতে সাচ্চা মুসলমান পয়দা হবে। হা হা হা…।

বাসন্তী বশ মানার ভান করেছে আগেই। তবে জানে, তড়িঘড়ি করে সুযোগ দিয়ে দিলে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না। শুয়োরের বাচ্চাটাকে খেলিয়ে নিতে হবে। মনে মনে বলে, ‘তোর কাছে অস্ত্র দুইটা, আমার আছে তিনটা’। হ্যাঁ, তিনটিই। প্রথম অস্ত্র অভিনয়; দ্বিতীয় অস্ত্র শরীর, অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার না করলে যা কিনা কেবল ওই বেজন্মাদের ভোগ্যপণ্য হিসাবেই ব্যবহার হবে। শরীরটা তো ওরা ভোগ করবেই। এই বিসর্জন বিফলে যাওয়ার চেয়ে কাজে লাগানোই উত্তম। আর তৃতীয় অস্ত্র একটি লম্বা পেরেক। যে পেরেকটি সে পেটিকোটের ফিতার খাপের ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে এসেছে।

সে ক্যাপ্টেন সরফরাজকে সিডিউস করার অভিনয় করে। হুইস্কি ঢেলে দেয় এক গ্লাসের পর আরেক গ্লাস। তাতে পানি মেশানোর কথা সরফরাজের মনে থাকে না। এর মধ্যেই আধা অচেতন অবস্থায় বাসন্তীকে একবার খুবলে নেয়। পেটিকোটের ফিতার খাপে লুকিয়ে রাখা লম্বা পেরেকটি অবশ্য টের পায় না। রতিক্লান্ত এবং মাদকাচ্ছন্ন সরফরাজ নাক ডাকা শুরু করে এক সময়। বাসন্তী কান পেতে বাইরের পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে। সেন্ট্রি দু’জনের কোন সাড়া শব্দ নেই। বেটারা ঘুমাচ্ছে নির্ঘাত। দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ করা আছে। সে খুব সাবধানে পেটিকোটের ফিতার খাপ থেকে পেরেকটি বের করে। তারপর মেঝে থেকে সাবমেশিন গানটি নিঃশব্দে তুলে নেয়। এরপর বাঁ হাত দিয়ে পেরেকটি ধরে ডান হাতে থাকা সাবমেশিন গান দিয়ে আঘাত করে তা সজোরে সরফরাজের বুকের বাঁ দিকে ঠুকে দেয়। প্রশিক্ষিত নার্স হিসেবে বাসন্তীর জানা আছে বুকের কোথায় পেরেক ঢুকালে সেটি হৃদপিণ্ড ফুটো করে দেবে।


 

ট্যাগসমূহ

অগ্নিফুল সংখ্যা অণুগল্প অনুবাদ ইতিহাস ঈদ সংখ্যা ২০২২ উপন্যাস সংক্ষেপ একালের গল্প কবিতা কলকাতার দিনগুলি কাজী নজরুল ইসলাম কাজী মহম্মদ আশরাফ গণঅভ্যুত্থান সংখ্যা গল্প চিরায়ত গল্প ছোটগল্প জসীমউদ্দিন জীবনানন্দ দাশ জীবনের গল্প নীতিগল্প পর্যালোচনা পলাশ মজুমদার পিন্টু রহমান প্রবন্ধ প্রেমের গল্প ফেলুদা সিরিজ বই বিখ্যাতদের গল্প বুক রিভিউ ব্যক্তিত্ব ভ্রমণ ভ্রমণ ডায়েরি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মাহির তাজওয়ার মিনহাজ শোভন মুভি রিভিউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপকথা শিশিরভেজা গল্প সংখ্যা শিশু-কিশোর গল্প সমকালীন কবিতা সমকালীন গল্প সাক্ষাৎকার সিনেমা সুকান্ত ভট্টাচার্য হাসির গল্প
magnifiercrossmenu