সর্বকালের সেরা ১০ বাংলা সিনেমা!

 


ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেন একজন বাঙালি ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্র তারপর দশকের পর দশক পার করেছে। বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র এক নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে– যার কারণ অন্বেষণে অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধা নাজেহাল। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রে এমন কিছু সিনেমা আছে যেগুলো থেকে তারা রসদ সংগ্রহ করতে পারে– যেগুলো দেখে এখনো বাঙালি দর্শকেরা বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিনের আশা করে। এমনই চলচ্চিত্রের একটি তালিকা আজকে দর্পণে প্রকাশিত হলো। এগুলোকে আপনার সর্বকালের সেরা বাংলা চলচ্চিত্র মনে হতেও পারে আবার নাও পারে। তবে আমাদের দৃষ্টিতে এই চলচ্চিত্রগুলো বাংলা চলচ্চিত্রের একেকটি রত্ন। গুরুত্ব বিবেচনায় এই দশকের দুটি চলচ্চিত্রকে এ তালিকায় রাখা হয়েছে।


১০। ভূতের ভবিষ্যৎ (২০১২)

পোস্টার: ভূতের ভবিষ্যৎ

উপভোগ্য এক সিনেমা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’। ভূতেদের নিয়ে সিনেমা করে দর্শকদের হৃদয় অর্জন করা সহজ কাজ নয়। তবে নবীন পরিচালক অনীক দত্তের মাথায় একটা অসাধারণ কাহিনি খেলে যায়, যেটার ফলাফল– ভূতের ভবিষ্যৎ। চরম দর্শকপ্রিয় এবং সমালোচকদের সুদৃষ্টি পাওয়া এই সিনেমাটির তেজ যে সহজে মিইয়ে যাবে না– তা স্পষ্ট করেই বলা যায়।

৯। Shadows of time (২০০৪)

পোস্টার: Shadows of time

অনেকে ভাবছেন, বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনায় এই ইংরেজি নামের সিনেমাটি আসছে কেন? আসলে যারা বাংলা সিনেমার ভক্ত তারা অনেকেই এই সিনেমা বানানোর গল্পটা জেনে থাকতে পারেন। জার্মান পরিচালক ফ্লোরিয়ান গ্যালেনবার্গার তার এক্সপেরিমেন্টাল কাজের জন্য এই সিনেমাটি বানিয়েছেন। বাংলা ভাষায় নির্মিত এই অমর প্রেম কাহিনি এক মহাকাব্যের সমতুল্য। এই চলচ্চিত্রটিকে সর্বকালের সেরা বাংলা রোমান্টিক সিনেমা বললেও অত্যুক্তি হবে না। অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও মহাকাব্যের মতো কাহিনির বিস্তার বিবেচনায় এই সিনেমাটি চলে এসেছে আমাদের তালিকায়।

৮। আয়নাবাজি (২০১৬)

পোস্টার: আয়নাবাজি

আয়নাবাজি এক ভেলকিবাজির গল্প। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর থ্রিলারধর্মী এই সিনেমাটি নিয়ে সকলের আগ্রহের কারণ চঞ্চল চৌধুরীর অসাধারণ অভিনয় এবং প্রেক্ষাপট বৈচিত্র্য। সিনেমাটির নায়ক মূলত অন্যের জন্য জেল খেটে অর্থ আয় করা একজন– যাকে ঘিরেই নানা রহস্য দানা বাঁধতে থাকে; সেই রহস্য উন্মোচনে দর্শক তৃপ্ত হয়।

৭। মাটির ময়না (২০০২)

পোস্টার: মাটির ময়না

পরিচালক তারেক মাসুদের ছোটবেলার মাদ্রাসা জীবন, ধর্মীয় বিষয়াদি ও গণঅভ্যুত্থান বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বানানো চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে যায়। বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য, বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনধারা, একাত্তর পূর্ববর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট সিনেমাটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। তাই ভিন্ন স্বাদের বিষয়বস্তুর উপস্থাপন দেখতে যারা আগ্রহী তারা অবশ্যই মাটির ময়না উপভোগ করতে ভুলবেন না।

৬। নায়ক (১৯৬৬)

পোস্টার: নায়ক

নায়ক মানেই উত্তম কুমারের সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে রিং বানানো অথবা টাকার রাজ্যে দন্ডায়মান উত্তম কুমারের এক আশ্চর্যজনক দৃশ্য। একজন নায়কের একটি ট্রেন যাত্রা নানাভাবে তার ব্যক্তিগত জীবনের রহস্য উন্মোচন করতে থাকে। সাথে সাথে প্রকাশ পেতে থাকে সুপারস্টার জীবনের নানা কৃত্রিমতা ও দহন। সিনেমাটিতে ফ্লাশব্যাকের এক অন্তর্জাল সৃষ্টি করা হয়েছে। কাহিনিটি পুরোটা অনুধাবন করতে হলে দর্শককে কয়েকবার সিনেমাটি দেখতে হতে পারে। সত্যজিতের এই মাস্টারপিসকে অনেকে অনেক সময় সত্যজিতের সেরা কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শুধুমাত্র ট্রেনের মধ্যে অনেক গোয়েন্দা সিনেমা করতে দেখা যায়– কিন্তু এমন অভূতপূর্ব ক্লাসিক জীবন নির্ভর কাহিনি শুধুমাত্র সত্যজিতের স্ক্রিপ্টেই আসা সম্ভব হয়েছে।

৫। পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩)

পোস্টার: পদ্মা নদীর মাঝি

কুবের, কপিলার আর হোসেন মিয়ার গল্প নিয়েই পদ্মা নদীর মাঝি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাসের সিনেম্যাটিক রূপটি দিয়েছেন গৌতম ঘোষ। বাঙালিদের কাছে পদ্মা নদীর মাঝির কাহিনি খুবই পরিচিত। পদ্মার তীরের মানুষের জীবন, প্রেম, দুঃখ-দুর্দশা– এসব নিয়েই এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত। নিপুণ অভিনয়, ঘটনার ঘনঘটা, রোমান্টিক আবহ এই সিনেমাটিকে দর্শকদের নিকট এক আকর্ষণের বস্তুতে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছে।

৪। মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)

পোস্টার: মেঘে ঢাকা তারা

এটি ঋত্বিক ঘটকের মাস্টারপিস। অনেকটা মেলোড্রামা ধাঁচের চলচ্চিত্রটি দর্শকদের হৃদয় হরণ করে নেয় তার কাহিনির মোহে। দেশভাগের পর কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া নীতা ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে এক ক্ল্যাসিক্যাল কাহিনির বর্ণনা সিনেমাটিতে পাওয়া যায়। যে একবার সিনেমাটি দেখেছে, তার হৃদয় থেকে সিনেমাটির কাহিনি কখনো মুছে যাবে না।

৩। জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)

পোস্টার: জীবন থেকে নেয়া

সিনেম্যাটিক মেটাফোর বলতে যা বোঝায় তা সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে খুব কম বাংলা সিনেমায়। এদিক দিয়ে ধরলে জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমা আর নেই। একটি রাষ্ট্রের সংগ্রামী মনোভাব, প্রতিবাদের ভাষা যেভাবে জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে– তা চমকপ্রদ। যে কোনও দর্শক একবার দেখেই চলচ্চিত্রটির প্রেমে পড়ে যাবে। গান, অভিনয়, সিনেম্যাটোগ্রাফি সব দিক দিয়েই সত্তরের দশকের এই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। এখনও দর্শকরা বারবার জহির রায়হানের সিনেমাটি উপভোগ করে দেশপ্রেমে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে, অথবা সিনেম্যাটিক মেটাফোরের তত্ত্ব বুঝতে।

২। পথের পাঁচালী (১৯৫৫)

পোস্টার: পথের পাঁচালী

বিদেশি ক্যাটাগরিতে অস্কারপ্রাপ্ত প্রথম এবং একমাত্র বাংলা চলচ্চিত্র। এই মাস্টারপিস নিয়ে বেশি আলোচনার দরকার নেই। দেশ-বিদেশের নানা আলোচক সমালোচক চলচ্চিত্রটিকে তাদের তালিকায় স্থান দিয়ে থাকেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় এ সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন। জীবনবোধ এবং বাংলার গ্রামীণ প্রকৃতি ও সমাজ এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে সফলভাবে। আবেগ, অনুভূতি ও জীবনের সন্নিবেশে নির্মিত এমন চলচ্চিত্র বিশ্ব চলচ্চিত্রে খুব কমই আছে।

১। হীরক রাজার দেশে (১৯৮০)

পোস্টার: হীরক রাজার দেশে

অনেকে মনে করে থাকেন, বাংলায় যত সিনেমা বেরিয়েছে তার মধ্যে সেরা পথের পাঁচালী। অবশ্যই পথের পাঁচালী সেরা বাংলা সিনেমা হবার দাবিদার। কিন্তু আমাদের মতে, দর্শকদের হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রটি সবার প্রথমে দেখা প্রয়োজন। একটি রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যেমন চলচ্চিত্রটিতে উঠে এসেছে, তেমনি ক্ষুরধার সংলাপ দর্শকদের তৃষ্ণা মেটাতে সমর্থ হয়েছে। বিজ্ঞানের ব্যবহার আমাদের মনে করিয়ে দেয় সত্যজিতের চিন্তাধারা সেই সময়ে কত অগ্রগামী ছিল। এছাড়া চলচ্চিত্রের জট খোলার মূলমন্ত্র গোপী গাইন ও বাঘা বাইনের জাদুকরী ক্ষমতা ও গান আমাদেরকে অবাক করে দেয়। বাংলা চলচ্চিত্রের আর কোথাও এমন সফল সন্নিবেশ ঘটেছে বলে পাওয়া যায় না।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
গল্প

ঝুম্পা লাহিড়ীর গল্প: দেয়াল

গল্পটি ঝুম্পা লাহিড়ীর একটি ইতালিয়ান গল্পের ইংরেজি অনুবাদ “The Boundary” থেকে অনূদিত। গল্পটি “The New Yorker”-ম্যাগাজিনে কথাসাহিত্য বিভাগে ২০১৮ সালের

মাগো, ওরা বলে

‘কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর, আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি— খোকা তুই কবে

গল্প

ছিত্তম

      বিলকিছের  কথা আর জিকাইয়া কী করবেন দাদা, বিলকিছ মরছে কপালের দোষে। শুধু বিলকিছ না দাদা, বিলকিছের মতো

গল্প

জেলখানার পরী

জেলখানার মানুষগুলো বন্দী। এর মধ্যেকার সমস্ত ঘাস, লতা-পাতা, গাছ, গাছে বসা পাখিকেও বন্দী মনে হচ্ছে বাহারের। পাখিগুলোর যদিও ডানা আছে