সর্বকালের সেরা ১০ হলিউড সিনেমা


হলিউড মানে চলচ্চিত্রের এক মহাসমুদ্র, সেখান থেকে ছেঁকে ১০টি সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচন করা কঠিন কাজ। বিভিন্ন দর্শকের ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে, আমাদের এই ১০টি চলচ্চিত্র নির্বাচন করার কারণ হচ্ছে, এই ১০টি চলচ্চিত্রের প্রভাব এতটাই বেশি যে এগুলোর মাল-মসলা পরবর্তীতে হলিউডের নানা চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সিনেমাগুলো চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে যেমনিভাবে নাড়া দিয়েছে, তেমনি দর্শকরা এই চলচ্চিত্রগুলো বুকে পুষে নিয়ে বেড়াচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এর মধ্যে কতগুলো সিনেমা কালোত্তীর্ণ; কতগুলো কালোত্তীর্ণ হবার অপেক্ষায়।


১০। এপোক্লিপস নাও (Apocalypse Now 1979)


ফ্রান্সিস কোপলার মাস্টারপিস। ধ্বংসযঙ্গ দৃশ্যের দৃশ্যায়নে অভিনবত্ব আনয়নে এই চলচ্চিত্রের নাম-ডাক আকাশচুম্বী। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতার উপর সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। সবকিছু ছাড়িয়ে চলচ্চিত্রটিতে মার্লন ব্রান্ডোর অভিনয় সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এপোক্লিপস নাও এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্র জগতে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। আগামী কয়েক দশকেও মহাকাব্যিক এই চলচ্চিত্রের আবেদন হ্রাস পাবে বলে মনে হয় না।


০৯। দ্যা উইজার্ড অব দ্যা ওয (The Wizard of the OZ 1939)


কে না জানে চলচ্চিত্রটির কাহিনি। হ্যা, দ্যা উইজার্ড অব দ্যা ওয-এর কাহিনি সকলের জানা। তবে ১৯৩৯ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে রয়েছে এক দারুণ ফ্লেভার যা দর্শকদের বারবার এই সিনেমাটির কাছে টেনে নিয়ে যায়। অসাধারণ স্ক্রিপ্ট, অভিনয় সবকিছুই এত দারুণ যে– মুক্তির এত বছর পরেও এই সিনেমাটির কদর আজও কমে যায়নি। দর্শকদের মন ও রুচি দিনে দিনে পরিবর্তিত হলেও গীতিকাব্যময় এই চলচ্চিত্রটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেউ কী সেই সময় জানতো ২০২০ সালে এসেও এই কাল্পনিক কাহিনি নির্ভর সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা হবে।


০৮। গ’ন উইথ দ্যা উয়াইন্ড (Gone with the Wind 1939)


১৯৩৯ সালের আরেকটি রোমান্টিক চলচ্চিত্র গ’ন উইথ দ্যা উয়াইন্ড আমাদের তালিকায় স্থান লাভ করেছে। আমেরিকান গৃহযুদ্ধকালীন ও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে একজন নারী ও পুরুষের প্রেম এই চলচ্চিত্রে প্রাধান্য পেয়েছে। পাশাপাশি গৃহযুদ্ধের নানা দিক এবং ভয়াবহতা এতে ফুটে উঠেছে। কাসাব্লাঙ্কা, টাইটানিক কিংবা নোটবুকের মতো বিখ্যাত প্রেমের চলচ্চিত্রের পূর্বে যে চলচ্চিত্রটি দশকের পর দশক প্রেমিক-প্রেমিকাদের হৃদয়ের আবেদনের খোরাক মিটিয়েছে সেটি হলো এই চলচ্চিত্র। আমরা মনে করি, এই চলচ্চিত্রের আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি।


০৭। স্টার ওয়ার: এপিজড ফাইভ (Star War: Episode V 1980)


স্পেস বা মহাকাশ নিয়ে যত কল্পকাহিনি এখন পর্যন্ত বড় পর্দায় এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রতিষ্ঠিত সিনেমাগুচ্ছ হচ্ছে স্টার ওয়ার মুভি সিরিজ। ১৯৮০ সালে এই সিরিজের পঞ্চম চলচ্চিত্র “দ্যা ইম্পায়ার স্টাইকস ব্যাক” মুক্তি পায়। স্টার ওয়ার সিরিজটি চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসা সফল সিরিজ। বিখ্যাত ভিলেন ডার্থ ভেদার এই চলচ্চিত্রের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। শুধু কাল্পনিক প্রেক্ষাপটের জন্য চলচ্চিত্রটি বিখ্যাত তা নয়। জটিল পারিবারিক সম্পর্ক, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ সবকিছুই চলচ্চিত্রটিতে মহাকাব্যিক রূপ দিয়েছে।


০৬। দ্যা ডার্ক নাইট (The Dark Knight 2008)


সিনেমা জগতে ক্রিস্টোফার নোলান এক খ্যাতনামা পরিচালকের নাম। যে চলচ্চিত্র তার ছোঁয়া পেয়েছে তাই হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত। ডিসি কমিকসের “দ্যা ডার্ক নাইট” সম্ভবত কমিকবুক সিরিজের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্রায়ন। “জোকার” চরিত্রে হিথ লেজারের অসাধারণ অভিনয়,  সিনেমাটিতে দিয়েছে অন্য মাত্রা। টান টান উত্তেজনা এবং অবাক করা দৃশ্যের জন্য এই সিনেমাটি সকলের কাছে প্রিয় হয়ে থাকবে। জোকার চরিত্রে “হিথ লেজার”-এর করা অভিনয় শ্রেষ্ঠ জোকার হিসেবে থেকে যাবে আরও অনেক বছর।


০৫। দ্যা শ’ শ্যাঙ্ক রেডেম্পশন (The Shawshank Redemption 2002)


পরকীয়ার জন্য স্বামী খুন করেছে স্ত্রী ও প্রেমিককে– এই অভিযোগে মধ্যবয়স্ক এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে পাঠানো হয় পৃথিবীর এক নিকৃষ্টতম জেলে। তারপর কী হলো? একদিন সে জেল থেকে পালালো। ঘটনাটা যেভাবে বলা হলো জিনিসটা এরকম নয়। দ্যা শ’ শ্যাঙ্ক রেডেম্পশনের কারুকুরি অনেক গভীর। এ পর্যন্ত যত সিনেমা নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে এটির আইএমডিবি রেটিং সর্বাধিক, অর্থাৎ সিনেমাটি দর্শকদের দৃষ্টিতে সবার সেরা। কিন্তু কেন? ফ্রাঙ্ক ডারাবন্ট এই সিনেমাটিতে এমন এক ফর্মুলা ব্যবহার করেছেন যা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। এই সিনেমাটি হাজার বার দেখলেও আপনার বিরক্তি লাগবে না, আপনি কষ্টে ভেঙে পড়বেন না অথবা অট্টহাসিতে ফেটে পড়বেন না। শুধু অবাক হবেন।


০৪। ভার্টিগো (Vertigo 1958)


আলফ্রেড হিচককের ১৯৫৮ সালের মাস্টারপিস ভার্টিগো। হিচকক থ্রিলার মুভির এক অবিস্মরণীয় পরিচালকের নাম। তবে ভার্টিগোর সাথে যুক্ত আছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেতা জেমস স্টুয়ার্ট। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরনার এই চলচ্চিত্রটি আমাদের মাথাকে ঘুরপাক খাওয়ায়, তারপর শেষ অবধি আমাদের পৌঁছে দেয় গন্তব্যে। ক্রিটিকদের দৃষ্টিতে এই চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকবার সর্বকালের সেরা সিনেমার তকমা পেয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার উচ্চতা ভীতি নিরাময়ে যে মর্মান্তিক ঘটনাপ্রবাহ ঘটে যায়– তারই দৃশ্যায়ন এই চলচ্চিত্রটি।


০৩। পাল্ব ফিকশন (Pulb Fiction 1994)


১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া কুয়েন্টিন টারান্টিনোর একটি অনন্য চলচ্চিত্র। অনন্য সংলাপ, নাটকীয় মূহুর্ত সৃষ্টি এবং সেগুলোর সফল ব্যবহারে তৈরি হয়েছে পাল্ব ফিকশন। মূলত দুইজন হিটম্যানের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। মুক্তির পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, যা এখন পর্যন্ত বজায় রয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনার এমন সফল সম্পাদনা হলিউডের মুভিতে খুব কমই রয়েছে।


০২। সিটিজেন কেইন (Citizen Kane 1941)


একজন প্রাক্তন সংবাদপত্র মুঘল তার প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি বলে গেছেন শুধু একটি শব্দ “রোজবাড”। একটি সংবাদমাধ্যম সিদ্ধান্ত নেয় “রোজবাড”-এর রহস্য উদঘাটন করবে। এরপর আস্তে আস্তে উন্মোচিত হতে থাকে সংবাদপত্র মুঘল চার্লস ফস্টার কেইনের শৈশব এবং বৈচিত্র্যময়ী জীবন। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত উঠে আসে নিপুণভাবে। জীবন কী? জীবনের উপলব্ধি কী? প্রেমের অভাব মানুষকে কতটা নিষঙ্গ করে তুলতে পারে– তার সব উত্তরই মিলবে এখানে। তবে শেষপর্যন্তও সেই সংবাদমাধ্যম খুঁজে পায় না “রোজবাড”-কে। শেষ অবধি দর্শকেরা রোজবাডের সন্ধান পেলে উন্মোচিত হয় সর্বশ্রেষ্ট সিনেম্যাটিক মেটাফোরের। অরসন ওয়েলসের অভিনয় ও পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি অনেক বছর যাবৎ ক্রিটিকদের দৃষ্টিতে সর্বকালের সেরা সিনেমা হিসেবে ছিল। বর্তমানে এই তকমা ভার্টিগোর দখলে।


০১। গডফাদার (The Godfather 1972)


মারিও পুজোর উপন্যাস গডফাদার অবলম্বনে ১৯৭২ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি। ফ্রান্সিস কপোলার আরেক মাস্টারপিস– যে সিনেমাটিকে বলা হয়ে থাকে মাফিয়া জগতের মহাকাব্য। মার্লন ব্রান্ডোর অসাধারণ অভিনয়, আল পাচিনোর অন্যতম সেরা পারফর্মেন্সে তৈরি হয়েছে এক অসাধারণ সিনেমা– যেটিকে ক্রিটিক এবং দর্শক উভয়ের দৃষ্টিতে দেখলে সর্বকালের সেরা সিনেমা বলাই যায়! ভিটো করেওলনে ও তার মাফিয়া পরিবারকে নিয়ে গড়ে উঠেছে গডফাদারের চিত্রনাট্য। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে দ্বন্দ্ব করেওলনে পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালে কাহিনিতে নতুন মোড় আসে। শুরু হয় মাফিয়াদের মধ্যে নানামুখী অন্তর্ঘাত। এতে করে পাল্টে যায় সবকিছু। সৃষ্টি হয় নতুন গডফাদারের, যার নাম মাইকেল করেলওনে।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি

ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল

ডাকিয়া কহিলডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল,- ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার রাঙা, আপেলের মতো লাল যার গাল, চুল যার শাঙনের

গল্প

রোমান্স

কলসি কাঁখে পাতলা ছিপছিপে একটি বৌ বেগুনক্ষেতের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। কলসির ভারে একটু সে বাঁকা হয়ে পড়েছে। পিতলের প্রকাণ্ড

তেলেনাপোতা আবিষ্কার

শনি ও মঙ্গলের—মঙ্গলই হবে বোধ হয়—যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন। অর্থাৎ কাজেকর্মে মানুষের ভিড়ে হাঁফিয়ে ওঠার পর

গল্প

ভাইফোঁটা

– চাচা মিয়া, পার্থ কই আছে জানেন? – না তো বাবাজী। পার্থ নামের কাউকে তো চিনি না। কেনো? কী সমস্যা?