আনিফ রুবেদের গল্প


দর্পণ-এর গল্পবিষয়ক বিশেষ সংখ্যা ‘শিশিরভেজা গল্প’-তে প্রকাশিত


ইঁদুর পুরাণ: অন্ধকারের মাংসখেকো

আনিফ রুবেদ


১.

ফড়াৎ করে একটা তেলাপোকা তার কপালের উপর পড়লে হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায় মদুল খাঁখারি এবং ভয়টা কাটলে সে ব্যথাটা অনুভব করে। ডান চোখের উপরে কেটে গিয়ে এখনো ফুলে আছে জায়গাটা এবং জমাট বেঁধে আছে কালো রক্ত। মূল গাঁ থেকে আধা মাইল দূরে তার কুঁড়েটি। ইতস্তত ঝোঁপ ঝাড়, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। এদিকে তেমন কেউ আসে না। হাত দিয়ে কপালের ব্যথাটা ছুঁয়ে দেখতে গেলে হাতের ব্যথাটাও টের পায় বেশ ভেতর থেকে। পায়ের কথা বাদ, সেটা আরো কয়দিন নাড়াতে পারবে না তার ঠিক নাই। তবে তেমন কিছু নয়, সামলে উঠতে সময় লাগবে না, এমন কথা চিন্তা করে চোখ বুঁজে পড়ে থাকে। সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই।

পা আর হাতের ব্যথাটার জন্য নির্দিষ্ট কেউ দায়ী নয়, প্রায় সকলেই দায়ী তবে কপালের ব্যথাটার কথা তার মনে আছে। মোসাহাক দফাদারের ছেলের ঘুঁষিতে এমন হয়েছে। তার হাতের অষ্টধাতুর আঙটি সমেত ঘুষিটা বেশ একটা ব্যথা এবং ক্ষতদান করেছে তার কপালে।

এর পূর্বে তার নিজগ্রামবাসী এমন করে মারেনি। ছোটখাটো বিচার বসিয়েছে। জহমত মেম্বার শপথ করিয়ে নিয়েছে– ‘বল, আমি আবুল খাঁখারির ছেলে মদুল খাঁখারি…’ সঙ্গে সঙ্গে বলেছে– ‘তুমি আবুল খাঁখারির ছেলে…’ বিচারের লোকজনদের মধ্যে হাসির হল্লা পড়েছে। তখন জহমত মেম্বার ভীষণ রেগে গেছে। সে সংশোধন করে দিয়েছে কয়েকবার তারপর কোরান শরীফের উপর হাত রেখে শপথ পাঠ করিয়েছে আবার– ‘তুমি আবুল খাঁখারির ছেলে মদুল খাঁখারি…’ মদুল খাঁখারি বলেছে– ‘আমি আবুল খাঁখারির ছেলে মদুল খাঁখারি’ এভাবে শপথ বাক্য পাঠ করে প্রতিবারই প্রতিজ্ঞা করেছে ‘সে আর চুরি করবে না।’ শপথ নেওয়া শেষ হলে লোকজন তাকে ছেড়ে দিয়েছে।

কিন্তু বিচার শেষ হলে, সেই রাত ভোর হলেই চুরির খবর শোনা গেছে এবং মদুল খাঁখারিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শপথের বেড়া ভেঙে কোথাকার কোনদিকে চলে গেছে সে। এভাবে বারবার সে গ্রামের বাইরে কয়েকমাস কাটিয়ে আবার ফিরে এসেছে। এভাবে বছরের পর বছর চলেছে ব্যাপারটা।

এবার নির্দয় ব্যবহার করেছে তার নিজ গাঁয়ের মানুষেরা।

২.

প্রচণ্ড ব্যথা ঝরছে শরীরে এবং সন্ধ্যা পার হলেও সে শুয়ে থাকে এবং বেদনায় কাতরায়। রাত নেমে এলে তার শরীরে আঠার মতো লেগে যায় গাঢ় অন্ধকার। বাম হাত দিয়ে শরীর থেকে কালো অন্ধকারগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করে। শতবার মুছেও শরীরে লেগে থাকা অন্ধকার মুছে শেষ করতে পারে না। আরো লেপ্টে যায়। নাক, মুখ দিয়ে ঘন তরল অন্ধকার ঢুকে পড়ে। শেষে মুছে মুছে কোনো কূল কিনারা করতে না পেরে ক্লান্ত হলে, নিশ্চল পাথরের মত শুয়ে থাকে। হাতটাও থেকে যায় স্থির। পা, মাথা, পেট সবকিছু স্থির। বরফের গুড়ার মতো অন্ধকার তার দেহের উপর পড়ছে। আলকাতরার মতো তরল অন্ধকার তার চোখ দিয়ে, নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে, কান দিয়ে, শিশ্ন দিয়ে, পায়ুদ্বার দিয়ে ঢুকে পড়ছে। তার পেট, তার বুক, তার ফুসফুস, তার হৃদয় ঘন কালো তরল অন্ধকারে ভরে গেল।

স্থির শরীর নিয়ে পড়ে আছে মদুল খাঁখারি। একটা পেটমোটা নেংটি ইঁদুর তার সাথে ইয়ারকি করে পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দেবার চিন্তা করে, ধীর পায়ে এগিয়ে আসে এবং থমকে দাঁড়িয়ে যায়। সে খেয়াল করে দেখে, মদুল খাঁখারির হাতে ছুরি, সে দাঁড়িয়ে থেকে তার দিকে চেয়ে আছে। ইঁদুরটি ভয় পেয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভালো করে লক্ষ করে দেখে, মদুল খাঁখারি ঘুমুচ্ছে এবং স্বপ্ন দেখছে। এই ছুরি হাতে দাঁড়ানো মদুল খাঁখারি হলো, মদুল খাঁখারি যে স্বপ্ন দেখছে সে স্বপ্নের মদুল খাঁখারি। ইঁদুরটি মদুল খাঁখারি কী স্বপ্ন দেখছে সেটা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে এবং সে ছুরি দেখে আর ভয় পায় না। ইঁদুরটি আরো ভালো করে দেখে বুঝতে পারে মদুল খাঁখারি আসলে মরে গেছে। এই মরা মদুল খাঁখারিই স্বপ্ন দেখছে। ইঁদুরটি আরো অবাক হয়ে নড়ে চড়ে বসে আর ভালো করে দেখতে থাকে মৃত মদুল যে স্বপ্ন দেখছে সে স্বপ্নটাকে।

মৃত মদুল খাঁখারির স্বপ্নের ভেতরের জিন্দা মদুল খাঁখারি ছোট ছুরিটা নিয়ে তার কুটিরের বাইরে বের হয় এবং কী খাবে এমন চিন্তা করতে থাকে। পেটে বড্ড খিদে। মৃত মদুল খাঁখারির স্বপ্নের জিন্দা মদুল খাঁখারি নিজেকে বলে– ‘তোমার খিদে পেয়েছে এখন তুমি খাবে, মৃথিবীতে (সে ভাবল প্রাণ থাকলে পৃথিবীবাস আর মৃত হলে মৃথিবীবাস) খাদ্যের কোনো অভাব নেই।’

মদুল খাঁখারি বাইরে এসে দাঁড়াল। সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানের অন্ধকারের গায়ে ছুরি চালালে অন্ধকার আর ছুরির সংঘর্ষে আগুন জ্বলে ওঠে। সে ভাবে এখানের অন্ধকারগুলো বেশ শক্ত এবং একটু এগিয়ে গিয়ে নরম অন্ধকারের গা থেকে কয়েক চাকতি অন্ধকারমাংস কেটে নেয়, এবং নদীর ধারে হাঁটা শুরু করে। নদীর জলের উপর এই কয়েক টুকরা অন্ধকার রেখে দিলেই কয়েক মিনিটের মধ্যে সিদ্ধ হয়ে যাবে। কয়েকটা মরিচঅন্ধকার, কিছুটা তেলঅন্ধকার, একটু লবণঅন্ধকার সে ইতিমধ্যে পথিমধ্যে যোগাড় করে ফেলেছে। অন্ধকার কাটা এই ছুরিটা বেশ ভালো। নেতারা কথা বললে সেসব কথা দিয়ে যেসব অন্ধকার তৈরি হয় সেসব অন্ধকার থেকে এ ছুরি তৈরি হয়েছে।

একেবারে নদীর ধারে গিয়ে একটা অন্ধকারের গা থেকে হাঁড়ির সাইজের মতো করে অন্ধকার কেটে নেয় এবং সমস্ত কিছু চাপিয়ে জলচুলাতে বসিয়ে অপেক্ষা করে। এখন তার আর কোনো কাজ নেই। চাঁদটা উঠলে, চাঁদের আলো কেটে দুতিনটা রুটি বানিয়ে নিলেই হবে। আজকের জোছনার জোছনারুটির স্বাদ হবে অপূর্ব। প্রতিদিনের জোছনার স্বাদ একরকম নয়। এমনকি সব জায়গার জোছনার স্বাদও একরকম নয়। যেমন চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছের জোছনার স্বাদ বেশ সুস্বাদ কিন্তু কৈবর্তপাড়ার জোছনার স্বাদ তেমন ভালো নয়। সে এখন যেখানে আছে সেখানের জোছনার স্বাদ নিখাদ ভালো। যেহেতু এদিকে মানুষ আসে না তেমনভাবে সেহেতু মানুষের মল মূত্র বা কাশ পোঁটা তেমন লেগে থাকে না জোছনার গায়ে। তার উপরে আজ সোমবার। সাধারণভাবে সোমবারে সব জায়গার জোছনার স্বাদ ভালো।

ইঁদুরটি খেয়াল করে দেখে, মদুল খাঁখারি জলচুলাতে রান্না বসিয়েছে বটে কিন্তু আগুন জ্বালাতে ভুলে গেছে। হঠাৎ করে মদুল খাঁখারির খেয়াল হয়, জলাগুন ধরাতে সে ভুলে গেছে। যে কোনো একটা গান গাইলেই সুরের চাপে জলে আগুন জ্বলে উঠবে এবং সিদ্ধ হবে মাংস। সে গান মনে করতে চেষ্টা করে কিন্তু গান তার মনে পড়ে না এদিকে খিদেও বেড়েছে। শেষে তার একটা গান মনে পড়ে এবং গায়–

জ্বল আগুন জলে জ্বলজ্বল
অন্ধকার আগুনে ভরুক হাঁড়িতল
পেটের ভেতর জ্বলন বড় ক্ষুধার
সিদ্ধ হয়ে যাক ওরে আমার খাবার ॥

অন্ধ আকাশ অন্ধ বাতাস
অন্ধজীবন তরে
অন্ধসব খাবার আমার
সিদ্ধ হোক ত্বরে
রান্না হয়ে গেলে তুই নিভিয়ে যাস আবার ॥

গান শেষ হওয়া মাত্র জলাগুন জ্বলে ওঠে। মাংস সিদ্ধ হবার গড়গড় শব্দ উথলে উঠলে মদুল খাঁখারি শক্ত ধরনের অন্ধকারের গায়ে ছুরি ঘষে ঘষে ধার করতে থাকে। একটু পর চাঁদ উঠে এবং জোছনার গা থেকে রুটির সাইজের কয়েক ফালি কেটে নেয়। মাংস রান্না হলে মাংসের হাঁড়ি নামিয়ে কুটিরের দিকে হাঁটতে থাকে।

ইঁদুরটি অবাক হয়ে দেখতে থাকে, মদুল খাঁখারি তার শিশুকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবকিছু বেশ আনন্দের সাথে দেখছে এবং হাসছে এবং কাঁদছে। কত প্রাচুর্যভরা এই মৃথিবী। অথচ কত অভাব ভরা পৃথিবী। শিশুকালে এখানে চলে এলে অহেতুক খাবারহীন থাকতে হত না এতদিন। এখানে অন্ধকার আর জোছনা কেটে সবকিছু করা যায়। মৃথিবীতে খাদ্যের কোনো অভাব নেই।

অবশ্য সব রাতের অন্ধকারে সবকিছু হয় না। অমবশ্যা রাতের অন্ধকার দিয়ে বেশ ভালো সন্দেশ তৈরি করা যায় কিন্তু বাতাসা করতে গেলে অমাবশ্যা রাতের অন্ধকার দিয়ে হবে না, পূর্ণিমা রাতের আখখেতের কাছের অন্ধকার দিয়ে তৈরি করতে হবে। বর্ষাকালের অন্ধকার ছাড়া মুগডাল তৈরি করা যায় না, তখনের অন্ধকার দিয়ে তৈরি করা যায় ভালো জিলিপিও। আর ভালো স্যান্ডেল তৈরি করতে গেলে বসন্তকালের অন্ধকারের কোনো বিকল্প নেই, শীতকালের অন্ধকার দিয়ে স্যান্ডেল করতে গেলে দুদিনও টিকে না। আর কার্তিক মাসে কৃষাণ পাড়াতে অন্ধকার বেশ জমে ওঠে, এসব অন্ধকারের ক্ষীর একেবারে অমৃতের মত। নির্বাচন অফিসের অন্ধকার আর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার অন্ধকার মরিচ আর লবণ তৈরির জন্য বেশ ভালো।

তার যে কুটির তা অন্ধকার কেটে যে পাথর, তা থেকে তৈরি। সে যে জামাটি গায়ে দিয়ে আছে তা গতমাসের ২ নম্বর সপ্তাহের মঙ্গলবারে যে অন্ধকার হয়েছিল, সে অন্ধকারের সুতো থেকে রহমত মেম্বারের ছোট ভাই তৈরি করে দিয়েছিল। মুজুরি হিসেবে নিয়েছিল শিবগঞ্জের মিয়াদের আমবাগানের তিন চার ডালি অন্ধকার। রহমত মেম্বারের ভাই রহমত মেম্বারের চাল-গম চুরির, বেচার আর তার টাকার হিসাব রাখে। আর কোনো কাজ করে না।

ইঁদুরটি দেখল, মদুল খাঁখারি মাংস এবং রুটি নিয়ে এসে খেতে বসেছে। সে আচারের জন্য কাঁচের বয়ামের ছিপি খোলে। এই আচারঅন্ধকার এদিকে পাওয়া যায় না, রামচন্দ্রপুর থেকে নিয়ে আসতে হয়েছিল। এতদিন খায়নি। কিন্তু এখন দেখল, এই আচারগুলো গন্ধ হয়ে গেছে। সে ঢেলে ফেলে দিলে এখানের অন্ধকারের সাথে মিশে মাংস-অন্ধকার হয়ে গেল। সে শুধু মাংস আর রুটি বেশ পেটপুরে খেয়ে নিল এবং বাকিটা ফেলে দিল। ভোর হলে কোনো খাবার পাওয়া যাবে না। রাতের পৃথিবী মানে ছোট চোরের পৃথিবী, ভোরের পৃথিবী মানে বড় চোরের পৃথিবী।

সূর্যের আলোতে কোনো খাবার তৈরি করা যায় না। দিনের চোরদের জন্য সূর্যের আলো। তারা সূর্যের আলো কেটে বড় বড় বাড়ি বানায়, গাড়ি চড়ে, কোর্ট প্যান্ট তৈরি করে। দিনের আলোতে একজন দিনের চোর আর একজন দিনের চোরের পকেট কাটে। তাদের যার ছুরির যেমন ধার তার তেমন বাড়ি, তেমন গাড়ি, তেমন খাবার দাবার। রাজধানী এসব ছুরি দেয় সরাসরি তাদের হাতে। যেমন পুলিশ থানার ছুরি, ডিসি অফিসের ছুরি, ফুড অফিসের ছুরি সব থেকে বেশি ধারাল। অন্যান্য আরো মেলারকমের ছুরি আছে। জনসংখ্যা প্রচুর, মানুষই কম। মানুষ হিসেবে জন্ম নেয় মানুষ আর বড় হতে থাকে ছুরি হিসেবে। পৃথিবীতে মানুষের অভাব থাকতে পারে কিন্তু ছুরির কোনো অভাব নেই। ইঁদুরটি খেয়াল করে দেখে স্বপ্নের ভেতর মদুল খাঁখারি খাওয়া শেষ করে বিশ্রামের জন্য বিছানায় গা গড়িয়ে দিয়েছে। মৃত মদুল খাঁখারির স্বপনের ভেতরের জিন্দা মদুল খাঁখারি মৃতদেহের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে গেল। ভোর হব হব হয়ে গেল।

৩.

তার লাশ উত্তরের জঙ্গলার পূব কোণে পড়ে আছে। হাজার হাজার ইঁদুর আর টিকটিকি তার শরীর নিয়ে যাচ্ছে গোরস্থান অন্ধকারের দিকে। কিন্তু আসলে তারা এক বিন্দুও নড়াতে পারেনি।

ভোর হলে গাঁয়ের লোকজন মদুল খাঁখারির লাশ উদ্ধার করে। এবং দেখে, একটা পেট মোটা নেংটি ইঁদুর তার পায়ের নিচে চাপা পড়েছিল সেটা চাপা পড়েই মারা গেছে।

চাপা পড়া ইঁদুরটি গর্ভবতী ছিল। পিছন দিয়ে একটা বাচ্চা ইঁদুর অর্ধেক ভেতরে আর অর্ধেক বেরুনো অবস্থায় নড়াচড়া করছে। যেন সে সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করছে সে পৃথিবীতে আসবে, না আবার ফিরে যাবে মায়ের গর্ভে, তারপর, মায়ের গর্ভ থেকে যেখানে ছিল সেখানে। কিন্তু বাচ্চাটা পায়ের চাপের কারণে ফিরে যেতে পারছে না। পৃথিবীতে বের হয়ে এলো মানুষের পায়ের চাপাচাপিতে। ইঁদুর বাচ্চার চোখ এখনো ফোটেনি। সুতরাং এখনো সে দিন আর রাতের ফারাক বুঝতে পারছে না। গর্ভ ত্যাগ করা মানে প্রকৃতপক্ষে মা’কে ত্যাগ করে সংসারসমুদ্রে সাঁতার কাটতে থাকা। গর্ভথিবী ছেড়ে ইুঁদরসন্তান পৃথিবীতে অন্ধ অবস্থাতেই জীবন শুরু করে দিল, হেঁটে বেড়াতে লাগল।

মদুল খাঁখারির পায়ের চাপে মরা ইঁদুর তার সদ্য হওয়া বাচ্চার দিকে তাকিয়ে ইঁদুরপুরাণ থেকে পাঠ করতে লাগল ধীরে ধীরে–

ক্ষুধা রে, আহা ব্যথা আমার! আমার নিজের ব্যথা!
তুমি আমার জন্মসঙ্গী।

আর, চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে মানুষের মারে
যে ব্যথা পেয়েছি, সে ব্যথা আমার ব্যথা নয়।
অন্যরা তাদের ব্যথা চাপিয়ে দিয়েছে আমার উপর।

একজনের ব্যথা আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেবার খেলা চলছে জগতে।

আমি যখন চুরি করতে যাই,
তখন আমিও অন্যের উপর আমার ব্যথা চাপিয়ে দিতেই যাই।

 

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
গল্প

সৌজন্যের শিশু

১. অফিসের মোভমেন্ট খাতায় ডেভিড লেখে, গুলিয়াখালী। এখন অক্টোবর। কার্তিক মাস। শনিবার। আজ অফিস খোলার দিন। শহর থেকে বাসে আসতে

পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে

পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে হৃদয়ের নরম কাতর অনেক নিভৃত কথা জানিয়াছি; পৃথিবীতে আমি বহুদিন কাটায়েছি; বনে বনে ডালপালা

গল্প

আগুনের আলো

সেই ব্রিটিশ আমলের একজন শিক্ষিত, চাকরিজীবীর কন্যা শারমীন বেগম। একনিষ্ঠ, সৎ স্কুলমাস্টার স্বামীর আদর্শকে সম্মান জানাতেই নির্বিবাদে গ্রামে রয়ে গেলেন

ভাবনা

উদ্যান উন্নয়নে উপলব্ধিহীন মানবের মহানগর

ঢাকার ফুসফুস খ্যাত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের উদরপূর্তির জন্য কর্তন করা হচ্ছে অসংখ্য বৃক্ষকে। প্রাসাদ বিলাসী নিষ্প্রাণ নগরে একমাত্র প্রাণের