রতন মণ্ডল
কৃষিবিদ
রতন মণ্ডল

উদ্যান উন্নয়নে উপলব্ধিহীন মানবের মহানগর

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

ঢাকার ফুসফুস খ্যাত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের উদরপূর্তির জন্য কর্তন করা হচ্ছে অসংখ্য বৃক্ষকে। প্রাসাদ বিলাসী নিষ্প্রাণ নগরে একমাত্র প্রাণের স্পর্শ দেয় উদ্যানের এই গাছগুলি। সেসব অগণিত গাছের শরীরে উন্নয়নের করাল করাত চালানো হচ্ছে নির্দয়ভাবে। সেখানে নাকি উন্নত কর্মকাণ্ডের জন্যেই এসব করা হচ্ছে। সেখানে হবে উদরপূর্তির জন্যে উন্নত খাবারের দোকান, যেখানে থাকবে উন্নত খাবার! থাকবে মলত্যাগের জন্যে উন্নত শৌচাগারও! হবে প্রাণহীন কনক্রিটে বিস্তর হাটার পথ। শুধু তাই নয়, এসব অপ্রয়োজনীয় বৃক্ষদের উচ্ছেদ করে গাঁদা-গোলাপ-টিউলিপের মনহরা বাগান তৈরি করা হবে। থাকবে লাল-নীল হরেক রঙ্গের চকমকে উন্নতমানের লাইট! এটা কোনো মামুলী বিষয় নয়! উন্নত সব ব্যাপার-স্যাপার! হবে উন্নতভাবে উদরপূর্তি। উন্নতমানের ক্ষুধার নিবারণেই খাওয়া হচ্ছে নাকি শুধু সাধরণ এ ফুসফুসকে!

ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আগে নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই রেসকোর্স ময়দানেই লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এখানেই। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরকালে এই রেসকোর্স ময়দানেই ভাষণ দিয়েছিলেন। উদ্যানকে ঘিরে ঢাকার রয়েছে আরো অতীত ইতিহাস। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের রাজধানী হিসাবে ঢাকাকে উদ্যানের নগর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের কর্মকাণ্ডে রাবার্ট লুইস প্রাউডলক (১৯৬২-১৯৪৮) ছিলেন বৃক্ষশোভিত সরণি ও উদ্যান নির্মাণের দায়িত্বে। তার সহকর্মী হিসেবে কাজ করেন শ্রীযুক্ত অখিল চন্দ্র চক্রবর্তী। পঞ্চাশ দশকের আগের রমনা ও সংলগ্ন এলাকার বৃক্ষসজ্জার সবটুকুই তৎকালের সৃষ্টি। বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার কারণে ঢাকায় রাজধানী নির্মাণের পরিকল্পনাও পরিত্যাক্ত হয়। প্রকৃতিপুত্র নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার ১৯৮৯ সালে লেখা ‘শ্যামলী রমনার স্থপতি’ নিবন্ধে অখিল বাবুর সাক্ষাতে এ তথ্য অবগতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন– বর্তমান রমনা পার্ক পঞ্চাশের দশকের শেষে তৈরি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বয়স তো এক দশকের সামান্য বেশি। প্রাউডলকের লাগানো তরুবীথির কিছু অংশ আর নেই।

বর্তমানে এমন এক অতিমারীর সময়েও ৭০-৮০ বছরে বেড়ে ওঠা বৃক্ষের শরীরে চালানো হচ্ছে করাত, যখন আগামী পৃথিবীর ভয়াবহ বার্তা দিয়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (COVID-19) দাপট চালিয়ে যাচ্ছে। মানব শরীরের ফুসফুস অক্সিজেন না পেয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হানা দিচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফুসফুসের পাশেই থাকা হৃদপিন্ডের ক্রিয়া। ঢাকা মহানগর-শরীরের বুকে একবারে ফুসফুসের পাশেই রয়েছে দেশের সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, জাতীয় গ্রন্থাগার, জাতীয় জাদুঘরসহ আরো জাতীয় আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান। এই ফুসফুস প্রাণবায়ু দিয়ে হৃদপিন্ডের ক্রিয়াই বাঁচিয়ে রাখেছে যে শরীরকে, সেই উপলব্ধি মহানগরের মানবের কি আছে? তাদের নিশ্চয় অজানা নয়, অক্সিজেন ছাড়া মানুষ ৩ মিনিটের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। উন্নত কোনো খাবার দিয়ে নয়।

সুস্বাস্থ্য ও শরীরের সার্বিক হিতসাধনে নিয়মিত টাটকা বাতাস গ্রহণের প্রয়োজন। টাটকা বাতাস বলতে দূষণহীন অক্সিজেনপূর্ণ নির্মল বায়ুর কথা বলছি। প্রশ্ন হল, একজন মানুষের প্রতিদিন কতটা অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে গড়ে ১৭ বার শ্বাসগ্রহণ করেন। শিশুরা অবশ্য এর চেয়ে কিছু বেশি বার শ্বাস নেয়। দেখা গেছে, প্রতিবার শ্বাস গ্রহণে ০.৫ লিটার বাতাস শরীরে প্রবেশ করে। এই হিসেবে আমাদের শরীরে প্রতি মিনিটে ৮.৫ লিটার এবং সারা দিনে ১১ হাজার লিটার বাতাস প্রবেশ করে। তবে এই মান কয়েকটি বিষয়ের ওপরে নির্ভরশীল যেমন, শরীরে আকৃতি, টাইডাল ভলিউম ও শ্বাসগ্রহণের হার। সুতরাং বাতাসে উপস্থিত অক্সিজেনের শতকরা হিসেবের (বাতাসের ২০% অক্সিজেনের মধ্য হতে ৫% গ্রহণ করতে পারি) হারে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, প্রতিদিন কমপক্ষে আমরা ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকি। মনে রাখতে হবে, বেশি হাঁটাহাঁটি কিংবা খেলাধূলা করলে পরিশ্রমহীন জীবনযাপনের তুলনায় অক্সিজেন চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়। ঢাকা শহরে মোট প্রায় ২ কোটি লোকের বাস। তাহলে মহানগরে শুধু মানুষের জন্যে প্রতিদিন মোট কত হাজার কোটি লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন? মানুষ ছাড়াও আছে অজস্র প্রজাতির পশু-পাখিসহ লক্ষ-কোটি জীব। রয়েছে হাজার হাজার যানবাহন, কলকারখানা। এসবের জ্বালানি পোড়াতে আরো কি পারিমাণ অক্সিজেন দরকার? ধারনা করা হয় একটি বড় গাছ ৪ জন মানুষের অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। যদি কল্পনা করি, কোনো কারণে ঢাকার বাইরে থেকে বাতাস আসা বন্ধ হলো, তাহলে কয় মিনিট মহানগরীর প্রাণীকুল বাঁচবে তা কি কখনো অনুমান করেছি? বৃক্ষ ছাড়া কোনো প্রাণীরই বাঁচা অসম্ভব সেটা কারোরই অজানা নয়। মানুষ তার সত্তাকে টিকে রাখার সক্ষমতা একাকভাবে যে নেই, তা সবারই জানা। শুধু মানুষ কেন, কোনো প্রাণীই পরিবেশে একক ভাবে বাঁচতে পারে না। এক প্রাণীকে তার পরিবেশের অঙ্গ হিসেবে অপর জীবের উপর নির্ভর হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এখানে মনে রাখা দরকার যে পাখী-বন্য-জন্তু-সরীসৃপ-কীটপতঙ্গ-মাছ-জলজজীব-উদ্ভিদ ইত্যাদি প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে অবিচ্ছেদভাবে সর্ম্পকিত। এটা এক মহা-সমাজ। মানুষ সেই মহা-সমাজেরই একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র।

আত্মকেন্দ্রীক ভাবনায় আমরা সবাই একটা গাছ মানে কয়েক ঘনফুট কাঠ আর ফল-মূল হিসাব কষি। কিন্তু এর বাইরে আরও অনেক কিছু আছে। শতশত পশুপাখি ছাড়াও অসংখ্য মাইক্রো ফ্লোরা ও ফোনা জন্মায় বৃক্ষকে অশ্রয় করে। এসবই তাদের বাস্তু। তাদেরও প্রাকৃতিক অধিকার এসব বৃক্ষাদিসহ মাটি-জল-বাতাস। তাদের বাস্তু-চ্যুত করার অধিকার আমাদের মানুষদের নেই। আমাদের এই বোধটুকু থাকা দরকার যে, মানুষের অস্তিত্ত্ব বিলিন হবে জীব-জগৎ ছাড়া। আমাদের উপলব্ধি না থাকলেও একটি বৃক্ষ লক্ষ-কোটি বছর ধরে তা করে আসছে। এবং তার দায়িত্ব যথারীতি পালন করে আসছে। কয়েক ঘনফুট কাঠের হিসাবে আমাদের কাছে মূল্যহীন বট-বৃক্ষ। তার ফল পাখিদের সারা বছরের খাবার। পাখি, কাঠবিড়ালী, বাঁদর আবাস আহারের জন্য বট বা ডুমুর গাছে আশ্রয় নেয়। অপরপক্ষে বটজাতীয় বৃক্ষের বংশবিস্তারে প্রয়োজন হয় পাখির। পাখির পাকস্থলিতে এদের ক্ষুদ্র বীজের শক্ত আবরন বিদীর্ণ করলে অঙ্কুরোদ্গমের ক্ষমতা অনেক হারে বেড়ে যায়। আবার বট বা ডুমুরের পরাগায়নের জন্য প্রয়োজন ইউপ্রিসটিনা নামক পতঙ্গের। বাংলাবটের জন্য দরকার হয় ইউপ্রিসটিনা মেসনি (Eupristina masoni), অশ্বত্থের জন্য ব্ল্যাস্টোফেগা কোয়াড্রিসেপস (Blastophaga quadriceps)। এদের ফুলগুলো পুষ্ট হয় তখন একধরনের গন্ধ বাতাসে ভাসতে থাকে যা পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। কোটি কোটি বছর ধরে গাছ পতঙ্গকে আবাস আহার ও বংশবিস্তারের জন্য জায়গা দেয়। অপরদিকে পতঙ্গদ্বারা পরাগায়ন ঘটিয়ে গাছ বংশবিস্তার নিশ্চিত করে। আবার স্বল্প আয়ুর এসব পতঙ্গ প্রজন্মের ধারা অব্যহত রাখতে প্রয়োজন সাড়াবছর নিড়িবিচ্ছিন্ন আহারের নিশ্চয়তা। আর এ দায়িত্বেও সিদ্ধহস্ত ডুমুর, বট বৃক্ষ। এছাড়াও পাখি, কাঠবিড়ালি, বানরসহ অসংখ্য প্রাণীগুলোর সারাবছর ধরে ধারাবাহিক খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব যেন এসব গাছ উপলব্ধি করে। আর সে জন্যেই সব ডুমুর বা বট গাছে এক সাথে ফল ধরে না। একটা গাছের ফল শেষ হলে অন্য গাছে ধরে। কখন কোন গাছে ফল ধরবে একটি গাছের সাথে আরেকটি গাছ পারস্পারিক সমঝোতা করে নেয়। এই জটিল প্রক্রিয়া কিভাবে ঘটে? তাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ আছে? হ্যাঁ, নিশ্চয় আছে। এটা প্রমানিত যে একটা গাছ অনেক দূরের আর একটা গাছের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম। কিন্তু কিভাবে? আমরা জানি একটা গাছের কোনো শাখায় কোনো কিছু যেমন, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বা আঘাত প্রাপ্ত হলে অন্য শাখায় তা সিগন্যাল পাথওয়ের (Signal Pathway) মাধ্যমে সতর্ক করে দেয় এবং আক্রান্ত অংশের প্রতিকার করে। আর অন্য গাছের সাথে কিভাবে করে? আমরা জানি মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ছত্রাক থাকে। একটা গাছ তার মূলের সাথে সংযুক্ত ছত্রাকের মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে সিগন্যাল বা বার্তা আর এক গাছের কাছে পৌঁছায়। তখন অপর গাছটি সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বলতে পারেন ছত্রাক কেনই বা সহায়তা করে?

এখানেও আছে আর এক পরস্পরের দেয়া নেয়ার আত্মীক সম্পর্কের যোগসূত্র বা মিথোস্ক্রিয়া। গাছ প্রচুর সূর্যালোক ও বায়ুমন্ডল হতে কার্বন ডাই অক্সাইড নিতে পারে এবং সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শর্করা খাদ্য তৈরি করে। সেই শর্করা খাদ্য গাছের মূলের মাধ্যমে মাটিতে অবস্থিত ছত্রাক মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে গ্রহণ করে শক্তি সঞ্চার করে। অপরদিকে সেই ছত্রাক মাটি হতে ফসফরাস নাইট্রোজন শোষণ (শতকরা ৯০ ভাগ) করে ধীরে ধীরে গাছকে সরবরাহ করে যা মাইকোরাইজাল (Mycorrhizal) বলে। এসব ছত্রাকের মাইসেলিয়ামই বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানে নেট-ওয়ার্কের মতো কাজ করে। কয়েক হাজার প্রজাতি ছত্রাক আছে যারা গাছের সাথে পরস্পর মিথোস্ক্রিয়াই সম্পর্কযুক্ত। ছত্রাক শুধু গাছের সাথেই নয় অনেক শাওলা, শৈবালের সাথেও এরকম পারস্পারিক মঙ্গলজনক সহাবস্থান করে।

প্রকৃতির অন্য প্রণীকুলকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি গাছ নিজেদের রক্ষার জন্যে তাদের মধ্যে যোগাযোগ করে। জার্মান বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী পিটার উয়োলেবেন তার দ্য হিডেন লাইফ অব ট্রিজ বইয়ে গাছপালার অসংখ্য গোপন রহস্যের কথা বলেছেন। সাভানায় গবেষকদের প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেছেন– আফ্রিকার সাভানায় জিরাফেরা আমব্রেলা অ্যাকেশা গাছের সুখাদ্য-পাতা খেতে শুরু করলেই গাছের দেহে একটা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হয়। সেই বিষযুক্ত রাসায়নিক উপাদানের প্রভাবে সুখাদ্য দ্রুতই অখাদ্য হয়ে যায়। তখন নীরবে প্রাণীগুলি অন্য গাছে সরে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু জিরাফ আশপাশের গাছেও খেতে না পেরে প্রায় একশ গজ পথ হেঁটে আবার অন্য গাছে খেতে উদগ্রীব হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার একই ঘটনা। রহস্যজনক কারণ হলো– আক্রান্ত গাছ কেবল নিজেদের বাঁচায় না, তার শরীর থেকে ইথিলিন গ্যাসের নিঃসরণ হয়। ফলে আশপাশের একই প্রজাতির সমস্ত গাছ হাওয়ায় হাওয়ায় টের পায়, অমনি তারাও আত্মরক্ষার তাগিদে নিজের নিজের পাতায় ওই রাসায়নিক বিষ সঞ্চারিত করে। এভাবেই বৃক্ষের উপলব্ধি ও আপদে-বিপদে পরস্পর বার্তা বিনিময়ে নিজেদের রক্ষা করে এবং জিরাফও ঘুরে বেড়িয়ে তাদের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করে।

বৃক্ষ প্রাকৃতিক কৌশলে পশু-পাখিদের কাছ হতে রক্ষা করতে পারলেও উপলব্ধিহীন মানবের কাছ হতে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ আত্মকেন্দ্রীকতায় বুদ্ধি-বলে কুট-কৌশলে নিরীহ বৃক্ষদের সাবাড় করছে। এর আগেও ২০১৯ সালে উন্নয়নের নামে রাজশাহীতে ৫৬১ টি পাখি কলোনির গাছ কাটা হয়। সেই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে হল নির্মাণের অজুহাতে অসংখ্য গাছ কাটা হয়। কোনো অজুহাতে আর গাছ কাটা নয় গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই বৃক্ষদের রক্ষাকরা জরুরী।

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে, উপলব্ধিতে আনতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেমন আবশ্যক। তেমনি এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো গাছ না কেটে ১৯০৫ সালে ঢাকাকে যে উদ্যানের নগর হিসেবে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা ছিল তা স্মরণ করা উচিৎ। প্রাণ-প্রকৃতির স্পর্শে ইতিহাস-ঐতিহ্যে আধুনিক মহানগর গড়ে তুলতে নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার ‘নগর-বৃক্ষের দেখভাল’ নিবন্ধে যে ১৪ টি সুপারিশমালা উত্থাপন করেছেন তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো বিবেচনা করতে পারে। ব্যক্তি-সামাজিক-রাষ্ট্রিক জীবনে, পরিবেশ প্রকৃতির দর্শনের উপলদ্ধি- আধুনিক বিজ্ঞানে ও সমতাভিত্তিক উন্নয়নে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। বাস্তুতন্ত্র তথা প্রকৃতির সাথে মানব সমাজের সর্ম্পকহীন অসংগতিপূর্ণ আর্থিক উন্নয়ন মানে টেকসই উন্নয়ন না, তা হবে এক বিপন্ন-বির্পযয়-বিলুপ্তির নামান্তরমাত্র।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu