তারেক মাহাদী
চিত্রশিল্পী ও লেখক
তারেক মাহাদী

যৌন স্বাধীনতা ও সামাজিক নৈতিকতা: পতিতাবৃত্তির কারণ ও প্রভাব

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

যৌন সম্পর্ক একজন মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। হতে পারে তার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত অথবা শুধুমাত্র তার দৈহিক আনন্দ। প্রেম ও যৌন চাহিদা প্রকৃতি প্রদত্ত এবং জীবনের খুব স্বাভাবিক অনুষঙ্গ, যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় একে আমরা ট্যাবুতে রূপান্তর করেছি। যখন কোনো নারী বা পুরুষকে জীবন ধারণের প্রয়োজনে যৌনাঙ্গ বিক্রি করতে হয়, তখন এটা নিশ্চিত যে আমরা একটি নষ্ট ব্যবস্থাপনার শিকার। এমনকি, দেশভেদে বেশ্যাবৃত্তিকে চতুরতার সাথে বৈধ ব্যবসায় রূপান্তরিত করা হয়েছে।

তারেক মাহাদীর চিত্রকর্ম

একটি সুস্থ সম্পর্কে, একজন নারী যেমন চায় না তার স্বামী বেশ্যার ঘরে যাক, তেমনি একজন পুরুষও চায় না তার স্ত্রী বেশ্যাবৃত্তি করুক। তারপরও আমাদের এ বিষয় নিয়ে যতটা ভাবা দরকার, কথা বলা দরকার, আমরা বলছি না। বাংলাদেশে অনেক মানুষের সাথে কথা বলে দেখেছি, এ বিষয়ে আমাদের নৈতিক এবং সামাজিক বৈধতা নিয়ে অবস্থান ঘোলাটে। একজন নারী কেন বা কখন পতিতাবৃত্তি করে এবং তার পতিতাবৃত্তির দায় সত্যিই কার কতটুকু তা বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন মানুষের পতিতাবৃত্তির তিনটি প্রধান কারণ পাওয়া যায়:

প্রথম কারণ, জীবিকার প্রয়োজনে কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে।

দ্বিতীয় কারণ, অর্থ বা ক্ষমতার লালসায় আক্রান্ত হয়ে।

তৃতীয় কারণ, কারো প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পরিস্থিতির শিকার হয়ে।

প্রথম কারণ (জীবিকার প্রয়োজনে) প্রযোজ্য হলে, একটি রাষ্ট্রের সম্পদ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অক্ষমতাকে নগ্নভাবে চিহ্নিত করতে হয়। কোনো রাষ্ট্রে একজন মানুষকে যখন শুধুমাত্র তার জীবন ধারণের প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন করতে নিজের যৌনাঙ্গ বিক্রি করতে হয়, সে রাষ্ট্রের অর্থনীতি উলঙ্গ।

দ্বিতীয় কারণ (লোভ-লালসায় আক্রান্ত) কোনো সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অধঃপতনের কথা বলে। অর্থাৎ সেই সমাজের সার্বিক নৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। যদি দ্বিতীয় কারণটি পরিমাণের ব্যাপ্তিতে বিশাল হয়, তবে তাকে নৈতিক মূল্যবোধের মহামারি বলা যেতে পারে।

তৃতীয় কারণ (প্রতারণার শিকার হয়ে বিচার না পেয়ে) মানুষের নৈতিক অধঃপতনের সাথে আইন ও তার প্রয়োগের দুর্বলতাকে নির্দেশ করে, অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে আইন অকার্যকর।

কোনো রাষ্ট্র যখন এই পতিতাবৃত্তিকে সমর্থন ও বৈধতা দেয়, তখন বুঝতে হবে নিঃসন্দেহে সে রাষ্ট্রের জটিল অসুখ রয়েছে। সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যখন স্বাভাবিক প্রেমকে অপমান ও অপদস্ত করে, তখন নিশ্চিত করেই বলা যায় রাষ্ট্রের এ অসুখ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।

কোনো মানুষের অসুখ হলে তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। মৃত্যু হলে তার সৎকার অপরিহার্য। তা না হলে সে মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ ও অসুখ ছড়াবে। বিষয়টি যে কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তাই।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu