আমার প্রতিটি গ্রন্থই আলাদা: লুইজ গ্লুক

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন মার্কিন কবি লুইজ গ্লুক। জন্ম, ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে। পড়াশুনা, সারাহ লরেন্স কলেজ এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে First Born কবিতা রচনার মাধ্যমে কবির যাত্রা শুরু। এ যাবৎ মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বারো। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ সংকলন American Originality প্রকাশিত হয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে। প্রকাশভঙ্গির সূক্ষ্মতা, ভাবের বুননে সংবেদনশীলতা, প্রখর অন্তদৃষ্টি দিয়ে একাকীত্বের প্রতিলিপি অঙ্কন, পারিবারিক সম্পর্ক, জীবনের অপ্রত্যাশিত বিচ্ছেদ এবং মৃত্যু তাঁর কবিতার প্রধান বিশিষ্টতা। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিৎজার, লেনন, এমআইটি, সারা টিসডেল স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন এই কবি। বিশেষত, আমেরিকার দ্বাদশ শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে লেখক বসবাস করছেন ম্যাসাচুসেটস এর ক্যামব্রিজে। গত ০৮ অক্টোবর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোঘণা প্রচারিত হবার পরপরই টেলিফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ নেয় নোবেল মিডিয়া কমিটি। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন নোবেল মিডিয়া কমিটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ্যাডাম স্মিথ। ক্ষুদ্র এই সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী কবি লুইজ গ্লুকের পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি, ব্যক্তিগত ভাবনা এবং গ্রন্থ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। 

এ্যাডাম স্মিথ: শুভ সকাল, নোবেল প্রাইজ সংগঠন থেকে এ্যাডাম স্মিথ বলছি, আমি কি লুইস গ্লুকের সাথে কথা বলছি?

লুইজ গ্লুক: জ্বি, কিন্তু আামদের কথাগুলি কি রেকর্ড হচ্ছে? আমি সেটি করতে চাচ্ছি না।

এ্যাডাম স্মিথ: আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এটি কোনো কষ্টের কারণ হবে না। দু থেকে তিন মিনিট রেকর্ড করলে আপনি কি কিছু মনে করবেন?

লুইজ গ্লুক: আচ্ছা, ঠিক আছে, কিছু মনে করবো না। তবে আমাকে যে এখুনিই এক কাপ কফি খেতে হবে…। আর শোনো দু’মিনিটই কিন্তু।

এ্যাডাম স্মিথ: আপনি সত্যিই দয়ালু। কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো। নোবেল প্রাপ্তির ব্যাপারটি আপনার কাছে কেমন লাগছে?

লুইজ গ্লুক: ধারণা করতে পারছি না। প্রথমে ভেবেছিলাম, আমার আর কোনো বন্ধুই থাকবে না, যেহেতু অধিকাংশ বন্ধুই লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। তারপর মনে হলো, না, এমনটি ঘটবে না। আপনি তো জানেন, এটি একদমই নতুন অনুভূতি। আমি আসলেই বলতে পারবো না এটি কী অর্থ বহন করে। এবং যেকোনো ক্ষেত্রেই এর অর্থ কেমন হয় তা আমি জানি না। শুধু একটি বিষয়য়ই মনে হচ্ছে, এটি একটি বিশাল সম্মান। এবং অবশ্যই অতীতে যাদের দিকে আমি মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকাতাম না, খুব দ্রুতই তাদের দিকে তাকাবো। আর আমি একটি বাড়ি কিনতে চেয়েছিলাম ভারমন্টে– অবশ্য কেমব্রিজ এ আমার একটি ফ্ল্যাট আছে। আমি ভাবছি ভালোই হবে, আমি ইচ্ছে করলেই এখন আরেকটি বাড়ি কিনতে পারব। তবে ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে পূর্বের মতো চলতে পারবো কি না সেটি নিয়ে এই মুহূর্তে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন আমি। 

এ্যাডাম স্মিথ: এই যে আপনার প্রতি সবার মনোযোগ, এটি কি কারো নিভৃত জীবনে অনাহূত প্রবেশ?

লুইজ গ্লুক: এটি আসলে সবকিছু এলোমেলো করে দেবার মতো। অনবরত ফোন বেজেই চলেছে। এখনো বাজছে, কানের ভেতর ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করছে।

এ্যাডাম স্মিথ: হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি। যারা আপনার কাজের সাথে অপরিচিত তারাই এমন করছে।

লুইজ গ্লুক: অনেকই।

এ্যাডাম স্মিথ: আপনি কি তাদের জন্য এমন কোনো গ্রন্থের নাম বলবেন, যেখান থেকে তারা শুরু করবে। এমন কিছু, যা অনন্য বিশিষ্টতায় পরিপূর্ণ।

লুইজ গ্লুক : বিষয়টি তেমন নয়। কারণ, আমার প্রতিটি গ্রন্থই আলাদা। একটির সাথে আরেকটিকে আপনি মেলাতে পারবেন না। আমি বলবো, যতক্ষণ পর্যন্ত পাঠকদের আমার লেখার প্রতি বিরক্তির সৃষ্টি না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা পড়তে পারে। প্রথমে কোনো নির্দিষ্ট গ্রন্থই যে পড়তে হবে তেমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। সবকিছুর পরও আমি বলবো, আমার যে গ্রন্থের ওপর তাদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে সেটিই তারা পড়বে। তবে আমি আমার নতুই গ্রন্থগুলি পছন্দ করি। আর আমি বলবো ‘Averno’ দিয়ে তারা শুরু করতে পারে, অথবা আমার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রš’ ‘Faithful and Virtuous Night’ কেও বেছে নিতে পারে। 

এ্যাডাম স্মিথ: এই মুহূর্তে জীবনভিত্তিক অভিজ্ঞতার মূল্যের ওপর প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিষয়বস্তু আলোচনার ক্ষেত্রে জীবনের অভিজ্ঞতার মূল্যকে আপনি কতটা প্রয়োজনীয় মনে করেন।

লুইজ গ্লুক: এটি খুবই পরিতৃপ্তির বিষয়। এবং অনেক বিস্তৃত। এখানে এখন অনেক সকাল, কেবল সাতটা। আমি নিশ্চিত, এটি নিয়ে অনেক কিছু বলবার আছে, এবং বলবার মতো অনেক ধারণাও আমার আছে। কিন্তু…

এ্যাডাম স্মিথ: কিন্তু, আপনি যদি এটি করতে পারেন তবে আপনার নিজস্ব লেখার ওপর একটি প্রতিচ্ছবি দেখে বিস্মিত হবার মতো ব্যাপার ঘটবে বলে আমার মনে হয়। আমরা অন্য সময়ে এটি নিয়ে আলোচনায় বসতে পারি।

লুইজ গ্লুক: আমাদের নির্ধারিত দু’মিনিট কি শেষ হয়েছে?

এ্যাডাম স্মিথ: জ্বি, হয়েছে, আপনার অনেক কষ্ট হলো। আমি দুঃখিত। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এবং আবারো অভিনন্দন।

লুইজ গ্লুক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সূত্র:https://www.nobelprize.org/prizes/literature/2020/gluck/interview/

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি

মৃত্যুবিলাস

মিজান সাহেব আমার হাতে হাত রেখে বললেন এতদিন পর যে আবার দেখা হবে ভাবিনি। গত বছরই তো আমরা একসাথে মারা

ভ্রমণ ডায়েরি

লেবানন যেন মধ্যপ্রাচ্যের প্যারিস

লেবানন যেন মধ্যপ্রাচ্যের প্যারিস আহমেদ আববাস ইতোপূর্বে পেশাসংক্রান্ত কাজে দু’একবার দেশের বাইরে গেলেও কোনো আরব দেশে যাবার সুযোগ হয়নি। ২০১০

কবিতা

গুপ্ত ঝরনার দিকে অভিযাত্রা

চাণক্য বাড়ৈর তিনটি কবিতা নাগলিঙ্গম ফুটেছ অদ্ভুত ফুল– নাগলিঙ্গম। এই অরণ্য-আড়ালে থোকা থোকা ফুটে আছ সহস্র স্বয়ম্ভূ তারা– নীলাভ অন্ধকারে

তেলেনাপোতা আবিষ্কার

শনি ও মঙ্গলের—মঙ্গলই হবে বোধ হয়—যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন। অর্থাৎ কাজেকর্মে মানুষের ভিড়ে হাঁফিয়ে ওঠার পর