অলোক আচার্য
অলোক আচার্য। বসবাস করেন পাবনায়। তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প ও প্রবন্ধ লিখে থাকেন তিনি।
অলোক আচার্য

টাইম মেশিন; অব দ্য এরিয়া-৫১: সায়েন্স ফিকশনের রহস্যে মোড়া গ্রন্থ

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

অলোক আচার্য কর্তৃক আশরাফ পিন্টুর বই পর্যালোচনা

টাইম মেশিন; অব দ্য এরিয়া-৫১: সায়েন্স ফিকশনের রহস্যে মোড়া গ্রন্থ


পর্যালোচিত বইয়ের প্রচ্ছদ

মানুষ ও বিজ্ঞান পাশাপাশি চলছে। সভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে বিজ্ঞানের হাত ধরেই। মানুষ বিজ্ঞান নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্ন নিয়ে রচিত হচ্ছে গল্প। সেখান থেকেই সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশন। এটি এক শ্রেণির তরুণ-তরুণীদের ভেতর ব্যাপক জনপ্রিয়। যারা বিজ্ঞান ভালোবাসে, যারা বিজ্ঞান নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে তারা সায়েন্স ফিকশনের পাঠক। এক সময় আমাদের দেশে সায়েন্স ফিকশনের লেখক ছিল একেবারেই হাতে গোনা। ধীরে ধীরে পশ্চিমা লেখকদের বই পড়ে এদেশে পাঠকের সাথে সাথে সায়েন্স ফিকশন নিয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে অনেক লেখক। বর্তমানে সায়েন্স ফিকশনের একটি পাঠকশ্রেণি তৈরি হয়েছে। তবে এর লেখক সংখ্যা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চেয়ে কম। এরও কারণ আছে। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লিখতেও বিজ্ঞান নিয়ে একটু-আধটু গবেষণা দূরদর্শী চিন্তা থাকতে হয়। এটা ভিন্ন এক লেখনী ধরন। কল্পনার পাখা মেলতে হয় বহুদূর। বাংলাদেশে সায়েন্স ফিকশনের জনপ্রিয় একজন হলেন ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদও সায়েন্স ফিকশন লিখেছেন। আরো অনেকের নামই বলা যায়। এ সময় সায়েন্স ফিকশন লিখে পাঠক মহলে জনপ্রিয় হয়েছেন এমন একজন লেখক হলে আশরাফ পিন্টু। তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন দৈনিকে এবং মাসিক পত্রিকায় সায়েন্স ফিকশন লিখে চলেছেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আদতে কল্পকাহিনী হলেও মানুষ একদিন সেই কল্পকাহিনীকে ঠিক বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়। আজ না হয় কাল সেটা হবেই। এই যেমন– মানুষের আকাশে ওড়ার বিষয়টা অথবা মানুষ ও যন্ত্র বা রোবটের সহাবস্থান এটাও তো এক সময় কল্পকাহিনীর অংশ ছিল। আজ তা বাস্তব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরোপুরি কাজে লাগালে মানুষ আর যন্ত্রের যুদ্ধও লাগতে পারে। এ নিয়েও বিস্তর গল্প লেখা হয়েছে। আবার পৃথিবী পুরোপুরিভাবে যন্ত্রের দখলে চলে গেছে এ ধারণা নিয়েও ঢের গল্প লেখা হয়েছে। এটা ঘটাও অসম্ভব কিছু না। লেখক আশরাফ পিন্টুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর একটি জনপ্রিয় বই হচ্ছে ’টাইম মেশিন; অব দ্য এরিয়া-৫১।

বইটিতে গল্পের সংখ্যা ২০টি। যারা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর খবর রাখেন তারা টাইম মেশিন সম্পর্কে জানেন। সময় পরিভ্রমণ নিয়ে কল্পকাহিনীর লেখকরা বহু গল্প রচনা করেছেন। কল্পকাহিনীর টাইম মেশিনে চড়ে লাখ লাখ বছর আগে অথবা পরে পরিভ্রমণ করছে। সত্যি সত্যি যে টাইম মেশিন কোনোদিন আবিষ্কার করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আশরাফ পিন্টুর এই বইটিতে যে এরিয়া-৫১’র কথা বলা হয়েছে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অতি গোপনীয় স্থান যেখানে কড়াকড়িভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে বইটির একটি দুর্বলতার দিক হলো গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্র। প্রায় প্রতিটি গল্পেই একটি চরিত্রকেই লেখক ব্যবহার করেছেন। ভালো হতো যদি প্রতিটি গল্পেই ভিন্ন কোনো নামে চরিত্র সৃষ্টি করা হতো। কারণ সায়েন্স ফিকশনে এটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গল্পগুলোর কাহিনী চমৎকার। গল্পে টাইম ট্রাভেল ছাড়াও এসেছে ভিন্ন গ্রহে মানুষের বসতির কথা। এসেছে মানুষ ও রোবট মিলে এক ভিন্ন প্রজাতি সৃষ্টির কথা। গল্পগুলোতে এসেছে দূষণের ভয়াবহতায় যখন পৃথিবী ধ্বংস হয়েছে সেই পরিস্থিতির কথা। আর এসেছে দূর এলিয়েনদের কথা। যারা টাইম মেশিন নিয়ে গল্প পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য চমৎকার একটি গল্প হলো এরিয়া-৫১ এর টাইম মেশিনের গল্পটি। কারণ গল্পটিতে স্বনন নামে চরিত্রটি এরিয়া -৫১ এর টাইম মেশিনে চড়ে অতীত এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে যায় এবং নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। শেষ পর্যন্ত স্বননের ফিরে আসায় গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই যে স্বননের ট্রাইম মেশিনে চড়ে সময়ের বিভিন্ন অংশে ঘুরে বেড়ানো এখানেই লেখক তার লেখনীর দক্ষতা ব্যবহার করেছেন যা পাঠকের ভালো লাগবে। বইটির একটি চমৎকার গল্প হলো ‘বিগ ব্যারেলের অনন্ত যাত্রা’। এই গল্পটিতে লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পৃথিবীর ভবিষ্যত বর্ণনা করেছেন। পৃথিবী ছেড়ে যখন মানুষের ঠিকানা হয় একটি কৃত্রিম উপগ্রহে। যেখানে মানুষের কোনো ভবিষ্যত নেই। একটি কৃত্রিম উপগ্রহে চড়ে অনন্ত যাত্রায় মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে। পুরো গল্পটি শেষে নিজেদের ভবিষ্যত চিন্তা করে আপনার মন খারাপ হতে বাধ্য। কারণ আমরা মানুষ তো সেই দিকেই এগিয়ে চলেছি।

লেখকের ক্লোন মানবের দেশে গল্পটিতে এই সময়ের বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য বিষয়টিকেই তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের কল্পনাই বিজ্ঞানের আবিষ্কারের খোরাক। আজ যা কল্পনা শত শত বছর পর হলেও তা একদিন বাস্তবায়িত হবে। এটাই হয়ে আসছে। যারা এই কল্পনার খোরাক যোগায় বা মানসিক শক্তিকে চাঙ্গা করে বিজ্ঞানে তাদের অবদানও কম নয়। এটা সত্যি যে কল্পনায় একটু বেশিই থাকে। তবে সেটা পাঠকের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই করা হয়। গল্পগুলো যেহেতু বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সেখানে কল্পনার মাত্রা বেশি থাকলেই পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এদিক থেকে আশরাফ পিন্টুর কল্পকাহিনীর গ্রন্থটি একেবারে সফল। ক্লোন আধুনিক বিজ্ঞানেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষের ক্লোন না হলেও বিভিন্ন প্রাণীর ক্লোন তৈরি হয়েছে। সেসব বহুবছর আগেই হয়েছে। মানব জাতির স্বার্থেই মানুষের ক্লোন হচ্ছে না। কিন্তু যদি সত্যিই সেটা হয়,তা পৃথিবীতে হোক আর পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহে হোক সে সময়টা কেমন হতে পারে তার বর্ণনা নিখুঁতভাবে পাওয়া যায় ক্লোন মানবের দেশে গল্পটিতে। ‘বিগ ব্যারেলের অনন্ত যাত্রা’র মতো পৃথিবীর ভবিষ্যত সম্পর্কিত আরেকটি গল্প হলো ‘যাদের আকাশে দুটো সূর্য’। এই গল্পে লেখক দেখিয়েছেন দখল-দূষণে পৃথিবী একসময় বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠবে এবং মানুষের বিকল্প বাসস্থান হবে চাঁদ। এই গল্পে পৃথিবী শেষ পর্যন্ত সূর্যের মতো একটি জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে পরিণত হয়। এছাড়াও রয়েছে বরফাচ্ছাদিত মেরু অঞ্চল নিয়ে গল্প ‘এন্টার্কটিকা রহস্য’। এই গল্পে লেখক বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলে একটি প্রাচীন মানব সভ্যতার কথা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পৃথিবীব্যাপী রহস্যময়ী একটি প্রাণী হলো ইয়েতি। তুষার এলাকার একটি রহস্যময় প্রাণী যা কেউ দেখেছে বলেও দাবি করে। সেই ইয়েতি নিয়ে সুন্দর একটি গল্প হলো ‘ইয়েতি রহস্য’। এছাড়াও বেগুনি রশ্নির রহস্য, মঙ্গলের আগুন্তক, ব্লু হোয়েল, পৃথিবী থেমে যাবার আগে, দেবগ্রহে ভ্রমণ, চিতা রহস্য প্রভৃতি গল্পগুলো পরিপূর্ণ সায়েন্স ফিকশনের রহস্যে মোড়া। পাঠক মাত্রই গল্পের মায়ায় পড়তে বাধ্য।

ট্যাগসমূহ

অগ্নিফুল সংখ্যা অণুগল্প অনুবাদ ইতিহাস ঈদ সংখ্যা ২০২২ উপন্যাস সংক্ষেপ একালের গল্প কবিতা কলকাতার দিনগুলি কাজী নজরুল ইসলাম কাজী মহম্মদ আশরাফ গণঅভ্যুত্থান সংখ্যা গল্প চিরায়ত গল্প ছোটগল্প জসীমউদ্দিন জীবনানন্দ দাশ জীবনের গল্প নীতিগল্প পর্যালোচনা পলাশ মজুমদার পিন্টু রহমান প্রবন্ধ প্রেমের গল্প ফেলুদা সিরিজ বই বিখ্যাতদের গল্প বুক রিভিউ ব্যক্তিত্ব ভ্রমণ ভ্রমণ ডায়েরি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মাহির তাজওয়ার মিনহাজ শোভন মুভি রিভিউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপকথা শিশিরভেজা গল্প সংখ্যা শিশু-কিশোর গল্প সমকালীন কবিতা সমকালীন গল্প সাক্ষাৎকার সিনেমা সুকান্ত ভট্টাচার্য হাসির গল্প
magnifiercrossmenu