আহমেদ আববাসের গল্প


দর্পণ-এর গল্পবিষয়ক বিশেষ সংখ্যা ‘শিশিরভেজা গল্প’-তে প্রকাশিত


যেভাবে মেয়েটির সর্বস্ব হরণ করা হয়

আহমেদ আববাস


বিজয় সরণির সিগন্যালে গাড়িগুলি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। মিনিটে মিনিটে আধাঘন্টা পার হয়ে যায়, তবু সিগন্যাল উম্মুক্ত হয় না। অন্যদিন এখানে ফার্মগেট কিংবা ধানমন্ডি গমনমুখীদের জন্যে ২০ মিনিটের ভেতরেই সিগন্যালের খোলাসা পাওয়া যায়। সিগন্যালে দাঁড়ালে গাড়ির কাছে নানারকম ফেরিঅলা আসে– এই সিজনাল ফ্রুট, ফুলের তোড়া কিংবা মালা, শিশুদের বই, একহাতি একব্যক্তি নিয়ে আসে ইংরেজি বই। হিজড়ারা আসে দল বেঁধে আর আসে ভিখিরির দল। নানা ধরণের ভিখিরি হাতবিহীন, পা-বিহীন, গলগন্ডযুক্ত, পক্ষাঘাতগ্রস্থ এবং অথর্ব বৃদ্ধ যারা অপরের সাহায্যে চলে।

একটা নেভি ব্লু রঙের লংবডি ল্যান্ড ক্রুজার দামি জিপ এসে থামে ট্রাস্ট সিএনজি ফিলিং স্টেশন বরাবর। একপায়ে লাঠি ভর দিয়ে লেংচাতে লেংচাতে শ্মশ্রুমন্ডিত বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি সেই জিপের কাঁচের জানালায় গিয়ে হাত পাতে। কিন্তু কাঁচের জানালা খোলে না। ভিখিরিটি কাঁচের জানালায় থাবড়াতে থাকে, এবার জানালা খোলে এবং গাড়ির ভেতরের লোকটি ধমকের মেজাজে বলে, ‘ব্যাটা দেখছো না এটা দামি গাড়ি, এভাবে কাঁচের ওপর কেউ থাবা দেয়? কাঁচটা যদি ভেঙে যায়। তোমার চৌদ্দগুষ্টি বেচলেও তার দাম হবে না।’

‘একটা টাকা দাও বাবা।’, তবু ভিখিরিটি সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়।

‘যাও খুচরা টাকা নাই।’, বিরক্তিতে বিতৃষ্ণ হয়ে খেপে ওঠে লোকটি, ‘ব্লাডি বেগার্স।’

সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। গাড়ির ভেতর থেকে গলা বাড়িয়ে লোকটি বাইরে থুথু ফেলে। গাড়ির টানে বাতাসের তোড়ে থুথু গিয়ে পড়ে সেই ভিখিরির বামকাঁধের ওপর। ভিখিরিটি রাস্তার আইল্যান্ডে উঠতে উঠতে ক্রোধানলে গলাবাজির সঙ্গে খিস্তি করতে থাকে, ‘হালার পো, খানকির পুত, তর মায়রে বাপ। কুটি ট্যাহার গাড়ি কিনছস, এট্টা টাহা দিতে পারস না। হালা মাঙির পুত, গায়ে থুথু ছিটকাইয়া দিছস। তর ’পর আল্লাহর গজব পইড়বো।’

মধ্যরাতে শরাফত সায়েব নিজবাড়িতে তৈরিকৃত পানশালায় ঢোকে। সামনে তার হরেকরকম বিদেশি মদ– ব্রিটিশ হুইস্কি, রাশান ভদকা, স্কচ শিভাস রিগাল, ফ্রেঞ্চ শ্যাম্পেন সবই তাকের ওপর থরে বিথরে সাজানো। আজ শিভাস রিগালের বোতলের লেবেলে তার চোখ আটকে যায়। ৬০ মিলির বড় পেগটি হাতড়ে নেয়। এবং ক্রমাগত চার পেগ মারে। এ সমযে স্ত্রী রেবেকা মদ্যপানের ঘরে ঢোকে।

‘কি ব্যাপার আজ ঘুমাবে না?’

‘হঠাৎ একটা কথা আমার মনে পড়ছে।’

‘কী কথা।’

‘বিজয় সরণির সিগন্যালে একটা ফকির বারবার একটা টাকা চাইছিল। এই গরমে এসির কাঁচ খুলে রাগ হয়ে যায় । ধমকে গালি দিছি আর থুথু ফেলতে গিয়ে তার গায়ে পড়ছে।’

‘তাতে কি। দিনরাতই তো তোমরা এর চাইতে বেশি আকাম-কুকাম করছো।’

‘শালার লোকটার চেহারা কিছুটা মৃত বাবার মতো। লোকটার মতো বাবাও এক পা খোঁড়ায়ে হাঁটতো।’

‘বাদ দাও ঐসব। রাত দুইটা বাজে, তোমার ছেলে বোধহয় আজ আর ফিরবে না।’

‘না ফিরলে না ফিরুক। অন্যদিন তো শালার পুত এক-দেড় লাখ নেয়। আজ ও হাতখরচের জন্যে দু’লাখ টাকা নিয়েছে। টাকাটা খরচ করতে হবে না! নাম-করা জুয়েলারি মালিকের একটিই মাত্র ছেলে। এত সম্পদ। কিছু তো খরচ করতে হবে। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার ওপর লাভ।’

এ-জন্যে, এই জন্যেই কি ছেলের ডেইলি হাতখরচ লক্ষাধিক টাকা! টাকা থাকলে কি মানুষ এভাবেই খরচ করে! একলাখ টাকা একজন মানুষ এইদেশে কীভাবে খরচ করে? প্রাচুর্য থাকলেই কী সন্তানের হাতে বেহিসেবি টাকা দিয়ে অপরিণত বয়সে তাকে বিপথগামী করে তুলতে হবে? বেহিসেবি টাকাই তো অনৈতিকতাকে উসকে দেয়।

লক্ষলক্ষ প্রাণের রক্তস্নান এবং হাজার হাজার মা-বোনের মর্যাদা হারানোর ফসল এই বাংলাদেশ। যেখানে এখনো একজন মেধাবি গ্রাজুয়েট/মাস্টার্স তরুণ মাত্র দশ হাজার টাকা মাইনের চাকরির জন্যে ‘কিউ’ করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায় একলক্ষ টাকার মালিক যেদেশে সম্পদশালী। নিরন্নের কারণে জনক জননী সন্তানসহ যেখানে ট্রেনের চাকার নিচে আশ্রয় খোঁজে। যে-দেশের লক্ষলক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম উপেক্ষা করে কাজের আশায় মধ্যপ্রাচ্যে ছোটে। সে-দেশে, সেইদেশে কীভাবে একজন মানুষের প্রাত্যহিক পকেট খরচ লক্ষাধিক টাকা হয়!

একজন ধনাঢ্য শরাফত আলির জীবন শুরু হয়– বিনা পুঁজির ব্যাবসা থেকে। অভাবের সংসারে কৈশোরোত্তীর্ণ বয়সে হাওর বিল এলাকায় গিয়ে একজনের গজারি কাঠের পানসি নৌকো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তারপর সেটা সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে পাড়ি দেয় অজানার উদ্দেশ্যে। নিখোঁজ থাকে এক দশক। মানুষ ভুলে যায় শরাফতকে।

দীর্ঘদিন পর শরাফতকে দেখা যায় আরেক বিল এলাকায়। এ বিলে কিন্তু মাছ ধরতে কিংবা নৌকো বাইতে নয়। দেখা যায তাকে চুপিসারে, নিঃশব্দে এবং বেআইনিভাবে এধারকা মাল ওধারে আর ওধারকা মাল এধারে আনা-নেয়া করতে। এ বিলের নাম তামাবিল। মেঘালয়ের শিলং থেকে স্বদেশের অভ্যন্তরে এবং বিপরীতভাবে।

কলাকৌশল ও বিচক্ষণতার কারণে অল্পদিনের ভেতরেই কালা শরাফত সবার কাছে সম্মানিত হয় শরাফত মিয়া হিসেবে। তার দুঃসাহস, পাচারবৃদ্ধি ও গোপনে অপসারণ ক্ষমতা অবিলম্বে এবং ঝটিতি মালদার ও অর্থবান করে তোলে। দৈবাৎ পয়সা ও প্রাচুর্যে ভরপুর শরাফত মিয়া দেশের মাঝখানে রাজধানীতে এসে বিনিয়োগ করতে তৎপর হয়।

পূর্বলব্ধ জ্ঞানকে পূঁজি করে রাজধানীতে এসেই শরাফত মিয়া শুরু করে হীরা জহরতের ব্যবসা। এ ব্যাবসায় ঘাটতি নেই, বাড়তি আছে। পূর্ববর্তী সীমান্তকালের সহযোগিরাই তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। তাদের আনুকূল্যে পশার বাড়তে থাকে। আর খানাতল্লাসে সন্ধান মেলে নানা চোরাপথের সংযোগ। এতে আবিরামভাবে আয়তনবৃদ্ধি হয়ে বিস্তার লাভ করে হীরা জহরতের ব্যবসার। টাকশালে, ঘরে, সিন্দুকে, ওয়াড্রোবে টাকার পাহাড় গড়ে ওঠে। শতশত কেজি জহরত শতশত গ্রাম হীরা-জুয়েলারির বেনিয়ার প্রতিপত্তিতে কালা শরাফত এবার সায়েবে আদৃত হয়। যদিও বিগত অর্ধদশকে কোনোপ্রকার হীরা জহরত রাষ্ট্রীয়ভাবে এদেশে আমদানি করা হয়নি তবুও শরাফত সায়েবের সকল আউটলেটে গোল্ড-ডায়মন্ডের ছড়াছড়ি।

কিছুদিন আগে শরাফত সায়েবের বেহিসেবী এবং ফুর্তিবাজ একমাত্র ছেলে মারফত আলি স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে। পিতাকে জানিয়েছে, ‘বউ ঘাস ঘাস লাগে।’ এখন ছেলেটি বিবাহ বিচ্ছেদে পত্নীবিহীন। তাতে কী! এজন্যেই তো ছেলের দৈনন্দিন হাত-খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। প্রয়োজনে আরো বেশি। প্রাত্যহিক ছেলেটি এখন এ টাকা খরচ করে অমানবিক প্রণালিতে, নিকৃষ্ট পন্থায় এবং জঘন্যরকম ঘৃণিত নোংরাকাজে।

মারফতের পিতা শরাফত সায়েবও অবলীলাক্রমে এবং অনায়াসে অবৈধপথে অবারিত অর্জন পেয়ে অশোভন ও অপ্রকৃত হয়ে ওঠে। অসীম অপরাধেও অবিচল থাকে। ভাবে, এটা-ই জীবন। সে কারণে জোয়ান আত্বজের ন্যায় সে-ও একইভাবে অশ্রেয় এবং অসৎ কাজে অপব্যয় করতে সিদ্ধহস্ত। তার বয়স হয়ে গেলেও এখনো এই জনাকীর্ণ, অপ্রাচূর্যপূর্ণ ও অভাবগ্রস্থ দেশের নিরিহ, অকিঞ্চন, অসমর্থ মানুষদের লোভের টোপ দিয়ে বশ করে। কিংবা বিত্তহীন এক শ্রেণির ললনাদের অভাব ও চাহিদার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে ক্রমশ রক্ষিতা ও রূপোপজীবিনী হিসেবে গড়ে তোলে।

স্বামী ও সন্তানের অকথ্য, অমার্জিত, কলুষিত, কদর্য ও রুচিহীন কর্ম দেখতে দেখতে রেবেকার গা সওয়া হয়ে যায়। এমনকি মাঝে মাঝে দেহোপজীবিনী মেয়েদেরকে নানা অজুহাতে ঘরে নিয়ে এসে রাত কাটালেও আর কঠোরভাবে প্রতিবাদ করতে পারে না। অধিকন্তু ছেলেটি মাসে মাসে চান্দে চান্দে আচানক ‘বার্থ ডে’ ঘোষণা করে। অনেক বন্ধু-বান্ধব ইনভাইট করে। সকল সময়ই এ বার্থ ডে পার্টি সংঘটিত হয় কোনো বড় মাপের পান্থশালায়। সেখানে হলরুম ভাড়া করে নেয়। নাচগান করে এবং শেষরাতের দিকে নির্বাচিত ফিমেল অতিথিকে বুকিং রুমে তোলে।

কোনো ফাইভ স্টার বা খানদানি হোটেলে যথাযথ সংরক্ষণ না পেয়ে ছেলেটি একবার তাদের রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাড়িতে ‘বার্থ ডে পার্টি’ সেলিব্রেট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অভ্যাগত অতিথিদেরকে হলরুমের ন্যায় পানশালাতেই অভ্যর্থনা জানানো হয়। আসতে থাকে দলে দলে কিংবা জোড়ায় জোড়ায় তরুণ তরুণী। বার্থ ডে পার্টিতে এপেটাইজার হিসেবে পরিবেশন করা হয় যথাক্রমে সফ্ট ড্রিংক, হার্ড ড্রিংক, অ্যালমন্ড, কেশনাট ইত্যাদি। তারপর রকমারি ডিনার। তারপর বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরাসর।

রাত দুটোয় পার্টি সাঙ্গ করা হয়। গৃহাগত নিমন্ত্রিত অতিথিদের বিদায় বেলায় অনির্ধারিত ও অপ্রত্যাশিতভাবে শরাফত সায়েব উঠে আসে। সবাইকে শুভাশীষ জানাতে থাকে। এবং শেষে বন্দোবস্তকৃতদের অবস্থান। সন্ধির সম্মতিতে দুজন থেকে যায়। অপেক্ষাকৃত সুঠাম, রম্য এবং চিত্তগ্রাহী মেয়েটি শরাফত সায়েবেরও চোখ টানে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে কৌশলে ছেলেটিকে তার লালসার কথা জানায়। মনুষ্যেতর প্রাণীর ন্যায় শাবকের সংগৃহীত পণ্যার ওপর ক্রিয়াশীল হবার জন্যে লালায়িত হয়ে ওঠে। পূর্ব থেকেই পিতার চরিত্র সর্ম্পকে পুত্র বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল। পিতার উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে পুত্রটি বলে,‘ঘন্টা দুয়েক পরে বুঝিয়ে সুজিয়ে পাঠাতে পারি কিনা দেখি। তখন টাকা আরও লাখ খানেক বেশি লাগতে পারে।’

‘টাকার চিন্তা করিস না।’

এই হলো সভ্য পৃথিবির সেরা সৃষ্টির কার্যকলাপ। মানুষ নামের দ্বিপদী প্রাণীর গতিবিধি এবং কর্মকান্ড। এই হলো র‌্যাশনাল অ্যানিমলের ফ্যাশনেবল র‌্যাপচার। এই হলো বিত্ত বৈভবে টইটম্বুর মানুষ নামের অমানুষদের জীবন যাপন।

একই ললনার কাছে পুত্রের পর পিতার উপগমন। শিয়াল, কুত্তা বা অন্যান্য নিকৃষ্ট জানোয়ারের পিতৃ পরিচয় বোধ নেই বলে মানারও জের নেই। এ কারণে স্ত্রী জাতীয় একই প্রাণীর ওপর তারা দুই বা ততোধিক জানোয়ার অনায়াসে উপগত হয়। এটাই বিবেকহীন প্রাণিকুলে সহজাত ও জন্মগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মানুষ! এমন প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ করে কীভাবে! তবু তারা করে। এবং মহাকালের যাত্রায় একসময় তাদের কাছে একই স্থানে উপগমনের বিষয়টি একই সরলরেখায় মিলে যায়। ফলে অনুরূপ কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি মাঝে মাঝে ঘটতে থাকে। খোলাসা হবার পর আর তাদের মাঝে লাজ শরমের বালাই থাকে না। গোপনে বলে ভাবা হলেও যেহেতু উভয়েই পরিজ্ঞাত এ কারণে শাবক ও জনকের যে কেউ একজন কোনোভাবে উষসী পণ্যা রমিত রমণীকে বাগাতে পারলেই প্রমোদ ভ্রমণে দেশের বাইরে পগার পাড়।

কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকবাবে সহজলভ্য পূর্ব উপভুক্ত রমণীদের সান্নিধ্যে মারফতের মনটা একটু ক্ষুব্ধ, বিরক্ত, অপ্রীতিকর ও বীতরাগ হয়ে পড়েছিল। কদিন আগে বন্ধু উপলের মাধ্যমে একজন নতুন বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় হয়। বান্ধবীটি ছিল অবিবাহিত, একবারে অনভিজ্ঞ, আনকোরা এবং অবিমিশ্র। বছর চারেক আগে কলেজগন্ডি পেরনোয় কিছুটা বয়স হয়েছে, বিয়ে হয়নি বলে বন্ধু জুটিয়ে বিয়ে করতে পারলে মন্দ হয় না। এমন ধারণায় মেয়েটি মনে মনে পাত্রের অন্বেষণ করছিল। এ মনোবৃত্তি অধিকাংশ মানুষের মনের গভীরে প্রোথিত থাকে। এটা খুবই স্বাভাবিক, সামাজিক এবং অতি নির্মল উপলব্ধি।

মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলার জন্যে জমকালো ‘বার্থ ডে’ উদযাপনের লক্ষ্যে ঘটা করে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অধিকাংশ বন্ধুরা বুঝতে পারে, মারফত নতুন কোনো বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছে। নতুন বান্ধবীকে বরণ করতে এ অভিনব কারসাজি। কোনো কোনো মাসে বন্ধুরা একাধিকবার তার বার্থ ডে সেলিব্রেট করে। এবারের এই জন্মদিন পালনেও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় গুলশানের তারকাখচিত হোটেলের বিশাল বলরুম ভাড়া নেয়া হয়। এবং রাতযাপনের জন্যে একটি ভিআইপি লাউঞ্জ।

বার্থ ডে পার্টি শেষে মাঝরাতে যার যার মত সবাই ঘরমুখো হয়। কিন্তু নতুন বান্ধবী যেতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয়। বান্ধবীর সহগামী রিলেটিভ ছেলেটি মেয়েটিকে ছেড়ে যেতে নাছোড়বান্দা হওয়ায় তাকে প্রহার করে প্রস্থানে বাধ্য করা হয়। প্রহৃত পরিজন ভাবে, এ গভীর রাতে তার অভিযোগ কেউ শুনবে না। সবাই অর্থের খপ্পরে পড়ে সেবক হয়ে আছে। বিশুদ্ধ মেয়েটি পার্টিতে অংশগ্রহণ করলেও অনুষ্ঠানশেষে এমন জালে আটকা পড়বে ভাবতে পারেনি। অসংযত, লম্পট মারফতের শক্তি ও অপকৌশলের কাছে হেরে যায় আনাড়ি মেয়েটি।

মেয়েটি রাতভর নাজেহাল ও জেরবার হলেও অর্থের কাছে মাথা নত করেনি। তার সমঝোতা সম্মতির জন্যে দুরাচার ও ধড়িবাজ মারফত দশলক্ষ টাকা সেধেছিল। শুচিশুদ্ধ, অপাপবিদ্ধ মেয়েটি তার মর্যাদা মুদ্রার পাল্লায় তোলেনি।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তা অর্থের কাছে নিজকে বিকিয়ে ফেলে। যে কারণে পরদিন নির্যাতনের কেস দিতে গেলে উল্টো মেয়েটিকে ফাঁসাতে চায় পুলিশ। মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলে একজন করলো ধর্মনাশ এবং সর্বস্বান্ত, অপরজন আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকেও আরোপের ক্ষেত্রে করতে চাইছে পাল্টা চক্রান্ত।

মেয়েটি আর কুল পায় না। কোথায় যাবে! কার কাছে যাবে। এ ধরাধামে সবাই তো কড়ির কিঙ্কর।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
গল্প

শব্দ

শব্দগুলো ফিরে ফিরে কানে আসছে। এক চাপা শব্দ। থেকে থেকে যা অস্পষ্টতার চাদরে মুড়ে থেকেও অস্পষ্ট থাকছে না। এর উৎস,

গল্প

আলফাঁস দুদের গল্প: লাস্ট ফ্রেঞ্চ ক্লাস

আলফাঁস দুদে একজন ফরাসি গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং কবি। তিনি ১৮৪০ সালের ১৩ মে ফ্রান্সের নিমেসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাহিত্যের

গল্প

ঘোলাটে চাঁদের আলোয়

মধ্যরাতকে সঙ্গী করে হেঁটে চলেছে নূরা পাগলা। চোখে বুনো উন্মজ্জন জাগিয়ে চরাচরের গভীর ঘুমকে তাচ্ছিল্য করে, তার পথচলা অজানা গন্তব্যে।

বিনোদন

আমাদের নবীন কারিগর, ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’ এবং ওটিটি প্লাটফর্ম

ওটিটি (Over the Top) প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের পথচলা খুব বেশি দিনের নয়। শুরুতে কয়েকটি দেশীয় প্ল্যাটফর্ম কাজ শুরু করলেও দর্শকের চাহিদার