অনেক অনেক বছর আগে, চীনের এক পাহাড়ে রহস্যময় একটি পাথর ছিল, যা আকাশের শক্তিতে পূর্ণ ছিল। একদিন, এই পাথর থেকে একটি জীবন্ত বানর বেরিয়ে এলো। সেই বানর ছিল অসাধারণ—জন্ম থেকেই সে ছিল শক্তিশালী, সাহসী, এবং বুদ্ধিমান। তার নাম হলো সান উকং—যাকে সবাই পরবর্তীতে বানর রাজা হিসেবে চিনতে শুরু করল।
সান উকং ছিল অত্যন্ত কৌতূহলী এবং মুক্ত আত্মার অধিকারী। সে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে লাগল এবং বনের অন্যান্য বানরদের সাথে বন্ধুত্ব করল। একসময় বানরেরা তাকে তাদের রাজা হিসেবে বরণ করে নিল। তবে সান উকং-এর কৌতূহল কখনও থামেনি। সে আরও শক্তিশালী ও জ্ঞানী হওয়ার জন্য একদিন তার রাজ্য ছেড়ে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।
বিভিন্ন গুরু এবং দেবতাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, সান উকং অদম্য শক্তি অর্জন করল। সে শিখল উড়তে, রূপ পরিবর্তন করতে, এবং অসীম শক্তিধর হয়ে উঠতে। সে একসময় এক বিশেষ অস্ত্র, একটি বিশাল রকমারি লাঠি (Ruyi Jingu Bang), অর্জন করল, যা সে ইচ্ছামতো ছোট-বড় করতে পারত। এই লাঠিটি ছিল তার সবচেয়ে বড় শক্তির প্রতীক।
কিন্তু সান উকং-এর আত্মবিশ্বাস তাকে অহংকারী করে তুলল। সে আকাশের দেবতাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে শুরু করল। স্বর্গের অধিপতি জেড সম্রাট সান উকং-এর শক্তির কথা শুনে তাকে স্বর্গে আমন্ত্রণ জানালেন, তবে তাকে খুব সাধারণ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন। সান উকং বুঝতে পারল যে তাকে সম্মান করা হয়নি। এতে সে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হলো এবং স্বর্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে লাগল। সে দেবতাদের অস্ত্রাগার লুট করল, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, এমনকি মৃত্যুকে পরাজিত করার চেষ্টা করল। তার শক্তি এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, দেবতারা তাকে থামাতে ব্যর্থ হলেন।
অবশেষে, স্বর্গের দেবতারা সাহায্যের জন্য গৌতম বুদ্ধ-এর দ্বারস্থ হলেন। বুদ্ধ সান উকং-এর অহংকার দেখলেন এবং তাকে চ্যালেঞ্জ দিলেন। বুদ্ধ বললেন, “তুমি যদি আমার হাতের বাইরে যেতে পারো, তবে তুমি জিতবে।” সান উকং তার অদ্ভুত ক্ষমতার উপর ভরসা রেখে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল এবং উড়ে অনেক দূরে চলে গেল। কিন্তু সে বুঝতে পারল না যে, সে আসলে বুদ্ধের হাতের মধ্যেই ছিল।
শেষ পর্যন্ত বুদ্ধ সান উকং-কে তার বিশাল হাতের মধ্যে ফেলে পাঁচটি আঙুলের নিচে চাপা দিয়ে দিলেন, যা পাঁচটি পর্বতের সমান ছিল। সান উকং অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে মুক্ত করতে পারল না। সে পাঁচশো বছর ধরে সেই পর্বতের নিচে বন্দী হয়ে রইল।
এই দীর্ঘ সময়ের পর, একদিন ত্রিপিটক নামে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বুদ্ধের নির্দেশে পবিত্র শাস্ত্র আনতে রওনা হলেন। ত্রিপিটকের যাত্রায় সাহায্য করার জন্য সান উকং-কে মুক্ত করা হলো। তবে তাকে শুধরে নেওয়ার জন্য বিশেষ একটি জাদুকরী মাথার বন্ধনী পরানো হয়েছিল, যা ত্রিপিটক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারতেন।
সান উকং এবার ত্রিপিটক-এর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল ভারত থেকে পবিত্র শাস্ত্র সংগ্রহের জন্য। তাদের পথে নানা বিপদ, দৈত্য, এবং দানবদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু সান উকং তার অসীম শক্তি, বুদ্ধি, এবং সাহস দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করল এবং ত্রিপিটকের যাত্রা সফল হলো।
এভাবেই সান উকং তার অহংকারকে পরাজিত করে সত্যিকারের বীর এবং বুদ্ধের উপাসক হয়ে উঠল। তার শক্তি এবং সাহসিকতা তাকে চীনা রূপকথার অন্যতম কিংবদন্তি চরিত্র হিসেবে অমর করে রেখেছে।