মনজুরুল ইসলামের গল্প
বাড়ীর পথে হাঁটছে আনোয়ার। সারাদিনের হাড়ভাঙা শ্রম। ক্লান্ত সর্বাঙ্গ শরীর। তবুও দ্রুত পায়ের গতি। কতকটা প্রতিযোগিতার অশ্বের মতো। প্রতিদিন পাঁচটায় বাড়ী যায়। আজ দেরী হচ্ছে। অতিরিক্ত পোস্টার লাগানোই দেরীর কারণ। অনবরত পোস্টার লাগিয়েছে আজ। যে দেয়ালগুলি ফাঁকা পেয়েছিল সেখানেই লাগিয়েছে। প্রতি পোস্টার পাঁচ টাকা। বড় জোড় পঞ্চাশ থেকে একশোটি পোস্টার লাগানোর সুযোগ পায় ও। আজ পেয়েছিল অনেক বেশী। এমন সুযোগ সব সময় আসে না। তাই হাতছাড়া করতে চায়নি সুযোগটি। দেয়ালে পোস্টার লাগানো, লিফলেট বিতরণ ও প্রচারের কাজ করে আনোয়ার। সচরাচর রাতেই পোস্টার লাগায়। অতিরিক্ত চাপেই আজ দিনের বেলা লাগিয়েছে। চেহারা দেখলে সহজেই প্রতিভাত হয় শ্রমিকের আপাদমস্তক প্রতিমূর্তিটি। বয়স ত্রিশ এর আশপাশে। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরের রঙটি হয়েছে কৃষ্ণ বর্ণের। ঘামের যেন স্রোত বইছে মুখাবয়বে। শুকনো চুলগুলি নেতিয়ে পড়েছে মাথায় জমে থাকা ঘামের স্পর্শে। তৃষ্ণায় কাঠ হয়ে এসেছে কণ্ঠস্বর। সুতি টি-শার্টটি লেপ্টে গেছে বুকের সাথে। বিকেল গড়িয়ে সূর্যের অস্তরাগ দৃশ্যমান। গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে সে রাগের বর্ণ।
প্রান্তনগর শহরের জিরো পয়েন্টে এসে দাঁড়ালো আনোয়ার। সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতে হবে। যানবাহনের শব্দ এসে লাগছে কানে। অস্তরাগের বিষণ্ন আলো এসে পড়ছে মুখে। চেষ্টা করলো সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পাবার। বাম হাতটি কপালে লাগিয়ে তাকালো অস্তরাগের দিকে। বুঝতে চেষ্টা করলো সন্ধ্যে হতে আর কত দেরী। একইসাথে ঘর্মাক্ত ডান হাতটি দিয়ে চেক করলো মানিব্যাগ। অস্তিত্ব টের পেয়ে অনুভব করলো স্বস্তি। এ জায়গায় মানিব্যাগ খোয়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। তাই প্রতিদিনই চেক করে এখানে। অবশ্য কোনোদিনও মানিব্যাগ হারায় নি ও। তবুও চেক করে নিয়মিত। গরীবের একদিন মানিব্যাগ খোয়া গেলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই বিলাসিতার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া ধনীরা যদি ভালো থাকার জন্যে নিয়মিত শরীর চেকআপ করতে পারে তবে দরিদ্ররা মানিব্যাগ চেক করে ভালো থাকবার চেষ্টা করলে দোষ কোথায়? হয়তো এমন ভাবনাই ওকে সাবধানী করে তোলে।
ক্লান্তি বোধ করলেও মনটা ভালো আজ আনোয়ারের। মোট তিনশো পোস্টার লাগিয়েছে। উপার্জন পনেরশ’। রাস্তার ওপার থেকেই দেখছিল মিষ্টির দোকানটি। রাস্তা পেরিয়েই প্রবেশ করলো দোকানে। আলাদা একশত টাকা দিয়ে একমাত্র কন্যার জন্য কিনলো দুশো পঞ্চাশ গ্রাম মিষ্টি। এর বেশী ক্রয়ের সুযোগ নেই। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মিষ্টির দাম। শুধু মিষ্টি নয়, সবকিছুরই দাম বেড়ে চলে লাফিয়ে লাফিয়ে। শুধু বাড়ে না শ্রমিকের ঘামের মূল্য-ক্ষোভ নিয়ে ভাবে আনোয়ার। ‘এত তুলতুলে নরম মিষ্টি আমার পেটে গেলে আমি টেরই পাবো না মামনি। কড়কড়ে শক্ত মিষ্টি ছাড়া আমার ভালো লাগে না।’ বাবা, তুমি মিষ্টি খাও না কেন? মেয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর দেয় আনোয়ার। বাবার উত্তরটি মেয়ের কাছে ব্যাখ্যা করে আয়শা। আনোয়ারের স্ত্রী। আর সকরুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আনোয়ারের চোখের দিকে। বিয়ের প্রথম দিকে নিয়মিতই চল্লিশ টাকা দিয়ে দুটো মিষ্টি নিয়ে আসতো আনোয়ার। ঘরে প্রবেশ করেই আয়শার মুখে একটি পুরে দিয়ে নিজেও খেত একটি। অতঃপর জড়িয়ে ধরতো পরম মমতায়। সে দৃশ্যটি আর স্মরণ করতে চায় না আয়শা। গরীবের মনে এমন দৃশ্য পুষে রাখতে নেই। পুষে রাখলেই কষ্ট বাড়ে। আর এ কষ্ট কোনো কাজে আসে না, বরং ব্যাঘাত ঘটায় কাজের, অনুশোচিত হতে হয়।
ইতোমধ্যে মূল সড়ক পেরিয়েছে আনোয়ার। হাঁটছে গলি পথ ধরে। হাতে মিষ্টির ছ্ট্টো প্যাকেট। যখনই দেখছে তখনই মেয়ের প্রতিচ্ছবিটি ভেসে উঠছে। আর মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই পৌঁছে যাবে। আনোয়ারের মা মারা গিয়েছিল পূর্বেই। মায়ের মৃত্যুর পরের বছরই বাবাও আর থাকেননি। অশিক্ষিত হলেও মানুষকে ভালোবাসবার গুণ ছিলো আনোয়ারের বাবার। নিজেকে উজাড় করে ভালোবাসতো মানুষকে। আর ভীষণভাবে ভালবাসতো স্ত্রীকে। বাবার মতো আনোয়ারও মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে আয়শাকে। বাড়ীতে এলেই ভুলে যায় সকল দুঃখ। ধনীর সাথে দরিদ্রের এই এক পার্থক্য। ধনীদের কাউকে ভালোবাসবার পূর্বে অনেক ভাবতে হয়। কেউ কেউ আবার ভালোবাসতে হিসেবের খাতাও খুলে বসে। বাড়ীতে নিয়ে আসে ব্যবসা, চাকরি আর উদ্বিগ্নতা। বিছানায় এ পাশ ওপাশ করতেই কেটে যায় পুরো রাত। অধিকাংশ দরিদ্রই হিসেব কষে ভালোবাসে না। তাদের ভালোবাসা হয় নির্মোহ। কাজ শেষে বাড়ী আসে তারা স্বস্তি নিয়ে। ঘুমোতে থাকে দুশ্চিন্তাবিহীন।
বাবা-মাকে ভীষণ অনুভব করে আনোয়ার। তাদের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠলেই ধক করে উঠে ওর দয়ালু হৃৎপিণ্ডটি। শেষ সময় পর্যন্ত আনোয়ারের সাথে ছিলো তার বাবা মা। সীমিত সামর্থ্য দিয়ে বাবামাকে সুখে রাখবার চেষ্টা করেছিল আনোয়ার। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরদিনই জমির বণ্টণে ভাইদের সাথে বসতে হবে ভাবতে পারেনি ও। ভীষণ আক্ষেপ করেছিল। প্রতিবাদও জানিয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বরং আক্ষেপের পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিল সবচেয়ে কম অংশ। এ নিয়ে আজও দুঃখ নেই তার। বিষণ্ণতাহীন জীবন অতিবাহিত করাই জীবনের সার্থকতা। বাড়ী, গাড়ি আর সম্পত্তি তো সুখের লাইসেন্স দেবে না। এমন দার্শনিক ভাবনা প্রায়ই প্রত্যক্ষ হয় ওর মাঝে। জীবনের স্ব-স্ব বোধ থেকে পৃথিবীর সবাই যে দার্শনিক তার প্রমাণ পাওয়া যায় ওকে দেখলে। সারাদিন পরিশ্রম করলেও ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে হাসি। সন্ধ্যের পর বাড়ীতে আসলে প্রাণোচ্ছ্ল ভাবটি বৃদ্ধি পায়। উচ্ছলতা নিয়েই বাড়ীতে আসলো আনোয়ার। মিষ্টির প্যাকেটটি হাতেই। কোথায় মেয়েকে দেখাবে, উলটো মেয়েই দেখতে থাকলো তাকে। বিছানায় শুয়ে। মাথায় পানি ঢালছে আয়শা। আনোয়ারের ‘আ’ আর আয়শার ’শা’ নিয়ে মেয়ের নাম রেখেছে ওরা আশা। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আশা। বয়স সাত। সবে ক্লাস টুতে উঠেছে। মাথায় হাত দিয়েই আঁতকে উঠলো আনোয়ার। উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিতে তাকালো আয়শার দিকে।
‘দুপর্যা থাকি গা গরম।’ মুখের ভাঁজে বিষণ্ন ভাব নিয়ে বললো আয়শা।
তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। এমন একটি আবেদন জোরালোভাবে ফুটে উঠলো তার মাঝে। দেরী করলো না আনোয়ার। গেঞ্জি খুলে দ্রুত শার্টটি গায়ে দিলো।
‘তুই বাড়ীত থাক, চিন্তা করিস না।’ বুকের গহ্বরে আশামনিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরুলো আনোয়ার। উঠলো রিকশায়। পকেটে থাকা কড়কড়ে নোটগুলির মতোই যেন মনে হলো রিকশাটিকে। হোমিও নাকি এলোপ্যাথ? কোন ডাক্তারের কাছে যাবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না এই মুহূর্তে। দ্রুত এগিয়ে চলেছে রিকশা। একই সাথে দ্রুত চিন্তা করছে আনোয়ার ।
‘টাউন হোমিওতেই যান ভাই।’ এবার আস্তে করে রিকশাওয়ালাকে বললো আনোয়ার।
ভরাট সন্ধ্যায় শহরে ভীড় থাকে বেশী। রিকশার রঙ চকচকে হলেও গতি বাড়ে না। চলে ধীরে ধীরেই। নিজেদের অসুখ হলে সাধারণত হোমিও ডাক্তারের কাছেই যায় ওরা। কিন্তু কেন জানি এই মুহূর্তে মেয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছে আনোয়ার। ‘ভালো ডাক্তারের কাছোত নিয়া যান’– আয়শার পরামর্শও ভাবাচ্ছে তাকে। ভেবে চিন্তে কথা বলে আয়শা। স্ত্রীর মতামতকে প্রাধান্য দেয় আনোয়ার। হঠাৎ বাবা বলে ডেকে উঠলো আশা। ডাক শুনে মেয়ের কপালে হাত রাখলো আনোয়ার। কপালে গরমের তীব্রতা দেখে আঁতকে উঠলো। হোমিও ডাক্তারের কাছে যাবার সকল ভাবনা উবে গেল মুহূর্তেই। ততক্ষণে রিকশা এসে দাঁড়ালো হোমিওপ্যাথ চেম্বারের সামনে। চেম্বার দেখেই শিউরে উঠলো আনোয়ার। মেয়েকে এখানে দেখাবে কি না দোলাচলে ভুগতে থাকলো। নিজের চোখকে ঢেকে রাখতে চাইলো চেম্বার থেকে। দাঁড়িয়ে থাকতে অস্বস্তিও বোধ করলো ভীষণভাবে। অথচ এ চেম্বারটিই তার পছন্দের। অসুখ হলে ঔষুধসহ বড়জোর দুশো টাকা খরচ হয়। অনায়াসে মেয়ের জন্য এক পোয়া মিষ্টিও কিনতে পারে। আর অসুখও ভালো হয়। এ মুহূর্তে আর ভরসা পাচ্ছে না আনোয়ার। সিদ্ধান্ত নিলো হেলথ কেয়ারে যাবার।
‘ভাই, তোমরা না হয় হেলথ কেয়ারোতেই যাও।’, রিকশাওয়ালাকে বললো আনোয়ার। বলবার সাথে সাথেই বুকের ভেতর হালকা ভাব অনুভব করলো। আমার রাজকুমারীর ব্যাপারে আমি কি আর অবহেলা করতে পারি? ফিসফিস করে কৃত্রিম হাসি নিয়ে বলেই দেখতে থাকলো নিষ্পাপ মেয়ের গোলাপী মুখখানি। বাবার কথা শুনতে পেল কি না আশা, বোঝা গেল না। জ্যামের কারণে দাঁড়িয়ে আছে রিকশা। স্বাধীনতা চত্বরে দাঁড়াতেই হয়। এই চত্বরটি অতি আপন আনোয়ারের। কত শত পোস্টার লাগিয়েছে এখানে তার হিসেব নেই। কিছু সময় পূর্বেও এখানেই কাজ করেছিলো ও। শহরের ঝলমলে সৌন্দর্য পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করে এখানেই। চারদিক থেকে বিজলী বাতি এসে রাঙিয়ে তোলে সড়ককে। সেদিকে তাকালো না আনোয়ার। মেয়ের অসুস্থতায় মানসিক কষ্টে কিছুটা ভেঙ্গে পড়ছে ও । তাছাড়া বোধকরি শহরের এই সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেও চায় না ও। এ শহর ওদের নয়। ওদের শহরে মাথা উঁচ করে দাঁড়াতে পারে না কোনো স্বপ্ন। সেখানে বাস করে শুধুই অন্ধকার। এমন ভাবনার ডানা বিস্তৃত করতেই হর্ণ বেজে উঠলো চারিদিকে। জ্যাম ভেঙে যাবার সাথে সাথেই চলতে থাকলো রিকশা। রাস্তা ফাঁকা থাকায় চলতে থাকলো দ্রুত। এক এক করে অতিক্রম করলো সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। হেলথ কেয়ারের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে ওরা। এবার মেয়েকে বিরামহীন অনুপ্রেরণা দেয়া থেকে বিরত থাকলোআনোয়ার।
চারতলা ভবনের সামনে এসে দাঁড়ালো রিকশা। প্রান্তনগর শহরের অতিপরিচিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পকেট থেকে বিশ টাকার একটি নোট বের করলো আনোয়ার। রিকশাওয়ালাকে দিয়েই বুকে নিলো মেয়েকে। সিঁড়ি বেয়ে প্রবেশ করলো অভ্যর্থনা কক্ষে। মেডিসিন ডাক্তারের খোঁজনিয়ে উঠে গেল দোতলায়। চেম্বারের কাছে এসেই কোল থেকে নামালো আশাকে। লাগোয়া হলুদ রঙের অপেক্ষমান চেয়ারে বসিয়ে দিলো। সিরিয়ালের জন্য আসলো এ্যাটেনডেন্টের কাছে। ডাক্তারের মতো ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘকায় এ্যাটেনডেন্ট। হাতে বেশ কিছু রির্পোট। তাকে ঘিরে ধরেছে রোগীর স্বজন। মফস্বল শহরগুলোর এই এক সমস্যা। একজন রোগীর সাথে ন্যূনপক্ষে তিনজনের আসা চাই। কেউ কেউ আবার গ্রাম থেকে ভাড়া করা লোকও নিয়ে আসে। তখন সংখ্যাটা আরো বেড়ে যায়। সেই সাথে বাড়ে ভোগান্তি এবং ব্যয়। তাছাড়া ভাড়া করা সহযোগীর আচরণে মনে হয় দাওয়াত খেতে এসেছে।
আনোয়ারও ঘিরে ধরলো এ্যাটেনডেন্টকে। সাহস নিয়েই হাত ধরলো এ্যাটেনডেন্টের। দেখিয়ে দিল চেয়ারে বসে জ্বরে কাঁপতে থাকা মেয়েকে। দয়া প্রত্যক্ষ হলো এ্যাটেনডেন্টের ফর্সা মুখে। নোটবুকে লিখে নিলো আশার নাম। ইশারায় আনোয়ারকে যা বললো তার মমার্থ দাঁড়ালো এই যে– ‘আপনি অপেক্ষা করুন, সুযোগ হলেই আমি ডেকে নিচ্ছি।’ ভরসা পেল আনোয়ার। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে থাকলো চেয়ারেই। আশপাশের উৎসাহী লোক নানা প্রশ্ন করতে থাকলো তাকে। অপ্রয়োজনীয় আগ্রহে ভরা প্রশ্নে বিরক্তি বোধ করলো আনোয়ার। উত্তর না দিয়ে মেয়ের মাথায় অনবরত বুলাতে থাকলো স্নেহের হাত। মাঝে মাঝে তাকালো এ্যাটেনডেন্টে গাঢ় তিলযুক্ত ফর্সা মুখমণ্ডলে। অবশেষে ডাক এলো আশার। প্রবল গতিতে মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করলো চেম্বারে। মনে হলো যুদ্ধ জয় করে এই মুহূর্তে দেশে ফিরেছে ও। চেম্বারে ঢুকে বসলো চেয়ারে। কোলে আশামনি। ডাক্তারের ইশারায় বেডে বসালো আশাকে এবং পরীক্ষা করতে থাকলো ডাক্তার। উদ্বিগ্ন হয়ে মেয়েকে দেখতে থাকলো আনোয়ার। দেখা শেষ হলেই চারটি পরীক্ষা করতে বললেন আনোয়ারকে।
‘মনে হচ্ছে তেমন জটিল কোনো সমস্যা না। টেস্টগুলো করে নিয়ে আসুন?’, হাসোজ্জ্বলমুখে বললেন ডাক্তার। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই শুনতে হয়। সমস্যা না থাকলেও টেস্ট করবার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে না কেউ। ডাক্তারের কথা শুনবার পরেও দাঁড়িয়ে রইলো আনোয়ার। ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়েই আশ্চর্য হলো। আপেলের মতো চকচকে গোল মুখখানির সাথে মেলাতে থাকলো সকালে দেয়ালে লাগানো পোস্টারের মুখখানি। নামটি দেখেই নিশ্চিত হলো এই ডাক্তারেরই তো পোস্টার লাগিয়েছে ও। পোস্টার লাগানোর দৃশ্যটি আপনা আপনি ভেসে উঠলো ওর মননে। কড়কড়ে মোটা রঙিন কাগজের শব্দ যেন আঘাত করতে থাকলো ওর কানে। সেই সাথে ভেসে উঠলো আঠা দিয়ে অত্যন্ত যত্ন সহকারে দেয়ালে লাগানো পোস্টারের দৃশ্যটি। কিছু একটা বলতে চাইছে-বুঝতে পারলেন ডাক্তার।
‘কি, কিছু বলবেন?’ একটু জোরের সাথে আনোয়ারকে বললেন ডাক্তার।
‘স্যার, আইজক্যা সারাদিন আপনারই পোস্টার লাগাইছি। একটু যদি কম করি রাইখতেন।‘, একটি ম্লান হাসি ফুটিয়ে উঠলো আনোয়ারের মুখাবয়বে। ওর এই হাসোজ্জ্বল মুখের অভ্যন্তরে অনুনয়ের সুর যে লক্ষিত হলো তা দৃশ্যমানতার বাইরে রইলো না।
‘তাই নাকি! আচ্ছা আগে ভিজিটের টাকা দিন তারপর দেখা যাবে।’
ভিজিটের এক পয়সাও কম রাখলেন না ডাক্তার। এত টাকা ভিজিট হতে পারে চিন্তাও করেনি আনোয়ার। বোধকরি চিন্তাও করেন না দেশের সচেতন মানুষরা। আর তাদের এই নীরবতার সুযোগ নিয়েই ভিজিট বাড়িয়ে চলে ডাক্তার। ভিজিটের পরিমাণ এক হাজার ছাড়িয়ে গেলেও সচেতন নাগরিকরা জেগে উঠবেন কিনা সেটিই ভাববার বিষয়। বিশেষত শ্রমিক শ্রেণীর জন্য। যাই হোক, ভিজিটের ৮০০ টাকা দিয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে আশাকে নিয়ে টেস্ট করতে গেল আনোয়ার। রক্ত দিয়ে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো অভ্যর্থনা কক্ষের সামনেই। মেয়েকে একটি ম্যংগো জুস খাওয়ানোর চেষ্টা করলো আনোয়ার। কিন্তু কোনোভাবেই পারলো না। অথচ ম্যাংগো জুস পেলে এই আশাই নিমিষেই শেষ করে ফেলে পুরো জুস। মেয়েটার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, বুঝতে পারছে আনোয়ার। অবলীলায় বিস্ময় অনুভূতি প্রবেশ করছে তার স্নায়ু থেকে স্নায়ুতে। সারা শরীরও জ্বলছে শহরের বিজলী বাতির তাপের মতো। গ্যাসট্রিকের সমস্যা নেই আনোয়ারের। দুপুর থেকে খায়নি এখনো। টেনশনও করেছে প্রচুর। হয়তো এ কারণেই জ্বলছে শরীর। ইচ্ছে করলেই বাড়ীতে খেয়ে আসতে পারতো। খেয়ে আসলে বিষণ্ণতা কাজ করলেও শরীর যে জ্বলতো না আনোয়ারের তা অনায়াসেই বলা যায়। আশামনির টেস্ট রিপোর্ট প্রস্তুত। টাই পরিহিত অফিসারদের মুখে আশার নাম শুনে নিশ্চিত হলো আনোয়ার।এত তাড়াতাড়ি যে টেস্ট রিপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে ভাবেনি ও। পূর্বের অভিজ্ঞতায় ছেদ পড়লো আনোয়ারের। সরকারি হাসপাতালের সাথে প্রাইভেট হাসপাতালের পার্থক্য বুঝতে পারলো সহজেই। রিপোর্টের জন্য দাঁড়ালো।
‘মোট পনেরশ টাকা।’ সাদা শার্টের সাথে লাল টাই পরিহিত সৌম্য চেহারার একজন কর্মকর্তা বললেন আনোয়ারকে।
টাকার পরিমাণ শুনেই হতভম্ব হলো আনোয়ার। মানিব্যাগ থেকে সাতশত টাকা বের করে তাকিয়ে রইলো কর্মকর্তার দিকে। কড়কড়ে নোটগুলি গোনার শব্দ শ্রবণে এলো আনোয়ারের। তিনশত পোস্টার লাগিয়ে উপার্জনের অর্থ।
‘আরো ৮০০ টাকা লাগবে।’, কিছুটা জোরের সাথে বললেন কর্মকর্তা।
‘এইটাতেই হইবে ভাই, রাখেন। ডাক্তারের সাথে হামার ভালো সম্পর্ক।’, ভাঙা কণ্ঠে বললো আনোয়ার। কর্মকর্তা টাকা ফেরত দিতে চাইলেও আনোয়ার রাখতে বললো।
‘তাহলে আপনি ডাক্তারের কাছ থেকে সুপারিশ নিয়ে আসেন। আর আনতে না পারলে কালকে এসে বাকী টাকা দিয়ে রিপোর্ট নিয়ে যাবেন।’ নিরস কণ্ঠ প্রতিভাত হলো কর্মকর্তার কণ্ঠে। তার কথাগুলি বারুদের মতো এসে বিঁধলো আনোয়ারের বুকে। কাতর দৃষ্টি নিয়ে তাকালো মেয়ের দিকে। ক্লান্তিতে দু’চোখ বুজে গেছে আশার। শুভ্র মুখখানি মলিন হয়েছে নেতিয়ে পড়া বাসি ফুলের মতো। মেয়েকে রেখে ডাক্তারের কাছে যাবার সাহস পেল না আনোয়ার। চওড়া কাঁধে আবারো মেয়েকে নিয়ে উঠলো দোতলায়। দূর এ্যাটেনডেন্টকে দেখতে পেয়ে আশায় বুক বাঁধলো ও। কতকটা দৌড়ের মতো হাঁটতে থাকলো। এ্যাটেনডেন্টের কাছে গিয়ে খোঁজ করলো ডাক্তারের।
পূর্বের মতোই ভীড় রয়েছে চেম্বারে। রিপোর্ট দেখানোর অপেক্ষাতেও বসে আছে অনেকই। ডাক্তারের মতো ভাব নিয়ে থাকা এ্যাটেনডেন্টও আছেন স্ব-মূর্তিতে। বিল কমানোর জন্য সাহস করেই এ্যাটেনডেন্টকে বললো আনোয়ার। অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে রোগীদের সাথে প্রবেশ করতে দিলো আনোয়ারকে। ডাক্তার ধারাবাহিকভাবে দেখতে থাকলেন রোগীদের। মনে মনে অনুরোধের কথাগুলো সাজিয়ে নিলো আনোয়ার। অনুনয়ের ভঙ্গিতে তাকিয়েই থাকলো ডাক্তারের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর আনোয়ারের দিকে তাকালেন ডাক্তার। আনোয়ারের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে প্রেসক্রিপশনে কিছু একটা লিখেই কলিং বেল চাপলেন ডাক্তার। অকস্মাৎ বন্যার পানির মতো চেম্বারে প্রবেশ করলো নতুন রোগীসহ রোগীর স্বজন। এক ধরনের নির্ভার ভাব নিয়ে চেম্বার থেকে বের হলো আনোয়ার। চল মা, রিপোর্ট নিয়ে আসি। জড়ানো গলায় বলতে বলতেই নয়নের মনিকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে চলে গেল অভ্যর্থনা কক্ষে। দ্রুতই অভ্যর্থনা কক্ষে এসে বসিয়ে দিলো আশাকে। এই মুহূর্তে রিপোর্ট গ্রহণের জন্য প্রচুর ভীড়। দ্রুত রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে না পারলে রাতে শহরেই থাকতে হবে শহরের বাইরে থেকে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের। আর গুনতে হবে অধিক খরচ। অনেক কষ্টে ভীড়কে জয় করে কর্মকর্তার কাছাকাছি আসলো আনোয়ার। প্রেসক্রিপশন চাওয়া মাত্রই হাতে ধরিয়ে দিলো আনোয়ার। ভেতরে ভেতরে এক ধরনের পুলক ভাব অনুভব করলো আনোয়ার।
‘ডাক্তার ১০০ টাকা ছাড় দিয়েছেন। আরো ৭০০ লাগবে।’ কর্মকর্তার এমন কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো আনোয়ার। কিছু বলবার আগেই প্রেসক্রিপশনটি ফেরত দিলেন কর্মকর্তা। ‘হয় ডাক্তারের কাছে পুরোটাই ছাড় নিয়ে আসেন নয়তো টাকা দিয়ে রিপোর্ট নিয়ে যান।’ কর্মকর্তার কথাটি তার কানের মধ্যে অনবরত সৃষ্টি করতে থাকলো হতাশামিশ্রিত প্রতিধ্বনির। যাই হোক না কেন, শেষবারের মতো ডাক্তারকে অনুরোধ করবে। ছাড় নেয়া না গেলেও অন্তত কোনোভাবেও যদিও এক দুটি ট্যাবলেটের নাম লিখে নেয়া যায়। এবার নয়নের মনিকে অভ্যর্থনা কক্ষের অপেক্ষমান লাগোয়া চেয়ারে বসে রেখেই ছুটলো ডাক্তারের চেম্বারে। হাতে প্রেসক্রিপশন আর চোখমুখে উদ্বিগ্ন ভাব নিয়ে ছুটে চলেছে আনোয়ার। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ডাক্তার চেম্বারে আসলো।
‘স্যার তো নাই, এইমাত্র চলে গেল।’ আনোয়ারের অঙ্গভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেই এ্যাটেনডেন্ট বললো। হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছেন প্রকৃত ব্যাপারটি। এবার অভ্যর্থনা কক্ষের অফিসারের মুখগুলি আপনাআপনি ভেসে উঠলো আনোয়ারের। প্রেসক্রিপশন ফেরত দেবার সময় তাদের ব্যাঙ্গাত্মক হাসিটি প্রচুর কষ্ট দিয়েছিল ওকে। মনে হয়েছিল– তারা না হাসলে আমরা কাঁদবো কীভাবে। গরীবের কাজই তো হলো নিজেরা কেঁদে কেঁদে ধনীদের হাসির রসদ জোগানো। হতাশায় ভেঙ্গে পড়লো আনোয়ার। ওদের কাছে অনুরোধ করেও লাভ হবে না জেনেও ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকলো সেদিকেই। আশাকে কোলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অফিসারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু একবারের জন্যও তাকালেন না অফিসার। মৃত বাড়ীর মতো নীরবতা ভর করলো ওর মাঝে। বুকের ভেতর যেন হুহু করে প্রবেশ করলো বিষাক্ত বাতাস। বাধ্য হয়েই রাস্তায় এসে দাঁড়ালো আনোয়ার। মেঘের আস্তরণে ছেয়ে গেছে আকাশ। টিপ টিপ করে পড়ছে দু’এক ফোঁটা করে বৃষ্টি। মানিব্যাগ চেক করে পেল দশ টাকার একটি নোট। এই টাকাতেই যতদূর যেতে পারবে ততদূরই যাবে। মাত্রই গত হওয়া অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নিলো।
‘জিরো পয়েন্ট যাবো। দশ টাকা দিব কিন্তু।’ বুকের মাঝে বয়ে চলা কষ্টকে চেপে রেখে বললো আনোয়ার।
‘ওঠেন, ওঠেন।’ স্থুল দেহের চালক মেহেদী রাঙা গোঁফে তা দিতে দিতে বললো।
মেয়েকে নিয়ে সাবধানে উঠলো আনোয়ার। বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো গভীরভাবে। ‘মাগো, কষ্ট হচ্ছে।’ মেয়ের মাথায় ও মুখে হাত বুলোতে বুলোতে বললো আনোয়ার। বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে চলেছে। বৃষ্টির সাথে শো শো করে বইছে বাতাস। রাস্তা প্রায়ই ফাঁকা। সোডিয়াম লাইটের আলোতে চিকচিক করছে প্রশ্বস্ত পাথুরে সড়কগুলি। লাইটের আলোয় দেয়ালগুলিও দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। দেয়ালগুলিতে লাগানো রঙবেরঙের পোস্টার দেখতে পেল আনোয়ার। দেখামাত্রই আপনাআপনি এক ধরনের আশঙ্কা দানা বাঁধলো ওর চিন্তায়। হয়ত ওর মতোই কেউ লাগিয়েছে। তাকেও হয়ত তার মতো সন্তানকে নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। আর তাদেরকে ব্যবহার করে পৃথিবীটাকে ভোগ করবে গুটিকতক রঙিন মানুষ। ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো আনোয়ার। এরই মাঝে দু’এক ফোঁটা করে বৃষ্টি প্রবেশ করছে অটোর ভেতর। মেয়েকে আলতো করে বুক থেকে আলগা করলো আনোয়ার। খুললো শার্টটি। শার্ট দিয়ে ঢেকে নিলো মেয়ের মাথাটি। জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এসেছে অটো। এবার দেয়ালে দেয়ালে নিজের হাতে লাগানো পোস্টারগুলি চোখে পড়লো আনোয়ারের। পোস্টারগুলি দেখামাত্রই যেন বিষময় কম্পনের সুর বেজে উঠলো ওর অন্তর্করণে। শরীরের রক্তকণিকাগুলি যেন ধীরে ধীরে থেমে যেতে শুরু করলো।
‘মেয়ে অসুস্থ নাকি ভাই?’ চালকের কথা শুনে আগুনের দলা হবার বাসনাটি হোঁচট খেল আনোয়ারের।
কোনো উত্তর দিলো না আনোয়ার। তা কোথায় যাবেন? আনোয়ারের মৌনতা উপলব্ধি করে আবারো প্রশ্ন করলো চালক। এবার কেঁপেকেঁপে উত্তর দিলো আনোয়ার। উত্তর পেয়ে জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে এগুতো থাকলো অটো। তীব্র বাতাসের সাথে অঝোর ধারায় বয়ে চলেছে বৃষ্টি। এই মুহূর্তে ভাড়া নিয়ে ভাবলো না আনোয়ার। যা হবার হবে। আগে মেয়েকে নিয়ে বাড়ী যাওয়া যাক। ভাবতে ভাবতে মেয়েকে বৃষ্টির কবল থেকে রক্ষার চেষ্টাটিও রাখলো অক্ষুণ্ণ। আয়শার কথা নিয়ে ভাবলো না আনোয়ার। যত রাতই হোক ও জেগে থাকবে। সাবধানতা অবলম্বন করেই অটোচালক এসে দাঁড়ালো আনোয়ারের বাড়ীর কাছাকাছি। বৃষ্টির মাঝেই নামলো আনোয়ার। শার্টটি দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে রাখলো মেয়েকে। মানিব্যাগ থেকে দশ টাকার নোটটি বের করবার পূর্বেই বলে উঠলো চালাক।
‘লাগবে না ভাই। বেটিক সাবধানে নিয়া যাও।’, চালকের মানবিক কণ্ঠস্বর থেকে ফুটে উঠলো একটি সহমর্মিতা। এত বৃষ্টির মাঝে কম করে হলেও একশত টাকা ভাড়া দিতে হতো তাকে। হিসেব কষতেই বিস্ময়ের ভাবটি স্ফীত হলো আনোয়ারের মাঝে। একজন সাধারণ চালকের হৃদয় এত বড় হতে পারে কীভাবে? বিশ্বাস করতে পারছে না ও। অটো চালকের এমন অভাবনীয় আচরণে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। প্রভাতী সূর্যের মতো হেসে উঠলো ওর মুখখানি। সবার কথাগুলি কেন এমন ফুলের মতো করে ফোটে না? এমন একটি প্রশ্ন অবলীলায় চলে এলো আনোয়ারের জিজ্ঞাসু মননে। গত হওয়া হেলথ কেয়ারের দুঃসহ চিত্রটি মনে করতেই আপনাআপনিই হতাশ হয়ে গেল আবার। ক্ষুব্ধ হলো বরফের মাঝে তীব্রভাবে জ্বলতে থাকা আগুনের শিখার মতো। চালকের দিকে তাকিয়ে থাকবার অসীম ইচ্ছেটি জেগে উঠলো এই মুহূর্তে। কিন্তু মাতাল হাওয়ার সাথে বইতে থাকা বৃষ্টির প্রকোপে অবদমিত রাখতে হলো ওর ইচ্ছেকে। চিত্রকরের মতো মনের আরশিতে চালকের অনুকৃতিটি আঁকতে আঁকতে মেয়েকে নিয়ে বৃষ্টির মাঝেই হাঁটতে থাকলো বাড়ীর দিকে। হাঁটতে থাকলো কতকটা প্রতিযোগিতার ঘোড়ার মতো পায়ের গতিতে।