আজ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা। ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। ভারতীয় সময় ঠিক রাত বারোটায় খেলা শুরু হবে। পল্টু আর শিবু খেয়েদেয়ে আধঘণ্টা আগেই জীবন কাকার বাড়িতে এসে হাজির। অবশ্য আজ পাড়ার প্রায় সব ছেলেরই ঠিকানা জীবন কাকার বাড়ি। অনেকের বাড়িতেই নিজেদের টিভি আছে। কিন্তু একসাথে খেলা দেখার মজাই আলাদা। তাই সবাই জীবন কাকার বাড়িতে ভিড় করেছে।
প্রথম থেকেই খেলায় আর্জেন্টিনার প্রাধান্য। শিবু ব্রাজিলের সাপোর্টার। পল্টু আর্জেন্টিনার। পল্টু শিবুকে লক্ষ্য করে মন্তব্য করলো, ” কি করে খেলতে হয় দেখে নে। আজ তোদের গোলের মালা পরাবো। ”
শিবু গলা চড়িয়ে উত্তর করলো, ” চুপ কর! চুপ কর! শেষ না দেখে মন্তব্য করছিস কেন? ব্রাজিলের নাম শুনলেই তো তোরা উল্টে পড়ে যাস। কথা বলতে লজ্জা করে না? ”
শিবু আর পল্টুর সম্পর্কটাই এরকম। কিছু না কিছু নিয়ে সবসময় ঝগড়া লেগেই আছে। বিশ্বকাপের সময় তো এখন রোজ ঝগড়া মারপিট। যখন তখন, যেখানে সেখানে। অনেকেই খেলা দেখতে দেখতে শিবু আর পল্টুর উদ্দেশ্যে মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়। কয়েকজন শিবুকে উস্কানি দেয়, আর কয়েকজন পল্টুকে।
হাফটাইমে আর্জেন্টিনা এক গোলে এগিয়ে রইলো। বিরতির পর দশ মিনিটের মধ্যে ব্রাজিল গোল শোধ করে দিল। তারপর খেলা চলল সমানে সমানে। কেউ এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে আর্জেন্টিনা কর্নার থেকে আবার গোল করল। বল জালে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজিয়ে দিল।
শিবু এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না ব্রাজিল হেরে গেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কাঁদলে কষ্টটা কমবে। এখন মনে হচ্ছে বাড়িতে খেলা দেখলেই ভালো হতো। এতটা অপমানিত হতে হতো না। টিভি সামনে থেকে এখনও সবাই উঠে যায় নি। দুদলের খেলোয়াড়রা জার্সি বদলাবদলি করছে। কষ্টের মধ্যে এটা দেখতে ভালো লাগলো শিবুর।
পল্টুর কথায় কথায় খালি মারপিট। দুচারটে কথা বলতে না বলতেই হাতাহাতি শুরু করে দেয়।
খেলা শেষ হতে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, এমন সময় ছুটে এসে পল্টু শিবুর সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে বললো, ” কী রে, খুব তো বড় বড় কথা বলছিলিস? দেখবি এবার উত্তম মধ্যম দেব? ”
জীবন কাকা মনে হয় ওদের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছিল। তাই ওদের কাছে ডেকে বললো, “তোরা তো খেলা ভালোবাসিস? আর্জেন্টিনা ভালো খেলেছে তাই জিতেছে। এর জন্য তো শিবুর গর্ব হওয়া উচিত। ভালো খেলার জয় হয়েছে।” জীবন কাকা পল্টুকে হাত ধরে সামনে এনে দাঁড় করালো, “তুই শিবুকে মারতে যাচ্ছিস কেন? খেলার শেষে কী দেখলি? দুদলের খেলোয়াড়রা জার্সি বদলাবদলি করলো না?”
জীবন কাকার উঠোনে সবাই দাঁড়িয়ে গেছে, “খেলা তো একটা বিনোদন। মনের আনন্দের জন্যই তো সবাই খেলে। খেলাটা তো বাড়ির উঠোনেই হতে পারতো। কিন্তু তা হয় না। কারন মাঠের মধ্যে অনেক বড় জায়গায় মনের সব অন্ধকার দূরে চলে যায়। ”
জীবন কাকা শিবু পল্টুকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে জামা বদলাবদলি করতে বললো। কথাগুলো শুনে পল্টুর মনের ভেতরের জানলা দরজাগুলো যেন খুলে গেছে। পল্টু তাড়াতাড়ি জামাটা খুলে শিবুকে পরিয়ে দিল। শিবুর গেঞ্জিটা ছিল ব্রাজিলের জার্সি। শিবুর থেকে পল্টু অনেক মোটা। তাই গেঞ্জিটা পল্টুর গায়ের চামড়ার সঙ্গে এঁটে বসে গেছে।
জীবন কাকা দুজনের ডানহাত দুটোকে ধরে বললো, “পল্টু, তুই আজ বন্ধুকে তোর দলের জয় উপহার দিলি। এটা কম বড় দান নয়।”
পল্টুর আনন্দ আজ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শিবুর ব্রাজিলের জার্সিটা আর গায়ে টান টান লাগছে না।