ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দু চারটে জায়গা আপনার বিশেষভাবে মনে জড়িয়ে থাকবে— ব্যামফিল্ড ফুলারের স্মৃতিস্মারক, ফুলার রোড তার মধ্যে বিশিষ্ট। এই রোডের স্বাতন্ত্র্য ধরা পড়বে দুটো কারণে। প্রথমত, যখন অপনি বিকেলে হাঁটবেন, দুপাশ জুড়ে প্রচুর কপোতকপোতীর উপস্থিতি লক্ষ করবেন, তারা আসবে ঢাকা শহরের ক্লান্তিময় জীবনকে কয়েক মুহূর্ত ভুলে যাবার জন্যে। একটু বিলাস সময় কাটানোর জন্যে। এমন চলবে সন্ধ্যারাত বা এই নয়-দশটা নাগাদ। তারপর একসময় ঘোষণা আসবে, ‘ইহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত আবাসিক এলাকা, বহিরাগতদের চলে যাবার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ মাঝে মাঝে দেখবেন, হয়তো একটু বিরক্ত হবেন, কিছু পুরান ঢাকার আলট্রা-মডার্ন হেয়ার স্টাইলিশ পোলাপাইন মোটরবাইকে বাউলি দেবে। ভোঁ-ভোঁ রব তুলে কানে বরাবর বাতাস দিয়ে চলে যাবে।
পরেরটার গুরুত্ব আরো বেশি। যে সময় শুরু হয় মধ্যরাতের পরে। তখন বিশেষ জনমনিষ্যি থাকবে না। আপনি তখন বেরিয়ে পড়বেন গতরে একটু হাওয়া লাগানোর তাগিদে, আলগা মনটাকে আরেকটু ছড়িয়ে দেবার জন্যে। বস্তুত, যৌবন প্রাণপ্রাচুর্যময় ছাত্ররা, বিশেষত, প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা, এবং পড়ালেখা শেষ বছর তিনেক বা তার কিছু বেশি সময় ধরে, অথচ চাকরি নাই, দুচার জন আলখেল্লা মার্কা ছাত্ররা তাই রাতভর ঘুমুতে পারবে না। কবি টাইপের দলবল এ কাতারেই পড়বে। তখন তারা অকারণ রাত জাগবে, সিনেমা দেখবে, গান গাইবে, মাল খাবে, জোট হয়ে রগরগে ভিডিও দেখবে অথবা হুটহাট বেরিয়ে পড়বে ক্যাম্পাসে, কেউ কেউ পুরোনো এই শহরটাতে। সুতরাং, আপনিও একদিন হুট করে বেরিয়ে পড়বেন সেই ফুলার রোড বরাবর।
রাস্তার দুপাশ জুড়ে কোয়ার্টারগুলোতে তাকাবেন, কিছুই দেখতে পাবেন না, শুধু একরাশ হতাশা ছাড়া। এইবার সব হাল ছেড়ে নির্বিঘ্নে শান্ত মনে হাঁটবেন, মাঝে মাঝে চোখ দুটো বন্ধ করবেন আর ভাববেন। এই ফিলিংসটাকে আপনি প্রকাশে অক্ষম, কিন্তু যার হৃদয় আছে সে বুঝে নেবে। তখন মনে হবে, আপনার জীবনে আর কোনো অপূর্ণতা নাই।
না আছে। একটুক্ষণ গড়াতেই মনে হবে কি যেন নাই। নাই। আসলেই নাই। আপনার মনে হবে, ইশ! রাস্তার দুপাশে শিউলিমালা অথবা বকুল যদি গন্ধ বিলাতো, আর আপনি একান্তে নীরবে হেঁটে চলেছেন কাঙ্ক্ষিতার হাতে হাত রেখে। কিন্তু বাস্তবতা আপনার প্রতিকূলে, মেয়েদের হলগুলো বন্ধ হয়ে যায় রাত দশটার আগেই। এইসব নাড়ি নক্ষত্র জানতে প্রথম বর্ষের ছাত্রের কিছুদিন সময় লাগে। জানে দুভাবে। নিজ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির টানে উপলব্ধি করে। আর, না হলে কতকটা যে বন্ধু উদোম ঘুরে বেড়ায় তার মুখে শুনে।
আন্দাজ করবেন আপনি নির্বাক, নির্বাক রহমান অথবা শফিকুল ইসলাম, না হয় অন্য কেউ। অবশ্য ঘোষও হতে পারেন, রায়ও হতে পারেন, কি যায় আসে তাতে। সমস্যা আছে! আপনাকে আর এসএম হলে রাখা চলবে না। তখন পাঠাতে হবে জগন্নাথ হলে। মানে আপনার রহমান বা ঘোষে মানচিত্র পাল্টে দেবে। তাই আপাতত নির্বাক রহমান, নামেও কামেও। মানে যে অকারণ কথা কইবে না, না ঘাটলে। তাই এইসব অনুভূতি তার স্বজাত উদ্ভূত। আপনি এস এম হলে থাকেন। গেস্টরুমের ভয়াল ভাইভা শেষে হলে উঠেছেন। মানে পূর্বব্লকের বারান্দায় ইয়ারমেটের সাথে সিট ভাগাভাগি করেছেন। এখান থেকে ভাল পলিটিকাল পারফরমেন্স হলে গণরুমে আশ্রয় পাবেন।
আমার ইচ্ছে আপনাকে দিয়ে একটা গল্প সাজানো। অবশ্যই সেখানে আপনি আমি দুজনেই সমানভাবে অংশ নেবো। আচ্ছা শুরু করবো এভাবে— হুট করে একদিন আপনি হল থেকে মধ্যরাতের পর বের হয়ে যাবেন। নতুন জায়গায়— মানে হলে এসে এই প্রথম। আপনার আচরণে নিজেই বিস্মিত হবেন। বের হয়ে যাবার কারণ ছারপোকা। ছারপোকার কামড়ের তীব্রতায় একদিন ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন। অথচ, সবাই আপনাকে সহনশীল মানুষ বলেই জানে। আপনি থাকবেন ১১ নাম্বার গণরুমে, যার নাম থাকবে ভদ্রপাড়া। সেখানে জায়গার স্বল্পতা থাকবে, যে কাইতে রাত সে কাইতে কাবারের দশা। দুচার জনের নাকডাকা এমন বীভৎস আওয়াজ তৈরী করবে আর আপনি ভাববেন, এ আর এমন কি, যেখানে ৪০/৪৫ জন একরুমে থাকতে হয়, সেখানে নাকডাকাটাকে দোষের কিছু ভাববেন না। আবার রাতভর তাসের আড্ডাটাও জমে উঠবে পুরোদমে, বিশেষ করে আপনার বন্ধু সাগর, তালহা, আর. এস. নাহিদ ও টোকাই রানা যখন ক্রুতে মাতবে, টাকার খেলা, তখন প্রতি মুহূর্তে আপনার মনে হবে এই বুঝি মারামারি লেগে গেলো, কিন্তু লাগবে না। রানার আচরণটাই আপনার কাছে বেশি বিশ্রী লাগবে, কেমন যেন অরুচিকর। আপনি ভাবতে থাকবেন সবাই আড়ালে তাকে কেন টোকাই বলে! একদিন কানাঘুষা শুনবেন রানা হলের ছাত্র না, বাইরের একটা গুুুন্ডা। লিডাররা তাকে রেখেছে ছেলেদের ম্যানেজ করবার জন্য, মানে ছেলেদের ঠিকঠাক টর্চার করবার জন্য। আপনি হবেন ঘুমকাতুরে অথবা আপনি চাইবেন, রোজ রোজ ক্লাস মিস হয়, কাল সকাল আটটার ক্লাসটা করতেই হবে। টাকায় জুয়াখেলা মানে মিনিটে মিনিটে গণ্ডগোল। আর রাতবিরেত পলিটিকাল হাঙ্গামা তো আছেই। তাও আপনি মানিয়ে নেবেন, সবকিছুকে পরাজিত করবেন, কারণ আপনার ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু সেদিনই আপনি প্রথমবারের মতো বিরক্ত হয়ে রুম ছাড়বেন অর্থাৎ সামান্য ছারপোকাই আপনাকে পরাস্ত করবে।
আপনি দেশ-বিশ্ববিদ্যালয়কে গালি দিতে দিতে বের হয়ে গেটে যাবেন। কিছু না ভেবেই বাম রাস্তায় মোড় নেবেন। ঘন আমকাঁঠালের বাগানের পাশ দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, সেদিনই হলে বিদ্যুৎ থাকবে না। যা আপনার হলের ক্ষেত্রে অকল্পনীয়। এ হলে বিদ্যুৎ যায় বছরে দুচার বার, তাও নোটিশ দিয়ে, সারাই কাজের জন্যে। তাই আপনি অবাক হবেন। অথচ, আপনি খুশিও হবেন অন্য কারণে! জীবনে এই প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করবেন, অন্ধকারেরও মোহময় রূপ আছে। তখনই অপনার মনে পড়বে শরৎ বাবুর শ্রীকান্ত-ইন্দ্রের অন্ধকার অভিযানের কথা। হঠাৎ আপনাকে একটু ভয়ে ধরবে। আপনার যখন খেয়াল হবে তখন দেখবেন ভয়ে গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেছে। বাস্তবিকপক্ষে, তখন কিন্তু সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নাই। কিন্তু আপনার ফিলিংস তা বলবে না। আপনি অন্ধকারের ভিতর দিয়েই হেঁটে চলবেন।
হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যাবেন, ঠিক বাইরে বলা যাবে না, ছবির হাটের সামনে তখন। চাঁদনী পসার রাত। গাছের ছায়ায় যাদু যাদু ভাব। আপনি আবিষ্কার করবেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটা চৌকিতে বসে আছেন আপনি। পাশে আর একজন, যে আপনি বসার সময় ছিলো না, হঠাৎ উদয় হয়েছে, আপনার তাই মনে হবে। কিন্তু এখন যেহেতু একজন জলজ্যান্তু মানুষ পাশে বসে আছে তাই তাকে স্বীকার করে নিতে আপনার অসুবিধা হবে না। আলাপের খাতিরে ধরে নেবো, লোকটা আমি, যে তোমাকে কথা দিয়েছিলো পাশে থাকবার। তখন তুমি বিস্মিত হবে, হয়তো ভয়ও পাবে একটু। কিন্তু সেইটা জানান দেবে না। অনকেক্ষণ পর কোনো ভূমিকা ছাড়াই আমি কথা শুরু করবো। তুমি কেন ওই পরিত্যক্ত অর্ধঢাকা খুপড়ির দিকে চেয়ে থাকবে তা জানতে চাইবো। তুমি জানাবে একটা অপরূপ সুন্দরী নারীর কথা, যে সাজুগুজু করে চুপচাপ বসে থাকবে, অথবা, মনে হবে সে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। গায়ের রং তার ফর্সা না, শ্যামলা-তামাটে ভাব। চোখেমুখে একটা তীব্র আকর্ষণ অথবা, ভুল হতে পারে— একটু মায়া! দেখলেই মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে যাবে। আমি তোমাকে বারবার সাবধান করে দেবো, খবরদার! ওইটা কোনো মেয়ে না, একটা ডাইনী, পিচাশ! মৃত নারী। তোমার সন্দেহ বাড়বে। মরলে আবার এইখানে আসে কেমনে!
আমি তখন একটা গল্প শোনাবো। ঠিক গল্প না। বলা চলে যৌথভাবে গল্প বলা। এই যেমন আমি কিছুটা বলবো, বাকিটা তুমি শেষ করবে। যেমনটা করতে হতো ক্লাস সিক্স-সেভেনে। গ্রীষ্মের রাতে হল ছেড়ে ঘুরতে বের হওয়া দোষের কিছু না। আমরাও বের হতাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিলো আমাদের প্রিয় জায়গাগুলোর একটি। আমরা সেখানে ঘোরাঘুরি করতাম। পানির চৌবাচ্চার চারদিকে বাঁধানো বসবার জায়গায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়তাম। ওই মহিলা তখনকার মানুষ। শেরাটনের সামনে রাত ১০টা নাগাদ আর সখীদের সাথে সে খদ্দেরের অপেক্ষা করতো। দিনে দিনে তার পসার বেশি হতে থাকলো। এতেই অন্য সবাই ক্ষেপে গেলো। একদিন পুলিশের গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে গেলো। এইটাতে মেয়েটার বেশি ভাবান্তর দেখা যায় না। কিছু টাকা তাদেরকে দিতো তারা। কিন্তু পরিস্থিতি তেমন ছিলো না, যত হালকা সে ভেবেছিলো। আটদশটা মরদ লোকের ভার। পরদিন ভোরে উদ্যানে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে। টানা সাতদিন জ্বরে পড়েছিলো, বেদম জ্বর। জায়গাটা সে আর ছেড়ে যায়নি। একটু একটু করে গুছিয়ে নিলো নিজেকে। তবু আর পাঁচজনের মতো ছিলো না সে। বাছা বাছা দুচারটে লোকের আনাগোনা ছিলো তার খুপড়িতে। একদিন খুব জোরে গালাগালি করতে থাকে, গালাগালি না করলে তাদের চলে না, তবে এবারটা ছিলো ভীষণরকম! মাথা নিচু করে কে যেন বের হয়ে চলে গেলো। ভোরে পুলিশ যখন মেয়েটার লাশ নিয়ে বের হয়ে গেলো, সবাই বলেছিলো, ‘মাগীর সখ কতো, আবার বিষ খাইয়েছে!’ ঘটনা আরো দূরে গড়ায়। ওই খুপড়িতেই পরপর আরও সাতদিন সাতটি লাশ আবিষ্কার করে পুলিশ, পুরুষের! গল্পটা শুনতে শুনতে ভয়ে শিউরে উঠবে তুমি। লাশগুলো কিভাবে এলো? কে খুন করলো তাদের? অথবা, শ্যামল-তামাটে নারী কি আত্মহত্যা করেছিলো? নাকি একই ধরনের রহস্যময় খুনের স্বীকার হয়েছিলো আর সাতজনের মতো! এমন একরাশ প্রশ্ন জড় হবে তোমার মনে।
কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর আমি তোমাকে দেবো না। গল্পটি শেষ করবে তুমি! তখন তোমার মন উৎকণ্ঠায় জড়ানো। হঠাৎ খেয়াল করে দেখবে পাশে কেউ নাই, মানে আমি নাই। হলে ফিরে সেই রাতে তোমার আর ঘুম আসবে না। এপাশ-ওপাশ করতে করতে ভোরে যখন তোমার ঘুম আসবে, তখন ভর করবে হিবিজিবি আর ভয়ংকর সব স্বপ্ন। ঘুম ভাঙবে বেলা ১১ টার কিছু পরে। সেদিনও তোমার ৮ টার ক্লাস মিস হবে। কিন্তু রাত হতেই তোমার মাথায় ভর করবে তামাটে নারীর রহস্যময় মৃত্যু! চলে যাবে উদ্যানে। ঘুরতে ঘুরতে আবার বসে পড়বে গতরাতের সেই জায়গায়। একই অভিনয় শুরু হবে। আমি আবার তোমাকে গল্প শোনাবো। তবে এইটা নতুন গল্প! একটি গুমের গল্প, যার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো হলের দক্ষিণ-পূর্বকোণের ড্রেনে, অথবা, শামসুন্নাহার হলের ছাত্রী নির্যাতনের গল্প, বকরের মায়ের স্বপ্নমৃত্যুর গল্প, অথবা রোকেয়া হলের সামনের ঝাগড়াচুলের পাগলের গল্প, যে এখনো হলের দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল মোছে আর বিড়বিড় করে বলে যায় নিজস্ব ইতিহাস। হলের গল্প শোনাবো তোমাকে, কারণ আমি দাবি করবো, আমি তোমার হলের সিনিয়র বড় ভাই। পশ্চিম ব্লকের বারান্দায় থাকতো একটি ছেলে, একেবারে বাপ-মার নিরীহ পোলা বলতে যা বোঝায়। শীতের রাতের অত্যাচার তার সহ্য হয়নি, টিকে থাকার লড়াইয়ে সে অপারগ। নিউমোনিয়া ধরেছিলো। তা ধরুক, ওমন কত ধরে, ধরবে। তবে হাফিজ বড় অভিমান করেছিলো। তাই একদিন সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো। অথবা, ছাদে গম্বুজের নিকট থেকে মিহি কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ আসে— নারীর অথবা পুরুষের সনাক্ত করা যাবে না। কিন্তু নারী কেন হতে যাবে— এমন প্রশ্ন তোমার মনে ঘুরপাক খেতে থাকবে। আমি হলফ করে বলবো, নিজ কানেই শুনেছি, হয়তো দেখেছিও। ছেলেটি একরাতে ছাদে গিয়ে বসেছিলো। অমন সে প্রায় যায়। কিন্তু, আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে ছাদ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিলো! ছেলেটি প্রায় হতাশ থাকতো, পড়ালেখায় তার মন বসতো না, বিভাগের এক সমকামী মাস্টারের কারণে তটস্থ থাকতো সবসময়। বিষয়টা বন্ধুরা আচ করেছিলো খানিকটা। তাই তারাও ছেলেটার সাথে মজা নিতো। অথবা, তার ইয়ারের একটি মেয়েকে ভালোবাসতো, অথচ, মোটেই পাত্তা পেতো না। নতুবা, ছেলেটি হল জীবনের একঘেঁয়েমিতে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলো। এই যেমন, ক্যান্টিনের যথাতথা খাবার, গণরুমের বিচ্ছিরি জীবন, গেস্টরুমের ভীতসন্ত্রস্ত পরিবেশ, গদবাঁধাসব পড়লেখা, বন্ধুদের নোট লুকোচুরি আর ভালো লাগছিলো না। সেই মাস্টারের কী হলো, অথবা প্রেমিকাটি এখন কোথায়? অথবা হলের কি এখনও সেই মানবেতর দশা? অথবা, আসলেই কোন গল্পটি প্রকৃতই মৃত্যুর জন্যে দায়ী? তুমি জিজ্ঞাসু নয়নে আমার কাছে জানতে চাইবে। কিন্তু এইসব গল্পের কোনোটিই শেষ হবে না। এই গল্প-গল্প খেলার মাহাত্ম্য সেখানেই। সবসময় শেষ করবার দায়িত্বটা তোমাকে দিয়ে দেবো।
একদিন শোনা যাবে, হল প্রোভোস্ট তোমার বাবা মাকে ফোন দিয়েছেন, তারা তোমাকে বেঁধে নিয়ে চলে যাবেন। আমি নতুন পার্টনার খুঁজে নেবো।
কারণ আমার গল্প তখনও শেষ হবে না।