মজুমদার নোভেলের চারটি কবিতা
পৃথিবীর সব ফুল নষ্ট হয়ে গেলে, সব বসন্ত চিরতরে নাখোশ হয়ে গেলে–
মগজের আস্ত চক্রটাকে সেদিন থামিয়ে দেব, পাপটাকে ঘোষিত করবো পূন্যতা।
শরীরের ভিতর লুকিয়ে ফেলবো শরীর– কবর আর লাশের যেমন সম্পর্ক।
তখন একমাত্র ব্যাথাই হবে শ্রেষ্ঠ উল্লাস, আনন্দ হবে শখচূর্ণ বেদনা।
পাকস্থলীতে রাষ্ট্রদাঁত বসাবে ডাক্তার এমবিবিএস–
প্রেমিকার নাভীতে ট্রান্সফার হবে হৃদয়। ছাঁইপাশ হবে অনুভব।
কবিতারা বিচ্যুত গ্রহ বলে দাবি উঠবে প্ল্যাকার্ডে প্ল্যাকার্ডে–
ভোট ভোট করে টায়ার চাপায় মরবে জনতা। এখনও যেমন মরছে।
ভাত ভাত করে নুনের ক্ষুধায়, ঘর ঘর করে আশ্রয়ের কাঁটায়।
আহত শালিখটা চিঁ চিঁ করে হাসবে
নোনা সময় ভাঙবে অনাহারী দেয়াল।
হঠাৎ! শব কলরব থমকে যাবে–
তারপর ডাহুক ডাকা অন্ধকার।
থেমে থাকবে নগরীর নিয়ন রাস্তা
ক্লান্ত একাকীর মতন। নির্জন গোরস্থান।
অঘোরে– রৌদ কিংবা অমাবস্যায়।
সেসব দিনে–
জ্যোছনার রঙ হবে লোহিত বেগুনি, ছাঁই হয়ে যাবে শিশির সবুজ।
মৃত্যু হয়ে উঠবে আশীর্বাদ আর জন্মটা থাকবে আজন্ম অপরাধের।
পথ থেকে হেঁটে যেতে যেতে আমি হ’য়ে আসলাম নিকট
আসতে আসতে তুমি হ’য়ে উঠলে দূর থেকে দূরান্তে, দিগন্ত।
এভাবেই–
চায়ের কাপ, ভোরের দোকান, রেলিং ভাঙা রোদ, খুচরো ঝামেলা
নৈমিত্তিক সংসার, আলগোছ পরিপাটি, সুশীল তন্ত্র, মদদে দালাল।
ভাংচুর হয়ে গেছে– ও ছোট পাখি?
শিশুদের প্রিয় খেলনা মহামারী!
আমাদের প্রিয় আশ্রয়ের নাম ধ্বংস; প্রিয় রাষ্ট্রের নাম হিংস্র।
চোখের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে হায়েনা কুন্ডলী–
খুদার তাগিদে– বৈষম্যের কারাগারে– আটকে পোড়ে–
থ্যাঁতলানো মাংসের জীবন। ঘুমের ভিতর জেগে ওঠে–
হিংস্রের বাসনা; ঠোঁটের স্বাদে খেয়ে ফেলা তীব্র হৃদয়।
এখনও ভালোবাসতে ইচ্ছে করে তোমাকে, তথা–
তোমাকে। হিরোশিমার চাইতেও দ্বিগুণ অনুপাতে।
তোমার হৃদয়ের বারুদফুলের গন্ধ নিতে নিঃশ্বাস–
তাকিয়ে দেখছে ফিলিস্তিনের নিশান। চির অনুভবে।
এইতো শুকিয়ে পরা এক লৌকিক দুপুর– মৌলিক রঙের নূর।
ভালোবাসি তোমাকে, এবং তোমার যত সর্বস্ব ও সর্বোচ্চকে–
চাওয়া পাওয়াহীন, তবুও মুখোশ বিষাদ!
বিপ্লবহীন পথচারী ও পথিকবেশী নিরস্বার্থচারী।
ভুলতে বসবে তুমি পুতুলের খেলা আবার অনাগত ইতিহাসের কথা।
নগরীর দেয়াল জুড়ে হেমন্ত আর রাস্তায় হাটতেই তুমি টের পাবে এমন বহুঋণী– নিমগ্নচারী গিরিপথিক।
মালুম মাশুল ছিন্নতা অনুভব করবে– নবরত্ন প্রত্যাশার অবশে নিন্দাহীন দ্বিধায়, আড়ষ্ট আকাঙ্ক্ষার চরচরায়ু।
মহাকাশ বিমগ্ন তোমার নকশীকথার ঠোঁট–
কাজলের বহ্নিতে এঁকে দিব নীল দিয়াশলাইফুল।
আরেকটা প্রশ্নপদ্ধতি করি–
তোমার হৃদয়ের বাম তিলের ডান গলির দিক দিয়ে, দেখা যায় যে সংঘাত আলোর, হাটতে থাকি আমার ঘর্মাক্ত মন নিয়ে।
আরেকটা স্পর্ধা আঁকি–
ঠোঁটের পৃষ্ঠায় লিখি নিহত নাম, অথবা কাম। দৃশ্যতে খুলে দেখি হাতছানি মেঘের দর্পণ; নির্ঘাত পরাগায়ন।
আরেকটা অনশন ভাঙি–
হৃদয়ের অন্তর্গত ক্ষুধার মুখে, আর তোমার অনাহারী কাজল। হাত ছুঁয়ে ফেলার বাহারি অসুখ, আঙুলের কারাগার।
আরেকটা অধর্ম পড়ি–
তোমার প্রেমের নামে। শুন্যতায় তাকাই মিশ্রিত দ্রোহন জঞ্জালে-মায়াজালে। শরশয্যার ঘ্রাণে পবিত্র মাতালের বাগান, নাগরীর জুঁইগন্ধে।