পুরুষরা বরাবরই ব্যর্থ হলে মধুর হয়


অনার্য আনোয়ারের গল্প

পুরুষরা বরাবরই ব্যর্থ হলে মধুর হয়


মাঝরাতে স্বামী-স্ত্রীর মধুর আলাপন হচ্ছিল ব্যর্থ কামক্রিয়ার পর। কারণ পুরুষরা বরাবরই এ কাজে ব্যর্থ হলে মধুর হয়। আমরা পুরুষ। পঙ্গু! কেননা পঙ্গুত্বই আমাদের সম্বল। যদিও আমরা শুনে থাকি যে, প্রতিটি ধর্মই ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী; ঈশ্বর ঐশ্বর্যের প্রতিভূ। যদিও আমরা মেনে নেই যে আমরা অজ্ঞ এবং আমরা বিশ্বাস করি। আমরা এখনো বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আয়তুল কুছরি পড়ে বের হই, কেননা আমরা বিশ্বাস করি। কেননা নিয়ম অনুযায়ী সত্তর হাজার ফেরেস্তা আমাদের রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারপরও যখন টি.এস.সি মোড়ে মুখ থুবড়ে অথবা গাড়ির ভিতর  অথবা যখন বলা হয় তোমাদের জন্য চাপাতিই শেষ কথা। তখন আমাদের চোখের সামনে চাপাতির ইস্পাত ঝলক ঝুলে থাকে, ঝুলে থাকে রাজনীতির শীর্ষ নেত্রীর আঙুলে সাদা কবুতর। আর ঝুলে থাকে শুভ্র কবুতরের পালকে আমাদের শুভ্রস্মৃতি। দেশ, দেশমাতৃকা, কুড়িয়ে পাওয়া আধুলি অথবা শীত ঢাকা লালপায়ে অতিথি পাখির আগমনী ও বিদায়ের স্মৃতি। যে স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায় পুরনো স্কুল ব্যাগ, শিল-পাল্লা, স্টোর রুম, জব্বারের ভলি খেলা, মার্সল আর্ট।

অথচ কিছু স্মৃতি সর্বদা আমাদের বিশেষ অঙ্গে ঝুলে থাকে নাঙ্গা বিলবোর্ডের গায়ে কনডম অথবা পারফিউম মাখা শরীরী মুদ্রাক্ষরের মতো: প্রথম যেদিন তোমার তাজা রক্ত জিহ্বায় লেগেছিল সেদিন কেউই বিস্মিত হইনি। কেননা আমরা যৌনাবেগে ডুবে ছিলাম, আমাদের শিরায়-শিরায় বইছিল উষ্ণ রক্ত প্রবাহ অথবা আমার কন্ডমাবৃত লিঙ্গ সেদিন রক্তই প্রত্যাশা করেছিল। তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখতে চেয়েছিল রক্তরেখা এবং আস্তরণ; দেখতে চেয়েছিল মুহুর্মুহু দংশনে কতটা বিষ নির্গত হয়, কতটা বিষে কতখানি নীল হয় দেহরঙ। কেননা আমরা পুরুষ জাতি পীথাগোরাসের সূত্রে বিশ্বাস করি না, রক্ত আর শক্তিতে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি ভোগের সাথে উপভোগেও।

যেমন আশাহত শক্তি আর বিশ্বাসের অবক্ষয় নিয়ে গতরাতে ঝড়ের পর পুরুষ বাবুইটি দিনভর ডেকেছিল। সাতটি ভ্রুণ সমেত ডিম নিয়ে তার সঙ্গিনী সেই ঝরে মারা গিয়েছিল বলে। যেই সঙ্গিনীর সঙ্গে পুরুষটিকে একশত একবার মিলিত হতে হয়েছিল, আর প্রতিবার স্বপ্নের বীর্য খসে গিয়েছিল লিঙ্গ থেকে সুখ স্বপ্ন নিয়ে।

আর তখন কতিপয় বীর্য স্খলিত পুরুষ সদর্পে ঘোষণা করেছিল ছিদামদের উদ্দেশ্য করে (যাদের ছোবলী নিশানা ছিল পীনস্তনী রেনুবালাদের বেডরুম থেকে ছাপাখানা অথবা বই বাঁধানো সুঁচ থেকে লেখকের কলমের বল অবধি) ইন্ডিয়া যাও; পাড়ায় থাকতে হলে চাঁদা দিয়ে থাকতে হবে। আর রাষ্ট্রে থাকতে গেলে ট্যাক্স। যদিও সূর্য তার ধারাবাহিক রুটিন মেনে চলছিল। কেননা প্রকৃতি তার নিয়মে চলতেই পছন্দ করে। অথচ প্রকৃতি অস্বীকৃত ঐশ্বরিক পুরুষবাণী আমাদের শুনিয়েছিল: মনে রেখো পুরুষই ঈশ্বর। তুমি, তোমার আঙুল কিছুই করতে পারবে না। মুখ থেকে মুছে ফেল ধর্মপুত্রের ঐশ্বরিক বণী, শ্লেষ্মাভরা থুথু, গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্রকে প্রটেকশন দেয় পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী; বিপরীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ার, মৃত্যু।

মৃত্যু ও শিল্পীত অভিনয়! পাজেরো গাড়িতে বসে থাকা সাংসদপুত্র জনি ভিকারুন নিসা নুন স্কুলের গেট থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যু বের হতে দেখে। আসলে সে বসে ছিল মতিঝিল শিল্প এলাকায় অথবা হতে পারে গাজীপুর চৌরাস্তার মোড়ে। মোড় পেরিয়ে সামনের চিপা গলিতে প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করে একটা আগুনে কুত্তা অপ্রাপ্ত মাদীর যৌনাঙ্গ নাকে পরখ করতে থাকে, নাক কুঁচকিয়ে বাতাসে তার আমোদিত গন্ধ নেয়, প্রজন্মতত্ত্বের শিক্ষা নেয়। হতে পারে মাদীটি তার মা অথবা মেয়ে! পশুদের কোনো সম্পর্ক হয় না। পুরুষটি সম্পর্কের মুখে ইউরিন ছড়িয়ে সীমানা নির্ধারণ করে। আধিপত্য বিস্তার করে। জনিদের এই সীমানা নির্ধারণ আর শিল্পীত ডগ স্টাইল ভাল লাগে! তারা কুকুর শক্তি প্রত্যাশা করে। ককুর লীঙ্গের দীর্ঘক্ষণ স্থায়িত্ব দেখে ওদের বড্ড লোভ হয়, রাষ্ট্রের লজ্জিত মুখ পরখ করে ওরা কুকুরের knot এবং tie রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে।

ফলান্তে মক্তব শিক্ষকের নুনুতে আমাদের গার্মেন্টস খাটা ফুফুর ছোট মেয়ে আমপারার মৃত্যুতে ওরা রোমান্স পায়।

ফলান্তে আমেরিকায় সমকামীদের সমর্থন করাকে ওরা স্বাগত জানায়।

ফলান্তে রাজন-রাকিবদের পায়ুপথে কমপ্রেসার পাইপ লাগিয়ে যৌনাবেগ পরখ করার ইচ্ছা জাগে।

ফলান্তে কুকুর নাক, পুরুষ মন আর পুরুষ জিহ্বার তফাত খুঁজে পায় না আটই মার্চের মঞ্চ।

যে মঞ্চের সামনে বসে লালাভরা জিহ্বা বের করে আমরা একের পর এক ভাষণ শুনতে থাকি, ভাষণে একে একে ওঠে আসে যে:

আমাদের আমপারার নাম ছিল ফুল।
যে ফুলের গ্রামের নাম ছিল ফুলতলী।
যে ফুলের মায়ের নাম ছিল জান্নাতী।
জান্নাতের ঘরে ফুটেছিল জান্নাতের ফুল।
ফুল কেনা ভালবাসে!
জান্নাতী কেঁদে কেঁদে বলেছিল যে:
মা, আমার তনু, আমার ফুল অকালেই ঝড়ে গেল!

আর ঝড়ে যাওয়া ফুলের পাপড়ি মঞ্চের উপর পড়ছিল, মঞ্চে বসে থাকা আমাদের মাথার উপর পড়ছিল। অথচ আমরা দেখছিলাম ফুলের সুবাসকে ম্লান করে রাজন-রাকিবের ফুলে উঠা পেটের গন্ধ হুহু করে মাইকের তরঙ্গের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিক। আর আমরা তখনো ভাষণ শুনতে থাকি, থুথু ফেলতে থাকি, আর শুনতে থাকি ভাষণ।

ভাষণ শুনতে শুনতে আমাদের জিহ্বা শুকিয়ে যায়, পেট মোচড় দিয়ে ওঠে; কেননা একি সাথে শুকনো মুখে শুকনো রুটি অথবা পুঁজে ভরা দেহ থেকে কীট তুলা জিহ্বা আমরাই ধারণ করি। সঙ্গমে সবাই সমান। যদিও দিনান্তে আমরাই ধর্মীয় পুরুষ, পবিত্র পুরুষ, ঈশ্বরের আবেশ! এখনো তাই ট্রাফিক সিগ্নালের সবুজ আলোয় শিখাই সত্যের ধারাপাত।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি

একদিন কুয়াশার এই মাঠে

একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি; হৃদয়ের পথ চলা শেষ হল সেই দিন — গিয়েছে

স্মৃতির পাতা থেকে

স্মৃতির পাখিরা: ১৯৭১ [সম্পূর্ণ]

প্রথম অধ্যায় ১৯৭১  সালের জানুয়ারি মাস। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছি। সব্বাই খুশি। মাত্র তিন মাস স্কুলে

কথোপকথন – মেহেক

— আমার চোখে কী দেখতে পাচ্ছিস? — কেমন যেন এক নেশা! — নেশা খুঁজে পেলি, ব্যথা খুঁজে পাসনি? *** —

কবিতা

বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের