পর্তুলিকা ও অন্যান্য কবিতা


জ্যোৎস্নাগাঁথা


জ্যোৎস্নার তাপে পুড়ে যাওয়া রাতে, একদিন আমার ব্যালকনিতে নামবে লুণ্ঠন করতে জানা জালিম চাঁদ। গভীর স্নান নেবে হাস্নাহেনার ঘ্রাণে। শাদা-শাদা কুচি-কুচি পাতায় খিল-খিল হাসবে ভরা চাঁদের আলো। আমি তখন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দৃষ্টির বহুদূর কান পেতে খুঁজব একটি নিশিবকের ডাক। চিরায়ত নিয়মেই রাত্রির দ্বিপ্রহরে ঘুমের আড়ালে পৃথিবীর কোথাও নির্মিত হবে বাবুইপাখির ঘর। ডালপালা মেলে দেবে পদ্মদিঘির ছোটো-ছোটো জলজ উদ্ভিদ। সমুদ্রের তীরবর্তী ছোটো ছনের ঘরে লাল-লাল কাঁকড়া ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন  কি-না, তা অজানাই থেকে যাবে। তবে ছোটো-ছোটো নুড়ি পাথর, ঝিনুক তখনও শীতল নোনাজলে ভিজে; ছাদবাগানে  লাগানো আঙুর গাছ থেকে টুপ করে ঝরে পড়বে একটি হলুদ পাতা।

দৃশ্যের অন্তরালে অথবা নিজের গহীনে বিরামবিহীন বেজে চলা শিবরঞ্জনী রাগ হঠাৎ জানান দেবে, এই নিস্তব্ধ নগরীর কোথাও আজ নিশিবক তার ডানাকে উড়ালযান বানায়নি– এবার ঘুমোতে যাও…


পর্তুলিকা


এসো একটি হলুদ পর্তুলিকার পাপড়িকে পালক ভেবে খুন হয়ে যাই– উড়ে যাই– নাই হয়ে যাই– পর্তুলিকা-বনে। সকালের সূর্যকে আরও করে দেই লাল, দ্রুত ছোটাছুটি করা লোহিত কণিকার লালে।

আর পাতাদের পিঠে সটান জিরিয়ে নেব– দীর্ঘশ্বাস বন্ধ করে একটু দম নেব সবুজ-সবুজ লতার আড়ালে।


বৃষ্টি-বার্তা


মেঘের উড়োচিঠি বয়ে নিয়ে এলে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার বার্তা: ময়ুরের পালক চেপে, চাতকী বাবুইয়ের বাসায় আশ্রিত হবে। বাতাসের আদরে দুলে দুলে যাবে ময়ুরের মেখম, তালগাছের চিরল-চিরল পাতা, বাবুইয়ের ঘর– পুরো পৃথিবী!

উন্মত হাওয়ার সাঁই-সাঁই শব্দরেস মলে দেবে মেঘরাজের কান;

তখনই নামবে বৃষ্টি ঝুম…

দুলন্ত বাবুইঘরের জানালায় চাতকিনীর বাড়িয়ে দেয়া একজোড়া শুষ্ক চোখ, অপলক দেখে যাবে বৃষ্টি-জলের প্রমোদে ভিজে যাওয়া লাল-হিজলবন। অপার লালিমা জড়ো হবে অক্ষিকোটরে। সেই-লালে বকুলের পাপড়িতে অঙ্কিত হবে তিলক। তিলকে ছোঁয়াবে কমলার কোষ– অমনি;

চাতকের অদূরে নিশ্চুপ বনগাঁও ভাসিয়ে নেবে পাহাড়ি ঢল…


প্রিয় রেইনট্রি


নতুন চাঁদ হাসা কোনো এক নিশির ঘুম ঘোরে চিরনিদ্রায় যাবো। ফজরে পাখিরা ডাকবে, আমি উত্তর দেব না। সূর্য হাসবে আমি দেখবো না। চোখ মেলবো না, মেলবো না কখনও কোনোদিন– প্রজাতির রঙিন রঙিন পাখা দেখবো না আর।

এতো যে ডাকি শব্দহীন ডাক বৃক্ষ তোমায়, অন্তিম ঘুমে সেই সমস্ত শব্দই প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরবে আমার পাঁজরে। আমি তাদের সাথে নিয়েই ঢুকবো আমার বিজন একার ঘর। পূর্ণিমা এলেই তারা হাঁটবে মাটির চার দেয়ালময়।

বাদল রাতে চন্দ্রকিরণে পুড়ে গেলে সোনাঝুরি বন, যেন আমার দৃষ্টিতে ফুটেছে উল্কাশশী– প্রিয় রেইনট্রি, আমি মাটির ভরে থেকেও তোমায় দেখছি।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
কবিতা

শকুন্তলা সংখ্যা: ‘মাহবুবা করিম’-এর কবিতা

দর্পণের বিশেষ সংখ্যা ‘শকুন্তলা‘–তে প্রকাশিত মাহবুবা করিম–এর তিনটি কবিতা তোমার হাসি এত নিষ্পাপ কেন টুপটুপ বৃষ্টি শেষে যেই না মেঘ কেটে

কবিতা

দূরদর্শিতার সূত্রাবলি

সৌগত দেবনাথের ৩টি কবিতা দূরদর্শিতার সূত্রাবলি দূরদর্শী মানুষের ভ্রমণে লেখা থাকে চোখতারা বর্তমানে থেকে কথা বলেন ভবিষ্যতেরতারা জানেন, গাছ কাটলে

নেককার

লায়লার মাকে ঘিরে ছোটোখাটো একটা জটলা ছিল। ক্রমেই সেটা বড় হচ্ছে। কেননা বিষয়বস্তু খুবই আকর্ষণীয়। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-কে স্বপ্নে

গল্প

ডাস্টবিন

ডাস্টবিনটার পাশের ফুটপাতে চারজন বসে আছে। আজ বেশ সুখী সুখী চেহারা চারজনেরই। মেয়েটা মাথায় বোধ হয় তেল দিয়েছে। পুরনো লাল