চন্দনকৃষ্ণ পাল

স্মৃতির পাখিরা: ১৯৭১ [সম্পূর্ণ]

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

প্রথম অধ্যায়

১৯৭১ 

সালের জানুয়ারি মাস। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছি। সব্বাই খুশি। মাত্র তিন মাস স্কুলে গিয়ে সব বন্ধুদের টেক্কা দিয়ে দ্বিতীয় হওয়া বোধহয় সহজ ছিল না। এতে গৌরবের ব্যাপার যে কতটুকু আমার মগজে কিছুই ঢুকেনি। কিন্তু বড়রা দেখলাম বেশ খুশি। বড়দার চড় চাপটার বদলে মিষ্টি হাসি। বেশ ভালোই কাটছিল দিন। বাড়িতে বিশাল সাইজের একটা রেডিও ছিল। সকাল বেলা পড়াশুনার পর বড়দা অন করতেন। গান-বাজনা আর বাচ্চাদের আবৃত্তি ভালো লাগতো। মাঝে মধ্যে বেশ সময় ধরে কোন পুরুষ বা মহিলা একটানা কথা বলে যেতেন। বাবা, কাকাদের আবার ঐ জিনিসটার প্রতি আকর্ষণ ছিল বেশি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম একটানা কথা বলা মানে খবর।

কাপড়ের তহবিল ছিল আমাদের। হঠাৎ করে একদিন বাবা বললেন দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। গাড়ি ঘোড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, দোকানে কিছু কাপড়-চোপড় স্টক করা উচিত। এরপর বেশ কয়েক সপ্তাহ বাবা বাইরে থাকলেন। হঠাৎ একদিন দুপুরে ফিরে বাবা বললেন– ঢাকার অবস্থা খারাপ। বোমা ফেলেছে ঢাকায়। অনেক মানুষ মারা গেছে। কী হবে ঈশ্বর জানেন। গ্রামেও কেমন একটা সাড়া পড়ে গেল। সবাই বললো যুদ্ধ হবে। বড়দাকে যুদ্ধ কী বলাতে এমন একটা ধমক দিল যে দৌড়ে পালাতে দিশা পেলাম না। আমার কাছে পুরো জিনিসটা ঘোলাটে হয়ে রইল। চারদিকে একটাই আলোচনা দেশের অবস্থা খারাপ। গ্রামের দুএক ঘর লোক তো গ্রাম ছেড়ে রাতারাতি চলে গেলেন। বাবা, কলি কাকা এরা মিলে একটা বিরাট গর্ত করে ঘরের মতো তৈরি করলেন। এর মধ্যে একদিন ভীষণ শব্দে চমকে উঠলাম। মাথার উপর দিয়ে ভীষণ বেগে দুটো বিমান উড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর গুম গুম আওয়াজ পেলাম। বড় ভাই বললেন শমশেরনগরে বোমা ফেলছে নির্ঘাত। বোমা টোমা এসব বুঝতাম না। এটুকু বুঝতাম, নিশ্চয় ভয়ংকর কিছু ঘটছে। সবাই চিন্তিত। স্কুল বন্ধ। সারাদিন টো টো করে ঘুরি খাবার সময় খাই, ঘুমাই।

একদিন দুপুর বেলা বাবা শহর থেকে ফিরে বললেন, ‘তোদের ময়না চাচাকে গাড়ি ঠিক করতে বলেছি। আগামীকাল দুপুরে আমরা ওপারে চলে যাবো। এখানে আর থাকা সম্ভব হবে না।’ সেদিন থেকে গোছগাছ শুরু হলো। দরকারী জিনিসপত্রগুলো বস্তায় ভরে রাখা হলো। মামার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও আগে যাইনি। নূতন জায়গায় যাবো ভেবে মনে বেশ আনন্দ হচ্ছিল। তৈরি হয়ে বেরুনোর সময় মায়ের চোখে জল দেখলাম। মনে একটা দাগ পড়ে রইল। মায়ের চোখে জল কেন?

চা বাগান, পাহাড়ি রাস্তা, আনারস বাগান ফেলে এসে সন্ধ্যের কিছু পূর্বে কমলপুর বর্ডারের কাছে গাড়ি থামলো। সকলের চেহারা ঝড়ো কাকের মতো। সাথে পানি ছিল মুখ হাত ধুয়ে নিলাম সবাই। বাবা বললেন, কমলপুর বাজার পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে। তাকিয়ে দেখলাম মানুষের ঢল। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। সবাই হাঁটছে, কিছু মজুর ঠিক করে আমাদের জিনিসপত্র তুলে দিলেন বাবা। তারপর হাঁটতে শুরু করলাম সবাই। সন্ধ্যার সাথে সাথে কমলপুর কালীবাড়িতে এসে পৌঁছালাম। বাবা কালীবাড়ির পূজারীর সাথে কথা বললেন। রাতটা বারান্দায় থাকার অনুমতি দিলেন পূজারী। সন্ধ্যার পর ভীষণ কান্তি লাগলো। কালীঘরের বারান্দায় মা বিছানা পেতে দিলেন। কখন যে ঘুমের অতলে তলিয়ে গিয়েছি জানতেই পারিনি। পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে বসে চোখ মেলে তাকালাম চারদিকে, কালীবাড়ির বিশাল নাটমন্দিরে অনেক মানুষ শুয়ে আছে। আর সে মানুষের বেশিরভাগই চা বাগানের শ্রমিক। পোটলা পুটলি নিয়ে প্রাণের তাগিদে সবাই চলে এসেছে মাতৃভূমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।

আমাদের পরিবারের সবাই ঘুমে। ধীরে উঠে কালীবাড়ির পুকুরে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিলাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম দুটো দশ পয়সা। কালীবাড়ির পিছনে একটা বিশাল সিনেমা হল (নাম মনে নাই)। সামনে চা-বিস্কুটের দোকান। দোকানে গিয়ে দশ পয়সা দিয়ে একটা বিস্কুট কিনে খেলাম। একটা লোক জিজ্ঞেস করলো কোথা থেকে এসেছো। বললাম– ‘জয় বাংলা থেকে।’ চলে এলাম কালীবাড়িতে। সবাই উঠে গেছে ঘুম থেকে, ভীষণ হৈ চৈ। বাবাকে দেখলাম না। মা সবাইকে চিড়া দিচ্ছেন। আমিও খেলাম। বাবা  ঠেলাগাড়ি নিয়ে এলেন। সব জিনিসপত্র নিয়ে ঠেলা দুটো এগোতে থাকলো। সাথে আমরা সবাই। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা খোলা বাড়িতে এসে উঠলাম সবাই। বাবার কথা থেকে জানলাম এই বাড়িতেই থাকতে হবে। বাড়ির একমাত্র যে ঘরটা দেখলাম ওটা ভাড়া নেয়া হয়েছে। মা আর সুষমা মাসী জিনিসপত্র গোছাতে লেগে গেলেন। আমি বড়দা আর বাবা গেলাম আবার কালী বাড়ির কাছে একটা দোকানে। ওখানে মানুষ লম্বা একটা লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে আর বড়দাকে বাবা লাইনে দাঁড় করিয়ে দিলেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়

বললেন ‘এই কার্ড নে একটু পর রেশন দেবে। রেশন নিয়ে বাসায় চলে যাবি।’ আমরা শরণার্থীর খাতায় নাম লেখালাম। সেদিন থেকে দীর্ঘ নয় মাস ভারতবাসীর সাহায্য নিয়েই বেঁচে ছিলাম আমরা। রেশন তুলে দুভাই চলে এলাম নূতন ভাড়া বাড়িতে।

দু-তিন দিন কেটে গেল। শ্রীমঙ্গলে আমাদের সমস্ত কিছু রয়ে গেছে। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। বাবা শ্রীমঙ্গলে চলে গেলেন। বলে গেলেন বুধবারে যাই হোক দোকানের একটা ব্যবস্থা করে ফিরে আসবেন। দু’ভাই সারাদিন ঘুরে-ফিরে কাটালাম। বিকেলের দিকে ভীষণ শব্দ শোনা যেতে লাগলো। বড়দা বললো শ্রীমঙ্গলে বোম্বিং হচ্ছে শিউর। মা আর সুষমামাসীর মুখ কালো। বাবা কেমন আছেন কে জানে। দুভাই সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্ডারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম। পিঁপড়ের মতো সারি ধরে মানুষ আসছে। পোটলা-পুটলি বাচ্চা-কাচ্চা এমনকি গরু ছাগলসহ। কয়েক জনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল আর শমশেরনগর বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্থানী মিলিটারি বোমা ফেলেছে। বাবার কোনো খবর পেলাম না। আধো ঘুম আধো জাগরণে রাত কেটে গেল, মা বসে রইলেন স্থির হয়ে। পরদিন সকাল বেলা হঠাৎ করে বাবা এসে উপস্থিত। আমরা যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। বাবার হাটু পর্যন্ত ধুলো। চোখ দুটি টকটকে লাল। ঘরে এসেই ধপ করে বসে পড়লেন। কান্না ভেজা কণ্ঠে যা বললেন তা এরকম:

কালীঘাট চাবাগানের কাছে পৌঁছতে বাবা দেখলেন প্রচুর মানুষ বোচকা-বুচকি নিয়ে ভারতের পথে রওয়ানা দিয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জানলেন, শ্রীমঙ্গলে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী বোমা ফেলেছে। এই মুহুর্তে শহরে রাজাকার আর শান্তি বাহিনীর লুটতরাজ চলছে। বাবা কালীঘাট থেকে পথ বদল করে বাড়িতে পৌঁছলেন। গ্রামে কেউ নেই, তালা খুলে ঢুকে শুধু কিছু চিড়ে নিয়েছেন খাবেন বলে অমনি আবার বোমারু বিমানের শব্দ। হাত থেকে থালা পড়ে গেল। কিছুক্ষণ বিমূঢ় থাকার পর বুঝলেন এখানে থাকার আর কোনো পরিবেশ নেই। দোকানের হিসাব পত্রের খাতাগুলো নিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে আবার পথে নামলেন। সারারাত কাটলো রাস্তায়। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে জেনেছিলাম স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য এবং রাজাকাররা ঘরের একটা কাঠের টুকরাও রাখেনি। ঘরের ভিটেয় ছিল কিছু ছাই আর উঠান ভর্তি ঘাস। বাগানের একটা ফলের চারাও ছিল না। উত্তরসূরী হিসেবে সব চাইতে বেশি বাঁশ গাছের মালিক ছিলাম আমরা। কিন্তু বাঁশ বন আর গাছের সারিতে সবুজের চিহ্নমাত্র ছিল না। বড় বড় আম গাছগুলোর কাটা কাণ্ড দেখে মনে হয়েছিল এক বিরান ধ্বংসস্তুপে এসে দাঁড়িয়েছি।

এরপর কমলপুরের জীবন। রেশন তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। দুপুরের দিকে চারটা খেয়ে আবার বেড়িয়ে পড়া। কমলপুরের প্রধান ফসল বাদাম। নদীর তীরবর্তী সমস্ত জমিতেই ছিল তখন বাদাম। ক্ষেত থেকে দুতিন গাছ বাদাম তুলে নিলেই হলো। নদীর জলে বাদামের শরীর থেকে মাটি ধুঁয়ে কাঁচা বাদাম খাও। সারাদিন বসে থাকো বিশাল মাঠের কাছে। নদী দেখো, ধু-ধু বাতাস। অন্য রকমের জীবন। মাঝে মাঝে মায়ের চোখে জল দেখতাম। তখন ভীষণ কষ্ট হতো বাড়ির জন্য। বাবা অনেক চেষ্টা করলেন আবার শ্রীমঙ্গলে যাবার কিন্তু সম্ভব হলো না। আত্মীয় স্বজন কে কোথায় কে জানে। ধীর-লয়ে চলছে কমলপুরের জীবন। কোনো বৈচিত্র্য নেই। প্রত্যেক দিন রেশন তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এখানে ওখানে ঘুরাঘুরি। বাদাম ক্ষেত থেকে বাদাম তুলে খাওয়া এই তো কাজ। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হতো। এ সব বৃষ্টির দিন ভীষণ খারাপ কাটতো আমার। সারাদিন ঘরে বসে থাকা কত সহ্য করা যায়। এরকম একদিন বৃষ্টি শুরু হলো। দু’দিন অঝোর ধারায় ঝরলো বৃষ্টি। এলাকার কয়েক জন্য লোক বললেন বন্যা হবে। বন্যা জিনিসটা যে কী বুঝিনি। বাবার মুখে ভয়ের ছায়া দেখলাম। সবাই মাচা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদিক ধলাই নদীতে পানি বাড়ছে। তৃতীয় দিন পানি ভীষণ ভাবে ফুলে উঠে ছড়িয়ে যেতে লাগলো চতুর্দিকে। বাবা আর বড়দা তাড়াতাড়ি করে বাঁশ কিনে এনে মাচা বাঁধতে লেগে গেলেন। দুপুরের দিকে ঘুরে ঢ়ুকে গেল পানি। বাবা বড়দাকে নিয়ে আগেই সমস্ত মালামাল মাচায় তুলে ফেলেছিলেন। এবারে সবাই মাচায় উঠতে বাধ্য হলাম। পানি বাড়ছে তো বাড়ছেই। ঘরটা খুব একটা শক্ত ছিল না। পানির তোড় সহ্য করতে না পেরে পেছনের একটা বেড়া পানির সাথে ভেসে গেলো। বাবা তাড়াতাড়ি করে নেমে কমলপুর মিউনিসিপ্যালিটির কাছে সাহায্যের জন্য গেলেন। এদিকে মা আর সুষমা মাসী কান্না শুরু করে দিয়েছেন। আমরা যারা ছোট তাদের চোখেও জল। এমন বন্যার সাথে এই তো প্রথম যোগাযোগ। প্রথম প্রথম পানি দেখে বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু পানির সর্বনাশা রূপ দেখে শেষে ভয়ের চোটে চোখের জল আর বাধা মানলো না। কিছুক্ষণ পর বাবা একটা বিশাল নৌকা নিয়ে এলেন।

নৌকায় বেশ কয়েকজন লোক ছিলেন। সবাই ধরাধরি করে ঘরের সমস্ত জিনিস পত্র নৌকায় তুলে নিলেন। আমরাও নৌকায় চড়ে বসলাম। ভীষণ খারাপ লাগছিল। বারবার মনে হচ্ছিল বাড়ির কথা। বাড়িতে থাকলে তো মহাবর্ষায়ও এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। সবাই মুখ নিচু করে বসে আছেন। নৌকা বাইছেন সাথে আসা লোকজন বিভিন্ন রাস্তা ধরে নৌকাটি কালীবাড়িতে এসে উপস্থিত হলো। কালী বাড়ির চত্তরসহ সমস্ত রাস্তাঘাট পানির নিচে। শহরের সমস্ত লোকজন মাচার উপর। শহরের লোকজন জানেন এ রকম বন্যা কমলপুরে মাঝে মাঝে হয়। তাই তারা আগে ভাগেই প্রস্তুত ছিলেন বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য। ফলে খুব একটা দুর্ভোগ তাদের পোহাতে হয়নি। কিন্তু যারা বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হিসাবে পাড়ি জমিয়েছিলাম তাদের দুর্ভোগটা ছিল অনভিজ্ঞতা প্রসূত। যাই হোক কালী ঘরের ভিত উচু থাকায় কালী ঘরে পানি উঠেনি।

তৃতীয় অধ্যায়

পূজারী আমাদের দেখেই এগিয়ে এলেন। এরপর বারান্দা খালি করে আমাদের জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন। কালী ঘরের বারান্দায় সেদিনের মত আশ্রয় পেলাম। দুদিন পর পানি নেমে যেতে থাকলো। আমাদের কালী ঘরের বারান্দায় থাকতে যথেষ্ট অসুবিধা হচ্ছিল। পূজারী ঠাকুর বললেন, দূর্গামন্ডপ খালি রয়েছে। আপনারা ওখানে চলে যান। আবার টানাটানির ব্যাপার। মানুষ দিয়ে কিছু, নিজে কিছু এভাবে সমস্ত জিনিস পত্র ট্রান্সফার করা হলো দুর্গাবাড়িতে। কিন্তু ওখানের ঘরটি ছিল স্যাঁতস্যাঁতে। বাবার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সেদিন বিকেলে ধর্মনগরের মেসোর কাছ থেকে একটা চিঠি এলো বাবার নামে। কালীবাড়ির পূজারী ঠাকুরের প্রযত্নে। আমাদের এক মাসীর বিয়ে হয়েছিল ধর্মনগরে অনেক পূর্বে। বাবা কমলপুর পৌঁছেই উনার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। ঐ চিঠির উত্তর এসেছে। মেসো লিখেছেন। ‘তোমরা ধর্মনগরে আমার এখানে চলে এসো।’ আত্মীয় স্বজন আরো অনেকেই ধর্মনগরে। বাবা মনস্থির করে ফেললেন। অবিলম্বেই ধর্মনগরে যাবেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেলো যোগাযোগ বন্ধ। তবে অবিলম্বেই আবার যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

এরপর একদিন বিদায় জানালাম কমলপুরকে। কেমন একটা কষ্ট হলো। বেশ কদিনে শহরের সমস্ত রাস্তাঘাট চিনে ফেলেছিলাম। কেমন পরিচিত মানুষের মত আপন হয়ে গিয়েছিল কমলপুর। বিশাল একটা ট্রাকে চড়ে আমরা যাচ্ছিলাম। সামনে মা, সুষমা মাসী আর ছোট বোন জলি (জলি তখন কোলের শিশু) পিছনে আমরা সব আর জিনিসপত্র। গাড়িটা যেমন বড় ছিলো তেমনি তার ড্রাইভার ছিলো ভীষণ লম্বা আর শক্তিশালী। চেহারাটা তো ভয়ংকর। যাই হোক গাড়ি তো ছাড়লো। প্রথম দিকে বেশ মজা। কিন্তু একটা বিমানবন্দরওলা শহর (নাম মনে নেই) পার হওয়ার পর পেটের ভেতর উথাল পাথাল শুরু হলো। হঠাৎ দেখলাম দিদি বমি করছে। কিছুক্ষণ পর কুলাই নামক একটা বাজারে এসে পৌঁছাল গাড়ি। বাবা দিদির মুখ হাত ধুয়ে দিলেন। আমিও ধুলাম কিন্তু তারপরও আমার পেট মহাশয় ঝড় থামালেন না। কুলাই ছাড়তেই শুরু হলো বমি। যা খেয়েছিলাম সব বেরিয়ে গেল। বাবা মুখ মাথা ধুয়ে দিলেন। এরপর ট্রাকের উপরই বিছানা পেতে দিলেন। শুয়ে দারুণ শান্তি পেলাম। এরপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারি না। এক সময় ঘুম ভাঙ্গলো। সন্ধ্যার পুর্ব মুহূর্ত দিদি এখনও শুয়ে আছে। বাবাকে ডাকলাম। কাছে এলে বললাম– ‘কোথায় এসেছি।’ বাবা বললেন ‘পানিসাগর।’ নামটা দারুণ লাগলো। কিছু খাবো কিনা জিজ্ঞেস করলেন বাবা, বেশ ক্ষুধা লাগছিল বললাম লিচু খাবো। একটু পরই বাবা এক ঝোপা লিচু এনে দিলেন। খোসা ছাড়িয়ে খেতে শুরু করলাম। রাত প্রায় দশটার দিকে ধর্মনগর পৌঁছলাম। ট্রাক থেকে নেমে হাতমুখ ধুলাম সবাই। এরপর একটা স্টলে কিছু খাবার খেলাম। বাবা বোধ হয় মেসোকে পুর্বেই খবর দিয়েছিলেন। মেসো এসে হাজির। দুতিনটে ঠেলা গাড়িতে সমস্ত মালপত্র বোঝাই করে যাত্রা শুরু হলো। গ্রামের নাম রাধানগর। মেসোদের বাড়িটা বিশাল। অনেকগুলো ঘরের একটায় আমাদের স্থান হলো। পৌঁছেই-আর দেরী করলাম না, লুটিয়ে পড়লাম বিছানায়। রাত যে কোন দিকে শেষ হলো ঈশ্বরই জানেন।

পরদিন ভোরে উঠলাম। সবাই তখন ঘুমে। হাঁটলাম সারা বাড়ি। হঠাৎ একটা দরজা খুলে গেল। দিদির চাইতে বেশ বড় একটা মেয়ে বেরিয়ে এল। ‘এই তোর নাম কিরে?’ ‘চন্দন।’ ‘বাড়ী কোথায়?’ ‘শ্রীমঙ্গলে।’ ‘আমাকে চিনিস?’ ‘না তো।’ ‘আমি তোর দিদি হই। বড়দি। আচ্ছা-আমার সাথে আয়।’ উনি আমার হাত ধরে পুকুর ঘাটে নিয়ে গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন। পুকুর থেকে ফিরে এসে দেখলাম বাড়িতে মোটামুটি হাট বসে গেছে। অনেক আত্মীয় স্বজন। বেশীর ভাগই অচেনা, এতো মানুষের ভীড়ে মামাতো বোন মঞ্জুদি, তুলসীদি আর গৌরাদাকে পেয়ে গেলাম। তুলসীদি তো কোলেই তুলে নিলেন। ‘এই ছেলে কোথায় তুই, অনেকক্ষণ যাবৎ খুঁজছি তোকে।’ আসলে ভীষণ আদর করেন তুলসী দিদি। শমশেরনগরে ওদের ওখানে গেলে ভীষণ আদর পেতাম ওদের কাছ থেকে। সবাইকে কাছে পেয়ে ভালোই লাগলো। মায়ের কাছে গিয়ে দেখলাম মার মনটা খুব খারাপ। দিদিমা এবং বড়মামা আসতে পারেননি। কে জানে বেঁচেই আছেন কিনা?

তিন-চার দিন পর একদিন দুপুর বেলা মামা আর দিদিমা এলেন। খালি হাতে, হাটু পর্যন্ত ধূলা মাখা। কাপড়ে চোপড় ময়লা। ওরা বসলেন। জানালেন পাকিস্থানী সৈন্যরা শমশেরনগর বিমান ঘাঁটিতে ক্যাম্প করেছে। স্থানীয় লোকরা বাড়ীর সমস্ত কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ওরা পালিয়ে এসেছেন। মামীমার চোখে জল দেখলাম। সবাই নিঃশব্দ। খুব খারাপ লাগলো আমার। দিন কাটতে লাগলো। বাবা-প্রায়ই যেতেন ধর্মনগর। একদিন এসে বললেন শরণার্থী শিবির হচ্ছে কালাছড়া। দুএকদিনের মধ্যেই যেতে হবে। আসলে মাসীদের বাড়িতে অনেক মানুষ আর আত্মীয়-স্বজন। তাছাড়া এখানে বাবার তো আয়ের কোন রাস্তা ছিল না। তাই শরণার্থী শিবিরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একদিন সকাল বেলা গোছগাছ শুরু হলো। যা সাথে না নিলেই নয়। তাছাড়া বাকী সব মাসীর বাড়িতে রইল। আমাদের সাথে বড় মামারা সবাই। বাড়ি থেকে হেঁটে পৌঁছলাম ধর্মনগরে। ধর্মনগরে গিয়ে বাস ধরে অনেক পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে সন্ধ্যার কিছু পূর্বে ছোট একটা বাজারে এসে পৌঁছলাম। নাম জানা গেল কদমতলী। বাস থেকে নেমে শুরু হলো হাঁটা। একটা বিশাল হাওর। পায়ে চলার পথ। সবার হাতেই কিছু না কিছু । আমার হাতে একটা কেটলী। গৌরাদার হাত ধরে হাঁটছি। লাইন ধরে অনেক মানুষ। একজন পথ প্রদর্শক নিয়ে যাচ্ছেন। বড়দের কথা থেকে বুঝলাম ওখানকার একটা স্কুলে আমাদের স্থান দেওয়া হবে।

চতুর্থ অধ্যায়

এর মধ্যে সন্ধ্যা নেমে এলো। আমরা হাঁটছি । পায়ে ব্যথা তবুও হাঁটছি । অনেক রাত্রে একটা খালের পাশে এসে দাঁড়ালাম । ও পাশে স্কুল । কেরসিনের বাতি জ্বলছে । মনে হয় ওখানে আরও মানুষ রয়েছে । খাল পার হলাম বাবার কোলে চড়ে । আমাদের সাথের ভদ্রলোক আমাদের সবার জন্য একটা রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন। চোখ জুড়ে ঘুম এলো। মা বিছানা খুলে দিলেন। শুয়ে পড়লাম। পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো। বের হলাম। বিশাল একটা মাঠের একপাশে স্কুল। স্কুলের ঠিক পিছন দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা একটা খাল। কালাছড়া (স্থানীয় ভাবে খালকে ছড়া বলা হয়)। মাঠের একপাশ থেকে একটা বাজারের শুরু। কালাছড়া বাজার। গুটি গুটি পায়ে বাজারে এসে ঢুকলাম। বাজারটা খুব বড় না। চারদিকেই কিছু দোকানঘর। মধ্যে চালাঘরের সারি। একপাশে কয়েকটি চায়ের দোকান। ধূয়া উড়ছে। আর সব দোকান বন্ধ। দুএকজন লোক খালের ওপরের বাঁশের পুলটা পেরিয়ে ওপারে যাচ্ছে আসছে। স্কুল, মাঠ, ছোট খরস্রোতা খাল, বাজার, সবুজ গাছপালাকে আমি ভালোবেসে ফেললাম।

আম কাঁঠালের সময় ছিল তখন। গৌরাদাকে নিয়ে প্রায়ই বেরিয়ে পড়তাম। এ বাড়ি ও বাড়ি হাঁটতাম। আম, কাঠাল, আনারস প্রচুর ছিল। গৌরাদাটা ছিল ভীষণ সুন্দর। ওকে দেখলেই মনে হতো বড়লোকের ছেলে। কোঁকড়ানো চুল আর কার্তিকের মতো সুন্দর। ওকে সবাই ডাকতো। ডেকে এই সেই জিজ্ঞেস করতো বিভিন্ন খাবর টাবার দিত। গৌরাদার সহযোগী যেহেতু আমি তাই আমিও বঞ্চিত হতাম না। দিন ভালোই কাটতো। খাওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর হৈ চৈ। সপ্তাহে একদিন কদমতলীতে রেশন আনতে যেতেন বাবা বড়দারা। মাঝে মাঝে আমি আর গৌরাদাও যেতাম। সেই বিশাল হাওর পেরিয়ে। বিকেলে ফেরার পর পা ব্যথা করতো। তবুও ওখানে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারতাম না। কারণ হাওরের পরের রাস্তাটুকুর দুপাশে ছিল কাঁঠাল, আনারসের বন। পাকা কাঁঠাল আর আনারস প্রচুর খাওয়া যেত। কেউ কিছু বলতো না। তখন ঘোর বর্ষা। প্রায় দিনই বৃষ্টি থাকে। ঘরে বসে লুডু, কাটাকুটি আর লিচু বীজে ম্যাচের পোড়া কাঠি ঢুকিয়ে বানানো লাটিম ঘুরিয়ে সময় কাটে। মাঠের পাশ দিয়ে একটা নালা বয়ে খালে পড়তো। এলাকার সমস্ত পানি ওই নালা দিয়ে পড়তো। বেশ গভীর ছিল ঐ নালা। দেখতে ভয় লাগতো। নালার জল খালে পড়ে একটা কৃত্রিম জলপ্রপাতের সৃষ্টি করছিল। ভীষণ শব্দ আর জল কণা উড়তো ধোঁয়ার মত। খালের অবস্থা তখন ভয়ংকর। পাক খেয়ে খেয়ে ছুটে যাচ্ছে পানি। এ রকম একদিন আমাদের বয়সী একটা ছেলে খালের খুব কাছে দাড়িয়ে খালের পানির উদ্দামতা দেখছিল। হঠাৎ করে পা ফসকে পড়ে গেল। আর উঠতে পারলো না। ভয়ংকর একটা দৃশ্য। মা-বাবা কড়া নির্দেশ দিলেন ও দিকে না যাওয়ার জন্য। আমরাও ভয়ের চোটে ওদিকে আর যাইনি কখনো। এলাকাবাসী কয়েক জনের কয়েকটা হাতি ছিল। প্রায়ই দিনই মাহুত হাতিদের স্নান করাতে খালে আসতেন। ধীরে ধীরে মাহুতদের সাথে পরিচয় হয়ে গেল। এরপর রোজই হাতি চড়তাম। প্রথম দিকে খুবই ভয় লাগতো। হাতিতে চড়লে হাতির চলার তালে তালে নড়তে হয়। গৌরাদা তো প্রথম দিনই ধপাস, আমরা মন খুলে হেসেছিলাম সেদিন। এরপর সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

আমরা প্রায় সাড়ে তিন মাস ছিলাম কালাছড়ায়। স্কুল তখন বন্ধই ছিল। মাঝে মাঝে স্যাররা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মাঠের পাশে গাছতলায় ক্লাস নিতেন। আমার খারাপ লাগতো। বুঝতে পারতাম আমাদের জন্যই এদের কষ্ট করতে হচ্ছে। বড় ভাই মাঝে মাঝে বলতেন। ‘দেখ ভারত কত সেক্রিফাইস করছে আমাদের জন্য। এভাবে প্রত্যেক মানুষের সেক্রিফাইস করার মতো মন থাকা উচিত।’ বড় ভাইয়ের কথা কিছু বুঝতাম, কিছু না। এলাকার কিছু ছেলেমেয়েদের সাথেও পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে যেতাম, চা মুড়ি ফল-ফলারি খেয়ে আসতাম। একদিন কালাছড়া থেকে বিদায়ের সানাই বাজলো। দারুণ ভালোবেসে ফেলেছিলাম এলাকাটাকে। বাজারে একজন ডাক্তার কাকু ছিলেন। ভীষণ স্নেহ করতেন। যাবার দিন কেঁদে ফেললাম। আমার কান্না দেখে গৌরাদা আর ডাক্তার কাকুও কাঁদলেন। আবার কদমতলী। আবার বাসে চড়া, আবার বিদায়।

দুপুরের দিকে যেখানে এসে বাস থামলো সেখানে মানুষ জন না থাকলে ভীষণ ভয় পেতাম। চারদিকে পাহাড় আর জঙ্গল। রাস্তার এক দিকের বিশাল সব পাহাড় জঙ্গল কেটে লম্বা ঘর তৈরী করা হয়েছে। ঘরগুলোর উপরে প্লাস্টিকের ত্রিপল। ওখানের একজন লোক (সম্ভবত তিনি একজন অফিসার) বললেন কালাছড়া থেকে যারা এসেছেন তারা-ই-ব্লকে যান। আবার হাঁটা শুরু। পাহাড় কেটে রাস্তা। বোঝা যায় কয়েক দিন আগে তৈরী হয়েছে। আপ-ডাউন। দুপাশের টিলায় ঘর আর রাস্তার যে পাশে ঘর তৈরী করা হয়েছে ঐ পাশের নাম পদ্মবিল আর অপর পাশের নাম উপ্তাকালি। কোনো কোনো ঘরে মানুষ। কোনো কোনো ঘর খালি। পাহাড়ের উপর থেকে ঝিল দেখা। জঙ্গলে ঠাসা, ভেতরে কেমন তরল অন্ধকার। আমরা হাঁটছি। আমার ভীষণ পিপাসা পেয়েছে। বাবাকে বলতেই বাবা একটা জগ নিয়ে পানি আনতে গেলেন। পাহাড়ের পাদদেশে একটা কুয়া দেখা যাচ্ছিল। পাহাড়ে অনেক মানুষের ভীড়। বাবা পানি আনলেন। ভীষণ ঘোলা। মুখে দেয়ার যোগ্য নয়। তবুও খেতে হলো। ছোটরা সবাই খেলো একটু একটু। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা পাহাড়ে এসে উঠলাম। ও টাই ই-ব্লক। সারা ব্লকই খালি। কেউ এসে উঠেনি। আমরাই প্রথম। বেশ কয়েকটা পরিবার এসেছিলাম আমরা। সবাই নিজেদের পছন্দমত ঘর খুঁজতে লাগলেন। বাবা মা পছন্দ করলেন এক পাশের একটা ঘরের দুইটি রুম। ঘরটির ছাউনি ছিল ছনের। ঘরের পিছনে বেশ খালি জায়গা। সন্ধ্যে হয়ে আসছিল। মা ডেগ-ডেকছি বের করলেন।

পঞ্চম অধ্যায়

বড়দা টিলার নীচ থেকে কয়েক খানা ইট নিয়ে এলেন (নীচে পাকা কূপ তৈরী হচ্ছিল)। ঐ ইট দিয়ে বাইরে চুলা বানিয়ে রান্না চাপানো হলো। সারাদিনের ক্ষুধা আর ক্লান্তি। সন্ধ্যার পর বাইরে বাতি জ্বালিয়ে খেলাম আমরা। বাবা ঠাকুরমামা বড়দা এরা রেডিও নিয়ে বসলেন। আমরা ছোটরা খেয়েই শুয়ে পড়লাম।

পরদিন থেকে শুরু হলো নতুন জীবন। পাহাড় জঙ্গলের দেশ ত্রিপুরার পদ্মবিল নামটা সুন্দর। কিন্তু কেন যে এ নাম,বুঝতে পারলাম না। গহিন পাহাড়ের ভেতর এ নাম কে দিল কে জানে। গৌরাদাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। আশপাশের সবগুলো টিলায় নূতন ঘর তৈরী হচ্ছে। পাহাড়ের নীচে গভীর কূপ। আর সারি বাধা পায়খানা। দুটো পরিবারের জন্য একটা পায়খানা। ঘুরলাম সারা সকাল। দুটো বাজারও আবিস্কার করলাম। শরণার্থী শিবিরের মানুষেরা এখানে দোকান দেয়, কেনাকাটা করে। এ,বি,সি,ডি ব্লক লোকে পূর্ণ। আমাদের আসার পরের দুতিন দিনের মধ্যেই আমাদের ই-ব্লকও লোকে পূর্ণ হয়ে গেল। আমাদের রুমগুলোর ঠিক পার্শ্বের রুম নিয়েছিলেন কুলাউড়া থানার গাজীপুরের একটি পরিবার। আমাদের পরিবারের সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে মিশেছিলেন তারা। ঐ পরিবারের কর্তাকে আমরা মেসো ডাকতাম। ঐ পরিবারের ছেলেদের দাদা আর মেয়েদের দিদি ডাকতাম। ঐ পরিবারে তিন ছেলে আর তিন মেয়ে ছিলেন। ছেলে মধ্যে খোকাদা, ললিতদা আর বকুল। মেয়েদেও মধ্যে রীনাদি আর বীনা, আর একজন দিদি ছিলেন উনার নাম ভুলে গেছি। বীনা ছিল আমার সমবয়সী। আর বকুল একটু ছোট। দিন কাটে ঘুরে ঘুরে। রেশন সপ্তাহে একদিন আর দুধ প্রত্যহ সকাল বেলা। আমাদের ব্লকের দুধ দেওয়া হতো রাস্তার মোড়ে। প্রত্যহ বড় বড় পাত্রে দুধ জ্বাল দেয়া হতো। তারপর কার্ড আর দুধের পাত্র নিয়ে লাইন ধরে দাড়া তো ছোটরা। একজন একজন করে দুধ দেয়া হতো। সকাল ৮টা থেকে শুরু হতো দুধ দেয়া। প্রত্যহ দুধ আনার কাজটা আমাকে করতে হতো। প্রায়দিন গৌরাদাও সাথে থাকতো। ও ছিল ভীষণ দুষ্ট। নানান কথা বলে, কখনও বা হাত লাগিয়েও বেশী করে দুধ নিয়ে আসতো। মাঝে মাঝে গৌরাদাকে নিয়ে কাঠকুড়াতে বের হতাম। জঙ্গলের নানা প্রকার ফল টলও পাওয়া যেতো। বাংলা নামের এক ধরনের কলা ছিল। ছোট কিন্তু মিষ্টি। কাঠের চাইতে কলাই আমরা বেশী খুঁজতাম। এ রকম একবার ঘুরতে ঘুরতে পথ হারিয়ে ফেলছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে পথ আর পাই না। আমি যখন কেঁদে ফেলবো। তখন হঠাৎ ফেরার পথ পেয়ে যাই। এরপর থেকে বেশী দূরে যেতাম না। আমার দুধ আনা আর বড়দার রেশন তোলা ছাড়া ওখানে কোন কাজ ছিল না।

বাবাকে বলে বড়দা সি-ব্লকের বাজারে একটা সিগারেট চকলেট ইত্যাদির দোকান দিয়েছিল। বাবা করিমগঞ্জ, ধর্মনগর থেকে মালপত্র এনে দিতেন। বড়দা বিক্রি করতো। গৌরাদা তখন বড়দার সাথেই বেশী থাকতো। এর কারণ মনে হয় দোকানের চকলেট বিস্কুট ইত্যাদি হবে। আমিও যেতাম মাঝে মধ্যে কিন্তু বড়দা খেতে দিত না। মার কাছ থেকে পাঁচ দশ পয়সা নিলে আমাদের দোকান থেকেই কিনে খেতাম। নিজের হাতে নেয়ার সময় অবশ্য দুচারটা বেশীই নিতাম। আমার মনে হতো বড়দা গৌরাদাকে বেশী ভালবাসে। গৌরাদাকে বোধ হয় এ জন্য কিছুটা হিংসাও করতাম। আবার কোথাও যেতে টেতে গৌরাদাকে যখন চোখ নাচিয়ে যাওয়ার কথা বলতো তখন মনে হতো গৌরাদার মতো বন্ধু হয় না। এই মুহুর্তে কয়েক তাজার মাইল দূরে গৌরাদা। কিন্তু গত কয়েক বছরের স্মৃতিচারণে বুঝতে পারি গৌরাদাই ছিল আমার সব চাইতে হৃদয়ের কাছের মানুষ। আমার সুখ-দুঃখের সমান অংশীদার।

আমাদের ব্লকে বেশ কয়েক জন মাষ্টার ছিলেন। এর মধ্যে জুড়ির একজন (নাম মনে নেই) প্রস্তাব দিলেন ব্লকের পার্শ্ববর্তী খোলা জায়গায় স্কুল করা হবে। এভাবে ঘরে বসে ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা সব ভুলে যাবে। তাছাড়া যুদ্ধ কবে শেষ হবে তারও তো কোন নিশ্চয়তা নাই। যেই কথা সেই কাজ। ব্লকের সকল উৎসাহী লোকরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন স্কুল হবে। পরদিন থেকে স্কুলে যেতে হতো। যার যার ঘর থেকে বসার ব্যবস্থা নিতে হতো। যাদের পুরনো বই ছিল তারা ঐসব বইই পড়তো। আর আমরা যারা বইপত্র নিতে পারিনি তারা ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের বই কিনে পড়তে লাগতাম। বাংলা বই এবং স্লেটের এক টুকরো এখনও আমার কাছে আছে। চমৎকার সব গল্প আর ছড়া কবিতায় ঠাসা ছিল সে বই। মার সহযোগীতায় অল্প দিনেই সে বইয়ের সবগুলো ছড়া কবিতা মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। প্রতিদিন সকাল আটটায় স্কুল বসতো। পাশের রুমের বীনা আর আমি পড়তাম একসাথে। বীনা ছিল চমৎকার মেয়ে। সুন্দর আর হালকা পাতলা। ওর নাকে একটা নোলক ছিল। কথা বলতো হেসে আর নোলক নাড়িয়ে। সেই বীনা হয় তো আজ অনেক বড় হয়েছে। হয় তো বিয়ে গেছে। কে জানে তার কি মনে আছে সে সব দিনের কথা। স্কুলের কাজ শুরু হতো জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলার’ মাধ্যমে। সবাইকে একসাথে গান গাইতে হতো। এরপর শরীরচর্চা। শরীরচর্চার পর ক্লাস শুরু হতো। বারোটার মধ্যেই ক্লাস শেষ হয়ে যেতো। আমরা আবার স্বাধীন। এভাবে সময় বয়ে যাচ্ছিল।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বাবা এবং অন্যান্যরা রেডিও খুলে বসেন। বিভিন্ন ধরনের কথা বার্তা শুনি। কিছু বুঝি কিছু না, এর মধ্যে একদিন ভীষণ শব্দে মাথার উপর দিয়ে দুটো জেট প্লেন উড়ে গেল। সবাই ভীত সন্ত্রস্ত। ব্যাপার কী? খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল ভারতীয় মৈত্রী বাহিনী বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করছে। ও সব ভারতীয় মৈত্রী বাহিনীর জেট প্লেন।

ষষ্ঠ অধ্যায়

এরপর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে প্লেন আসা যাওয়া করতো। এরমধ্যে একদিন আমাদের পদ্মবিল উপ্তাকালী শিবিরে এলেন কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী। মিটিং হলো। যুবক ছেলেরা নাম লেখাল মুক্তিযোদ্ধার খাতায়। আমাদের গ্রামের ছেলে সুধা কাকুও মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখিয়ে ট্রেনিং এ চলে গেলেন। যুদ্ধ তখন পুরোদমে চলছে। আমি, বীনা কিংবা গৌরাদাকে নিয়ে আমাদের ক্যাম্পের এক পাশের সৈন্য শিবিরে যেতাম প্রায়ই। মাথায় কালো পাগড়ী বাধা শিখ সৈন্যদের দেখি। মাঝে মাঝে ওরা আমাদের ডেকে নিত। রুটি বিস্কুট খাওয়াতো। ওরা কি বলতো বুঝতে পারতাম না। বোকার মত তাকিয়ে থাকতাম। ওরা হাসতো।

যুদ্ধ তখন শেষ পর্যায়ে। ধর্মনগর-শান্তিপুর রাস্তার পাশে দাঁড়ালে দেখা যায় জলপাই রঙের ট্রাকের সারি। সৈন্য বোঝাই হয়ে যাচ্ছে। আবার ফিরেও আসতো। ট্রাকে থাকতো লাল কাপড়ে মুখ বাধা পাকিস্থানী সৈন্য। ভারতীয় সৈন্যরা ট্রাক থেকে বলতো ‘জয় বাংলা’। আমরাও ‘জয় বাংলা’ বলে প্রতিউত্তর দিতাম চিৎকার করে। চারদিকে চাপা উত্তেজনা বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাবে। আমরা আবার ফিরে যাবো বাংলাদেশে। এর মধ্যে গুজব উঠলো বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়েছে। শুনে আমার ভীষণ কান্না পেল। শ্রীমঙ্গলে থাকতে একবার বাবার কাঁধে চড়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলাম শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে। ফুলের মালায় গলা ভর্তি। প্লাটফরমে হাজার মানুষের ভীড়ে বজ্রকন্ঠে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমি যদিও তখন বুঝিনি কিন্তু মনে হয়েছিল উনার ক্ষমতার কাছে কেউ টিকতে পারবে না। একটা অজানা ভালোবাসায় মনটা ভরে গিয়ে ছিল আমার। আর ঐ মানুষটাকে মেরে ফেলেছে শুনলে কান্না আসবে না আমার?

মাঝে মাঝে একটা কীর্তনের দল হরিও কীর্তন নিয়ে আসতেন। কীর্তনে মুখরিত হয়ে উঠতো আকাশ বাতাস। কীর্তনের শোভা যাত্রায় আমরাও যোগ দিতাম। মা বলতেন কীর্তন সমস্ত খারাপকে দূর করে দেয়। আশ-পাশের ব্লক গুলোতে অসুখে বিসুখে প্রায়ই মানুষ মারা যেত। এরমধ্যে শিশুরাই ছিল বেশী। আমার ভীষণ ভয় করতো। প্রায়ই দূরের টিলার নীচে আগুন দেখা যেত আর ‘হরি বোল’ ধ্বনি। ঢোল মৃদঙ্গের শব্দ। বুঝতে পারতাম কাউকে দাহ করা হচ্ছে। ভেতরটা কেমন হয়ে যেত। এ সময় আমি কথা বলতাম না। হয় চুপচাপ বসে থাকতাম না হয় শুয়ে থাকতাম। পাশের রুমের বীনার বড়ভাই ললিতদা ছিরেন দারুণ ফুর্তিবাজ মানুষ। লম্বা নাকের অধিকারী মানুষটা খুব হাসাতে পারতেন। আজগুবি সব মজার মজার গল্প। থালা বাজিয়ে গান আর হৈ চৈ এ মেতে উঠতো সামনের উঠোন। প্রত্যেকদিন অনেক রাত পর্যন্ত ললিতদার সাথে কাটতো আমাদের। খোকাদা মানুষটা একটু চুপচাপ ধরনের ছিলেন। বেশীরভাগ সময় বই নিয়ে কাটাতেন। আর একটি ছেলে ছিল তোতন। জুড়ি অথবা বড়লেখা ছিল বাড়ী। কথা বলতে মুখে লাগতো। আমাকে ডাকতো ‘তন্দন’ বলে। ভীষণ ভালোবাসতো আমাকে। নিজে খাবার জন্য যাই কিনুক না কেন একটু হলেও আমার জন্য আনতো।

আমার সবচেয়ে বেশী ঘুরাঘুরি ছিল বীনার সাথে। মাঝে মাঝে দেখতাম আমাদের দিকে তাকিয়ে মা-মাসীমারা হাসাহাসি করতেন। বুঝতাম না। শিশু বয়স এতো সুন্দর এতো পবিত্র এখন চিন্তা করলে দুঃখ লাগে। কোথায় সে সব স্মৃতিময় দিন? আজ কই আমি, কই গৌরাদা, তোতন, বীনা, ললিতদা। কেউ কাছে নেই। স্বাধীনতার পর এক গৌরাদা ছাড়া আর কারো খবর রাখতে পারিনি। এজন্য বড় অনুতাপ হয় আমার। একরাশ কষ্ট বুকের ভেতরে ডানা মেলে উড়তে থাকে। এ সময় একবার জন্ডিস হয়েছিল আমার। ভীষণ শুকিয়ে গিয়েছিলাম। অনেক ঔষধ খেয়েছিলাম কিন্তু কমেনি। আমাদের ব্লকের এক ভদ্রলোক বললেন উনার এক আত্মীয় থাকেন শান্তিপুর বাজারের কাছে। উনি কবিরাজী জানেন। ওখানে গেলে আমি ভালো হয়ে যাবো। একদিন দুপুর বেলা ঐ ভদ্রলোকের হাত ধরে পাহাড়ী পথে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম কবিরাজের বাড়ি। কবিরাজ মুখে তেল নিয়ে কুলি করালেন। কুলি করা তেল হয়ে গেল ডিমের কুসুমের মত। ফুঁ দিলেন আর লতাপাতা দিলেন। বিকেল বেলা ঐ ভদ্রলোকের হাত ধরে শান্তিপুর বাজারে গেলাম। এক দর্জির দোকানে আমাকে বসিয়ে বললেন এখানে তোমার বাবা আসবেন। বসো তুমি। আমি একটা টুলে বসে রইলাম। দর্জি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। হঠাৎ শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি। বাবা আর আসেন না। আমি আর থাকতে পারলাম না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। দর্জি এসে হাত ধরে বললেন-কি হয়েছে বাবা। তোমার বাবা এখানে আসবেন। আর যদি না আসেন আমি নিজে নিয়ে তোমাকে দিয়ে আসবো। তুমি একটুও চিন্তা করো না। তিনি কলা কিনে দিলেন। বসে বসে খেলাম। সন্ধ্যের পর বাবা এলেন। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। পথে বৃষ্টির জন্য দেরী হয়ে গিয়েছিল বাবার। ক্যাম্পে মাছ খুব কম পাওয়া যেতো। শান্তিপুর বাজার থেকে মাছ কিনে বাবার সাথে ফিরে এলাম।

দিন যায় রাত আসে। রাত যায় আবার সূর্য ওঠে। আকাশে জেট বিমানের ছড়াছড়ি। বুঝা যায় যুদ্ধ চরমে। বড়দা রেডিও নিয়ে ব্যস্ত। কত রকমের কথা শুনি। কেউ বলে স্বাধীনতার আর বাকী নেই। কেউ বলে হু এত্তো সহজ, কত বছর যে ও যুদ্ধ চলবে তা কেউ বলতে পারে না। আমার বাড়ির জন্য কষ্ট হয়। রেখা, পিংকু, বিকাশ, বিমলসহ অন্যান্য বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে কলিকাকার কথা। মাঝে মাঝে ভীষণ খারাপ লাগে। এতো স্বাধীন ভাবে থাকার পরও মনে হয় পরের বাড়িতে আছি। নিজের বাড়িতে কবে যাবো। ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী রাস্তায় জলপাই রঙের ট্রাকের সংখ্যা আরো বাড়ে।

সপ্তম অধ্যায়

লাল কাপড়ে চোখ বাঁধা পাকিস্থানী সৈন্যের পরিমাণ আরও বাড়ে। ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ কিংবা ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ধ্বনি আরো জোরালো হয়।

এর মধ্যে একদিন রাতের বেলা চাপা উল্লাসে পুরো পদ্মবিল উপ্তাকালী শরণার্থী শিবির জেগে ওঠে। এই উল্লাস এক সময় বিজয় মিছিলে রূপান্তরিত হয়। বৃদ্ধা মহিলা আর শিশু ছাড়া সবাই রাস্তায়। শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। খবর হলো পাকিস্থানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। বাংলাদেশ মুখ দেখলো স্বাধীনতার। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, লক্ষ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের ফলশ্রুতি বাংলাদেশ বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠলো। বাবা স্পেশাল পারমিশন নিয়ে চলে গেলেন শ্রীমঙ্গলে। এলাকার অবস্থা দেখে আসতে। ফিরে এলেন কদিন পর। এবারে দেশে ফেরার পালা, পারমিশন নেওয়া হলো। বীনাদের পরিবার, ঠাকুরমামাদের পরিবার আর আমাদের জন্য একটা ট্রাকের ব্যবস্থা করলেন কর্তৃপক্ষ। ট্রাক আমাদের কুলাউড়া রেলস্টেশন পর্যন্ত এনে দেবে।

এক সকালে সবাই উঠে বসলাম বিশাল সাদা ট্রাকটায়। ট্রাক ছাড়লো। চোখের জলে বিদায় জানালাম দীর্ঘ ছয় মাসের আবাসস্থল পদ্মবিল শরণার্থী শিবিরকে। ট্রাক সীমান্ত অতিক্রম করে কুলাউড়া ঢুকলো। চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন। বুঝা যায় প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ের কবল থেকে বহু যুদ্ধের বিনিময়ে নিজেকে রক্ষা করেছে বাংলা মা। কুলাউড়া রেলস্টেশনে এসে আমাদের নামিয়ে দিয়ে ট্রাক চলে গেল। এবারে আমাদের বিদায় নেবার পালা। স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানো। বীনাদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বীনা হাত ধরে বললো-আমাদের দেখে যাস। দুজনের চোখে জল। মাথা নেড়ে বললাম দেখে যাবো। ট্রেন ছাড়লো। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসা বীনারা মুছে গেল দৃষ্টি থেকে। ট্রেন তখন দ্রুত ছুটে চলেছে।


This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu