এই শহরে এক পাগলের আবির্ভাব হয়েছিল


বেশ কিছুদিন যাবৎ শহরের মানুষের মুখে একটা কথা শোনা যাচ্ছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে, রাস্তায় চলার পথে, একসাথে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় কিংবা কাজের শেষে ক্লান্ত শরীর জিরিয়ে নেওয়ার সময় ব্যস্ত শহরের মানুষেরা এই কথাটা নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হচ্ছে। শহরের ছাত্র, শিক্ষক, সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, রিকশাচালক কিংবা লেবার সকলের চিন্তার বিষয় এখন এক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকলে নিজেদের মতো করে বিচার বিশ্লেষণ করছে; একে অপরের সাথে আলোচনা করছে বিষয়টা নিয়ে।

এই শহরে একটা নতুন পাগলের আবির্ভাব হয়েছে। শহরে একটা নতুন পাগল দেখা যাবে আর শহরের সকল মানুষ তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে তা কখনো হয় না। কিন্তু এবার হয়েছে। তবে এর অবশ্য কিছু কারণ আছে। কারণটা হলো এই পাগলটা শহরের আর অন্য দশটা পাগলের মতো স্বাভাবিক পাগল না। অস্বাভাবিক রকমের পাগল সে। খুব অদ্ভুত রকমের সব কাজ কারবার করে বেড়ায়। একদিন করেছে কী, সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে যখন সূর্যটা রক্তের মতো লাল রং ধারণ করে তখন তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাসতে থাকে অনেক সময় ধরে। কিছুক্ষণ পরে হাসি থামিয়ে মানুষদের ডেকে জড়ো করতে থাকে। মানুষ জড়ো করে সে নেতাদের মতো বক্তৃতা আরম্ভ করে। সে বলে, সারা রাস্তা জুড়ে শুধুমাত্র মাংসের স্তুপ আর রক্ত দেখতে পাচ্ছে। অনেকগুলো ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পাচ্ছে, সে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। সে বলে সে কোনো জীবিত মানুষকে দেখতে পাচ্ছে না। সেই অনেকদিন আগে; সময়ের হিসেবে প্রায় কয়েক যুগ আগে এখান থেকে দূরে, অনেকদূরে এরকম এক জনসভায় হাজার হাজার লাশের ভিড়ে একজন মানুষকে দেখতে পেয়েছিল সে। তার চেহারায় ছিল নূরের দ্যুতি। হালকা ছিপছিপে গড়নে কালো রঙের একটা শার্টে তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। তখনও আজকের মতো সূর্যটা একেবার রক্তের মতো লাল দেখাচ্ছিল। সেই লাল সূর্যের মলিন আলো তার মুখে পড়েছিল। তাকে ফেরেশতার মতো লাগছিল।

তার এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত জনতা খুব ক্রুদ্ধ হয়। বর্ষার মেঘের মতো গর্জে উঠে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জনগণ। সবাই ক্রুদ্ধ চোখে তার দিকে তাকায়। কিন্ত তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে নির্বিকার দাঁড়িয়ে দেখে সামনের সকলকে। কিছুক্ষণ পরে তার ডান হাত আকাশের দিকে নির্দেশ করে লোকটা। আকাশ গর্জে উঠে। মানুষের গর্জন থেমে যায় সাথে সাথে। ঠান্ডা হিম শীতল বাতাস উত্তর থেকে বয়ে চলে উপস্থিত জনতার ওপর দিয়ে। উপস্থিত জনতা কাঁপতে থাকে শীতে। তখন লোকটা দ্বিতীয়বারের মতো হাত ওঠায়; এবারে একেবার নেতাদের মতো। সবার মনোযোগ আটকে যায় সেখানে। সবাই যেন একেবার বরফের মতো জমে যায়। উত্তরের বাতাসে তাদের চুল উড়তে থাকে– কিন্তু আর কেউ কাঁপছে না শীতে।

লোকটি দ্বিতীয়বারের মতো কথা বলা শুরু করে। সে বলে,

বাতাস কিংবা শব্দ আকাশে মিশে যাবার আগেই অর্থাৎ অন্ধকারে বিলীন হবার আগেই সব কষ্ট কিংবা দুঃখকে গুছিয়ে নিতে হয়। অন্ধকার দুঃখ কিংবা কষ্ট বোঝে না। অন্ধকার শুধু সুখ খুঁজতে চায়। আমার অথবা আপনার তথা আমাদের আলো যেদিন ফুরিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে সেদিন আর কোনো হাহাকার থাকবে না কারো মনে। সবাই শান্ত, নিশ্চিন্ত কিংবা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকবে মাটিতে অথবা ঠিকানায়। তখন আকাশ মেঘলা হবে; তুমুল ঝড় উঠবে সবখানে; বৃষ্টিতে ভেসে যাবে সমস্ত পৃথিবী। ঝড়, বৃষ্টি শেষে আকাশ পরিষ্কার হয়ে সোনারাঙা রোদ হাসতে দেখা যাবে। কিন্তু আমাদের অন্ধকার কাটবে না কোনোদিন। আমরা অসার, নিশ্চুপ, নিশ্চিন্ত পড়ে থাকব। যখন আকাশে মেঘ করে বৃষ্টি হয় তখন গাছেদের ভিজতে ইচ্ছে না করলে কী করে? কোথাও পালিয়ে যেতে চায়? হয়তো। কিন্তু পালিয়ে যেতে পারে না মাটির গভীরে আটকে থাকা শিকড়ের টানে। আমাদেরও তাই। যখন শিকড়ের টান কিংবা চিরসত্য আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দুহাত খুলে আমাদেরকে আলিঙ্গন করতে চাইবে তখন আমরা পালিয়ে যেতে পারব না। পারব না নয়; তখন আমাদের পালানোর পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

এই পর্যন্ত বলার পর লোকটা কথা বলা থামিয়ে দেয়। সামনে উপস্থিত জনতা তাদের পদক্ষেপ বুঝতে না পেরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। উত্তরের দিককার বাতাস ঘুরে পুবে চলে যায়। পুবের দিককার তীব্র বাতাস উপস্থিত জনতার চোখে মুখে লাগে। তবুও উপস্থিত জনতা নিশ্চুপ; অসাড় দাঁড়িয়ে থাকে সামনে। যেন তাদের কোনো তাড়া নেই; তাদের কোনো ব্যস্ততা নেই। লোকটা উপস্থিত জনতার দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। তাদের শান্ত দেখে আবার বলতে শুরু করে, ধূসর কিংবা গাঢ় অন্ধকার নিজেকে গ্রাস করে নেওয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়; নিজের মনকে প্রস্তুত করতে হয় অন্ধকার যাপনের জন্য; পিপীলিকা যেমন খাবার জমিয়ে রাখে শীতযাপনের জন্য, একজন বাবা যেমন নিজের সমস্ত ঘাম জমিয়ে রাখেন সন্তানের জন্য, একজন মা যেমন তার সমস্ত ভালোবাসা জমিয়ে রাখেন নতুনের জন্য– অন্ধকার যাপনের জন্যে আমাদেরও জমিয়ে রাখতে হবে যত আছে পুণ্য।

বৃদ্ধের কথা শুনে এবার জনতার ভিড় থেকে আওয়াজ আসে। ভিড়ের ভিতর থেকে লোকটার দিকে ছুটে আসে অবিরাম প্রশ্ন। উত্তরের পাশ থেকে সাদা শার্ট পরা এক যুবক বলে– পেটে ক্ষুধ নাকি বাবা, ধর্মের কথা শোনাচ্ছ?

তার পাশের লোকজনতার সাথে সায় দেয়। এবার দক্ষিণের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের নিকট হতে ছুটে আসে প্রশ্ন– মসজিদ অথবা মন্দির উন্নয়নের টাকা লাগবে কি?

পিছন থেকে টাক মাথার একজন ভুঁড়িওয়ালা জিজ্ঞেস করে– বাবা, সংসার চলছে না নাকি?

মাঝের থেকে একজন ভদ্রগোছের সাদা চশমা পরা লোক বলে– লোকটার বোধহয় পারিবারিক সমস্যা চলছে।

এবার সামনে থাকা নেতাগোছের তাগড়া একজন ধমকের সুরে বলতে শুরু করে– এসব ধান্দা কই পাইছো? ধর্মের কথা বলে লোক ঠকানোর ধান্দা সবকিছু।

লোকটা সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখে জনতার ভিড় থেকে তীরের বেগে ছুটে আসা কথাগুলো শোনে। তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে বলা শুরু করে– সবাই থাম। আমি তোমাদের থেকে সাহায্য নিতে নয় বরং তোমাদেরকে সাহায্য করতে এসেছি। তোমাদের ফিরিয়ে নিতে এসেছি একটা সভ্য সমাজে; একটা সুখী সমাজে। যেখানে তোমরা সবাই খুব সুখে থাকবে।

লোকটার এই কথা শুনে উপস্থিত জনতা আরো ক্রুদ্ধ হয়। ক্রুদ্ধ জনতা পাগল পাগল বলে হাতের কাছে যা পায় তাই ছুঁড়তে থাকে লোকটার দিকে। কিন্তু লোকটা একেবার নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার মুখে লেগে থাকে রহস্যময় হাসি। তার চকচকে চোখ দেখতে থাকে সামনের ক্রোধান্বিত জনতা। লোকটা হাত উঁচু করে আকাশের দিকে ইশারা করে। সাথে সাথে ক্রুদ্ধ হয় আকাশ। চারিপাশে এক গুমোট পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অল্প সময়ের মাঝে আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি নামে জনতার ওপর। বৃষ্টি নামার সাথে সাথে ছুটে পালায় ক্রুদ্ধ জনতা। কিন্তু ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকে লোকটা। তারপর জোরে এক অট্টহাসি হেসে ধীর পায়ে এগোতে থাকে পশ্চিমে। আকাশে মেঘ আর বৃষ্টির খেলা। বড় বটগাছের মাথায় বসে থাকা কাক ভিজে চুপসে গেছে। গাছের তলায় একটা জীর্ণ কুকুর বৃষ্টি থেকে বাঁচার আশ্রয় খুজছে। ঝুম বৃষ্টির মাঝে বড় রাস্তা ধরে লোকটা ধীর পায়ে এগোতে এগোতে জনতার দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যায়। জনতার চোখে তখনো ক্রোধ লেগে থাকে। ‘শালা পাগল কোথাকার!’–এই বলে নিজের রাগকে বাইরে উগরে দিতে চায়ছে কেউ কেউ। কেউ কেউ চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে– শালা এসব পাগল লোকগুলো যে কোথা থেকে আসে। আবাল কোথাকার। নিজে খাবার পায় না ঠিকমতো আবার আমাদের সুখী করতে এসেছে। শালা সুখ বোঝে? জানে শান্তির মানে?

পাশের থেকে একজন সিগারেটের ধোয়া ফোস করে বাইরে চালান করে দিয়ে বলতে শুরু করে– আরে, এগুলো হলো এসব লোকের ধান্দা। এই করে মানুষ ঠকিয়ে খেয়ে বেড়ায়। শালা জীবনে কোনোদিন স্কুলের বারান্দায় পা দিয়েছে, হ্যা? যে ও আমাদের সুখ, শান্তি কী তাই শেখাবে। সুখের মানে বোঝে ও? অশিক্ষিত, জোকার লোকজন কোথাকার। এসব মানুষগুলোকে গুলি করে মারার দরকার। আরে ভাই আমরা কি অসুখী? কত উন্নতি হচ্ছে আমাদের। চাকরির বেতন বেড়ে ডাবল হয়েছে, যাতায়াত সুবিধা, খাওয়ার স্বাধীনতা, পরার স্বাধীনতা আরো কত কী! চারিদিকে সুখ আর আনন্দ। কত সুখ আর আনন্দের মাঝে অতিবাহিত করছি আমাদের জীবন।

একটানে কথাগুলো শেষ করে সিগারেট মুখে পুরে একটা সুখটান দিলে সিগারেটের আগুন লোকটার চোখের মতো জ্বলে ওঠে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো বাইরে বৃষ্টির ফোঁটা গুনতে গুনতে লোকটার কথায় সায় দেয়। বাইরে বৃষ্টি কমতে থাকে। লোকেরা মনে মনে পাগলকে গালি দিতে দিতে রাস্তায় নেমে যে যার গন্তব্যের দিকে এগোতে থাকে। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে লোকেরা পাগল, আকাশ, বাতাস, মেঘ, বৃষ্টি, কাক, কিংবা কুকুরের চিন্তায় আটকে থাকে। তাদের মাথায় ঘুরপাক খায় ‘সুখ’ শব্দটি। তাদের অবচেতন মন খুঁজতে থাকে সুখের সাথে পাগলের কিংবা তাদের সম্পর্ক। তাদের সমস্ত ভাবনা আটকে থাকে সুখ শব্দটিতে। তারা এই ভাবনা নিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছায়।

আকাশ ফুঁড়ে অন্ধকার নামতে থাকে পৃথিবীর বুক জুড়ে। নতুন আরেক পৃথিবী জেগে ওঠে। অজানা, অচেনা পৃথিবী। যার কোনো বিধি-বিধান নেই, যার কোনো নিয়ম-নীতি নেই। যার আকাশ অন্ধকারে ঢাকা। যে আকাশে চাঁদ, তারার মেলা। বন-বাদাড়ে ঝিঁঝিঁপোকার আনাগোনা। মানুষেরা দিনের সমস্ত ক্লান্তি মুছে ফেলার আয়োজন করে। কিন্তু তাদের মগজে তখনো আটকে থাকে সভ্য কিংবা সুখী সমাজের চিন্তা। তাদের অবচেতন মনে প্রশ্ন জাগে, তবে কি তারা সভ্য কিংবা সুখী সমাজের কেউ নয়? কিন্তু তারা এ প্রশ্ন তাদের মনে জায়গা দেয় না। মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয় পাগলের প্রলাপ বলে। কিন্তু তবুও তাদের মন আটকে থাকে সেখানে। সুখ কিংবা সভ্য শব্দদুটো মনে আটকে থাকা অবস্থায় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সকলে।

মনের ভেতর আটকে থাকা শব্দদুটো নিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ঠিক স্বপ্ন না, সব কিছু স্পষ্ট। যেন একেবারে বাস্তব। স্বপ্নে দেখে নীল রাঙা আকাশ, সবুজ ধানের খেত, তারপর দেখে একটা ফাঁকা জমি। এই ফাঁকা জমির মাঝে তাদের নিজেদের অবয়ব দেখতে পায়। স্বপ্নে তাদের অবয়ব দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। তারা দেখে রক্ত, মাংসপিন্ড বেরিয়ে আসা ক্ষতবিক্ষত একটা শরীর। যে শরীর থেকে ধেয়ে আসছে একটা বিকট দুর্গন্ধ। লোকেরা ঘুমন্ত অবস্থায় সেই দুর্গন্ধ পেয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখে। তাদের দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়। সেখান থেকে দৌড়ে পালাতে থাকে। নীল আকাশের তলে ফাঁকা মাঠ, সবুজ ধানখেত পেরিয়ে ছুটে চলে। কিন্তু সেই দুর্গন্ধ তাদের পিছু ছাড়ে না। তারা ছুটতে থাকে। বাতাস কাটতে কাটতে ছুটে চলে নিরুদ্দেশ পানে। অনেক দৌড়ানোর পর যখন তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন একটা নদী দেখতে পায়। আকাশের মতো স্বচ্ছ নীল না, রক্তের মতো টকটকে লাল সে নদীর পানি। তাদের মনে হয় এ যেন পানি নয়, তাদের শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া লাল রক্ত। লোকেরা ভয় পেয়ে যায়। তারপর তারা যখন জোরে চিৎকার দেয়, তখন দেখতে পায় বিকেলের সেই পাগল লোকটা গাছের নিচে বসে তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

সেই চিৎকারে ঘুম ভাঙার পর শহরের লোকেরা আর ঘুমোতে পারে না সেরাতে। বীভৎস দুর্গন্ধ, লাল রক্তের নদী, পাগলের হাসিমুখ তাদের মগজে আটকে থাকে। তাদের দম বন্ধ হয়ে আসে এসব ভাবতে ভাবতে, তবুও তারা এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। বাইরে ভোরের আলো রাতের অন্ধকারকে বিলীন করে দেয়। আবার নতুন দিনের সূচনা হয়। শহরের লোকেরা তাদের কাজে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু লাল রক্তের নদী, ক্ষতবিক্ষত দেহ, বিকট গন্ধ আর সেই পাগলের হাসি তাদের মগজ দখল করে রাখে। তারা কাজের মাঝেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু করে। সেদিন থেকেই মূলত এই পাগল মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়।

শহরের লোকেরা পাগলের আলোচনায় লিপ্ত থাকার পাশাপাশি তাদের দুঃখ নিয়ে ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একটু বিনোদনের অভাববোধ করে। তারা টিভি চালিয়ে ফ্যানের নিচে গা এলিয়ে বসে। টিভিতে সংবাদ প্রচার হয়, এক ছাত্রীর সাথে তার শিক্ষকের খারাপ আচরণের খবর দেখায়; রাতের আঁধারে হারিয়ে যাওয়া মানুষের খবর দেখায়; এক মা তার সন্তানের চিকিৎসা করতে না পেরে নিজের জীবন দিয়েছে সে খবর প্রচারিত হয়; একজন বাবা মেয়ের জন্যে একজোড়া ফুল কিনতে গিয়ে পিচঢালা রাস্তায় নিথর পড়ে আছে সেসব খবর দেখায়। লোকেরা টিভিতে সে সংবাদ দেখে। তাদের কাছে এসব স্বাভাবিক মনে হয়। প্রতিদিন এসব দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব আর খুব বেশি কষ্ট দেয় না এই লোকগুলোকে। হয়তো তাদের মনের কোণে নিজের পরিবারের আশঙ্কার কথা ভেবে একটু কষ্ট হয় তবুও তারা নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে টিভির পর্দায়।

এরপর হঠাৎ একটা সংবাদ সবাইকে চমকে দেয়। তাদের শহর থেকে কিছু দূরে পিচঢালা বড় রাস্তায় একটা মানুষ নিথর পড়ে আছে। যার সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে। শহরের লোকেরা এই সংবাদে চমকে ওঠে না, তারা চমকে ওঠে লোকটার মুখ দেখে। সবাই অবাক হয়ে দেখে একটা ক্ষতবিক্ষত মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। ক্লান্ত, ক্লিষ্ট মুখের ওপর রক্তরাঙা হাসি দেখে তাদের গা গুলিয়ে আসে। এই চেহারাটা কিংবা হাসি খুব পরিচিত মনে হয় তাদের। তারা ভাবতে থাকে কোথায় যেন দেখেছে এই মুখ, এই হাসি। পরক্ষণে তাদের রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে। তাদের মনে পড়ে সেদিন বিকেলের পাগলের কথা।


This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
কবিতা

নিভৃত

বিষণ্ণ রাত, প্রসন্ন দিন আনো আজ মরণের অন্ধ অনিদ্রায়, সে অন্ধতায় সূর্যের আলো হানো, শ্বেত স্বপ্নের ঘোরে যে মৃতপ্রায়।  

যতদিন বেঁচে আছি

যতদিন বেঁচে আছি আকাশ চলিয়া গেছে কোথায় আকাশে অপরাজিতার মতো নীল হয়ে-আরো নীল-আরো নীল হয়ে আমি যে দেখিতে চাই;- সে

গল্প

কিছু কিছু ইতিহাস ভাসতে থাকে জলে

বারান্দায় বসে শীতের সকালের স্নিগ্ধ রোদ পোহাতে মন্দ লাগে না। খুব ভালোই লাগে। এতো ভালো লাগে অনেকে আবার প্রেমে পড়ে