লোকজ ঠাকুর


এই ঝুলন্ত আসমান লাল হয়ে গেলে একজন লোক পথ চলে; গাছ-পালা, লতা-পাতা ও বন-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে, লাল মাটিকে পেছনে ফেলে, উকুনের মতো বিলি কেটে। তার ক্লান্ত পা, ঢুলুঢুলু চোখ ও অসার দেহ মেম্বার বাড়ির সামনে পৌঁছে, তারপর একটানা কড়া নাড়ে করাতের শব্দের মতো; যা মেম্বারের বউয়ের কানে এসে লাগে। মেম্বারের বউ নরম মনের মানুষ, মানুষের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারে না। লোকটার অবস্থা দেখে শুনে বুঝে মায়া হয় তার, মায়া হয় বলে সে একটা মাদুর পেতে দেয়। লোকটা ইশারা করে পানি চায়, হাতের মুঠোয় চাল বা মুড়ি চায়, খেয়ে পানি খাবে। মেম্বারের বউয়ের কলিজা ফেটে যেতে চায়, এই যুগে কেউ এভাবে না খেয়ে থাকে, তাও শুকনো চাল বা মুড়ি খেতে চায়। বউ সঙ্গে সঙ্গে খাবার নিয়ে আসে। নতুন আলু নতুন ফুলকপির সঙ্গে কাতলা মাছের লসলসা ঝুলের তরকারি, সঙ্গে কালো কবুতর ভুনা, আরো আছে জলপাই দিয়ে ঘন ডাল। কী যে মজা, লোকটা কত বছর পরে যে খায় কে জানে, চপ চপ শব্দ হয়, পারে তো এক লোকমায় সব ভাত শেষ করে ফেলে। বউয়ের বুকের ভেতরে শান্তি লাগে, পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়, আরো ভাত এনে দেয়, আরো তরকারি এনে দেয়, চোখের পলকে দুই প্লেট ভাত শেষ হয়ে যায়। খাওয়া শেষ হলে লোকটা ইশারা করে কাছে ডাকে। মন্ত্রের মতো কী সব পড়ে। ততক্ষণে বাড়ির মানুষ জড়ো হয়ে যায়। লোকটা ক্রমাগত বিড় বিড় করে। আবারো বউকে কাছে ডাকে। বউ কাছে যায়। লোকটা শূন্য থেকে খাব্লা দিয়ে ধরতে চায় কিছু। কয়েক বার চেষ্টা করে হাতের মুঠি বন্ধ করে বউয়ের হাতে দেয়। বউ আস্তে আস্তে মুঠি খুলে দেখে একটা পয়সা, চক চক করছে, দেখে স্বর্ণের মতো মনে হয়, তাতে বই ও কলমের ছবি আছে। মানুষ তাজ্জব হয়ে ভালো করে তাকায়। লোকটা পাহাড়ের মতো লম্বা। গায়ে ধূসর আলখাল্লা, সাদা চামড়ার উপর ধূলো ও ময়লার আস্তরণ, মুখভর্তি দাড়ি, ছিপছিপে নাক, বড় বড় চোখ ও বর্শার ফলার মতো তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেখে দরবেশের মতো মনে হয়। তখন লোকটা চামড়ার কালো ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে পরিষ্কার বাংলায় লেখে:

আমার নাম লোকজ ঠাকুর। আমার কোনো ঘর বাড়ি নেই। এই রাস্তা এই পথ ঘাট বন জঙ্গলই আমার ঠিকানা। কেউ খেতে দিলে খাই, না দিলে খাই না। আমি এসেছি একটা বিশেষ কাজে। কিছুদিনের মধ্যে এই গ্রামে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। আমি চেষ্টা করবো তার তীব্রতা হ্রাস করতে।

মেম্বার বাড়ির লোকজন নিশ্চিত হয় যে লোকটা আসলে কথা বলতে পারে না। মেম্বারের বাবা লোকটার কথার শানে নজুল বের করার চেষ্টা করে। মেম্বার ফোনে বলে দিয়েছে, সে আসার আগে যেন লোকটাকে কিছুই বলা না হয়। মেম্বারের নির্দেশ মতো একটা ঘরে লোকটাকে থাকতে দেয়া হয়। বাড়ির বান্ধা কামলা সুরুজকে পাহারা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। আর সবাইকে সতর্ক করা হয় যাতে কোনো মানুষ জানতে না পারে। অবশ্য এসব ব্যাপার এই বাড়ির মানুষ ছাড়া একটা কাক-পক্ষীও জানার কথা না। কারণ, তাদের মধ্যে মিল মহব্বতের অভাব নেই।

এক সময় বাড়ি ফিরে মেম্বার। সব কিছু খুলে বলে বাবা, বউ ও ছেলেরা। যদিও ইতোমধ্যে ফোনে ফোনে অনেক কিছুই জেনে গেছে। তারপরও মেম্বার চুপ করে বসে থাকে না। সে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়, কিন্তু পরিবারের লোকজন বোঝাতে থাকে যে লোকটা সত্যিই কামেল, তার প্রধান কাজ হলো দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো ও মানুষের উপকার করা। কপাল ভালো যে এই বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তখন মেম্বার, তার বউ, বাবা ও ছেলেরা লোকটার ঘরে ঢোকে। মেম্বারের বউয়ের কোলে ছলছল করে চেয়ে থাকে ৪৭ মাসের মেয়ে প্রশান্তি, যার পরলে গাঢ় সবুজ রঙের জামা, যাকে দেখলে সত্তর-একাত্তর মাসের মেয়ের মতো লাগে, যার ফর্সা গালে টোকা দিলে রক্ত বের হয়ে যাবে। লোকটা প্রশান্তির দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, তখন মেম্বার লোকটার সঙ্গে কথা বলতে চায়। লোকটা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে, তারপর তড়িগড়ি করে খাতায় লেখে:

আমার নাম লোকজ ঠাকুর। মেম্বার, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে। সামনে অনেক বিপদ। তুমি সাবধান হও। সেদিন পুবের আসমানে মেঘ থাকবে, মানুষের হাতে থাকবে অস্ত্র, বাঁচতে চাইলে তুমিও অস্ত্র নিয়ো হাতে।

মেম্বার ভয় পেয়ে যায়। তার মনে পড়ে কোন্ দিন কোন্ কাজ করেছে, কোনটা একটু বেশি খারাপ বা কোনটা একটু বেশি ভালো ছিলো। তবে লোকটাকে মানে লোকজ ঠাকুরকে দেখে শুনে বুঝে ষড়যন্ত্রের মতো কিছু মনে হয় না, বরং কামেল মানুষ মনে হয়। তখন লোকজ ঠাকুর চামড়ার কালো ব্যাগ থেকে একটা পুরনো বই বের করে। সেই বই থেকে কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে মেম্বারের বড় ছেলেকে পড়তে দেয়। মেম্বারের বড় ছেলে আওয়াজ করে পড়ে:

এক গেরামে দুই ভাই ছিলো। তাদের ছিলো প্রচুর জমি জমা। এক ভাই আরেক ভাইয়ের কলিজার টুকরা। তারা এক সঙ্গে থাকে, এক সঙ্গে কাজ-কাম করে, খাওয়া-দাওয়া করে, হাট-বাজারে যায়, পুঁথি শুনতে যায়, যাত্রা দেখতে যায়, এক সঙ্গে ঘুমাতে যায়। তারা যেন দুই ভাই না, যেন দুই দোস্ত। গেরামের মানুষ দুই ভাইয়ের মিল-মহব্বত দেখে জ্বলে পোড়ে ছারখার হয়ে যায়। তারা সব রকমের ফন্দি ফিকিরি করে ব্যর্থ হয়, কোনোভাবেই দুই ভাইয়ের মিল-মহব্বত ভাঙতে পারে না। দুই ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে রেষারেষি ছিলো কালু মোড়লের। মোড়ল চিন্তা করে কীভাবে দুই ভাইয়ের মিল-মহব্বত ভাঙন যায়, কীভাবে আলাদা করা যায় দুই জনকে। মোড়ল চিন্তা করে আর করে, কিন্তু কোনো উপায় পায় না। হঠাৎ করে বটতলার পাশে ডেরাতে যে বুড়ি থাকে তার কথা মনে পড়ে।

একদিন দুপুর বেলা দুই ভাই ধান খেতের কাছে আম গাছের নিচে বসে বিশ্রাম করে, গপসপ করে, হাসাহাসি করে। এমন সময় বুড়িটা টুক টুক করে এসে বলে, ‘ও বাপ রহিম তোর সাথে একখান কথা আছে, একট্টু ওইদিকে যাবি।’ রহিম বলে, ‘যা কওয়ার এখানেই কন, ওইদিকে যাবার দরকার নাই।’ কিন্তু বুড়ি কম পানির মাছ না, ওদিকে না গেলে সে কথাটা বলবে না।

বুড়ির উপর বিরক্ত হয়ে রহিম ওদিকে যায়, কিন্তু বুড়ি আরো অনেক দূরে নিয়ে যায়। রহিম যতই বলে আর দূরে যাবার দরকার নেই, বুড়ি ততই দূরে দূরে নিয়ে যায়। এক সময় কানে কানে বলে:

– তোগোর ক্ষেতের ধান তো পাকছে, আলা কাইট্টা ফেলা।

– তা তো কাটামই, আপনি কী জানি কইবাইন…

– আরে এইডাই, ধান কাটার সময় হইছে, তাড়াতাড়ি কাইট্টা বাড়িতে নিয়া যা, শিল তুফান আইলে তো সব শেষ হইয়া যাইবো।

– তা ঠিক, কিন্তু এই কথা তো করিম ভাইয়ের সামনেও কইতে পারতেন, এই কথা বলার জন্য এত দূরে আসতে হয় নাকি, আর কানে কানে কওয়ারইবা কী দরকার!

– আরে সব কথা কী সবার সামনে কওন যায়? তুই যা, যা কইছি তাড়াতাড়ি কর, করিমের মতিগতি ভালো ঠেকতাছে না।

বুড়ি আর একটা কথাও বলে না, তরতর করে জঙ্গলের রাস্তা ধরে চলে যায়। রহিম খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে করিমের কাছে আসে। করিম জিজ্ঞেস করে বুড়ি কী বলেছে। রহিম সব খুলে বলে, কিন্তু রহিমের কথা করিমের বিশ্বাস হতে চায় না, কেমন খটকা লাগে। তারপর দুই ভাই খুব নীরব হয়ে মাথায় এক ক্ষেত চিন্তা নিয়ে গলাগলি করে বাড়ি ফিরে। পরের দিন সকালে বটগাছের পথ ধরে করিম হাটে যায়। ওকে দেখেই বুড়ি নাকি সুরে বলে, ‘ও করিম, করিম রে, হুইন্না যা।’ করিম যাবে না যাবে না করেও কাছে চলে যায়। বুড়ি গলার স্বর নিচু করে বলে, ‘কাছে আয়, কানাকানি কথা।’ করিম শুনবে না শুনবে না করেও কানে এগিয়ে দেয়, ‘শোন্, তোর ভাই রহিমের মতিগতি কিন্তু ভালা ঠেকতাছে না, আমি কাল সাবধান করে দিছি, তুই হইছোস সরল পোলা, রহিমের লগে তুই পারতি না।’ এই কথা শুনে করিম খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে। বাড়িতে গিয়ে মুখ বিষ করে রাখে। আস্তে আস্তে দুই ভাই দুই জনকে সন্দেহ করতে থাকে। এই সন্দেহ তালপাতার আগুনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এক সময় দুই ভাই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তারপর তারা গালাগালি করে, মারামারি করে, শেষমেশ খুনাখুনি করে। ওদিকে মোড়ল শুধু গোঁফে তেল দেয়।

মেম্বারের পরিবার দম ধরে বসে শুনেছে। প্রশান্তি ঘুমিয়ে পড়েছে, লোকজ ঠাকুরের বিছানার একপাশে শুয়ে ঘুমুচ্ছে ও। লোকজ ঠাকুর একবার করে প্রত্যেকের মুখের দিকে চায়, তারপর প্রশান্তির দিকে চেয়ে থাকে। মেম্বাররা বুঝতে পারে না কিছু, কী করা উচিত বা কী বলা দরকার বা কেন এই গল্প পড়ানো হয়েছে। ঘরজুড়ে গভীর নীরবতা নেমে আসে। লোকজ ঠাকুরকে কিছু বলার জো নেই। যে লোক কথা বলতে পারে না যে লোক কানে শুনে না সে লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা অথবা দক্ষতা অর্জনের জন্য মানুষের যে অভিজ্ঞতা দরকার সে অভিজ্ঞতা তাদের কারো নেই। এমন সময় লোকজ ঠাকুর কাগজে লেখে যে তারা যেন আজকের মতো চলে যায়, শুধু ছোটো ছেলেকে থাকতে বলে, তার সঙ্গে নাকি জরুরি কথা আছে।

তারা ঘর থেকে বের হয়ে গেলে লোকজ ঠাকুর গালে হাত দিয়ে বসে, ভ্রু ও কপাল কুঁজকে ছোটো ছেলেকে দেখে। তারপর কাগজে লেখে: আমি এখন যে কথাগুলো তোমাকে বলবো সে কথা যদি তুমি কাউকে বলো তবে তোমার বিপদ হবে, তুমি মারাও যেতে পারো। তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। খবরদার কাউকে বলবে না। একটু আগে যে গল্পটা শুনেছো সে গল্পের চরিত্ররা তোমাদের বাড়িতে আছে। ওরা তোমাকে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করবে। আমি মূলত তোমার ভালোর জন্য এই বাড়িতে এসেছি। আমি ওদেরকে সাবধান করে দেবো। তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমি তোমার পাশে আছি। এখন ঘরে যাও। এখন তোমার নিদ্রার প্রয়োজন। আর শুনো সেদিন পুবের আসমানে মেঘ থাকবে, মানুষের হাতে থাকবে অস্ত্র, বাঁচতে চাইলে তুমিও অস্ত্র নিয়ো হাতে।

লোকজ ঠাকুরের ঘর থেকে বের হবার সঙ্গে সঙ্গে মেম্বার ছোটো ছেলেকে ডেকে পাঠায়। ছেলের মুখ শুকিয়ে যায়, কপালে চিন্তার ভাঁজ। বাবার কথার জবাবে সে শুধু বলে লোকটা তাকে কিছু বলেনি, শুধু মন্ত্র পড়ে কয়েকটা ফুঁ দিয়েছে চোখে-মুখে। মেম্বারের বিশ্বাস হতে চায় না, আবার বিশ্বাস না করেও উপায় নেই। বাবা ছেলের কথা আর বাড়ে না, তারা যার যার ঘরে চলে যায়, কিন্তু কারো মগজ থেকে লোকজ ঠাকুর যায় না, গল্পটার কথা যায় না। তারা গল্প পড়ানোর কারণ জানতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রত্যেকের মনে বিচিত্র প্রশ্ন উদয় হলেও কোনো প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পায় না কেউ।

পরের রাতে তারা ঘরে প্রবেশ করে দেখে ঘরে লোকজ ঠাকুর বই নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করছে। মেম্বারের বউয়ের আঁচলের সঙ্গে লেগে থাকে ৪৭ মাসের প্রশান্তি, আজ তার পরনে রক্তের মতো টকটকে লাল রঙের জামা। লোকজন ঠাকুর বইয়ের পাতা উল্টানো বাদ দিয়ে জামার দিকে চেয়ে থাকে, তারপর ইশারা করে বসতে বলে। তারা বসলে আবারো পুরনো বই বের করে কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে মেম্বারের বাবার হাতে দিয়ে পড়তে বলে। মেম্বারের বাবা বিব্রত হলেও আস্তে আস্তে পড়ে:

এক দেশে ছিলো এক রাজা। তার ছিলো মাত্র একটা কন্যা। রাজকন্যা এত বেশি সুন্দর যে দুনিয়ার কোথাও উপযুক্ত জামাই পাওয়া যাচ্ছে না। রাজা অনেক খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে যে কাঞ্চন নগরের এক সওদাগরের সুদর্শন পুত্র আছে। বিয়ে হোক আর না হোক রাজার সাধ জাগে নিজ চোখে সওদাগর পুত্রকে দেখার। স্বয়ং উজিরকে পাঠানো হয় সওদাগর পুত্র নিয়ে আসার জন্য। হুকুম মতো উজির ততক্ষণাৎ রওনা করে। সওদাগর পুত্রকে খুঁজে পেতে বেশি কষ্ট হয় না উজিরের। অভিজ্ঞ উজির বৃত্তান্ত বলে না, শুধু বলে যে এক জরুরি কাজে দরবারে উপস্থিত হবার নির্দেশ দিয়েছেন রাজা। উজির দেরি না করে সওদাগর পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা করে। তারা তিন দিনের মধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছে। রাজা সওদাগর পুত্রকে দেখে বেজায় খুশি। কী রূপ লাবণ্য ও সুঠাম দেহ! কিন্তু উজির রাজাকে বৈঠকখানায় ডেকে নিয়ে কানে কানে বলে যে এই ছেলে একটা বেকুব, এর চেহারা রাজপুত্রের মতো হলে কী হবে মাথায় কিছুই নেই। এর সঙ্গে রাজকন্যার বিয়ে হলে রাজকন্যার জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে। তাছাড়া এরকম বেকুব ছেলে রাজ্যের কোনো কাজেও লাগবে না। রাজা খুবই হতাশ ও বিরক্ত হয়ে হুকুম দেয় সব ঘটনা খুলে বলতে। ভরা দরবারে উজির তিনটা ঘটনাই খুলে বলে।

প্রথম ঘটনা: সওদাগর পুত্রকে নিয়ে বের হলাম। ঘোড়া দিয়ে আসছিলাম। হঠাৎ করে দেখি একটা খেতে ধান পেকে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। কৃষক খেতের পাশেই ঘোরাফেরা করছে, কিন্তু ধান কাটছে না। আমি সওদাগর পুত্রকে জিজ্ঞেস করলাম, বলতো ধান পেকে পড়ে যাচ্ছে তবু কেন কাটা হচ্ছে না? মহারাজ, সে আমাকে কী জবাব দিয়েছে জানেন? সে আমাকে বলে, এই ধান দিয়ে নাকি অনেক আগেই ভাত রান্না করা হয়ে গেছে, এই ভাত অনেক আগেই হজম হয়ে গেছে, তাই কৃষক ইচ্ছে করেই ধান কাটছে না। এই জবাব শুনেই বুঝতে পারছিলাম, এই ছেলে আস্ত বেকুব।

রাজা কতক্ষণ থুম ধরে বসে থাকে। দরবারে উপস্থিত সভ্যরা কানাঘুষা করে। তারপর রাজা দ্বিতীয় ঘটনা জানতে চায়। উজির মহা উল্লাসে বলা শুরু করে।

দ্বিতীয় ঘটনা: আমরা ঘোড়া দিয়ে আসতে আসতে কোমর ধরে গেলো, মনে হলো কিছুক্ষণ হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে আমাদের কপাল বায়া ঘাম পড়তে লাগলো। আমাদের কপালের ওপর সূর্য চলে এলো। হঠাৎ দেখি সামনে বিরাট এক বটগাছ। বটগাছের নিচে গভীর ছায়া। আমরা বিশ্রাম নেয়ার জন্য গাছের ছায়ায় বসলাম। বসা মাত্রই সওদাগর পুত্র ছাতা মেলায়া ধরলো, অথচ রোদ দিয়ে আসার সময় ছাতা মেলায়া ধরেনি।

রাজা আরো চিন্তার মধ্যে পড়ে। সভ্যরাও রাজার সঙ্গে চিন্তার মধ্যে পড়ে। তারপর রাজা তৃতীয় ঘটনা শুনতে চায়।

তৃতীয় ঘটনা: বটগাছের নিচে বিশ্রাম করে আমরা আবারো রওনা করলাম। কিছুদূর আসার পরে সামনে একটা খাল পড়লো। নোংরা পানি, ঘোলা, কিছুই দেখা যায় না। সওদাগর পুত্র আবারো বেকুবের মতো কাজ করলো। খালে নামার আগে পায়ে জুতা পরে নিলো। কিন্তু সে যখন হেঁটে আসছিলো তখন জুতা হাতে ছিলো।

এই তিনটা ঘটনা শুনে রাজা খুবই মর্মাহত হলেন। এত সুন্দর একটা ছেলে, অথচ কী বেকুব। রাজা চিন্তা করে, এর যদি একটু বুদ্ধিসুদ্ধি থাকতো তবে রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে কোনো একটা দপ্তরের মন্ত্রী বানিয়ে দিলে কত সুখে থাকতো তার মেয়েটা। কী আর করার, আর যাই হোক বেকুবের সঙ্গে রাজকন্যার বিয়ে হতে পারে না। তারপর রাজা সওদাগর পুত্রকে কিছু উপহার সামগ্রী দিয়ে বিদায় করে দিলেন, কিন্তু সওদাগর পুত্র রাজ দরবার ত্যাগ করার আগে রাজার মনে এক কৌতূহল জাগলো। রাজা সওদাগর পুত্রকে ডেকে জানতে চাইলেন যে সে কেন বেকুবের মতো এমন কাজ করলো। তখন সওদাগর পুত্র উত্তর দেয়া শুরু করে:

মহারাজ গোস্তাখি মাফ করবেন। আপনি অনুমতি দিলে এই বান্দা কিছু কথা বলতে চায়। উজির মহোদয় যে ঘটনাগুলো বলেছেন সব সত্যি। কিন্তু মহারাজ, এখানে আমার কিছু কথা আছে। আমি কেন এই কাজগুলো করেছি তার কারণ ব্যাখ্যা করার অনুমতি চাচ্ছি।

রাজা খুব আগ্রহ নিয়ে সওদাগর পুত্রকে অনুমতি দিলেন। রাজা বেশ উত্তেজিত হয়ে ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা শুনতে চাইলেন। সওদাগর পুত্র ব্যাখ্যা করে।

প্রথম ঘটনার ব্যাখ্যা: ওই লোকটা তার খেতের ধানের কথা বলে ও ধান খেত দেখিয়ে এত বেশি ঋণ করেছে যে ধান কাটার পরে যতটুকু ধান পাবে তা দিয়ে অর্ধেক ঋণও শোধ করতে পারবে না। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে সব মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে, কোনো ভাবেই লোকটা ঋণ শোধ করতে পারবে না, বাড়িতে রক্তারক্তি কাণ্ডও ঘটতে পারে। এই কারণে লোকটা ভয়ে ধান কাটছে না। কারণ, এই ধান তো আগেই খেয়ে ফেলেছে সে।

প্রথম ঘটনার ব্যাখ্যা শুনে রাজার খুব মনে ধরলো। রাজা মনে মনে বলেন তাই তো এভাবে তো চিন্তা করিনি। তারপর রাজা দ্বিতীয় ঘটনার জবাব জানতে চাইলেন।

দ্বিতীয় ঘটনার ব্যাখ্যা: আমরা ছায়ার জন্য যে বটগাছে বসেছিলাম সে গাছে অসংখ্য বাদুর বাস করে। আমাদের গায়ে ছিলো দামি পোশাক, এই পোশাকে বাদুরের বিষ্ঠা লেগে যেতো। উজির মহোদয় ছাতার নিচের বসেননি, তাই দেখুন ওনার মূল্যবান পাগড়িতে এখনো বাদুরের বিষ্ঠা লেগে আছে। বাদুরের বিষ্ঠার হাত থেকে নিজের মাথা ও শরীরকে বাঁচানোর জন্য ছাতা ব্যবহার করেছি আমি।

রাজা উজিরের পাগড়ির দিকে চেয়ে দেখে যে এখনো বাদুরের বিষ্ঠা লেগে আছে। উজির দেখে তার মূল্যবান কাপড়েও বাদুরের বিষ্ঠা লেগে আছে। রাজা উজিরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলেন। পরে তৃতীয় ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন।

তৃতীয় ঘটনার ব্যাখ্যা: আমরা অনেকক্ষণ যাবত জুতা পরে হাঁটছিলাম। আমাদের পায়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছিলো। তাই জুতা হাতে নিয়ে হাঁটছিলাম। কিন্তু সামনে পড়ে এক অজানা খাল, যার পানি অস্বচ্ছ ও অত্যন্ত ময়লা। এই খালের নিচে কী আছে জানা ছিলো না কারো। খালে নামার সময় তাই জুতা পরে নিই। কারণ, এখানে বিষমাখা কাঁটা থাকতে পারে, কত কী থাকতে পারে, তাই খালি পায়ে নামা ঠিক মনে করিনি। উজির মহোদয় খালি পায়ে নেমেছিলেন, দেখেন ওনার পায়ে বিষের কাঁটা ফুটেছে।

রাজা সঙ্গে সঙ্গে উজিরের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন উজিরের পায়ে জুতা নেই, হেকিমের দেয়া ব্যান্ডেজ বাঁধা, উজির পা লুকানোর চেষ্টা করছে। রাজা উজিরের অবস্থা দেখে একদিকে ব্যথিত হলেন অন্যদিকে সওদাগর পুত্রের জবাব শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন। তারপর সওদাগর পুত্রকে কাছে ডেকে বাহবা দিয়ে বলেন, ‘তুমি শুধু সুন্দর নও, তুমি এই রাজ্যের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলেও বটে, আমি আমার মেয়ের জামাতা হিসেবে তোমাকে গ্রহণ করলাম।’

এতক্ষণ মেম্বার ও তার পরিবারের সদস্যরা ধ্যান ধরে শুনেছে। মেম্বারের বউ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, প্রশান্তি ছোট্ট পরির মতো বিছানার এক কোনায় ঘুমিয়ে থাকে। লোকজ ঠাকুর প্রশান্তির দিকে একবার চেয়ে সবাইকে চলে যেতে বলে, শুধু বড় ছেলে যেন থেকে যায়।

সবাই চলে গেলে লোকজ ঠাকুর কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে খাতায় লেখে: আমি এখন যে কথাগুলো তোমাকে বলবো সে কথা যদি তুমি কাউকে বলো তবে তোমার বিপদ হবে, তুমি মারাও যেতে পারো। তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। খবরদার কাউকে বলবে না। একটু আগে যে গল্পটা শুনেছো সে গল্পের একটা চরিত্র তোমাদের বাড়িতে আছে। ও তোমাকে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করবে। আমি মূলত তোমার ভালোর জন্য এই বাড়িতে এসেছি। আমি ওর সঙ্গে কথা বলে তোমার বিষয়টা বলে দেবো। তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমি তোমার পাশে আছি। এখন তুমি ঘরে যাও। এখন তোমার নিদ্রার প্রয়োজন। আর শুনো সেদিন পুবের আসমানে মেঘ থাকবে, মানুষের হাতে থাকবে অস্ত্র, বাঁচতে চাইলে তুমিও অস্ত্র নিয়ো হাতে।

বড় ছেলে ঘর থেকে বের হলে পরিবারের লোকজন জানতে চায়, কিন্তু বড় ছেলে জানায় যে লোকটা শুধু তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করেছে। বড় ছেলের কথা শুনে তাদের মনে খটকা লাগলেও তারা ঘুমোতে যায়। কিন্তু কারো চোখে সহসা ঘুম আসে না। তারা গভীর চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকে। পরের দিনেও তাদের মনে গল্পের রেশ থেকে যায়, লোকজ ঠাকুর থেকে যায়, তারা একজন আরেক জনের দিকে কেমন করে যেন তাকায়। দ্বিধা, সন্দেহ বা খচখচানির মতো কিছু নিয়ে দিন কেটে যায়। এক সময় গভীর রাত নেমে আসে, আবারো তারা লোকজ ঠাকুরের ঘরে ঢুকে, আবারো তাদেরকে গল্প পড়তে দেয়া হয়। গল্প পড়ার জন্য ছেঁড়া পাতা তুলে দেয়া হয় ছোটো ছেলের হাতে। ছোটো ছেলে আওয়াজ করে পড়ে:

এক গ্রামে ছিলো এক কৃষক। তার ছিলো একটা মাত্র ছেলে। সে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখায়। লেখাপড়া শিখে ছেলেটা বিরাট বড় অফিসার হয়। কিন্তু সেই ছেলে গ্রামের বাড়িতে এসে শুধু খুঁত খুঁত করে। এটা ভালো না ওটা ভালো না। এটা খাবো না ওটা খাবো না। এটা এমন কেন, ওটা এমন কেন। পায়খানা এমন কেন, গোসলখানা এমন কেন। তার আচরণে মূর্খ বাবা মার অবস্থা নাজেহাল। ছেলের সামনে কী করবে কী করবে না করে যেসব কাজ করে সেসব কাজ ছেলের পছন্দ হয় না। ছেলে আকারে ইঙ্গিতে বোঝায় যে তার বাবা মা একটা মূর্খ, মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি কিছুই নেই, তার জন্ম যদি শিক্ষিত বাবা-মার ঘরে হতো তাহলে সে আরো বড় কিছু হতে পারতো। একদিন মায়ের সঙ্গে ছেলে খারাপ আচরণ করে, এটা দেখে বাবা খুবই কষ্ট পায়। তখন ছেলেটা বাজারের দিকে যাচ্ছিলো, বাবা অনুনয় করে বলে, ‘বাজি রে তোমগর মতো ওতো লেখাপড়া করিও নাই, ওতো বুঝিও না, বাজার যাইতাছো যাও, কিন্তু কিছু জিনিস নিয়া আসতে পারবা।’ ছেলে চোখে-মুখে রাজ্যের বিরক্তি ও বিস্ময় নিয়ে বলে, ‘আমি যাবো বাজার করতে, আপনে আর মানুষ পেলেন না।’ তারপরও বাবা অনুরোধ করে। বাবার অনুনয় মিনতি দেখে ছেলে বিরক্ত হলেও কী আনতে হবে জানতে চায়। তখন বাবা বলে, ‘বনের আনবা বনপাতা গাছের আনবা টুইন্না, কিছু আনবা মনে মনে জাইন্না, কিছু আনবা চুলে ধইরা টাইন্না।’ ছেলে বাবার ধাঁধা শুনে মুচকি হেসে বাজারের দিকে চলে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা যত সহজ মনে হয় তত সহজ থাকে না। ছেলে মহা মুশকিলের মধ্যে পড়ে, কোনোভাবে বের করতে পারে না বাবা আসলো কোন্ কোন্ জিনিসগুলোর কথা বলেছে। রাত নিশুতি হলে ছেলে খালি হাতে ঘরে ফিরে। বাবা ও মা ছেলের দিকে চেয়ে কষ্ট পায় আবার ভালোও লাগে। তারপর ছেলে বাবার কাছে জানতে চায় আসলে কী আনতে বলা হয়েছে। তখন বাবা বলে, ‘বাবারে তুমি যেমন তোমার বিদ্যা-বুদ্ধিতে পাকা, আমরা গেরামের মানুষ, আমরা বিদ্যা-বুদ্ধিতে তেমন পাকা না হই অন্তত কাঁচা না।’ ছেলে কিছুটা দমে যায়। তারপর বাবা বলে, ‘আমি তোমারে যা আনতে বলছিলাম তা তুমি চিনো, বনের বনপাতা মানে পান, তুমি তো জানো তোমার মা পান ছাড়া একদিনও থাকতে পারে না। গাছের টুইন্না মানে সুপারি, পান আনলে সুপারিও আনতে হয়। মনে মনে জাইন্না কী আনবা, চুন আনবা, চুন ছাড়া তো পান সুপারি খাওন যায় না। আর কিছু আনবা চুলে ধইরা টাইন্না, মানে হইলো ইচা মাছ, তুমি না গতকাল বলছিলা চিংড়ি মাছ খাইবা, আমরা বুঝতে পারছিলাম না বইল্লা বলছিলা ‘তোমাদের মতো মূর্খরা বুঝবে কীভাবে, চিংড়ি হলো ইচা মাছ।’ বাবার কথা শুনে ছেলে থুম ধরে বসে থাকে।

ছোটো ছেলে পড়া শেষ করে একবার বাবার দিকে তাকায় আরেকবার মার দিকে তাকায়। তার মার পাশে ঘুমিয়ে আছে প্রশান্তি, আজ তার পরনে কাফনের কাপড়ের মতো সাদা জামা। লোকজ ঠাকুর অনেকক্ষণ জামার দিকে চেয়ে থেকে আবারো খাতায় লেখে তারা যেন চলে যায়, শুধু মেম্বারের বাবাকে থাকতে বলে। তারা চলে গেলে লোকজ ঠাকুর মেম্বারের বাবার দিকে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে লেখে: আমি এখন যে কথাগুলো আপনাকে বলবো সে কথা যদি আপনি কাউকে বলেন তবে আপনার বিপদ হবে, আপনি মারাও যেতে পারেন। আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। খবরদার কাউকে বলবেন না। একটু আগে যে গল্পটা শুনেছেন সে গল্পের সবগুলো চরিত্র আপনার বাড়িতে আছে। একটা চরিত্র আপনাকে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করবে। আমি মূলত আপনার ভালোর জন্য এই বাড়িতে এসেছি। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে সাবধান করে দেবো। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি আপনার পাশে আছি। এখন ঘরে যান। এখন আপনার নিদ্রার প্রয়োজন। আর শুনেন সেদিন পুবের আসমানে মেঘ থাকবে, মানুষের হাতে থাকবে অস্ত্র, বাঁচতে চাইলে আপনিও অস্ত্র নিয়েন হাতে।

মেম্বারের বাবার জন্য সবাই অপেক্ষা করে, কিন্তু বাবা কিছুই বলে না, শুধু বলে লোকটা তার জন্য দোয়া করেছে যেন সে সুস্থ থাকতে পারে। কিন্তু তারা মনে শান্তি পায় না। তারা মনের মধ্যে অশান্তি, সন্দেহ ও খচখচানি নিয়ে ঘুমাতে যায়।

পরের দিন সকালে মেম্বার বাড়ির মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। কারণ, লোকজ ঠাকুরকে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। তবে এটা দিশেহারা হয়ে যাবার প্রধান কারণ নয়, প্রধান কারণ হলো প্রশান্তিকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বাড়ির গেইটে ভেতর থেকে তালা দেয়া। অথচ এত উঁচু প্রাচীর ডিঙিয়ে যাবার মতো শক্তি বা সামর্থ লোকজ ঠাকুরের মতো মানুষের নেই। তাই তারা আবারো খুঁজতে থাকে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, ফুলের বাগানে, ঝোপে ঝাড়ে, ছাদে, পানির ট্যাংকে। কিন্তু নেই, কোথাও কেউ নেই।

তখন বাড়ির পুরুষ মানুষগুলো একে অন্যের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে; কারণ, তখন পুবের আসমানে চলে মেঘের মাতম, সঙ্গে সঙ্গে ছোটো ছেলে ঘর থেকে কিরিচ নিয়ে আসে, এটা দেখে অন্যরাও নিজের ঘরের দিকে ছোটে, তারপর যে যা হাতের কাছে পায় তা নিয়ে বের হয়ে আসে ।

তখন প্রশান্তি পুবের দিক থেকে হেঁটে আসে, তারপর বাড়ির সকলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। বাড়ির ক্ষমতাধর মানুষগুলোকে প্রশান্তির আগমনে আন্দোলিত হতে দেখা যায় না, তারা দারুণ উত্তেজনা নিয়ে একজন আরেকজনের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। তবে প্রশান্তির মা পাগলের মতো ছুটে যায় মেয়ের কাছে, মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁপতে থাকে, আর চুমো খেতে থাকে।

তখন প্রশান্তি চোখ বন্ধ করে কান্না করতে থাকে।


 

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি

কামাল পাশা

[তখন শরৎ-সন্ধ্যা। আস্মানের আঙিনা তখন কার্বালা ময়দানের মতো খুনখারাবির রঙে রঙিন। সেদিনকার মহা-আহবে গ্রীক-সৈন্য সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হইহা গিয়াছে। তাহাদের অধিকাংশ

গল্প

দাগ

যা দেখা যায় না: বুকের ওপর তখনও খুব ভারি মতোন কিছু একটা অনুমান করতে পারছে ফাতেমা। মেয়েটা উজ্জ্বল শ‍্যামলা। কিন্তু

গল্প

অসমাপ্ত ডায়েরির পাতা

নীরা, একুশ বছরের এক যুবতী। অজপাড়া গ্রামে জন্ম। বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। মা বেঁচে নেই। বছর সাতেক হলো গত হয়েছেন।

গল্প

টিচার

রাজমাতা হাইস্কুলের সেক্রেটারি রায়বাহাদুর অবিনাশ তরফদার ভেবেচিন্তে শেষপর্যন্ত টিচারদের কিছু সদুপদেশ দেওয়া স্থির করল। বুড়ো বয়সে এমনিতেই তার ঘুম হয়।