বেনামী ক্ষরণ আর কিছু জিজ্ঞাসা

­


ইসরাত জাহানের গল্প:

বেনামী ক্ষরণ আর কিছু জিজ্ঞাসা


আজাদের কথা…

এক খড়খড়া দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের খোলা রাস্তায় চোখের সানগ্লাসটা কপালে তুলে, রিকশার হুডটা ফেলে সিটি কর্পোরেশন অফিসে টেন্ডার জমা দিতে যায় আজাদ। লেখাপড়ার পাশাপাশি টুকটাক ব্যবসার শুরু করেছে ইদানিং। বাপের সাথে সর্ম্পক এখন তলানিতে, যোগাযোগ নাই প্রায় ছয়মাস। মাঝে মাঝে মায়ের কবরটা দেখার জন্য মন কাঁদে। ওদিকে জানতে পেরেছে বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী রমণীটি বেশ চালাক। মায়ের রেখে যাওয়া সংসারটা সুন্দর করে সামলে নিয়েছে। প্রত্যেকে বলাবলি করছে, আলী হোসেনকে নাকি বশীকরণ তাবিজ করেছে নতুন বউ। মেসের পাশে থাকা দুরসর্ম্পকের চাচাতো বোনের কাছে থেকে শোনা প্রতিটি কথা। শুনে মাঝেমাঝে রাগে ফসফস করে, নতুবা কাঁদে সবার আড়ালে। অর্নাসের ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ দেয়ায় পরে মায়ের জন্য মনটা আরো আনচান করে। কবরের মাটি ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে, মায়ের স্পর্শ অনুভব করতে চায় কবরের আশপাশের বাতাসটা গায়ে মেখে। একরাতে মা এসে স্বপ্নে ডাকে আজাদকে। তাইতো খুব ভোরে অবশিষ্ট ঘুমটুকু বাসে সেরে নেবার আশায় এক কাপড়ে বাসে চেপে বসে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ইচ্ছে যেদিন যাবে সেইদিনই ফিরে আসবে।

মর্জিনার কথা…

আবদুল কুদ্দুস ঘাড়টা উটের মতো উঁচু করে অনেকটা সময় ধরে তাকিয়ে আছেন সম্মুখে। পিছন থেকে দেখলে মনে হবে আলী হোসেনের বাড়ির দিকে দৃষ্টি। একতলা টিনের ঘর থেকে দুইতলা দেয়ালঘেরা বাড়ির দিকে তাকালে ওমনই দেখায়। উপরের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে চোখের সাথে সমতা বজায় রেখে নাক ও ঠোঁট আকাশমুখী। তবে চাহনীর কেন্দ্র স্পষ্ট না। ওটা আসলে ঘরের দেয়াল বেয়ে উঠা চালকুমড়া গাছের দিকে, না আরো সুদূরে আকাশে উড়ে চলা একাকী চিল দিকে সামনের বাড়ির জানালা থেকে তাকিয়ে থাকা মর্জিনা বুঝতে পারে না। রোদের উঁকিঝুঁকি দেখে সকাল সকাল জানালাটা খুলতেই মার্জিনা দেখে ওর চাচাতো ভাসুরের এই উর্দ্ধমুখী দর্শন। মর্জিনা ভাবে হয়তো তড়তড় করে বেড়ে ওঠা চালকুমড়া গাছটা পাতা তাকে আকৃষ্ট করেছে। চালকুমড়ার কথা মনে হতেই ওর দুপুরে নোনা ইলিশ দিয়ে চালকুমড়া রান্না করতো ইচ্ছে করে। অনেক ঝাল দিয়ে ঝোল ঝোল রান্না। গরম ধোয়া ওঠা ভাতের সাথে এই চালকুমড়া ইলিশের রান্না ব্যাপক মজার। দুটো চালকুমড়া পোক্ত হইছে গতকাল মরিচ শুকাইতে গিয়ে দেখছে। ছোটবেলায় ওর মা এমন পোক্ত চালকুমড়া দিয়ে নোনা ইলিশের তরকারী রান্না করতো।

মর্জিনার বাবা বর্গাচাষী। অন্যের জমি চাষ করে সংসার চালাতো। মাঝেমাঝে ওর মায়ের হাতে লাগানো তরকারী বিক্রি করতে হাটের সামনের রাস্তায় গিয়ে বসতো বাপ আর মেয়ে। বাবা সাথে তরকারী বিক্রি করতো সাথে টাকা পয়সার হিসাব রাখতে অষ্টম শ্রেণী পাশ মর্জিনা। বেচা-কেনা শেষ হলে দুজনে টাকা পয়সা গুছিয়ে খদ্দের হয়ে সারা হাট ঘুরে বেড়াতো সেইসময়। লুঙ্গিতে গুঁজে রাখা টাকার পরিমাণ স্বল্প হওয়ায় মর্জিনা তেমন কোন আবদার করতো না। শুধু মাঝে মাঝে আলতা কিনতে চায়তো। যে বারে হাটে তরকারী একটু বেশী দামে বিক্রি হতো সেইদিন নোনা ইলিশ, আলতা, আমিরতি কেনা হতো। মায়ের চালে চালকুমড়া আর ঘরের পিছনে বড় কচুর ডাট ও শাক বারোমাসের তরকারি ওদের। তাই হাট থেকে ফেরার পথে কেনা নোনা ইলিশ কখনো চালকুমড়া বা কচু দিয়ে রান্না করা হতো। ক্ষুধা পেটে যা ছিলো অমৃত। এখন স্বামী আলী হোসেনের ঘরে এতো প্রাচুর্যের ভেতরে থেকেও সেই অমৃত স্বাদ আর কোথায় খুঁজে পায় না।

মর্জিনা, ও মর্জিনা…

স্বামীর ডাকে মর্জিনা স্মৃতির ভ্রম কাটে। জানালা থেকে সরে আসে। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে শূন্য বিছানায় কাথাঁটা দলা পাকিয়ে আছে। বোঝে স্বামী সকালের আটপৌরে কাজগুলো সারতে গেছে। এখনই এসে নাশতা চাইবে। এখন সকাল সকাল শুধু মুড়ি দিয়ে রসুন খায়। কয়দিন আগেও গুড় মুড়ি খেতো। নতুন করে বহুমূত্র রোগ শরীরে বাঁধার কারণে মিষ্টির সাথে তিক্ত সর্ম্পক। মুড়ি-রসুন এখন সকালের খাদ্যতালিকায় যুক্ত হয়েছে। মর্জিনা রান্নাঘরে যাবার আগে দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পায়। এই ঘরে থাকে শুধু দুজন মানুষ। সকালবেলায় তেমন কেউ আসে না। মনে মনে ভাবে পাশের ঘরের বড় জায়ের কথা।

আরো দুইবার জোড়ে জোড়ে কড়া নাড়ার শব্দ পায়। ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজাটা খুলে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। চেহারা দেখে বুঝতে পারে, এই ঘরের একমাত্র অংশীদার।

– আসেন ভিতরে…

আলী হোসেনের কথা…

আজকাল সকাল সকাল আলী হোসেনের ক্ষুধা পায়। ক্ষুধার্ত মূর্হুতে মনে হয় এক গামলা ভাত গরুর গোশত আর ডাল দিয়ে খেয়ে উঠতে পারবে। আদতে তার কিছুই এখন খেতে পারে না। এক বাটি মুড়ি এখন খেয়ে শেষ করতে পারে না। বোঝে বয়স হয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য মনে মনে নিজেকে তরুণ ভাবতে মন চায় আলী হোসেনের।

সাড়ে সাত মাস আগে প্রথম স্ত্রীর বিয়োগে হোসেন আলী প্রচণ্ড ভাঙে পড়েছিলেন। সবাই তার দুঃখে দুঃখী হয়ে বেশ কয়টা দিন কান্নাকাটি করে। পাশে বসে চা বানিয়ে, গল্প করে চাচাতো ভাইয়ের বৌ লুৎফা অনেকটা সময় দিতো দেবর আলী হোসেনকে। হঠাৎ হঠাৎ শোকের প্রভাব বেশী হলে চোখ থেকে অশ্রুও গড়িয়ে পড়তো দুজনের। তবে লুৎফা সবসময় মনে মনে মৃত জা আলেয়াকে হিংসা করতো। রূপে গুনে সবসময় এগিয়ে ছিলো আলেয়া। এখনও জায়ের স্বামীর শোকের রেশ দেখে তার মনের হিংসার রেশ কাটে না। তবে সেই শোক বা হিংসা কেটে যায় ৪১ দিনে।

কারন ৪২ দিন রাত শেষ হবার আগে তিনি আবারও বিয়ে করেন। নতুন যুবতী স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির উঠানে এসে সবাইকে কান্নাকাটি করে জানান বিয়ের আসল কারণ।

মৃত স্ত্রীর আলেয়া ভূত হয়ে নাকি প্রতি রাতে ভয় দেখাতে আসতো আলী হোসেনকে। বিয়ের জন্য তাড়া দিতো। তাইতো প্রতিদিন সকালে কবর জিয়ারত করে বউয়ের কবরটাকে বাতাস দিয়ে শুকিয়েছিলেন। কবর শুকানো সাথে সাথে আর দেরী না করে শুভ কাজটি সম্পন্ন করেন কোনোরকম দ্বিধা না করে। মৃত বউয়ের ইচ্ছেপূরণে যে এই বিয়ে সেটা সবাই বুঝলেও বোঝে না তার একমাত্র ছেলে আজাদ। বাবার বিয়ের সংবাদ কানে পৌঁছানোমাত্র পিতার সাথে সর্ম্পক তলানিতে এসে ঠেকে। লেখাপড়ার উদ্দেশ্য ময়মনসিংহ শহরে থাকা ছেলে বাড়ি আসা বন্ধ করে শুভসংবাদ শোনার সাথে সাথে।

অবশেষে…

আলী হোসেন গামছা দিয়ে হাত মুছতে মুছতে ঘরে এসে কিছুটা পিলে চমকানোর মতো চমকে যায়– পুত্রকে খাবার টেবিলে বসে থাকতে দেখে। যে জন বিনাবাক্য ব্যয়ে পিতার সাথে সকল সম্পক ত্যাগ করেছিলো, সেই ছেলে হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে এইভাবে আসায় কিছুটা হোঁচট খান সাতসকালে।

মর্জিনা পরিবেশ আঁচ করে পেরে সরে পড়ে। নিজের সাংসারিক কাজে হাত দিয়ে ভাবনায় ডুব দেয়। ভাবে আগের জীবনের দারিদ্র্যতা আর এই জীবন তাচ্ছিল্যতা। দৃশ্যত হয়, বাবার সাথে হাটে বসে তরকারি বিক্রি করা। সারা হাট ঘুরে বেড়ানো। ওখানেই আলী হোসেনের চোখে পড়েন। তরকারি কেনার উসিলায় ওর বাবার সাথে খাতির জমাতে আসতেন আলী হোসেন। টানপোড়নের সংসারে বিভিন্ন কাজে টাকা-পয়সা ধার দেয়া, যা মর্জিনার বাবাকে নির্ভরশীল করে তুলেছিলো আলী হোসেনের প্রতি। একটা সময় প্রস্তাব দেয় বিয়ের। মর্জিনা আর ওর মায়ের আপত্তি স্বত্বেও নির্ভরশীলতা লোভে পরিণত হয়। জমি কেনার আশায় মেয়েকে বিক্রি করে বিয়ে নামক শিঁকলে। টাকার গন্ধে মায়া ভুলে পঞ্চাশের প্রৌঢ় লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় আঠারো পেড়োনো মর্জিনাকে। এখন মৃত সতীনের রেখে যাওয়া ভরা সংসার আগলে রাখছে। কিন্তু চারদিকে শুধু তাচ্ছিল্যতা।

আবার ডাক পরে মর্জিনার।

আলী হোসেন সন্তানের আগমনে আবেগী হয়ে পড়েছেন। আবেগী বাবার ডাক-হাঁকে সারাবাড়ির ব্যস্ত নারীগণ কিছুসময়ের জন্য মর্জিনার রান্নাঘরে উঁকি দেয়। সতিনের সন্তানের জন্য চুলায় কি চড়িয়েছে আজ তাই দেখার আশায়। চুলায় গোশত রান্না হয়, জিরা চালের ভাত, বড় রুই মাছ। শেষপাতে দেয়া হয় বাজার থেকে আনানো বড় রসগোল্লা। আদরের কোনোরকম কমতি করে না আজাদের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। মুখভার করে থাকা ছেলে একটা সময় কিছুটা সহজ হয়। এটা দেন, ওটা কোথায়? চাবি কই? এমন টুকটাক কথা দিয়ে শুরু হয় মর্জিনার সাথে আজাদের কথাবার্তা। আলী হোসেন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও সন্ধ্যায় কাটে বিষণ্ণতায়, ছেলে চলে যাওয়ায় পরে। পিতার মন সন্তানের মায়ায় আকুল হয়।

ধীরে ধীরে সময় গড়িয়ে যায়, আলী হোসেনের ইটের ভাটার ইট দিয়ে মর্জিনার বাপের ভিটায় দেয়াল ঘেরা বাড়ি ওঠে। মায়ের মুখে পান জর্দার রঙিন হাসি, বাবার দেমাগ বাড়ে। মর্জিনারও যত্ন আত্তি বাড়ে সতিনের ছেলের প্রতি। এখন প্রায় সময় আজাদ বাড়ি আসে, বাপের সাথে ভাত খায়। ব্যবসা নিয়ে আলাপ করতে করতে মুড়িমাখা, শীতের পিঠাসহ নানান কিছু খায়। সময় এগিয়ে যায়, আলেয়ার কবরে আগাছা জন্মায়। আশপাশের কুকুরগুলোকে সময় অসময় কবরের পাশে শুয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। ছায়ায় জিড়িয়ে নেয়া, মূত্র ও মল বিসর্জনের মতো কর্মও সাড়ে কবরের পাশে বা উপরে। কারণ ততদিনে বাঁশের বেড়া মাটিতে শুয়ে পড়েছে কুকুরগুলোর আসা যাওয়ায়। কবর দেখতে ছেলে বা স্বামী কারো সময় হয় না। জিয়ারত তো আরো দূরের ব্যাপার। মাঝে মাঝে গ্রামের বা বাড়ির লোকজন অন্যের কবর জিয়ারত করতে গেলে দেখে আসে। আপন কেউ আসে না। সময়ের চাকা ঘোরে তারই নিয়মে। আজাদ লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে থিতু হয় বাড়িতে। আলী হোসেনের ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ততাও বাড়ে। সাথে মর্জিনার রূপ লাবণ্যের ছটা। সদ্য তরুনী হওয়া মেয়েটির লিকলিকে শরীরে হঠাৎ যৌবন উপচানো জোয়ার আসে। বিপরীতে ভাটার টান।

আলী হোসেনের ঘর থেকে দিনে-দুপুরে ভেসে আসে শিৎকারে শব্দ, আড়ালে কানাঘুষা চলে। মুখ টিপে হাসে সব দাঁত হারানো কানিবুড়ি। ক্ষুধা ও কামের তাড়োনায় কত মানুষ বিবেক হারিয়েছে এই জগতে। মর্জিনাও হারায়।

পনেরো দিন আগে আলী হোসেন বন্ধুর মায়ের কুলখানির নিমন্ত্রণ পায়। মর্জিনাকে সাথে নিতে চাইলো। বাসে চড়লে বমি পায় এই কারণে দেখিয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে যেতে কিছুটা আপত্তি জানায় স্বামীর কাছে। আলী হোসেন আহ্লাদী আবদার অগ্রাহ্য করতে পারে না। যাবার সময় ছেলেকে সাথে নিয়ে যায়। পাঠায় ময়মনসিংহে ব্যবসার বাকি টাকা উদ্ধারে। মর্জিনা শীতল ঘরে নিভৃতে কাজ করে, আর অপেক্ষার প্রহর গোনে চাতকের জন্য চাতকির মতো।

নিরব দুপুরে আলী হোসেন ফিরে আসে শরীর অস্থির লাগার কারণে। সকালে তাড়াহুড়োর কারণে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ আজ বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন, সেটার কারণেই যে শরীরের এই খারাপ দশা সেটা বুঝতে আর বাকি থাকে না তার। আগে নতুন বৌ-টা সবকিছু গুছিয়ে দিতো। এখন চোখ ফিরিয়েও তাকায় না। এখন ঘরের কাজকর্মে অগোাছালো ছাপ।

তখন দরজাটা হালকা ভিজানো ছিলো। সেই ভিজানো দরজা দিয়ে ভেতরে তাকাতেই আলী হোসেনের বুকটা মোচর দিয়ে ওঠে।

এই দৃশ্য! যা আলী হোসেনের কল্পনাতেও আসেনি কখনো। নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তানের সাথে স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মূর্হুত।

এটা কি দেখলাম? এটা কী হতে পারে? নিজেকে বারবার প্রশ্ন করতে করতে উত্তরবিহীন হয়ে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে। কয়েক পা হেঁটে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছুটে আসে ভাই, ভাতিজি, ভাইপো, ভাবী।

আসে না শুধু প্রাণপ্রিয় ছেলে আর ছোট টুকটুকে বউটি। আলী হোসেন যখন মাটিতে লুটিয়ে পরে ছটফট করছিলো, সেই মুহুর্তে আজাদ ও মর্জিনা শরীরের ভাঁজে ভাঁজে আনন্দ খুঁজে ফিরছিলো। এই আদিম সুখের কাছে যে সবকিছু তুচ্ছ। বাড়িতে ডাক্তার ছুটে আসার আগে আজাদ এসে দাঁড়ায় বাবার পাশে। ছেলেকে দেখে আলী হোসেন চোখ বোজে অপরিসীম ঘৃণা নিয়ে। ডাক্তার নাড়ী পরীক্ষা করে চাচাতে ভাই আবদুল কুদ্দুসকে জানায়, আলী হোসেন আর নেই।

সারা বাড়ির চিৎকার কান্নার প্রলাপ শুনে আজাদ বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। মর্জিনা আবদুল কুদ্দুসের ঘরে গিয়ে দেখে সবশেষ।

এতো দিনের আগাছায় অগোছালো কবরের পাশে নতুন কবর খোঁড়া হয়। চিরসজ্জায় শায়িত বাবার জন্য আজাদ কেঁদে বুক ভাসায়। মর্জিনাও কাঁদে। কেটে যায় দুইদিন দুইরাত। শোকে জর্জরিত দুটো মানুষ।

এক শীতের সকালে লুৎফার ঘুম ভেঙে যায়, দেবর আলী হোসেনকে স্বপ্ন দেখা কারণ। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে, বিলাপ করে সদ্যমৃত আত্মীয়ের জন্য। একে একে সবাই ছুটে আসে। এতোজনে মাঝে কেউ কেউ মর্জিনাকে খোঁজে, কেউ বা আজাদকে। পরে সবাই মিলে খোঁজে মর্জিনা আর আজাদকে। আলী হোসেনের শূন্যঘর পরে থাকে। থাকে না শুধু দুজন মানুষ। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

সারা গ্রামে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়, মাইকে ঘোষণা হয়। বেদাত কাজের জন্য গ্রামে নিষিদ্ধ করা হয়। আদতে সবাই লাভবান হয় আলী হোসেনের বেওয়ারিশ সম্পদ ও জমিজমার কারণে। লুৎফা খুশী হয় বেশী, এতেদিনের কানাঘুষা সত্যিই প্রমাণিত হওয়ার কারণে।

আলী হোসেনের মৃত্যুর তিন মাস কেটে যায়, এরই মাঝে গ্রামে একজন এসে খবর দেয় মর্জিনাকে রংপুরের পীরগঞ্জে দেখেছেন।

কথা সত্যিই, আজাদ বাপের কিছু টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে রংপুরে বন্ধুর কাছে। মর্জিনা এখন তিন মাসের সম্ভাবনাময়। সময় যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ততই ওর মনে সন্দেহের দানাগুলো ঘুরপাক খায়। ওর শরীরে আসলে কার বীজ!

বাবার না ছেলের…?

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি

সংস্কৃতি বিকাশের ক্রমান্বয়িকতা: উন্নততর সভ্যতার উত্থান, সাহিত্যের ভূমিকা – সরদার মোহম্মদ রাজ্জাক

(প্রথম পর্ব) মানুষের জীবন প্রবাহের সঞ্চালনগত পদ্ধতির বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্যন্ত প্রতিটি স্তর থেকে তার পারিপার্শ্বিকতার বিশাল ক্যানভাসে যার স্পষ্ট

মহাত্মা গান্ধী

অনেক রাত্রির শেষে তারপর এই পৃথিবীকে ভালো ব’লে মনে হয়;—সময়ের অমেয় আঁধারে জ্যোতির তারণকণা আসে, গভীর নারীর চেয়ে অধিক গভীরতর

কবিতা

অদ্ভুুত আঁধার এক

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই –

কবিতা

অংক

হেমন্ত সরখেলের কবিতা অংক সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবটা মেলে না কিছুতেই। একটা একটা করে গুনে এসে বলতেই পারে কঠিন ক্যালসিয়াম জমে আছে