সাম্য রাইয়ানের কবিতা


দ্রোহের কবিতা নিয়ে দর্পণের একটি বিশেষ সংখ্যা ‘অগ্নিফুল’, সংখ্যাটিতে প্রকাশিত সাম্য রাইয়ানের পাঁচটি কবিতা—


মেশিন


আবার প্রথম থেকে, নতুন করে লিখছি পুরোটা।
বিগত সময়ের কর্মকে কেটেকুটে, ব্যাপক
কাটাকাটি হলেও নতুনে রয়েছে ছাপ, পুরানের।

চিহ্নিত হচ্ছে ধীরে, না-লেখা কলম, তেলের কাগজ।
তা-হোক, তবু আবিষ্কৃত হোক প্রকৃত যাপন…

আদিম শ্রমিক আমি; মেশিন চালাই।
মেশিনে লুকানো আছে পুঁজির জিন
চালাতে চালাতে দেখি আমিই মেশিন!


মার্কস যদি জানতেন


বড় ভাল ছিল সেই প্রেমিকাসকল
খুব ভোরে স্নান করে নিতো– হেসে খেলে
ওরা ধোয়াজামা গায়ে খোলা ময়দানে যেত।

কা’ল মার্কস কি জানে?
শীত এসে গেছে পহেলা আশ্বিনে। কাজহীন
আমি বেকার ফড়িং ফের
বসে বসে শুধু উড়িয়েছি ধোঁয়া
পুরোনো বন্ধুদের।

বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ছে বাগানে, বিদায়, দেখা হবে
তবুও তোমায় ভালবাসি মেঘ,
রংধনু হয়ে রবে।

কারও মুখে ফুটো বাক্য দেখি না আজ।
মিছে কথাগুলো ভালোও লাগছে না।

: কেন বাজার ভরা তরতাজা মাছ?
: সে তো লাফিয়ে উঠছে চকচকে থলি দেখে।
বিরল হাওয়া বুঝি বইছে এই দেশে!

মার্কস যদি জানতেন
অন্ধকারেও কত কাণ্ড ঘটছে রোজ।


বাঘ


আমার মেয়েটি কিছুদিন থেকে বাঘের মাংস খেতে চায়৷ বাঘ বাঘ করে স্বপ্নে চিৎকার করে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে, বাঘ— আমি বাঘের মাংস খাবো৷

বাঘ খুঁজতে বাজারে গিয়েছিলাম। পেলাম না৷ মেয়ে বললো, বাবা চলো জঙ্গলে যাই; জঙ্গলে অনেক বাঘ আছে।

বউকে সাথে নিয়ে জঙ্গলে হাজির হলাম বাঘ খুঁজতে৷ অপেক্ষায় থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে হঠাৎ দূরে বাঘের গর্জন শুনতে পেলাম। সতর্ক আমি, ধীরে— ট্রিগার চেপে দিলাম গুলি বেরিয়ে লাগলো বাঘের পেটে। শব্দ হলো অনেক। কোত্থেকে যেন অতর্কিত চিৎকার এলো, ফায়ার—, একটা গুলি আমার কানের পাশ দিয়ে গেল। আমিও গুলি ছুঁড়লাম। গোলাগুলি হলো বেশ। দেখি— বউটা আমার পড়ে আছে, পাশে মেয়েটাও। চিৎকার করে ডাকলাম, বউ ওঠো—, ওঠো বাঘের বাচ্চা, কেউ উঠলো না। কারও ঘুম ভাঙলো না। শুধু পুলিশ এলো৷

আমাকে আদালতে তোলা হলো। বাঘ মেরেছি বলে ১২ বছরের কারাদণ্ড হলো আমার। শাস্তির ভারে নুয়ে পড়ে বললাম, আমার স্ত্রী-কন্যা — তাদের মৃত্যুর শাস্তি কেউ পাবে না? আদালত বললেন, অবশ্যই আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে।


নৈশসঙ্গী


আলোগুলো লাল আর নীল
—টলমল করে

চারটে লোকের ভারে কেঁপে ওঠে
ইঞ্জিনের ঘোড়া।
টগবগিয়ে
কেঁপে কেঁপে ওঠে সমূহ পথের দিশা…
নেমে যাই

এই রাস্তা চলে গেছে
অধিকতর নিঃসঙ্গতার দিকে৷
পুরনো শহরে বয়সী শামুক, হেঁটে যায়
অক্ষয়দাস লেন পেরিয়ে—

পকেটে মুদ্রা নাচে।
গলির মুখে নাচে পুলিশের গাড়ি।

বেদনাহত কোকের বোতল ছুঁয়ে
নৈশ বন্ধুর সাথে ট্রাফিক পেরিয়ে হাঁটি।
অদেখা প্রতিবেশিনীর নিঃশ্বাস কাঁধে
টের পাই, আমরা তখন মেঘের ছায়ায়
অন্ধকার, বৃষ্টিহীন গ্র্যাণ্ড এরিয়ায়!


তীব্র কুড়িগ্রাম


উত্তরে ফিরে এলে পূর্বমৃত মেঘ
অনিচ্ছায় প্রেম বাড়ে— পুরনো আবেগ৷

বলো কেন ষোলনদে জাগাচ্ছো প্রণয়
প্রবীণ জানেন সবই— ক্ষুব্ধ গতিময়৷

সোনাভরী–ফুলকুমর সুসজ্জিত মায়া
শহরের নাভিতে জাগে— ধরলার ছায়া৷

অগণন সম্পদশালী— আরও উচ্চ দাম
বেহিসেবী ঘুমন্ত মেয়ে— তীব্র কুড়িগ্রাম৷

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
কবিতা

ডারউইন ইজ দ্য বস্

ম য়ূ খ হা ল দা রে র   ক বি তা ডারউইন ইজ দ্য বস্ আকাশে স্পর্ধার চিল + বুকে

কবিতা

শার্ট ও অন্যান্য কবিতা

বিনয় কর্মকারের তিনটি কবিতা: ‘শার্ট’, ‘বেহায়া’ এবং ‘রক্ষণশীল’ শার্ট অতিশ্রেণি বাদ দিলে, শার্ট মানে– গায়ের ওপর একটা আলগা কাপড়ের আস্তরণ;

কবিতা

টিফিনবাক্স ও পাঁচ মশলা স্বাদ

আবু তাহেরের তিনটি কবিতা রক্তাক্ত ডালিম অসময়ে ফেঁটে যাওয়া ডালিম, রক্তাক্ত বুক তুমি কাকে দেখাও? তুমিও কি ফলরাজ্যের অনাদৃত কোনো

হেমন্তের রাতে

শীতের ঘুমের থেকে এখন বিদায় নিয়ে বাহিরের অন্ধকার রাতে হেমন্তলক্ষ্মীর সব শেষ অনিকেত অবছায়া তারাদের সমাবেশ থেকে চোখ নামায়ে একটি