পিতা-পুত্র-ঈশ্বর


সামিউল আজিমের তিনটি কবিতা


পিতা-পুত্র-ঈশ্বর


দুইটা হুঁলো বিড়াল ঝগড়া করছে সিঁড়িঘরে
চিলেকোঠায় ঝগড়া করছে বাবা ও ছেলে
দুই ক্ষেত্রেই বিষয় বস্তু অজানা, সন্তানের নাম অজানা,
বিড়াল দুটোর দাম অজানা, বাবার ইনকাম অজানা।

বাবা বিড়ালটা ছেলে বিড়ালের মুখে আস্ত থাবা বসিয়ে চুপচাপ প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করছে।
দুইটা হুঁলো মানুষ তখন কামড়া-কামড়ি করছে, আচঁড়াচ্ছে, খামচাচ্ছে একে অপরের মুখমণ্ডল;
এই বীভৎস গণ্ডগোলের মাঝখানে, আগমন হলো তৃতীয় পক্ষের–
মানুষের ক্ষেত্রে সে ঈশ্বর
বিড়াল দুটির ক্ষেত্রে মানুষ।

সহসাই চিলেকোঠা গ্রেগরীয় মসজিদে রূপান্তর হতে শুরু করলো
আর সিঁড়িঘর পরিণত হলো আঁতুড়ঘরে।

একটায় মানুষ জন্মায়, একটায় ঈশ্বর।
বিড়ালের ক্ষেত্রে তা মানুষ, মানুষের কাছে ঈশ্বর।


সতেরো, সাতাশ, পঁচাশি


সকাল সকাল তন্দ্রার মতো হচ্ছে–
টিউনুবিয়াল গ্লান্ডের ইনফেকশন থেকে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে
এক ব্যাগ, তিন ব্যাগ, সাত ব্যাগ, এগারো ব্যাগ–
রক্ত জমা হচ্ছে শুধু যকৃতে;
সতেরো, সাতাশ, পঁচাশি ব্যাগ।

দুপুর দুপুর গাঁ জ্বালা করে
যমদূতের কড়াইতে যেন আমাকে জীবন্ত ভাজা হচ্ছে
আগুন গরম তেল ঢালা হচ্ছে কড়াইতে
দুই গ্যালন, চার গ্যালন, নয় গ্যালন, ষোলো গ্যালন–
ভাজা মাংস জমা হচ্ছে করাইয়ের তলানিতে;
সতেরো, সাতাশ, পঁচাশি গ্যালন।

সন্ধ্যা হলেই দম বন্ধ হয়ে আসে খুব
একটা অর্ধভেদ্য পর্দা দিয়ে ছেঁকে সব অনুযান পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে শুক্রে,
শুক্র থেকে তাজা তাজা মিথেনে পূর্ণ করা হয়েছে বায়ুথলি
সতেরো, সাতাশ, পঁচাশি।


স্বপ্নের হাজার শব্দ


টেবিল ল্যাম্পের শর্টসার্কিট
হলদে বাতি নিভতেই জুঁই ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বাজার-পাঠশালা-ট্রান্সক্রিপ্ট;
গুয়েভারা আর গান্ধির ছবিতে ঝলসানো হাড় ফেটে স্থান পেয়েছে পাতালের সমীর সন্ধ্যায়
তপ্ত গরনে গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত সোনামুখী ঘাম্রবিশেষ;
বজ্রপাতের সমীকরণ মেলাতে মেলাতে গণিতবিদ পল টেবেটিস তার আসমানী জাহাজ হইতে প্রথম বোমাটা ছুঁড়লেন–
হিরোশিমার শুক্কেইন গার্ডেনে দৌড়াতে থাকা শিশু পরিণত হলো দৌড়বিদে
মাশরুমের ছাতা ভক্ষণ করে নিলো তাজা, রক্তাক্ত গরম, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের গোস্তোসমূহ
মাশরুমটি মাটি ছোবার পূর্বেই নিজের চোখের পাপড়ি কয়লায় দগ্ধ করলেন লামা
হিমালয়ের দক্ষিণ পূর্বাংশের বরফ সাথে সাথে পরিণত হলো পানীয় জলে, কষ্টিপাথর পরিণত হলো আগুনে, মুলতানি মাটি পরিণত হলো শূকরের বিষ্ঠায়
অবশেষে, তুমি, আপনি সকলে মরলেন;

আমাদের মৃত্যু কুরুক্ষেত্রের পাশবিক যোদ্ধাদের আর শোকায় না, শোকায় না কোনো রাষ্ট্র প্রধানকেও,
আমরা সেই গীরগিত বাতুস্তানীয় যুগ থেকে ভুগেই চলেছি ভুগেই চলেছি, ভুগেই চলেছি ঐ সামন্ত ভূগলীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে;

রেশমী সড়ক/সিল্ক রোড আমাদের প্রভুদের উন্নতি সাধন করলেও, আমাদের দিয়েছে শুধু কালচারের মিশ্রণ
আমাদের দিয়েছে শুধু নিজের অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকতে চাওয়া শ্রেণি সংগ্রাম;

টেবিল ল্যাম্পের বাতি ফিরতেই, আমিও ফিরে আসি বর্তমানে
দিনের নবম জানাজা পড়তে বেরিয়ে পড়ি টেবিল ছেড়ে।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
গল্প

ক্রোধ

সবে শীত পেরিয়ে বসন্ত এসেছে। নব বসন্তের আমেজে মত্ত রয়েছে সবকিছু। এমনি বসন্তমত্ত বিকেলের স্নিগ্ধ রোদ মেখে শহরের বড় পাকা

কবিতা

একদিন পৃথিবীর পথে

একদিন পৃথিবীর পথে আমি ফেলিয়াছি, আমার শরীর নরম ঘাসেন পথে হাঁটিয়াছে; বসিয়াছে ঘাসে দেখিয়াছে নক্ষত্রের জোনাকিপোকার মতো কৌতুকের অমেয় আকাশে

গল্প

নিভৃত যতনে

ক্লাসে ঢুকেই অর্ক’র পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। আজও হবে! তৃতীয় দিন চলছে আজ। তথ্যটা যদিও জানতো, তারপরেও পেট মোচড়ালো। দু’দিন

গল্প

কর্নেলের প্রিয় পোষাপ্রাণী

নির্মল এবং নিরেট গ্রামীণ জনপদ থেকে জনাকীর্ণ শহরে আগমন। শিক্ষার প্রয়োজনই পদাপর্ণের পথ প্রসারিত করে। আর এতে অগ্রজই অগ্রণী ভূমিকা