হিন্দু-মুসলমান

মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে-পুণ্য ভারতপুরে
পূজার ঘন্টা মিশিছে হরষে নমাজের সুরে-সুরে!
আহ্নিক হেথা শুরু হয়ে যায় আজান বেলার মাঝে,
মুয়াজ্জেনদের উদাস ধ্বনিটি গগনে গগনে বাজে,
জপে ঈদগাতে তসবি ফকির, পূজারী মন্ত্র পড়ে,
সন্ধ্যা-উষার বেদবাণী যায় মিশে কোরানের স্বরে;
সন্ন্যাসী আর পীর
মিলে গেছে হেথা-মিশে গেছে হেথা মসজিদ , মন্দির!

কে বলে হিন্দু বসিয়া রয়েছে একাকী ভারত জাঁকি?
-মুসলমানের হসে- হিন্দু বেঁধেছে মিলন-রাখী;
আরব মিশর তাতার তুর্কী ইরানের চেয়ে মোরা
ওগো ভারতের মোসলেমদল, তোমাদের বুক-জোড়া!
ইন্দ্র প্রস্থ ভেঙেছি আমরা, আর্যাবর্ত ভাঙি
গড়েছি নিখিল নতুন ভারত নতুন স্বপনে রাঙি!
নবীন প্রাণের সাড়া
আকাশে তুলিয়া ছুটিছে মুক্ত যুক্তবেণীর ধারা!

রুমের চেয়েও ভারত তোমার আপন, তোমার প্রাণ!
হেথায় তোমার ধর্ম অর্থ, হেথায় তোমার ত্রাণ;
হেথায় তোমার আশান ভাই গো, হেথায় তোমার আশা;
যুগ যুগ ধরি এই ধূলিতলে বাঁধিয়াছ তুমি বাসা,
গড়িয়াছ ভাষা কল্পে-কল্পে দরিয়ার তীরে বসি,
চক্ষে তোমার ভারতের আলো-ভারতের রবি, শশী,
হে ভাই মুসলমান
তোমাদের তরে কোল পেতে আছে ভারতের ভগবান!

এ ভারতভূমি নহেকো তোমার, নহকো আমার একা,
হেথায় পড়েছে হিন্দুর ছাপ- মুসলমানের রেখা,
হিন্দু মনীষা জেগেছে এখানে আদিম উষার ক্ষণে,
ইন্দ্রদ্যুম্নে উজ্জয়িনীতে মথুরা বৃন্দাবনে!
পাটলিপুত্র শ্রাবস্তী কাশী কোশল তক্ষশীলা।
অজন্তা আর নালন্দা তার রটিছে কীর্তিলীলা!
ভারতী কমলাসীনা
কালের বুকেতে বাজায় তাহার নব প্রতিভার বীণা!

এই ভারতের তখতে চড়িয়া শাহানশাহার দল
স্বপ্নের মণিপ্রদীপে গিয়েছে উজলি আকাশতল!
গিয়েছে তাহার কল্পলোকের মুক্তার মালা গাঁথি
পরশে তাদের জেগেছে আরব উপন্যাসের রাতি!
জেগেছে নবীন মোগল-দিল্লি-লাহোর-ফতেহপুর
যমুনাজলের পুরানো বাঁশিতে বেজেছে নবীন সুর!
নতুন প্রেমের রাগে
তাজমহলের তরুণিমা আজও উষার আরুণে ‌জাগে!

জেগেছে হেথায় আকবরী আইন-কালের নিকষ কোলে
বারবার যার উজল সোনার পরশ উঠিল জ্বলে।
সেলিম, সাজাহাঁ- চোখের জলেতে এক্‌শা করিয়া তারা
গড়েছে মীনার মহলা স্তম্ভ কবর ও শাহদারা!
ছড়ায়ে রয়েছে তন্দ্রাবিহীন-অপলক, অপরূপ!
যেন মায়াবীর তুড়ি
স্বপনের ঘোরে ত্বব্ধ করিয়া রেখেছে কনকপুরী!

মোতিমহলের অযুত রাত্রি, লক্ষ দীপের ভাতি
আজিও বুকের মেহেরাবে যেন জ্বালায়ে যেতেছে বাতি-
আজিও অযুত বেগম-বাঁদীর শষ্পশয্যা ঘিরে
অতীত রাতের চঞ্চল চোখ চকিতে যেতেছে ফিরে!
দিকে দিকে আজও বেজে ওঠে কোন্‌ গজল-ইলাহী গান!
পথহারা কোন্‌ ফকিরের তানে কেঁদে ওঠে সারা প্রাণ!
-নিখিল ভারতময়
মুসলমানের স্বপন-প্রেমের গরিমা জাগিয়া রয়!

এসেছিল যারা ঊষর ধুসর মরুগিরিপথ বেয়ে,
একদা যাদের শিবিরে সৈন্যে ভারত গেছিল ছেয়ে,
আজিকে তাহারা পড়শি মোদের, মোদের বহিন-ভাই;
আমাদের বুকে বক্ষে তাদের ,আমাদের কোলে ঠাঁই
কাফের যবন টুটিয়া গিয়াছে ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা,
মোস্‌লেম্‌ বিনা ভারত বিকল, বিফল হিন্দু বিনা
মহামৈত্রীর গান
বাজিছে আকাশে নব ভারতের গরিমায় গরীয়ান!

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি

ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল

ডাকিয়া কহিলডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল,- ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার রাঙা, আপেলের মতো লাল যার গাল, চুল যার শাঙনের

গল্প

নির্মল বাসনা

গল্পটি সুইডিশ কবি ও কথাসাহিত্যিক লিন্ডা বসট্রোম কিনসগার্ডের ‘WISH’ গল্পের অনুবাদ। গল্পটিতে অতি চমৎকারভাবে একটি পরিবারের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। গল্পটির

লিচু চোর

বাবুদের তাল-পুকুরে হাবুদের ডাল-কুকুরে সে কি বাস করলে তাড়া, বলি থাম একটু দাড়া। পুকুরের ঐ কাছে না লিচুর এক গাছ

গল্প

অতসী মামি

যে শোনে সেই বলে, হ্যাঁ, শোনবার মতো বটে! বিশেষ করে আমার মেজমামা। তার মুখে কোনো কিছুর এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা খুব