সাতশো বারো বিঘা জমি – অজয় কুমার রায়

পৌষের পড়ন্ত বিকেল।

সোনামাখা রৌদ্র। হালকা শীতের মৃদু মৃদু ঠাণ্ডা সবার হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। কোলাহলপূর্ণ রাণীশংকৈলের বন্দরের চৌরাস্তার মোড়। উত্তর পশ্চিমে নেকমরদ আর উত্তরপূর্বে কাতিহার হাট। ভদ্রপাড়া কী অভদ্রপাড়া, সবাই ভিড় জমায় চৌরাস্তার এই মোড়েই। খোলা আকাশের নিচে উত্তরে নান্টুর চা আর দক্ষিণে বিশুর পানের দোকান। চারপাশ গাছগাছালিতে ঘেরা, এই মোড়েই কৃষক, ব্যবসায়ী ছাত্র, শিক্ষকসহ অনেকে সময় পেলেই বেঞ্চে বসে চা পান খেয়ে আড্ডা দিয়ে যায়। দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে অত্র এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের সব ধরনের আলোচনা হয়।

প্রতিদিনের মতো অনেকের সাথে রফিক বিশুর চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো। তার বাবা পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় মামার বাড়ি বাড়িতে চলে এসেছে। এখানকার কলেজে ভর্তি হয়েছে। চায়ের কাপে চুমুক বাদ দিয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো কয়েকজন। সবার দৃষ্টি উত্তরের রাস্তার দিকে। তাদের দেখাদেখি আরো কয়েকজন উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো– কী? বেশ কয়েকজন বলে উঠলো– কান পেতে শুনুন, উত্তরের থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসছে।

দক্ষিণের পানের দোকানে বসে থাকা লোকজনও দক্ষিণের রাস্তার দিকে তাকিয়ে। তাদের একে অপরকে জিজ্ঞাসা–শুনুন একটা আওয়াজ ভেসে আসছে।

কোলাহলপূর্ণ চৌরাস্তা একেবারে নীরব হয়ে গেলো। দুদিক থেকে হাজার হাজার মানুষ ধেয়ে আসছে চৌরাস্তার মোড়ের দিকে। দুরাস্তার মিলিত বাঁকে একত্র হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠলো একটা বিশাল মিছিল। শুরু থেকে মধ্যভাগ আর মধ্যভাগ থেকে শেষভাগ, সমস্বরে উচ্চারিত হতে থাকলো গগণবিদারী শ্লোগান– পুলিশ দারোগা গরু চোর! হুঁশিয়ার সাবধান! গরু চুরি বন্ধ করো! নইলে পুলিশ এলাকা ছাড়ো! তহশিল কানুনগো- হুঁশিয়ার সাবধান। কৃষকের ওপরে অত্যাচার! বন্ধ করো! বন্ধ করো! আধিয়ারদের ওপরে অত্যাচার! রুখে দাও কৃষকসমাজ!

শ্লোগানের ধ্বনি বিদ্যুতের গতিতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকলো সময়ে সময়ে। মিছিল চৌরাস্তার মোড়ে এসে পৌঁছলো। রফিক মিছিলে গিয়ে দাঁড়ালো। মিছিলের ভেতর থেকে একজন বেঞ্চের উপরে উঠে দাঁড়ালো। ধুলোমাখা জামা পরিহিত জীর্ণশীর্ণ মানুষ। পেটে ক্ষুধা তার, স্পষ্ট বোঝা যায়। নিজের পরিচয়ে জানালো সে উত্তর গায়ের আধিয়ার কৃষক জহুর হোসেন। ধারালো বক্তব্যে প্রথমে গরু চুরির কথা বলে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হুংকার ছাড়লো। তারপর একে একে উত্তর গাঁয়ের আধিয়ার কৃষকদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা বর্ণনা করলো। শেষে বললো, সব নষ্টের মূল জমির জাল দলিল তৈরি করা সাব রেজিস্টার ও তহশিলদার। এর পরে দক্ষিণের মিছিল থেকে আসা হেমরম বেঞ্চে উঠে দাঁড়ালো। সুঠামদেহী আদিবাসী সাঁওতাল। শুরুতে গরু চুরির জন্য পুলিশকে দায়ী করলো এবং পুলিশ আসল চোর-ডাকাত। প্রতিবেশীর হালের গরু চুরি হওয়ার তাদের যে করুণ দশা হয়েছে সে ঘটনা বর্ণনা করলো। হেমরম বেঞ্চ থেকে নেমে আবার মিশে গেলো মিছিলের গগণবিদারী শ্লোগানে।

এবার বেঞ্চে উঠে দাঁড়ালো নূরুল হক। তার ধারালো বক্তব্যে চার রাস্তার মোড়ের মাটি আকাশ বাতাস কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকলো। তার বক্তব্যের শেষে আধিয়ার কৃষকদের উদ্দেশ্যে বললো- বন্ধুগণ, তাদের আছে পুলিশ, চোর-ডাকাত, তহশিলদার আর ক্ষমতা। আর আমাদের আছে একতা। আমাদের একতা দিয়েই আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। দেখিয়ে দিতে হবে শাসকগোষ্ঠীকে অন্যায় করে পার পাওয়া যায় না। নূরুল হকের বক্তব্য শেষে উত্তর কলেজ রোড দিয়ে উত্তরপাড়া শিবদীঘি ও থানার দিকে এগুতে থাকলো মিছিল।

রফিক বাসায় চলে এলো। বুঝতে পারলো একটা ক্যাচাল না হয়ে এর শেষ হবে না। কৃষকের গগণবিদারী আহাজারি তার হৃদয়কে বুলেটের মতো বিঁধতে থাকলো। বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে ছটফট করছে আর ভাবছে। নিজেকে কোথাও কোনো জায়গায় স্থির করতে পারছে না। ভাবনার মধ্যে নানান ভাবনার জন্ম নেয়। সময় অতিবাহিত হতে থাকে। রফিক কী করবে? কেনই বা কৃষকের স্ফুলিঙ্গ শ্লোগান তাকে ধাক্কা দিয়ে যায়। বুঝে উঠতে পারছে না। মিছিলের শ্লোগানে কি তার হৃদয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক আছে। ভাবতে ভাবতে একটা সময় নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হলো তার। ভালোভাবে শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকলো।

যখন রফিকের ঘুম ভাঙলো তখন বেলা প্রায় শেষ। রফিকের মা মালেকা বেগম বাড়ির কাজ শেষ করে কয়েকবার তাকে ডেকেছে ভাত খেতে। কিন্তু রফিক ঘুমের ঘোরে এতটাই ডুবে ছিলো ঘুম ভাঙাতে পারেনি। পেটের ক্ষুধা এতটাই বেশি যে বিছানা ছেড়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মায়ের ঘরের দিকে হাঁটতে থাকলো। রফিককে দেখে তার মা একটু এগিয়ে এসে বললো- কীরে বাবু, গতরাতে কি ঘুমাসনি? না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলি। সে যে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলো, মনে হতেই মুচকি হেসে মাকে বললো, মা, আর কিছু বলো না তো। আগে খেতে দাও। খিদায় পেটটা জ্বলে যাচ্ছে।

আর কোনো কথা না বলেই মালেকা বেগম রান্নাঘরের দিকে ছুটলো। রফিক মেঝের উপরে মাদুলি বিছিয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যে মালেকা বেগম সবকিছু নিয়ে এলেন। তারপর প্লেটে ভাত তুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, বাবু, সকালে কীসের যে চৌরাস্তায় মিছিল হয়েছে। কিছু বলতে পারিস?

সকালে যে মিছিল হয়েছে তা এলাকায় বাতাসের সাথে সাথে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। তা না হলে তার মায়ের অন্তত জানার কথা না। কারণ মালেকা বেগম ঘর থেকে সহজে বের হোন না।

হ্যাঁ মা। তখন তো আমি ঐখানেই ছিলাম। খুব সহজেই তার মায়ের কথার উত্তর দিলো রফিক।

মালেকা বেগমের বুক একটু কেঁপে উঠলো। তার ছেলে মিছিলে ছিলো। সে নিশ্চয় আজকাল এসব করে ঘুরে বেড়ায়। মালেকা বেগমের একটু সন্দেহ হলো। মাকে চুপ করে থাকতে দেখে রফিক আবার জিজ্ঞেস করলো- কেন, বলো তো মা, এ কথা জিজ্ঞেস করলে।

তেমন কিছু না বাবু। খেয়ে নাও। মায়ের সহজ উত্তর।

কিন্তু রফিকের মনে সন্দেহ হলো, তার মা তাকে অনেক কিছু এড়িয়ে যাচ্ছে। ভাত খেতে থাকলো। আর মালেকা বেগমের মনের ভেতরে আবার কোনো ভয়াল আশঙ্কা উঁকি দিতে থাকে। না জানি রফিক এসবের ভেতরে জড়িয়ে পড়ে। রফিকের ভাত খাওয়া শেষ হলে মায়ের আঁচল দিয়ে মুখটা মুছিয়ে নিলো। আর মালেকা বেগম পরম স্নেহে রফিককে আলিঙ্গন করে বললো- বাবু, যা কিছু করো ঐসবের মধ্যে যেয়ো না। তোমার পড়াশোনাটা ভালোভাবে করো। ওসব ভালো না। মায়ের কথায় রফিকের মনের সন্দেহটা আরো প্রকট হলো। সবকিছু জানার জন্য তার মনটা অস্থির হয়ে উঠলো। কেন মা তাকে বারণ করছে। মিছিলের সাথে তার জীবন কি জড়িয়ে আছে! মনের মধ্যে এরকম নানা প্রশ্ন যাওয়া-আসা করতে থাকলো। মায়ের আঁচলের কাছে বসে রফিক বললো, মা আমাকে তুমি বলো, কেন বারবার বারণ করছো মিছিলে যেতে। কেনই বা তোমার মধ্যে এতো ভয়। মিছিলের কথা শুনেই তুমি চমকে উঠলে কেন? মিছিলের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে?

রফিক এভাবে যে প্রশ্ন করবে মালেকা বেগম তা শুনেই নির্বাক। আবার তার বুকে একটা কঠিন ধাক্কা ছুঁয়ে গেলো। নিজেকে লুকাতে হাতড়ে বেড়াতে থাকলো নিজের ভেতর। কোথায় লুকিয়ে রাখবেন নিজেকে মালেকা বেগম। অস্থির হয়ে উঠলো ভেতরের সবকিছু। ওলটপালট হতে থাকলো অনেক কিছু। রফিককে কীভাবে বলবে তার বাবার গল্প। তাদের জীবনের সোনালি দিনগুলো গল্প। মালেক বেগম তার স্বামীর মতো আর কারোর পঙ্গুত্ব দেখতে চায় না। আর কাউকে হারাতে চায় না। মাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বললো, মা, বলো না তুমি। বিষয়টা আমিও বুঝতে পারছি না। আমার সবকিছু যেন কেমন মনে হচ্ছে। বাবার কথা তো কোনো দিনই বলতে চাও না। কেন আমাদের মধ্যে এতো লুকোচুরি। লুকোচুরি!

কথাগুলো মালেকা বেগমের হৃদয়টাকে ভেঙে তছনছ করে দিলো। বাবুর সাথে লুকোচুরি। কীসের জন্য লুকোচুরি। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করতে থাকলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, বাবু, সে কথা শুনতে চেয়ো না।

কেন মা?

সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না।

যায় মা। তোমাকে বলতেই হবে।

রফিকের জোর করে কথা বলা মালেকা বেগমের আর সহ্য হচ্ছে না। জীবনের সব কষ্ট দুঃখ আজ তার ভেতর থেকে বের হতে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকলো। মনে হয় তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও বুঝতে পারলো রফিক না শুনে আর উঠবে না। নিজেকে শক্ত করে বললেন, তাহলে শোন বাবু…

ঠিক আছে, বলো মা।

ব্রিটিশ সময়ে আমাদের এলাকায় ছিলো হিন্দু জমিদার কর্মনাথ চৌধুরীর পুত্র টংকনাথ চৌধুরী। সেই সময়েই জমিদার জামাতা গদানাথ পাটনা থেকে চলে আসে দিনাজপুরে। দিনাজপুরে কয়েকটা বাড়ি ও কয়েক জায়গায় অনেক জমির মালিক হয়ে যায় গদানাথ ঝাঁ। শ্বশুরের সহযোগিতায় আমাদের এলাকার অনেক জমিও কিনে নেয়। তাতে প্রায় চার মৌজায় ৭১২ বিঘা জমি। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হলো। আমরা পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অংশ হয়ে গেলাম। তারপরে এদেশ থেকে হিন্দু জমিদার ও ভদ্রলোকরা দলে দলে ভারতে চলে যেতে থাকলো। ঘর-বাড়ি জমি-জমার ফায়সালা করার জন্য ভারত থেকে পূর্ববাংলায় আসা মুসলমানদের খোঁজা শুরু হলো। গদানার্থ ঝাঁ ঐ হিন্দুদের মধ্যে একজন। তার কয়েক হাজার জমি কয়েকটা বাড়ির জন্য বেশ কয়েকজনের দরকার হলো। তার মধ্যে পেয়ে গেলো কয়েকজনকে। তাদের মধ্যে পার্টনার এ্যাডভোকেট নূরুল হুদা নামের একজন। যে আমাদের রানীশংকৈলের ৭১২ বিঘা জমির অংশীদারিত্ব পেলো। ১৯৪৮ সালে একমাত্র কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে চলে এলো দিনাজপুরে। বেশ কিছুদিন জমিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিলো। হুদা সাহেব রাজশাহী থেকে কয়েকজন সাঁওতালকে নিয়ে এসে তাদের বসত করার জায়গা করে দিলো। ঝাড় জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদী জমিতে পরিণত করে এবং এলাকায় আধি হিসেবে আবাদ করতে দিলো। জমিগুলো আবাদ হতে থাকলো।

১৯৭১ সাল। আামাদের স্বাধীনতার বছর। তারপরে এলো বাঙালি-অবাঙালি প্রশ্নটি। যেহেতু নূরুল হুদা অবাঙালি সেহেতু আর এদেশে থাকতে পারলো না। দিনাজপুর ছেড়ে চলে গেলো। চার মৌজার ৭১২ বিঘা জমি আবার অভিভাবকহীন হয়ে পড়লো। আর আধিয়ার কৃষকরা সেই জমির মালিকে পরিণত হলো। এভাবে চলতে থাকলো বেশ কিছুদিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার ফলে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হয় আর সেই জমিগুলোর উপরে চোখ পড়লো এলাকার সরকার দলীয় লোকদের। এমনিতেই যুদ্ধের বছর। চারদিকে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই কারো না কারো গরু চুরি হয়। বিচ্ছিরি একটা অবস্থা। বলিদারা গ্রামে আমরা বাস করতাম। তোর বাবাও কিছু জমি আবাদ করতো। সরকারি রাজনৈতিক দলের কর্মী ও নেতারা এক প্রকার জোর করেই ফসলের ভাগ নিয়ে যেত। গ্রামের অসহায় সহজ সরল মানুষগুলো বলার কিছু ছিলো না। এমপি সাহেবের কাছে অনেকে গেলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং তিনি নিজেও ওদের পক্ষে। গরিবের কষ্ট কে শোনে। যেহেতু জমি আবাদ করতে হবে সেসব অনেকেই মেনেও নেয়। কিছুদিন পর তারা জমির মালিকানা দাবিদার করে বসলো। তহশিলদারকে হাত করে জাল দলিল বানালো। অনেক আধিয়ার কৃষককে জমি থেকে উচ্ছেদ করেও দিতে থাকে। তোর বাবা সেসব সহ্য করতে পারতো না। কেউ না জানলেও সবসময় আমাকে এসে বলতো। তোর দাদা তাকে বারবার বারণ করতো ওসবে না জড়াতে। আমিও করতাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সব সময় আমাকে বোঝাতো অন্যায় প্রশ্রয় দিলে যে অন্যায় হয়। একদিন নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে। একদিন সন্ধ্যায় তোর বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। তারপর তোর বাবাকে ওরা আজকের এই অবস্থায় ফেলে দিলো। তোর দাদা তোদের এনে এই বাড়িতে এখানে বাস করতে থাকলাম। এখন তোর দাদাই মাঝে মাঝে গ্রামের জমিগুলো গিয়ে দেখাশোনা করে। এই জন্য তোদের  দু’ ভাইকে নিয়ে আমাদের যতো ভয়।

কথাগুলো বলতে বলতে মালেকা বেগমের চোখের জলে ছলছল করছে। রফিক শুনতে শুনতে ডুবে গেছে তার মায়ের কথায়। রফিক তার নিস্তব্ধতা ভেঙে মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে বললো, মা আমি বুঝেছি কেন তুমি বারবার এড়িয়ে যাচ্ছিলে। দুঃখ করো না। আমার আর কেউ কিছুই করতে পারবে না। সময় হয়েছে এর জবাব দেওয়ার। আমরা আর কেউ একা নই। গ্রামের সব মানুষ জেগে ওঠেছে। মানুষ তার অধিকার আদায়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। কেউ আর একা নয়। সবাই একজোট হয়ে ভূমিদস্যুদের প্রতিবাদ করতে শিখেছে। এতো সহজে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। আমার বাবার অসমাপ্ত কাজ আমিই শেষ করবো মা।

রফিকের কথা শুনে মালেকা বেগম হু হু করে কেঁদে ওঠেন। বলেন, বাবু, আমি তোদের হারাতে চাই না। ওদের সাথে পারবো না। ওদের সাথে আছে সরকার, আইন, পুলিশ, চোর-ডাকাত। ওরা সব করতে পারে।

তাই বলে চুপ করে থাকা যাবে না। সুযোগ পেলে তারা ছোবল মারবেই। তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। তুমি আমাকে বাধা দিও না। তুমি যেমন বাবাকে ভালোবাসো, তেমনি আবার কাজগুলো তোমার দায়িত্ব শেষ করার। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে আমাদের স্বাধীনতার জন্য। আর তুমি সমাজটাকে বদলাতে তোমার ছেলেটাকে যুদ্ধে যেতে দিতে চাচ্ছো না। এ আমদের আরেক যুদ্ধ, আমাদের ভাতের যুদ্ধ, সভ্যতার যুদ্ধ, আমাদের অধিকারের যুদ্ধ, চোর বদমাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

মালেকা বেগম অনেক কান্নাকাটি করলো। কিন্তু রফিক তার সিদ্ধান্তে অনড়। সে কোনো ভাবেই বসে থাকতে রাজি না। গরিব অসহায় আধিয়ার মানুষের ৭১২ বিঘা জমির জন্য লড়বে। সেই এই লড়াইয়ে সৈনিক হবেই। কোনো ভাবেই তার স্বপ্নকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে রাজি নয়। শুরু করে নতুন পথের সন্ধানে ৭১২ বিঘা জমির সীমানায়।

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
গল্প

হলুদ পোড়া

সে বছর কার্তিক মাসের মাঝামাঝি তিন দিন আগে-পরে গাঁয়ে দু-দুটো খুন হয়ে গেল। একজন মাঝবয়সী জোয়ান মদ্দ পুরুষ এবং ষোল-সতের

কবিতা

শকুন্তলা সংখ্যা: ‘নুসরাত নুসিন’-এর কবিতা

দর্পণের বিশেষ সংখ্যা ‘শকুন্তলা’-তে প্রকাশিত নুসরাত নুসিন-এর তিনটি কবিতা তোমার বেহালা বিবিধ বিষের মতো শুয়ে আছি। সমস্ত দিনশেষে স্বাদে। বিবিধ

গল্প

পরীক্ষার প্রহরে

লেখক সম্পর্কে: হেনরি স্লেসার (১৯২৭-২০০২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তিনি তাঁর লেখনীতে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গির সংযোজন এবং জটিল সমাপ্তির সার্থকপ্রয়োগের

কবিতা

আজব লড়াই

ফেব্রুয়ারী মাসে ভাই, কলকাতা শহরে ঘটল ঘটনা এক, লম্বা সে বহরে! লড়াই লড়াই খেলা শুরু হল আমাদের, কেউ রইল না