প্রতিবাদ


শেলী জামান খানের দুটি কবিতা


প্রতিবাদ


তক্তপোশে গড়াগড়ি খাচ্ছে নারীর বিবস্ত্র শরীর
সামনেই উলঙ্গ পুরুষাঙ্গ বের করা উদ্ধত পুরুষ।
নারীর আর্তচিৎকারে বাতাস প্রকম্পিত।
হায়, বিপন্ন মানবতা।

ধর্ষিতার আকুতি পৌঁছায় না জনারণ্যে,
সূর্যের কড়া রোদও নিষিদ্ধ বহুকাল,
চলেছে সারিবদ্ধ মানুষ,
কার্যত তারাও মূক ও বধির!

নেতারা দাঁড়িয়ে আছেন মঞ্চ আলো করে।
আমলার দল, বসে আরাম কেদারায়,
রাজা বা রাণীরা পাকাপোক্ত বসা রাজসিংহাসনে,
মুখে তাদের তেলতেলে হাসি।

কেবল, নারীর দুই উরু বেয়ে বয়ে যায় রক্তের স্রোত,
উন্মুক্ত স্তনে নখের আঁচড়,
ঠোঁট ক্ষত-বিক্ষত হায়েনার দংশনে,
বেহায়া নারী, আবৃত কর তোমার শরীর।
সফেদ পোশাকের ধর্মগুরুরা বলেন, কেশে।

কে আছ…
শোনা যায় নারীর আর্তচিৎকার,
মূক ও বধির নও, তেমন কেউ কী কোথাও নেই?
গভীর জমাট অন্ধকারের স্মৃতি কি মনে পড়ে?
যেখানে তোমার আবাস ছিল দশমাস!
মায়ের যোনিপথ ভেদ করে যারা এসেছিলে একদিন।

সেই রক্তাক্ত যোনিপথের দিব্যি,
সেই মমতাময় জরায়ুর কসম,
তোমাদের উলঙ্গ, উদ্ধত, যৌনাঙ্গটি নত কর একবার।
একবার ভাবো, তোমার মা, বোন, আর কন্যাটির মুখ।
তারা কী নিরাপদ তোমার যৌন উন্মাদনার কাছে?

বিপন্ন মানবতা
কাঁদে দু’হাতে মুখ ঢেকে।
আছ কী কেউ?
বাঁচাতে আমাকে?


ঐ যে দেখ, সূর্য উঠছে আজ


ঐ যে দেখ, সূর্য উঠছে আজ।
এখনও সূর্য উঠে পৃথিবীতে,
চাঁদ উঁকি দিয়ে যায় রাতে!

ঐ যে দেখ, সূর্য উঠছে আজ,
সূর্য ডুবে গেলে,
জেগে থাকবে চাঁদ!
জেগে থাকবে ঐ তারা ভরা আকাশ।
আমাদের দেখা হবে,
উজ্জ্বল সূর্যের নিচে,
চন্দ্রিমা রাতে!
আমাদের দেখা হবে,
এক নতুন পৃথিবীতে!

যতদিন পাখিরা গাইবে গান,
ফুলেরা হাসবে,
মেঘবালিকারা ভাসবে আকাশে,
নদীরা বিলীন হবে সাগরের বুকে,
প্রেমিক চুমু খাবে প্রেমিকার ঠোঁটে,
যতদিন পৃথিবী বাঁচবে…
ততোদিন মানুষ থাকবে বেঁচে!

মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে,
সেদিনও, বলবো, “বন্ধু কেমন আছ?”
আলিঙ্গনে জড়াব তোমায়,
ভালোবাসার নতুন অভিঘাতে।
অসংকোচে চুমু খাব,
তোমার ঠোঁটে।
আমাদের আবারও দেখা হবে,
এই আদিম পৃথিবীতে।

আবারও জড় হব আমরা কোনো এক ফাল্গুনে,
সেদিনও কোকিল গাইবে গান,
কচি আমের মুকুলের ফাঁকে!
আমাদের দেখা হবে বইমেলার ভীড়ে,
মঙ্গল শোভাযাত্রায়, রমনার বটমূলে,
হালখাতা আর নবান্নর উৎসবে!
আমাদের দেখা হবে…
দেখা হবে নতুন এক পৃথিবীতে!
উজ্জ্বল সূর্যের নিচে,
চন্দ্রিমা রাতে!

বি. দ্র. দর্পণে প্রকাশিত সকল লেখার স্বত্ব দর্পণ ম্যাগাজিন কর্তৃক সংরক্ষিত। দর্পণ থেকে কোনো লেখার অংশ অন্যত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্পণের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

একই ধরনের লেখা

দর্পণে লিখুন

গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, মুভি পর্যালোচনা, বই আলোচনা, ভ্রমণ অথবা দর্পণের যে কোনো বিভাগে

লেখা পাঠানোর ইমেইল

editor@dorpon.com.bd
নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
ADVERTISEMENT
মাসওয়ারি
গল্প

ক্ষুধিত খরায় জীবনের খতিয়ান

: কহছি, আর ভাত লিব্যা নাকি? খরখরে কণ্ঠে মতি জিজ্ঞাসা করে। চোখ ভর্তি ধোঁয়াটে বিতৃষ্ণা। ভাত নিবে কি নিবে না,

প্রবন্ধ

ছাত্র-শিক্ষক: সম্পর্কের প্রান্ত-যোগ-৩

প্রাসঙ্গিকভাবেই যে বিষয়ের আলোচনা প্রয়োজনীয়তা দাবি করে সেটি হলো– শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই যে উত্তম সম্পর্কের বন্ধন, সেই বন্ধনটি

কবিতা

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি

আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি। তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল। তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা

মাগো, ওরা বলে

‘কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর, আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি— খোকা তুই কবে