মাহবুব কাদেরী

চুমু

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

মূল : হ্যালমার সদেরবার্গ 

এক তরুণ এবং এক তরুণী একটি লেকের ধারে পাথরের উপরে বসে ছিল। ঢেউগুলো তাদের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ছিলো আর তারা চুপচাপ যার যার চিন্তায় বিভোর, দেখছিলো ধীরে ধীরে সূর্যের অস্ত যাওয়ার দৃশ্য।

ছেলেটি ভাবছিলো, মেয়েটিকে তার চুমু খেতে খুব ইচ্ছে করছে। মেয়েটির ঠোঁটের দিকে তাঁকিয়ে তার মনে হলো তার সৃষ্টি হয়েছে যেন সেজন্যই। সে অবশ্য তারও চেয়ে সুন্দরী মেয়ে দেখেছে আর আসলে সে আরেকটি মেয়েকে ভালোবাসে তবে তাকে সে কোনোদিন চুমু খেতে পারবে না কেননা সে নিখুঁত ও রীতিমত তারকা আর তারকাকে তো ছোঁয়া যায় না।

মেয়েটি ভাবছিলো, সে চায় ছেলেটি তাকে চুমু খাক তাহলে সে একটা সুযোগ পাবে তার প্রতি তার রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। সে তাহলে উঠে পড়তো আর তার স্কার্টটি গুছিয়ে ছেলেটির দিকে তীব্র তিরস্কারমাখা দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে তার পথে চলে যেত, স্থির  ও শান্তভাবে, কোনো তাড়াহুড়ো না করে। কিন্তু ছেলেটি যাতে অনুমান করতে না পারে সে কি ভাবছে তাই সে মৃদুস্বরে ও ধীরভাবে বললো, তোমার কি মনে হয় পরকাল বলে কিছু আছে?

ছেলেটি ভাবলো, মেয়েটিকে চুমু দেয়া হয়তো সহজ হবে যদি সে হ্যা বলে। কিন্তু সে স্মরণ করতে পারলো না একই বিষয়ে সে অন্য কোন সময় কি উত্তর দিয়েছে আর তার ভয় হলো তার বক্তব্য না পরস্পরবিরোধী হয়ে যায়। তাই সে মেয়েটির চোখের দিকে খুব গভীরভাবে তাঁকালো আর বললো:

-কোনো কোনো মুহূর্তে আমার তাই মনে হয়।

এই উত্তর মেয়েটিকে দারুন খুশি করলো এবং সে ভাবলো:

ওর চুলগুলো যাহোক আমার ভালোই লাগে, ওর কপালও।  দুঃখের ব্যাপার, ওর নাকটা বিশ্রী আর ওর কোনো কাজকর্ম নাই- ও শুধুই ছাত্র, তাও প্রথম বর্ষে। এমন একজন বয়ফ্রেন্ড দিয়ে কি আর বান্ধবীদের ঈর্ষা অর্জন করা যায়!

ছেলেটি ভাবলো: এখন আমি নিশ্চিত তাকে চুমু খেতে পারি। কিন্তু সে আবার ভীষণ ভয়ও পাচ্ছিলো।  এর আগে সে কখনো কোনো মেয়েকে চুমু খায়নি আর তা বিপদজনক কিনা তা নিয়ে তার চিন্তা হলো। মেয়েটির বাবা একটু দূরে একটা হ্যামোকে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, তিনি শহরটির মেয়র।

মেয়েটি ভাবলো: হয়তো আরো ভালো হয় যদি সে চুমু খায় আর আমি তাকে একটা চড় দেই তখন।

সে আবার ভাবলো: কেন সে আমায় চুমু খাচ্ছে না , আমি কি এমনই বিশ্রী আর অপ্রীতিকর?

আর সে ঝুকে পড়লো লেকের পানিতে নিজের চেহারা দেখতে কিন্তু ঢেউয়ের আঘাতে তার ছবি গেলো মিলিয়ে।

মেয়েটি ভাবতে থাকলো: ভাবছি কেমন লাগতে পারে যখন সে আমায় চুমু খাবে।

বাস্তবে তার চুমুর অভিজ্ঞতা একটাই।  একবার এক লেফটেন্যান্ট সিটি হোটেলে বলনাচের পর তাকে চুমু খেয়েছিলো কিন্তু তার গা থেকে আসছিলো সিগার ও মদের গন্ধ আর যদিও তার চুমু পাওয়ার মধ্যে একটু গর্বের ব্যাপার ছিল, হাজার হলেও সে ছিল লেফটেন্যান্ট, তবুও সেই চুমুর কোনো বিশেষ গুরুত্ব ছিলো না মেয়েটির কাছে। তাছাড়া মেয়েটি তার প্রতি বিরক্তও ছিল কারণ এই ঘটনার পরে লেফটেন্যান্ট তাকে প্রপোজও করেনি বা অন্য কোনোভাবেও তার খেয়াল করেনি।

যখন তারা এভাবে বসেছিল, প্রত্যেকে যার যার চিন্তায়, তখন সূর্য অস্ত গেলো আর চারিদিকে আধার ঘনিয়ে এলো।

আর ছেলেটি ভাবলো: যেহেতু সে এখনো আমার পাশে বসে যদিও সূর্য অস্তগত আর আধার নেমেছে , তাই হতে পারে তার তেমন আপত্তি নেই আমি চুমু খেলে।

আর সে আস্তে করে তার হাত রাখলো মেয়েটির গলার পাশে।

ছেলেটি এমন করবে তা মেয়েটি ভাবেনি।  সে ভেবেছিলো ছেলেটি তাকে আচমকাই চুমু খাবে আর তখন সে তাকে একটা চড় দিয়ে রাজকন্যার মতো ভ্রূক্ষেপহীন চলে যাবে। এখন সে কি করবে ভেবে উঠতে পারছিলো না। সে সম্ভবতঃ ছেলেটির উপর রাগতে তৈরী ছিল কিন্তু চুমুটাও মিস করতে চাচ্ছিলো না। তাই সে চুপ করে বসে থাকলো।

তখনই ছেলেটি তাকে চুমু খেলো।

মেয়েটির এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো, যা সে ভেবেছিলো তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা- সে ফ্যাকাশে ও দুর্বল হয়ে পড়লো আর ভুলে গেলো ছেলেটিকে চড় দেয়ার কথা আর সে যে প্রথম বর্ষে পাঠরত সামান্য ছাত্র, সেকথাও।

কিন্তু ছেলেটির মনে পড়লো “মহিলাদের পারিবারিক জীবন” নিয়ে এক ধার্মিক লেখকের লেখা কোনো বইয়ের এক জায়গায় সে পড়েছিল- “সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কেউ কামনার বশবর্তী হয়ে গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ না হয়।” সে ভাবলো এ বিষয়ে সতর্ক থাকা নিশ্চিতভাবে খুব কঠিন যখন একটি চুমুতেই এমন ভাবের সৃষ্টি হয়।

*

যখন আকাশে চাঁদ উঠলো, তখনও তারা সেখানে বসা ও চুম্বনরত।

মেয়েটি ছেলেটির কানে কানে বললো:

আমি প্রথম দেখায় তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।

আর ছেলেটি বললো:

আমার কাছে পৃথিবীতে কখনোই আর কেউ ছিলোনা তুমি ছাড়া।

সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি:

হ্যালমার সদেরবার্গ (১৮৬৯-১৯৪১) সুইডিশ সাহিত্যের হাতে গোনা বিশিষ্টদের একজন। তিনি বহুল পরিচিত ও জননন্দিত উপন্যাস “ডক্টর গ্লাস” এবং “দেন আল্ভারসামা লেকেন”-এর রচয়িতা। এছাড়া সুইডিশ ছোটগল্পে নুতন ধারার সৃষ্টিতেও বিশেষ অবদান রাখেন।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu