তানিয়া কামরুন নাহারের ভাবনা
শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়… এ উপলক্ষে দারুণ একটা বিতর্ক হয়ে গেলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সেখানে একজন শিক্ষক ভালো একটি প্রশ্ন করেছেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে, ঢাবির জন্য শিক্ষকেরা তো অনেক কিছুই করেছেন, শিক্ষার্থীদের অবদান কী? শিক্ষকেরা এতো মোটিভেট করেন, তবু শিক্ষার্থীরা নিজ বিষয়ভিত্তিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করে না, শিক্ষার্থীরা বিসিএসমুখী, শিক্ষার্থীরা নিজ বিষয় সংক্রান্ত পড়ালেখাও করে না, পড়ে বিসিএসের জন্য।
অভিযোগগুলো সত্য। এখন কথা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা নিজের বিষয়ভিত্তিক কর্মক্ষেত্রে কাজ না করে বিসিএসমুখী কেন হচ্ছে? উদাহরণ হিসেবে বলি, পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করে একজন পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করছে! তার ৪/৫ বছরের এই পড়া কী কাজে আসলো শেষ পর্যন্ত? সেই ইন্টারের জ্ঞান দিয়েই চলছে সব?
একজন শিক্ষার্থী সায়েন্সে পড়বে নাকি কমার্সে এ সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ সময় তার অভিভাবক গ্রহণ করে থাকেন। শিক্ষার্থী ডাক্তার হবে নাকি ইঞ্জিনিয়ার, এটিও একরকম অভিভাবকদের সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে কোন বিষয়ে পড়বে, এটিও শিক্ষার্থীদের নিজের পছন্দ করার এখতিয়ার থাকে না। শিক্ষকেরা যেমন-ই মোটিভেট করুন না কেন, অভিভাবকরা চান সন্তান বিসিএস ক্যাডার হয়ে তাদের মুখ উজ্জ্বল করুক। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা কি আদৌ তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পায়? যার হয়ত মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে সে চান্স পেয়ে বসে আছে দর্শন কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। কেউ হয়ত পড়তে চায় মহাকাশবিদ্যা নিয়ে, কিন্তু সে সুযোগ অতি সীমিত। সুতরাং একটা বিষয় পেলে কোনোমতে ঘাড় গুঁজে সার্টিফিকেট একটা যোগাড় করতে পারলেই হলো– পছন্দের নাকি অপছন্দের বিষয় ওসব নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। আর বিষয়ভিত্তিক কর্মক্ষেত্র! এটা যে কী বস্তু, টেলিস্কোপ দিয়েও ঠাহর করা যায় না। বিষয়ভিত্তিক কাজের ক্ষেত্র বাংলাদেশে খুব সীমিত। তাহলে শিক্ষার্থীরা করবে কী?
তাই মেধাবীরা দ্রুত দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায় উচ্চশিক্ষা ও কাজের ক্ষেত্র সন্ধানে। বাদ বাকি যারা রয়ে যায় তাদের প্রথম পছন্দ স্বাভাবিকভাবে বিসিএস। পরিবার তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, একটা চাকরি করবে, পরিবারের হাল ধরবে সে আশায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে একটি স্বপ্ন নিয়ে, তাদের ভাগ্য ফিরবে একদিন। বিসিএসে টিকে শিক্ষার্থীরা বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে, পরিবারের দায়িত্ব পালন করছে এবং একই সাথে দেশের সেবায় নিয়োজিত থেকে অবদান রাখছে। নিজের বিষয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করলেও মেধাবী সন্তানেরা দেশের মধ্যে রয়েছে, দেশেই কাজ করছে, এটুকুই কি যথেষ্ট নয়?