মনোজিৎকুমার দাস
লালন রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত বহমান গড়াই নদীর তীরে কুষ্টিয়া শহরের কোটপাড়াস্থ মাতুলালয়ে ৪ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে মনোজিৎকুমার দাসের জন্ম । পৈত্রিক নিবাস মাগুরা জেলার শ্ৰীপুর উপজেলার হানু নদী পাড়স্থ মাশালিয়া গ্রামে। ১৯৬৭ সালে তিনি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে স্নাতক ও ১৯৭০ সালে রাজশাহী শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় থেকে বি.এড. ডিগ্রি লাভ করেন। পিতা-মোহিতকুমার দাস, মাতা-দুর্গা রাণী দাস।
মনোজিৎকুমার দাস

অন্নপূর্ণা দেবী: ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

ভারতীয় উপমহাদেশে  কয়েকজন মেধাবী সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন, যারা শুধু নীরবেই সঙ্গীত সাধনা করে গিয়েছেন, যাদের অলৌকিক সুর শোনার ভাগ্য এযাবৎ কেবল অল্প কিছু ব্যক্তিরই হয়েছে। তাঁদের কথা বলতে গেলে সবার আগে উঠে আসে অন্নপূর্ণা দেবীর কথা। রবিশঙ্করের প্রথমা পত্নী, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কনিষ্ঠা কন্যা ও আলী আকবর খাঁর বোন অন্নপূর্ণা দেবী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ইতিহাসের এক কিংবদন্তি। তিনি ১৯২৭ সালে ভারতের বর্তমান মধ্যপ্রদেশে মাইহার রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম রোশনারা আলী। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান তখন মহারাজা ব্রিজনাথ সিংয়ের রাজসভার প্রধান সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। মহারাজ তাঁর নাম রাখেন অন্নপূর্ণা। তাঁর চাচা ফকির আফতাবউদ্দিন খান এবং আয়েত আলী খান। দুজনেই ছিলেন তাদের নিজেদের এলাকা শিবপুরের (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত) বিখ্যাত সঙ্গীতসাধক। তাঁর ভাই আলী আকবর খানও ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল অপরিসীম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তাঁর তালিমপ্রাপ্ত বড় বোনের বিবাহিত জীবনে সঙ্গীতসাধনায় সমস্যা সৃষ্টির কারণে বাবা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান তাঁকে সঙ্গীতের তালিম দিতে চাননি। তাঁকে গৃহস্থালি কাজেই আবদ্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রচন্ড। তাই ছোটবেলা থেকেই লুকিয়ে তাঁর ভাইয়ের তালিম নেওয়া দেখতেন আর সেটি রেওয়াজ করতেন। একদিন তাঁর ভাই রেওয়াজ করছিলেন আর সেটি তিনি শুনছিলেন। একপর্যায়ে তিনি তাঁর ভাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “ভাইয়া, বাবা এভাবে না, এভাবে শিখিয়েছিলেন”, বলেই নিখুঁতভাবে তাঁর বাবার সেই তালিম বাজানো শুরু করলেন। সেদিনের ঘটনা নিজের মুখে তিনি এভাবে বর্ণনা করেন, “আমি তখন সঙ্গীতে এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম যে, কখন বাবা এসে আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন আমি খেয়ালই করিনি। যখন বুঝতে পারলাম অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু বাবা তখন আমাকে বকার পরিবর্তে আমাকে তাঁর ঘরে ডেকে নিলেন। তিনি সঙ্গীতের প্রতি আমার সত্যিকারের আগ্রহের কথা বুঝতে পেরেছিলেন আর আমার তালিম শুরু হয়ে গেল।”

তাঁর তালিম শুরু হয়েছিল প্রথমে ধ্রুপদী কণ্ঠসংগীতের মাধ্যমে, পরে তিনি সেতার শেখেন। একদিন তাঁর বাবা তাঁকে সুরবাহার শেখার কথা বললেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, “তিনি বললেন, আমি তোমাকে আমার গুরুর বিদ্যা শেখাতে চাই, কারণ তোমার মধ্যে কোনো লোভ নেই। এটা শিখতে হলে অনেক ধৈর্য্য আর শান্ত মন দরকার। আমার মনে হয় তুমি আমার গুরুর এ শিক্ষাটি আয়ত্ত্ব করতে পারবে, কারণ তুমি সঙ্গীত ভালোবাসো।” তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় তার সুরবাহার প্রশিক্ষণ।

তখন মাইহারে ওস্তাদ আলাউদ্দিন আলীর কাছে সঙ্গীতের তালিম নিতে আসেন তখনকার বিখ্যাত শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্করের ভাই রবিশঙ্কর। অন্নপূর্ণা দেবীর বয়স তখন তের বছর। দুজনের মধ্যে একটি আকর্ষণের সৃষ্টি হয়। যদিও অন্নপূর্ণা দেবী তাদের বিয়েকে প্রেমের বিয়ে হিসেবে মানতে নারাজ, সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়েছিল বলেন। রবিশঙ্করের বড় ভাই উদয়শঙ্কর তার বাবার কাছে তার ভাইয়ের জন্য অন্নপূর্ণার পাণি-প্রার্থনা করেন। ১৯৪১ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের বিয়ে কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রেমের বিয়ে ছিল না পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও অন্নপূর্ণা দেবীর। ছিল না রোমাঞ্চ বা লুকোচুরির কোনো নজির। রবিশঙ্কর তখন ১৮ বছরের তরুণ। গুরুর কাছে শিখতে গিয়েছিলেন। অন্নপূর্ণা তখন ১৩ বছরের কিশোরী। বাড়ির লোকেরাই বেঁধে দিয়েছিলেন এ জুটি। হয়তো ভেবেছিলেন, এত গুণসম্পন্ন দুজন সঙ্গীতজ্ঞের মধ্যে বিয়ে হয়তো এক অনন্য দাম্পত্যের সৃষ্টি করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাদের প্রেমের বিয়ে ছিল কিনা তা আমরা তাদের কথা যাচাই করতে পারি। বিয়ের ব্যাপারে অন্নপূর্ণা দেবী জানিয়েছিলেন, মাইহারে মা-বাবার সঙ্গে একটা আশ্রমের মতো পরিবেশে বড় হয়েছিলাম আমরা। পণ্ডিতজির প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, প্রেম তো দূরের কথা। লোকেদের পছন্দে আমাদের বিয়ে হয়। পণ্ডিত রবিশঙ্কর তাঁর আত্মজীবনী ‘রাগমালা’তে লিখেছেন, “আমাদের মধ্যে প্রেম, রোমাঞ্চ বা লুকোচুরির কিছু ছিল না। লোকে অবশ্য সে রকম ভাবত। বিয়ের ব্যাপারে তাঁর মত কী, সেটাও আমি জানতাম না। আমাকে বলা হয়েছিল তাঁর মত আছে।“ ১৯৪১ সালের ১৫ মে সন্ধ্যাবেলা বিয়ে হয়ে যায় অন্নপূর্ণা দেবী ও রবিশঙ্করের। ১৯৪২ সালের ৩০ মার্চ তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় ছেলে শুভেন্দ্র শঙ্কর। জন্মের আট সপ্তাহের মধ্যে একটি জটিল রোগ ধরা পড়ে তার। অন্ত্রের নালিতে ভীষণ ব্যথা হতো তার। মাসখানেকের মধ্যেই অবশ্য সেরে উঠেছিল সে। কিন্তু দেখা দেয় এক নতুন উপসর্গ। সারা রাত কাঁদত সে।

অনেকের মতে, অন্নপূর্ণা দেবী তাঁর স্বামী রবিশঙ্করের থেকেও বেশি মেধাবী ছিলেন। অনেক সঙ্গীত সমঝদার তাঁকে রবিশঙ্করের থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে রাখতেন। প্রথমদিকে তাঁরা দুজন একত্রেই সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নিতেন, দেখা যেত অনুষ্ঠানের পরে রবিশঙ্করের থেকে তাঁকেই বেশি ঘিরে ধরছে লোকজন। অন্নপূর্ণা দেবীর মতে, এই ব্যাপার নিয়েই তাঁদের দাম্পত্যজীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। তাঁর কথায়, “দর্শকদের সামনে আমি যতবারই পারফর্ম করেছি, সকলেই আমার ভীষণ প্রশংসা করেছেন। আমি বুঝতে পারতাম, পণ্ডিতজী এটা ভালোভাবে নিতে পারছেন না। আমার দর্শকের সামনে বাজানোর খুব ইচ্ছা ছিল এমনটা নয়। তাই এটা বন্ধ করে আমার নিজের মতো রেওয়াজ করে যেতে থাকি।” যদিও এ ব্যাপারে রবিশঙ্কর ভিন্ন কথা বলেছেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বিয়ের পরে আমার সঙ্গে বাজাতে ওকে অনেক জোর করেছি। কিছু অনুষ্ঠানও করেছি আমরা, তবে এরপর থেকে সে আর একা অনুষ্ঠান করতে চাইতো না, আমার সঙ্গে বসেই বাজাতে চাইত। আমরা আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে তো ও অনুষ্ঠান করাই ছেড়ে দিল। সে হয়তো দর্শকের সামনে যেতে চাইতো না বা বিচলিত হয়ে যেত। এটা খুব আফসোসের ব্যাপার, কারণ ও অসাধারণ একজন সুরস্রষ্টা।”

শুভেন্দ্র শঙ্কর ছোটবেলা থেকেই অসুস্থ থাকার কারণে তাদের মধ্যে দাম্পত্যকলহ শুরু হয়। কিন্তু এই কলহ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যখন অন্নপূর্ণা দেবী আবিষ্কার করেন নৃত্যশিল্পী কমলা শাস্ত্রীর সাথে রবিশঙ্করের পরকীয়া সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিষণ্ণ অন্নপূর্ণা দেবী তখনই তাঁর ছেলেকে নিয়ে মাইহারে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে কমলা শাস্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে তিনি বোম্বেতে ফিরে আসেন, কিন্তু রবিশঙ্করের সাথে তাঁর সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি। ১৯৬২ সালে তারা আলাদা হয়ে যান।

পন্ডিত রবিশঙ্করের থেকে আলাদা হওয়ার পরে তিনি বস্তুত নিভৃত জীবনযাপন শুরু করলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সঙ্গীতানুষ্ঠান করার প্রস্তাব নাকচ থেকে শুরু করে তাঁকে দেওয়া কোনো সম্মাননা অনুষ্ঠানেও তিনি যাননি। তাঁর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যায়নি, বরং তাঁর মতো একজন ক্ষণজন্মা সঙ্গীতশিল্পীকে নানা সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। তাঁকে ১৯৭৭ সালে ভারতের সম্মানসূচক ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব প্রদান করা হয়। এছাড়াও ১৯৯১ সালে নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং বিশ্বভারতী থেকে ১৯৯৯ সালে সম্মানজনক দেশিকোত্তম উপাধি দেওয়া হয়। যদিও কোনো সম্মাননা বা কনসার্টে নিমন্ত্রণই তাঁকে তাঁর বদ্ধঘরের বাইরে আনতে পারেনি।

তবে তিনি বদ্ধ জীবনযাপন করলেও তাঁর সুরসাধনা থেমে যায়নি। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি না থাকলেও তিনি পরবর্তীতে একজন সঙ্গীতগুরু হিসেবে শিষ্যদের তালিম দেওয়া শুরু করেন। তাঁর অসামান্য প্রতিভা আর শিক্ষকতার ছোঁয়ায় তার শিষ্যদের মধ্যে থেকে অনেক প্রতিভাবান সঙ্গীতজ্ঞ বের হয়ে আসেন। পন্ডিত নিখিল ব্যানার্জী, ওস্তাদ বাহাদুর খান, ওস্তাদ আশিষ খান, পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার এবং পন্ডিত নিত্যানন্দ হলদিপুরের মতো প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীরা তাঁরই শিষ্য ছিলেন। এছাড়াও তাঁর কাছে রুশি পান্ডে নামক একজন সঙ্গীত অনুরাগী তালিম নেওয়া শুরু করেন, যাকে ১৯৮২ সালে তিনি বিয়ে করেন। এর আগে ১৯৮১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পন্ডিত রবিশঙ্করের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের অবসান ঘটে।

অন্নপূর্ণা দেবী একজন অসামান্য প্রতিভাবান সঙ্গীতসাধক ছিলেন। স্বয়ং আলাউদ্দিন খান তাকে মূর্তিমতী মা সরস্বতী বলে ডাকতেন। তাঁকে নিয়ে ওস্তাদ আমির খান একটি বিখ্যাত একটি কথা বলেছিলেন, “অন্নপূর্ণা দেবী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের ৮০ ভাগ পেয়েছেন, যেখানে আলী আকবর পেয়েছেন ৭০ ভাগ আর রবিশঙ্কর পেয়েছেন ৪০ ভাগ।” তার ভাই আলী আকবরও একথাটির সাথে একমত পোষণ করে বলেন, “অন্নপূর্ণাকে দাঁড়িপাল্লায় একপাশে রেখে অপর পাশে রবিশঙ্কর, পান্নালাল আর আমাকে রাখলেও অন্নপূর্ণার পাল্লাই ভারী হবে।” কিন্তু এমন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীর সুর দূর্ভাগ্যজনকভাবে হারিয়ে গেছে। তিনি কখনোই তাঁর কোনো গান রেকর্ড করেননি, তবে তাঁর বাজানো একটিমাত্র রেকর্ড আছে। তাঁদের একটি যুগলবন্দী অনুষ্ঠানে বাইরে রাখা স্পিকার থেকে সেই বাদনটি রেকর্ড করা হয়েছিল।

প্রকাশ্য অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পরে সরাসরি তাঁর বাদন তিনজন মানুষ ছাড়া কেউই শুনতে পাননি। এই ভাগ্যবান মানুষের মধ্যে রবিশঙ্কর আর রুশি পান্ডে ছাড়া আর আছেন বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ অনুরোধে তিনি জর্জ হ্যারিসন আর সত্তর দশকের বেহালাবাদক ইয়েহুদি মেনুহিনকে শুধুমাত্র তাঁর রেওয়াজের সময় উপস্থিত থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন, যদিও ইয়েহুদি মেনুহিন শেষমেষ বিশেষ কারণে হঠাৎ দেশে ফেরায় এই সুবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তাঁর বাড়িতে তিনি রেওয়াজ ঘরের কাছে কোনো কাজের লোককেও ঘেঁষতে দিতেন না, রেওয়াজ ঘর নিজেই পরিষ্কার করতেন।

অন্নপূর্ণা দেবীর সুর না শুনতে পাওয়ায় বিশ্ববাসীর একটা আফসোস রয়েই গিয়েছে। তাঁর মতো অসামান্য প্রতিভা বিশ্বে আর কোনোদিন হয়তো আসবে না। নীরবে সঙ্গীতসাধনা করা এই সঙ্গীতশিল্পীর বিরল প্রতিভা তাই আমাদেরকে তাঁর কথাই বারবার মনে করিয়ে দিয়ে যা রবিশঙ্করের আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, রোজ ১০ ঘণ্টার বেশি সেতার সাধনার পর এই কাঁদুনে শিশুকে নিয়ে সারা রাত জেগে থাকার বিড়ম্বনা থেকেই তাঁদের দাম্পত্য জীবনের প্রথম টানাপোড়েন শুরু হয়। রবিশঙ্কর লিখেছেন, “এ সমস্যার কারণে রাত-জাগা অভ্যাস হয়ে গেল শুভর। এটা এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলল। খেয়াল করলাম, অন্নপূর্ণার ব্যক্তিত্ব দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আমাদের দুজনেরই শক্তি ক্ষয় হচ্ছিল খুব। মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিল আমাদের দুজনেরই। ওই সময়টাতে তুচ্ছ কারণে আমার মেজাজ বিগড়ে যেত। দুজনে একসঙ্গে রেগে উঠতাম। আমি আগে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এবার খেয়াল করলাম, ও ঠিক ওর বাবার মেজাজ পেয়েছে। ও আমাকে প্রায়ই বলত, ‘তুমি শুধু সংগীতের জন্য আমাকে বিয়ে করেছ! আমাকে তুমি ভালোবাসো না! তোমার জন্য তো অন্য রূপসীরা আছে!’ কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বললে খুব হিংসা হতো তার। যখনই আমি অন্য শহর থেকে অনুষ্ঠান করে ফিরতাম, সেখানে আমার কোনো প্রেম আছে বলে আমাকে দুষত।“ রবিশঙ্করের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আর কখনো স্বাভাবিক হয়নি। তাঁদের ছেলে শুভ মারা যান ১৯৯২ সালে।

রবিশঙ্করের ছাত্র ও ‘দ্য নবভারত টাইমস’-এর সংগীত সমালোচক মদন লাল ব্যাস বলেছিলেন, “কনসার্ট শেষে লোকজন অন্নপূর্ণাকে ছেঁকে ধরত। পণ্ডিতজির পক্ষে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। অন্নপূর্ণা ছিলেন অসামান্য এক প্রতিভা। এমনকি তাঁর আপসহীন, ক্ষমাহীন এক গুরুবাবা তাঁকে মূর্তিমতি সরস্বতী বলে ডাকতেন। এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর কী হতে পারে?”

২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অন্নপূর্ণা দেবী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তী শিল্পী হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu