জন্ম ৪ আগস্ট, ১৯৮৬; দক্ষিণ ভূতের দিয়া, বাবুগঞ্জ, বরিশাল। শিক্ষা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর। পেশা : বেসরকারি চাকরি। ২০১৯ অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘গুহা’, উপন্যাসটি একটি বিশেষ ধারার উপন্যাস হওয়ায় অনেক পাঠকের আগ্রহ জাগে উপন্যাসটি পড়তে। পরবর্তীতে যৌনতাবিষয়ক উপাদান থাকায় কেউ কেউ উপন্যাসটি নিয়ে সমালোচনা করেন। সেসকল বিষয় এবং তার পরবর্তী উপন্যাস ‘সহবাস’ নিয়ে দর্পণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ ফরায়েজীর সাথে তার কথাবার্তা হয়।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
কেমন আছেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
আসলে ভালো নেই।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
কেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
সমসাময়িক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ভালো থাকতে দিচ্ছে না। একজন শিল্পী সব সময়ই সচেতন নাগরিক। আর একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সব কিছুই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যেমন আমার কাছেও। সে কারণেই চিন্তা। এই ভালো না থাকার চিন্তা।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
আপনার মতে সাহিত্য কী?
সানাউল্লাহ সাগর:
এটাকে এককথায় বলা কষ্টকর। তবুও এটা ঠিক যে নিজের মতটা দেওয়া যায়। ডিসিশন দেওয়া যায় না। আমি সাহিত্যকে জীবনের ছবি হিসেবে দেখি। যদিও কেউ কেউ সাহিত্যকে জীবনের অংশ বলেন। কিন্তু আমি সাহিত্যকে জীবনের অংশ বলতে নারাজ। আমি প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখি বা চিন্তা করি। বলতে পারো জীবনকে আয়নায় দেখা।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
সাহিত্যের কাজ কী মানব মনে আলোড়ন সৃষ্টি করা?
সানাউল্লাহ সাগর:
সাহিত্য ঠিক কি করবে কিংবা কি করবে না। সেটা আসলে সময় ও বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। কারণ একই লেখা তুমিও পড়লা আমিও পড়লাম। আমাকে প্রভাবিত কিংবা আলোড়িত করলেই যে তোমাকে করবে কিংবা করতে হবে তার ঠিক নেই। তবে এই বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রে পাঠকের গ্রেডের উপর নির্ভর করে ।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
পাঠকের গ্রেড জিনিসটা কী?
সানাউল্লাহ সাগর:
এটা বলতে পারো আমার এক ধরণের চিন্তা। হয়তো অন্য কেউ অন্যভাবে বলেছেন। আমি মনে করি তিন–চার গ্রেডের পাঠক আছে। যেমন আমি নিজেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক মনে করি। এটা অনেকটা পাঠ প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে। মূলকথা আমি বলতে চাচ্ছি যে পাঠকের পাঠ প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে যে সে সাহিত্য কিংবা তার সদ্য পাঠ করা বইটি থেকে কী পেতে যাচ্ছে।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
দেখা যায় কারো কারো লেখা তার সমকালে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়, যেমন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। আবার কেউ কেউ অনেকদিন পর মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে, যেমন জীবনানন্দ। বর্তমান সময়ের সাহিত্য সমকালে মানব হৃদয়ে কেমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
সানাউল্লাহ সাগর:
কোনো প্রকৃত শিল্পীই নিজেকে প্রদর্শন করার জন্য কাজ করেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। বরং সে নিজেই নিজের কাজের মধ্যে ডুবে থাকেন। সেটা কীভাবে সময়কালে প্রভাব ফেলবে সেটা ওই সময়কার শিল্পরস আরোহণে আগ্রহীদের উপর নির্ভর করে। তবে শিল্পীর মধ্যে তার ম্যাসেজকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। সেটাকে আমি খারাপ হিসেবে দেখি না। তবে এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই এই কাজ গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। আবার অনেকে তার সময়ের থেকে চিন্তা-চেতনায় এগিয়ে থাকেন যেমন জীবনানন্দ। তার মানে কি আমরা রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুলকে পড়ি না? অবশ্যই পড়ি। তারা তো সিঁড়ি। সিঁড়ি বা ধাপকে অস্বীকার করা যায় না। যেমন আমরা চর্যাপদকে অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু চর্যাপদের ভাষার সাথে বর্তমান সময়ে প্রচলিত বাংলাভাষার মিল কতটুকু! ঠিক এরকমই নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের ভাষার চেয়ে জীবনানন্দের ভাষা কিছুটা এগিয়ে ছিলো; আছে।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
আপনি কবিতা দিয়ে সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন, এখন গদ্য সাহিত্য নিয়েও কাজ করছেন, কোনটি করতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
দ্যাখো গদ্য-পদ্য সবই শিল্পের মাধ্যম। কিন্তু উপস্থাপনা কৌশলটা একটু ভিন্ন। আমি কবিতায় যদি সব কথা বলতে পারতাম তাহলে কখনোই গদ্য লিখতাম না। একযুগের বেশি সময় কবিতা লেখার পর মনে হলো আমি আরও কিছু বলতে চাই। যেটা কবিতায় পারছি না। সে কারণে গদ্য লিখতে শুরু করেছি।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
কাব্য সাহিত্যচর্চায় বর্তমান প্রজন্ম কেমন করছে বলে আপনি মনে করেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
সময়ে দাঁড়িয়ে শিল্পের বিচার করা যায় না। যেরকম একটু দূরে না গেলে আলো কতোটা উজ্জ্বল সেটা বুঝা যায় না। সে জন্য শিল্পের বিচার হয় সময় অতিবাহিত হলে। তবে পাঠ থেকে এটা বলতে পারি যে সমসাময়িক অনেক তরুণের কবিতায়ই ভাংচুরের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এবং এই সময়ের কবিতা পড়লে অন্তত এটা বুঝা যায় যে কবিতার ভাষা পরিবর্তন হচ্ছে।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
আপনার প্রথম উপন্যাস ‘গুহা’ একটি বিশেষ ধারার উপন্যাস– পত্রোপন্যাস– গদ্য সাহিত্যচর্চার শুরুতেই পত্রোপন্যাস লেখার কথা আপনার মাথায় কেন এসেছিল?
সানাউল্লাহ সাগর:
লেখার দিক থেকে গুহা আমার প্রথম উপন্যাস না। যদিও প্রকাশের দিক থেকে এটি প্রথম। আমি প্রথম উপন্যাস লিখেছিলাম ২০০২ সালে। একটি নয় তিনটি উপন্যাস। প্রকাশের জন্য জমিয়েও রেখেছিলাম। কিন্তু কয়েক বছর পর মনে হলো এই লেখাগুলোতে শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের অনেক প্রভাব আছে। সে জন্য ওগুলো আর কখনো প্রকাশ করিনি। সংরক্ষণও করিনি। তারপর আবার ২০১৬ সালে উপন্যাস লেখা শুরু হলো। লেখা হলো সহবাস নামের একটি উপন্যাস। তারপর ‘গুহা’। গুহা উপন্যাসের গল্প নিয়ে যখন খসড়া করেছিলাম তখনও ভাবিনি এটি পত্র আকারে লিখবো। কিন্তু পরে মনে হলো চিঠির ধারাটা তো একেবারেই উঠে গেছে এটার গল্পটাকে চিঠির ফর্মেই লিখি। একটা এক্সপেরিমেন্ট করি। সে চিন্তা থেকে গুহা লেখা হলো। এবং লেখার পর মনে হলো এই গল্প চিঠির ফর্মে না লিখলে এভাবে লেখাই সম্ভব হতো না। আসলে যে কোনো লেখা শিল্পীকে দিয়ে তার মতো করেই লেখিয়ে নেয়।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
আপনি কী ব্যক্তিগত জীবনে আপনার প্রেমিকার সাথে কখনো চিঠিপত্র চালাচালি করেছেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
আমি প্রচুর চিঠি লিখতাম। তবে সেসব চিঠির অধিকাংশই প্রেমের চিঠি ছিলো না। নিজের ভাবনার কথা লিখতাম। সেগুলো আমার টেবিলে কিংবা দেরাজে পরে তাকতো। তবে লিখতে ভালো লাগত। গ্রামের বাড়িতে আমার বইয়ের আলমারি খুঁজলে হয়তো এখনো কাউকে না দেয়া এরকম অনেক চিঠি পাওয়া যাবে। আবার পাঠাতামও কিছু অপরিচিত মেয়েদের কাছে। যাকে হয়তো আমি কখনো দেখিনি। কেউ কেউ জবাব দিতো। কেউ আবার দিতো না। তবে সেগুলো প্রেমের চিঠি ছিলো না। আর যারা জবাব দিতো তাদের সাথে নিয়মিত চিঠি চালাচালি চলতো। এরকম আমার অনেক চিঠি বন্ধু আছে যাদের সাথে কখনো দেখা হয়নি। কিংবা ফোনেও কথা হয়নি। যদিও এই গতির যুগে এসে সব যেন হারিয়ে গেছে নিজের ব্যস্ততার কাছে। তবে আমি অনেক বন্ধুকে তাদের প্রেমিকার কাছে পাঠানোর জন্য চিঠি লিখে দিতাম। বলতে পারো বন্ধু মহলে চিঠি লিখে দেওয়ার ব্যাপারে আমার একটা সুনাম ছিলো। সে কারণে অনেকেই আমার কাছ থেকে চিঠি লিখিয়ে নিতো।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
‘গুহা’ উপন্যাসে দেখা গেছে, মূলত দুটি চরিত্রের চিঠি চালাচালির মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্র বা ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেছে, সময়ের নানা সংকট সম্পর্কেও জানা গেছে– এসকল বিষয় পত্রের মাঝে আনতে আপনাকে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে?
সানাউল্লাহ সাগর:
আগেই বলেছি চিঠি লিখতে আমার ভালো লাগতো। চিঠি লিখে আনন্দ পেতাম। বলতে পারো একরকম নিজের কাছেই নিজের চিঠি লেখা। তো যখন ঠিক করলাম যে গুহা পত্রোপন্যাস হবে তখন থেকেই আমি খসড়া করা গল্পের চরিত্রগুলোর সাথে মিশে গেলাম। কাজটা একেবারে সহজ ছিলো না। নিজের কাছে চিঠি লেখা আর তা জমিয়ে রাখা কিংবা প্রেমিকাকে চিঠি লেখা আর একটা উপন্যাস লেখা এক নয়। কারণ এটা প্রকাশিত হলে মানুষ পড়বে। গালি দিবে।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
গুহার জন্য কী আপনাকে গালি খেতে হয়েছে?
সানাউল্লাহ সাগর:
দেখো ‘গুহা’ লিখে অনেক গালি খেতে হয়েছে। বিশেষ করে তথাকথিত সমালোচক কিংবা সস্তা স্তরের পাঠকরা যারা ম্যাসেজটা না ধরে কিছু শব্দ নিয়ে আপত্তি করেছে। মূল ম্যাসেজের কাছে তারা যায়নি। ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেনি। যৌনতা নিয়ে কথা বললেই তাদের কান গরম হয়ে যায়। অথচ পর্দার আড়ালে আমরা সব করতে পারি । পর্দার সামনে এলে সবাই সাধু সাজার চেষ্টা করি। এবং শুধু কয়েকটি শব্দের কারণে তিনজন প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশ করতে রাজি হননি।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
ইতিমধ্যে আপনি ঘোষণা দিয়েছেন, আপনার পরবর্তী উপন্যাসের নাম ‘সহবাস’, এই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু কী?
সানাউল্লাহ সাগর:
‘সহবাস’ উপন্যাসটি ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হবে। হাওলাদার প্রকাশনী থেকে। এখন পর্যন্ত এরকমই কাজ চলছে। এই যে ‘সহবাস’ এই নাম নিয়েও প্রকাশকের আপত্তি! এটা নাকি ধর্মের খেলাপ! বইমেলায় সমস্যা হবে! দেখো আমাদের বর্তমান সমাজে আমার অকপটে ‘ফাক’ ‘ফাক ইউ’ বলি। কিন্তু এটার বাংলা ‘চুদি’ শব্দটি আমাদের খুব কানে লাগে। মুখে বেধে যায়। আমরা ছি ছি করি। ঘৃণা লাগে। আবার যারা এইসব নিয়ে ছি ছি করে দেখবা তারাই পর্ণ সাইডের ব্রাউজে এগিয়ে আছে। কিংবা রেপ কেসে ফেঁসে আছে। আসলে খোলস পড়তে পড়তে আমাদের এমন অবস্থা হয়েছে যে একসময় পুরো খোলসে আমরা ঢেকে যাবো। নিজস্বতা বলতে আর কিছু থাকবে না।
সহবাস উপন্যাস এককথায় একজন ভাড়ায় খাটা লেখকের জীবন আখ্যান। সেখানে সমাজ, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, মনস্তাত্ত্বিক ভাবাবেগ, লিভ টুগেদার, কুসংস্কার এসব ডালপালা নিয়ে এগিয়েছে।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
যৌনতা কথাসাহিত্যে কীভাবে উপস্থাপিত হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
আমি মনে করি যৌনতা যেহেতু জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ সেহেতু এটা সাহিত্যে ওই রকম গুরুত্বসহকারেই আসা উচিত। কিন্তু আমাদের লেখকরা এটাকে কৌশলে এড়িয়ে যায়। যেন জাত যাবে! বাস্তব জীবনে যেমন যৌনতা অস্বীকার করা যায় না সেরকম শিল্পেও যৌনতা অস্বীকার করা উচিত নয়।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
কার উপন্যাস আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করে?
সানাউল্লাহ সাগর:
সত্যি কথা বলতে জীবনের দৌড়ে বই পড়াই কমে গেছে। এর মধ্যে ব্যস্ততার সাথে সাথে সামাজিক মাধ্যমের প্রতি এডিকশনও একটা বড় কারণ। তারপরও পড়ি। পড়তে চেষ্টা করি। তবে সেটা আগের থেকে কমে গেছে। বর্তমানে যারা লিখছেন তাদের মধ্যে– হরিশংকর জলদাস, মনি হায়দার, জাকির তালুকদার, স্বকৃত নোমান এদের লেখা ভালো লাগে।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
কবিতা এবং কথাসাহিত্য যদি আপনার দুই প্রেমিকা হয়; এবং শর্ত দেওয়া হয় আপনার একজনের সাথে সংসার করতে হবে– আপনি কার সাথে সংসার করবেন?
সানাউল্লাহ সাগর:
এটা অনেক কঠিন প্রশ্ন। এভাবে কখনো ভাবিনি। কারণ আমি যখন মনে করেছি কবিতায় যা লিখছি বা বলছি সেটার থেকেও আমার আরো কিছু বলার আছে ভিন্নভাবে তখনই গল্প-উপন্যাস লেখা শুরু করেছি। সেজন্য দুই মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা আমি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অনুভব করি। যেমন আমি বিশ্বাস করি একজন মানুষ একই সাথে একাধিক মানুষকে ভালোবাসতে পারে। এবং কেউ কারো জায়গা দখল করে না। প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থাকে। কবিতা ও কথাসাহিত্যকেও আমি সেরকম মনে করি।
মোস্তাফিজ ফরায়েজী:
ভালো থাকবেন। আপনার প্রকাশিতব্য বইয়ের জন্য শুভকামনা।
সানাউল্লাহ সাগর:
দর্পণ টিমের জন্য শুভ কামনা।