চিত্রশিল্পী হতে হবে এই পোকা মাথায় প্রথম কবে ঢোকে?
এটা বলা মুশকিল কবে ঢোকে মাথায়। ছোটবেলা থেকেতো ছবি আঁকি। তারপর স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং নিয়ে পড়াশোনা। চিত্রশিল্পী হতেই হবে এমন কোনো অ্যাম্বিশন নেই, কখনো ছিলো না। আমার কাজ ছিলো এঁকে চলা এবং কোথায় পৌঁছাবো তা জানি না। এটা দীর্ঘ জার্নির ব্যাপার।
একজন ব্যক্তি ভালো ছবি আঁকলেই কি তিনি চিত্রশিল্পী হয়ে উঠছেন বলে মনে করেন?
ভালো আঁকলেই যে আপনি চিত্রশিল্পী হবেন এমন নয়। চিত্রশিল্পের মধ্যে শিল্পীর মনের ভাব, প্রচ্ছন্ন কিছু বক্তব্য, ইঙ্গিত অথবা রঙ থাকে যা দর্শককে ভাবায়। শিল্প জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নতুন কৌতুকহল সৃষ্টি করায়।
একজন আঁকিয়ে নির্দিষ্ট মানুষের আবয়বকে নিখুঁত করে আঁকতে পারেন, প্রকৃতির রূপকে তাঁর নিখুঁত তুলির মাধ্যমে ফটোগ্রাফের পর্যায়ে উন্নীত করেন– এর মানে এই নয় যে তিনি চিত্রশিল্পী বা আর্টিস্ট। কারণ তার কোনো তৃতীয় চক্ষু নেই।
নির্দিষ্ট মানুষকে আঁকতে গিয়ে যে শিল্পী সেই মানুষের মনের ভাব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণকে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে পারেন, এই পারিদৃশ্যমান জগতের বস্তু ও প্রকৃতির ছবির অন্তরালে কোনো বক্তব্য বা চেতনার বক্তব্য নির্ণয় করতে পারেন– তিনিই শিল্পী এবং সেই ছবিই চিত্রশিল্প। ছোটভাবে যদি বলি, চিত্রকর হলেন দ্রষ্টা আর শিল্পী হলেন স্রষ্টা। অন্যভাবেও যদি বলি, যে ছবি আপনাকে ভাবায় অথবা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় অথবা আপনাকে বিচলিত করে তোলে তবে তাই চিত্রশিল্প।
“আর্ট কেন শিল্পের একটি প্রধান শাখা”– এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
দেখুন পৃথিবীতে যখন মানুষের বসতি শুরু হয়, মানুষ যখন নিজের ক্ষুধা নিবারণের জন্য পশু শিকার করতো তখন একটা গ্রাফ আঁকা হতো গুহার দেয়ালে। সে অনুযায়ী দলবেঁধে তারা শিকারের প্রস্তুতি নিতো। সেই থেকেতো চিত্রকলার মানুষের সাথে সহ-অবস্থান করছে। তারপর মানুষের বিবর্তনের সাথে চিত্রকলারও একটা বিবর্তন ঘটে। জীবনের গ্রাফ থেকে চিত্রকলা চলে এলো মনের গ্রাফ। তারপর আসলো চিত্তে, নান্দনিকতায়, চিন্তায়। সেই চিত্রকলার পাশাপাশি হেঁটে চলেছে সুর-সংগীত, নৃত্য অথবা নাটক। এগুলোর প্রতিটায় কিন্তু দৃশ্যকল্পের একটা উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে।
আপনি একটা গান করবেন কিন্তু কী গান করছেন সে অনুযায়ী চিত্রটা আপনার মানসপটে ভেসে উঠছে কি-না, আপনি নৃত্য করবেন, সেখানে আপনার ফিগারের অবয়ব কেমন হবে এর ভেতরেও কিন্তু চিত্রকলার উপস্থিতি থাকে। তবে পুরোপুরি প্রধান শাখা বলা যাবে না। সব শিল্পকলার চলার গতি সমান্তরাল। প্রতিটা শিল্পের সাথে কোনো না কোনো ভাবে আরেক শিল্প জড়িত। চিত্রকলাও মানুষের বা প্রকৃতির ভঙ্গি ছাড়া কি গড়ে উঠতে পারে? পারে না। সুতরাং প্রধান শাখা বলে আসলে কিছু নেই।
ইন্টালেকচ্যুয়াল বা ক্লাসিক্যাল আর্টিস্ট না হয়ে প্রচ্ছদশিল্পী হবার চিন্তা কী মনে করে?
কোনটা ইন্টালেকচ্যুয়াল এটা কিভাবে নির্ণয় করবেন? যদি সহজ অর্থে বলেন যে, পেইন্টিং না করে প্রচ্ছদশিল্পী হবার চিন্তা কেন করেছেন তাহলে বলবো। ক্যানভাস কাগজে তো প্রতিনিয়ত ছবি আঁকছি। সেটাতো প্রাণের জায়গা। পাশাপাশি প্রচ্ছদ একটি বাড়তি মাধ্যম মনে করি। প্রচ্ছদকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো ডিজাইন হিসেবে দেখি না। এখানেও রং তুলি চিন্তার প্রয়োগ থাকে। বইয়ের পাতা তখন আমার কাছে ক্যানভাস হয়ে ওঠে। একজন আর্টিস্টের চিন্তার জায়গা ভিন্ন। শুন্যতায় যখন চোখ বন্ধ করে আঁকে বা ভাবে তখন শুন্যতাও তার কাছে ক্যানভাস হয়ে ওঠে। শুধু প্রকাশের মাধ্যমটা আলাদা এটাই পাথর্ক্য। আমরা প্রচ্ছদশিল্পী আলাদা ভাবে বলি, কেননা এ বিষয়ে তিনি স্পেশালিস্ট কিন্তু যখন বৃহত্তর ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং ভাববেন তখন তার ভেতরেরই একটা অংশ হলো প্রচ্ছদ। এটা একটা এক্সট্রা গুণাবলি মাত্র। কিন্তু পূর্ণাঙ্গভাবে সেতো একজন চিত্রশিল্পী। কিন্তু কোন চিত্রকলা ক্লাসিক্যাল হয়ে উঠতে পারে সেটা কোনো শিল্পীই বলতে পারেন না। আর ক্লাসিক্যাল আমার কাছে স্রেফ একটা ব্যবসায়ী বাজারজাতিকরণ শব্দ।
একজন ইন্টালেকচ্যুয়াল আর্টিস্ট আর প্রচ্ছদশিল্পীর মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে? তাদের কার্যপ্রণালীতে কী কী ধরনের বৈচিত্র্য থাকে?
পার্থক্যটা আগের প্রশ্নেই বলেছি। তবে এখানে কার্যপ্রণালী নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে সেটা হলো প্রকাশের ভাষা। আমরা যখন ছবি আঁকি সেটা ক্যানভাসে কাগজে যে মাধ্যমে হোক না কেন প্রচ্ছদের প্রিন্টের ভাষা কিছুটা যন্ত্রের উপর নির্ভর করে প্রিন্ট উপযোগী করবার জন্য। কেননা এখানে একটা বাঁধা আছে সাইজে, কোয়ালিটিতে, পাবলিক ডিমান্ডে। চিত্রকলা যখন আপনি করবেন তখন সম্পূর্ণ আপনার চেতনাগত জায়গা থেকে আসবে– এখানে কেউ ভাগ বসাবে না। আপনার বক্তব্য যুক্তি দর্শন আপনার মতো করে সাজাতে পারবেন। আর প্রচ্ছদের ব্যাপারটা হলো কিছু গদবাঁধা নিয়ম। যেমন আপনি মুক্তিযুদ্ধের গল্পে লোকজ ফর্মতো আর দিতে পারবেন না। অথবা রোমান্টিক উপন্যাসেতো আর সাইন্স ফিকশন টাইপ কিছু আঁকতে পারবেন না, তাই না? গল্পের মেজাজ অনুযায়ী আপনি আপনার স্বাধীন বিশ্বাসকে প্রয়োগ করতে পারবেন।
আপনি ক্লাসিক্যাল আর্টের কথা বলছিলেন– এটা একটা বাজারজাতিকরণ শব্দ, ক্লাসিক্যাল আর্ট টার্মটাকে আপনি সামগ্রিকভাবে কীভাবে দেখেন?
ক্লাসিক্যাল একটা টোটাল ভাওতাবাজি শব্দ আমার কাছে। ক্লাসিক্যাল বলতে কি আমরা রেনেসাঁস যুগের চিত্রকলার কথা বলছি? আমরা ভিঞ্চির ‘দ্যা লাস্ট সাফার’-এর কথা বলছি? সান্দ্রো বেতিচেল্লির ‘দ্যা বার্থ অব ভেনাস’-এর কথা বলছি? মাইকেল এঞ্জেলোর ‘দ্যা ক্রিয়েশন অব এডাম’ অথবা জয়নুলের ‘দুর্ভিক্ষ’ কিংবা সুলতানের ‘চরদখল’-এর ছবির কথা বলছি?
দেখুন ক্লাসিক্যাল বলে একটা সেগমেন্ট তৈরি করা মাত্র। যে মহান চিত্রশিল্পীরা আমাদের এই পৃথিবীতে চিত্রের জন্ম দিয়ে গিয়েছেন সেই চিত্রকলা সেই সময়ে ক্লাসিক্যাল ছিলো? না, নানান বিতর্ক ছিলো। বিভিন্ন ইজমে ভাগ করা হয়েছিলো, ক্ষ্যাপটে আর্টিস্টরা দাদা ইজমের কোটায় পড়েছে, কেউ রিয়েলিজম ফর্মে কেউ সুরিয়েলিজম ফর্মে। এগুলো নির্ধারণ হয়েছে কিন্তু শত বছর পরে এসে চিত্রবিশ্লেষকদের মাধ্যমেই। পৃথিবীতে একমাত্র চিত্রকলাই আছে যার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিখ্যাত হয়ে ওঠে, এন্টিক হয়ে ওঠে।
কোনো প্রচ্ছদ কী ক্লাসিকের পর্যায়ে পড়তে পারে?
আমার কাছে মনে হয় সব নান্দনিকতা যা আপনার মনের ভেতরে প্রশান্তি এনে দেয় তাই ক্লাসিক্যাল। সেক্ষেত্রে একটি প্রচ্ছদ যদি আপনার মনের ভেতর প্রশান্তি এনে দেয়, ভাবতে বাধ্য করে, চিন্তার প্রখরতা বাড়ায় তবে কেন সেটা ক্লাসিক্যাল হয়ে উঠবে না? হয়তো অনেকে বলবেন এর ভেতর যন্ত্রের উপস্থিতি আছে, আমি বলব মানুষের মস্তিস্কও একধরনের যন্ত্র। আর সত্যি কথা বলতে বাজারি বনিকেরা এই সেগমেন্ট ভাগ করে আর কেউ করে না।
আপনার প্রচ্ছদগুলো অন্যদের প্রচ্ছদ থেকে কোন কোন দিক দিয়ে আলাদা বলে মনে করেন?
প্রতিটা শিল্পীর কাজের ধরণ-স্টাইল-গতি-প্রকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা হয় জন্ম থেকে। কেননা প্রতিটা শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো কিন্তু আসে তার নিজের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য থেকে। যে কারণে যে যেমন মানুষ যার আচারণ যেমন তার সম্পূর্ণটা কিন্তু তার চিত্রকলায় ছাপ পড়ে, এটা প্রাকৃতিকগতভাবে অথবা মনোজাগতিক একটা রশ্মি থেকে আসে। সে যদি একটা ঘোড়া আঁকে সে ঘোড়ার চরিত্রটাও কিন্তু আর্টিস্টের মতোই হয়ে ওঠে। একজন চিত্রশিল্পী যদি আপনার মুখের ছবি আঁকে তখনো কোন না কোন অংশে শিল্পীর মননের বা চেহারা বা বৈশিষ্ট্যের একটা ছাপ থাকে। হয়তো সেটা মূল্যবানও হয়ে উঠতে পারে।
আমার প্রচ্ছদ আলাদা কোন দিক দিয়ে সেটা আমার চেয়ে বেশি ভাল বলতে পারবেন পাঠকরা। একজন পাঠক যেমন লেখকের গল্পের সাথে মিশে যেতে পারেন ধরণ ও প্রকৃতি বলে দিতে পারেন তেমন শিল্পীরও। তবে প্রচ্ছদের সব সেক্টরেই আমার কাজ করার অভ্যাস রয়েছে। আমি বিশেষভাবে মনযোগ দেই সার্পেস-এ। এটা আমি পছন্দ করি। টেক্সার ইউজ আমি বেশি করি। একটা টেক্সারের উপর প্রচ্ছদ আঁকলে আমি মনে করি আমার মনের মতোই করেছি। কখনো কখনো টাইপোগ্রাফি বা ক্যালিওগ্রাফিতেও মনোযোগ আসে। আসলে ডিমান্ড করে বইয়ের ধরনের উপর। আর কেন জানি প্রতিটা বইয়ে আমার মানুষের উপস্থিতি আমি বেশি ঘটাই। মানুষ নিয়েই-তো যত লেখা, যন্ত্রণা, ভাবাবেগ। এটাই হয়তো আলাদা চরিত্র এনে দেয় আমার প্রচ্ছদে।
নিজের আঁকা প্রচ্ছদ বইতে দেখলে কেমন অনুভূতি জাগে?
এই যেমন আপনার সন্তান, আপনার প্রেমিকা অথবা আপনার মাকে দেখলে যেমন অনুভূতি জাগে ঠিক তেমনই। এটা আসলে অন্যরকম। একটা শান্তি এনে দেয়। নিজের সৃষ্টি যত সুন্দর হোক দেখতে ভালো লাগে, অনুভূতির স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রেসের গোলমালের কারণে যদি কোয়ালিটি খারাপ হয় সেক্ষেত্রে মন খারাপ হবে এটাই-তো স্বাভাবিক।
প্রচ্ছদ করতে গেলে অনেকসময় দেখা যায়, লেখক বা প্রকাশক আপনার প্রচ্ছদটা পছন্দ করছে না, আবার অনেকে আপনার কাছ থেকে প্রচ্ছদ করার জন্য ধরনা দিচ্ছে– এই সামগ্রিক বিষয়টাকে আপনি কীভাবে হ্যান্ডেল করেন?
দেখুন এরকম ঘটনা সবসময়ই হয়। প্রথম প্রথম যখন প্রচ্ছদ করতে আসি খুব বিরক্তি-হতাশায় ভুগতাম। নিজেই ভাবতাম হয়তো আমার কিছু হচ্ছে না বা হয়ে উঠছে না। পরবর্তীতে যখন সিদ্ধহস্ত হলাম কিছুটা, তখন এগুলো সয়ে গেছে। কেননা আপনি প্রথম বই করছেন কিন্তু আমি প্রথম প্রচ্ছদ করছি না। একটা দীর্ঘ জার্নি আছে অভিজ্ঞতা আছে। অনেকে প্রচ্ছদ পছন্দ করেন না কারণ তার মনের মতো হয়ে উঠছে না। তার মতো করে জীবনেও সেটা হবে না কেননা একজন শিল্পী সম্পূর্ণ তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আপনার কাজ লেখা, শিল্পীর কাজ সেই লেখা থেকে নির্যাস নিয়ে সুন্দর কিছু নির্মাণ করা। এখন আপনি শিল্পীর ভাষা না বুঝলেতো প্রবলেম। আমিতো বলতে পারি না আপনি লেখক আপনার গল্পের এই চরিত্রকে হত্যা করে দিন। তাহলে সেখানে হুকুম দাতা হিসেবে আসামীতো আমি নিজেই। সেরকম একজন লেখক যদি বলে আমার প্রচ্ছদ এমন করে দিন তাহলে সেখানে সেই সৌন্দর্যকে হত্যা করা হয় না? সেও কি আসামী হয় না? এটা একধরনের অপরাধ। তবে হ্যা লেখক শিল্পীর ভেতর প্রচ্ছদ নির্মাণ করার আগে আলাপচারিতা থাকতে পারে, আলোচনা হতে পারে। কিন্তু নির্মাণ হবার পরে আর আলোচনা করা অমূলক।
এখন লেখক বলতে পারে আমি টাকা দিয়ে প্রচ্ছদ করাচ্ছি আমার পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে একটাই কথা– আপনি দোকানে চলে যান দোকনদারকে পছন্দ অপছন্দের কথা বলুন। শিল্পের জায়গাটা ধ্যানের, প্রজ্ঞার; এখানে অন্তত নয়। আপনি টাকা দিচ্ছেন আবার বলছেন সম্মানী দিচ্ছি। এগুলো অহেতুক। আর ধরনা দেয়া ব্যাপারটা আমি ওভাবে দেখি না। প্রতিটা লেখকের একটা চাহিদা থাকতে পারে আমি এই আর্টিস্টের সাথে চিন্তা ভাগ করতে চাই। হয়তো অনেক সময় সিডিউল থাকে না সেক্ষেত্রে ধরনা শব্দটা ইউজ করি আমরা। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা ওরকম নয়। দিন শেষে একজন মানুষের ক্লান্তিও অযৌক্তিক নয়।
এদেশে একজন আর্টিস্টের জীবন কতটা সংগ্রামী?
সংগ্রাম সবক্ষেত্রে আছে। একজন চাষির ফসল বুনতেও সংগ্রাম করতে হয় প্রকৃতির সাথে, একজন চাকরের সংগ্রাম করতে হয় তার মনিবের সাথে। তার নিজের ধর্ম থাকে না প্রভুর ধর্মই তার কাছে ধর্ম হয়ে ওঠে। শিল্পের সংগ্রাম হয় শিল্পীর নিজের মনোজগতের সাথে। সে নিজেই নিজের শত্রু, নিজেই নিজের মিত্র। আপনি আঁকতে আঁকতে একটা জায়গায় থামবেন, কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় থামবেন সেটার জন্যও সংগ্রাম করতে হয়।
অর্থনৈতিক সংগ্রামের কথা যদি বলেন সেটা ভিন্ন কথা, সেটা সব মানুষের জন্যই কষ্টকর। তবে মনে করি আপনি আপনার কাজে যদি সৎ থাকেন, শিল্পের সাথে আপনার ধ্যান থাকে তবে অর্থনৈতিক ব্যাপারটা গৌণ হয়ে যায়। তখন অর্থনীতির পিছনে শিল্প দৌড়ায় না, শিল্পের পেছনে অর্থনীতি দৌড়ায়। কখনো কখনো শিল্পই অর্থনীতির দাস হয়ে ওঠে কখনো কখনো অর্থনীতির পাগলা কুকুর শিল্পের চৌকাঠ মাড়াতে পারে না। এটা নির্ভর করে সম্পূর্ণ শিল্পীর উপর।
আপনার কী মনে হয়, শিল্পের মূল্য বর্তমানে কমে গেছে?
আমার তা মনে হয় না। শিল্পের মূল্য ৫০০ বছর আগে যা ছিলো এখনো তা আছে। সেসময়েও অনেকে শিল্প পছন্দ করতেন এখনো করেন। আসলে শিল্প ‘মূল্য’-কে থোড়াই কেয়ার করে। একটা সিংহ কখনো বন্দুককে কেয়ার করে না। তার কাছে বন্দুকটাই স্রেফ একটা বস্তু। শিল্প তার আপন গতিতে চলবে যতকাল এই পৃথিবী আছে। এটা এক চলমান রেলগাড়ির মতো, যাত্রী ওঠে আর নামে বিভিন্ন স্টেশনে কিন্তু রেলগাড়ি চলে তার গতিতেই।
সাধারণ মানুষেরা চিত্রকলাকে বর্তমানে কীভাবে দেখছে এবং কেমন রিঅ্যাক্ট করছে?
আমার মনে হয় চিত্রকলা সব মানুষ পছন্দ করেন। প্রতিটা মানুষই কোনো না কোনো ভাবে শিল্পী, কিছু না কিছু আঁকেন। কেউ স্বপ্ন আঁকেন কেউ ভাবনা আঁকেন। মানুষের এই চরিত্রের কারণে প্রতিটা মানুষই চিত্রকলা পছন্দ করে। মানুষের রিঅ্যাক্ট হয় ধর্মীয় রীতির কারণে, সামাজিক কারণে, রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু সুন্দর সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়, এমনকি ধর্মকেও।
পুনরায় যদি জন্ম নিতেন, তাহলে কী হতে চাইতেন?
এটা মজার ব্যাপার এবং কনফিউশনের ব্যাপার। অন্তত এটা বলতাম আর যাই বানাও মানুষ বানিও না। পাখি হতে চাই।
আমাদের মুখোমুখি হবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। দর্পণের জন্য শুভকামনা।