ইকবাল হোছাইন পরশ

পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন ও সুরক্ষিত ৫টি ভল্ট

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

পৃথিবীতে এমন কিছু গোপনীয় আর সুরক্ষিত ভল্ট রয়েছে, যেগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয় সবসময়। সাধারণ কোনো মানুষ তো দূরের কথা, ঝানু গোয়েন্দাদেরও জানা নেই আসলে এগুলোর ভেতরে কী রয়েছে! কেবল ভল্টগুলোর স্বত্বাধিকারীরাই জানেন বিশালাকার গোপন কুঠুরিগুলোতে কী রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। আজ এমন কিছু ভল্টের রহস্য নিয়েই জানব।


আয়রন মাউন্টেন


মাটি থেকে ২০০ ফুট গভীরের এই গোপন জায়গাটি পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন তথ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত একটি চুনাপাথরের খনি, যাকে সবচেয়ে বড় তথ্য সংরক্ষণাগার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত এই তথ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রে যারা তথ্য জমান, তাদের বেশিরভাগের পরিচয়ই অজানা। কঠোর গোপনীয়তা আর নিরাপত্তা প্রটোকলের মাধ্যমে এখানে আসা-যাওয়া করা হয়। ভল্টটির যাত্রা হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় বড়-বড় প্রতিষ্ঠানের গোপন নথিপত্র সুরক্ষিত রাখার চিন্তা থেকে।

Image Source: mormoronnewsroom.org.au

এখন পর্যন্ত জানা যায়, আমেরিকার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিসহ বহু প্রতিষ্ঠানের হাজার-হাজার ছবির নেগেটিভ, ডিভিডি, ছবির অরিজিনালসহ বহু রকমের তথ্য এখানে সযত্নে গচ্ছিত রাখা আছে। শুধুমাত্র আমেরিকান প্রতিষ্ঠানই নয়, বিশ্বের বহু দেশেই এই তথ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটির ক্লায়েন্ট রয়েছে। ভল্টটির প্রবেশমুখে রয়েছে ২৮ টন ভরের এক দৈত্যাকার গেইট, যেখান দিয়ে কেবল অনুমতিপ্রাপ্ত মানুষজন প্রবেশ করতে পারে!


উইকিলিকস্, স্টকহোম


বেশ কিছু বছর আগে বিশ্বব্যাপী বহু দেশের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল উইকিলিকস্! জোয়ারের পানির মতো তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে উম্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল।  আমেরিকাসহ বহু দেশের সরকার তথ্যের এই প্রবাহকে দমাতে উঠে পড়ে লাগে। মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকান সরকারের দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠা এই ডাটা সেন্টারটি কিন্তু আমেরিকার জনবহুল এক শহরেই অবস্থিত! আমেরিকার স্টকহোমের রাস্তার ১০০ ফুট গভীরে গড়ে তোলা এই ভল্টটি ছিল একটি নিউক্লিয়ার বাঙ্কার। সাংবাদিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যখন একে-একে তাবৎ ক্ষমতাশীলদের গোমর ফাঁস করতে শুরু করেন, তখনই মূলত উইকিলিকস্ সবার নজরে আসে। এই ভল্টটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সুইডিশ ইন্টানেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বেনহফ। আমেরিকা কিংবা অন্য কোনো দেশ গোপন ভল্টটির কিছুই করতে পারেনি।

শহরের নিচে গড়ে উঠা এই প্রাচীন বাঙ্কারটিতে রয়েছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা এবং অন্তত ৭ দিনের ব্যাকআপ জেনারেটর। তাই এটি কখনোই অন্ধকারে ঢেকে যায় না। ধারণা করা হয়, ভল্টটিতে এখনো শত-শত গোপন নথি লুকায়িত আছে, যেগুলো প্রকাশ হয়ে পড়লে আমেরিকা আরেকবার ডুববে!


ফোর্ট নক্স


একটি ওপেন সিক্রেট জানাই! পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মজুদ সোনা কিন্তু আমেরিকার কাছেই। আর এই সোনার বড় একটি অংশ মজুদ রয়েছে আমেরিকার কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ফোর্ট নক্সে। যদি কখনো স্বর্ণের লোভ হয় তবে চুপিচুপি এখানে চলে আসবেন, তারপর কাঁটাতার বেয়ে যখন দেয়াল পার হতে যাবেন, তখন ইলেক্ট্রিফায়েড বেড়াগুলো আপনাকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। যদি এর সীমানা দেয়াল মাইন দিয়ে উড়িয়ে দিতে চান তাহলেও এটা পিঁপড়ার কামড়ের মতোই হবে! কারণ ৪ ফুট পুরু গ্রানাইটের দেয়ালকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য রয়েছে ৭৫০ টন ইস্পাত। ভেতরে রয়েছে ক্যামেরা, ট্র্যাপ, মাইন, প্রহরীসহ কয়েক স্তরের প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রহরীকে টাকা খাইয়ে ভেতরে গেলেও লাভ নেই, কারণ ভল্টের মূল ফটকের লক খুলতে হলে আপনাকে অনেকগুলো মানুষকে একত্র করতে হবে। কারণ লক কম্বিনেশনটির একেক অংশ একেকজন জানে, তাই কারও একার পক্ষে লকটি খোলা সম্ভব নয়। আচ্ছা ধরুন আপনি তাদেরকেও মেনেজ করে ফেললেন। ভেতর থেকে সোনাভর্তি ব্যাগ নিয়ে যখন বেরুবেন, ততক্ষণে বাইরে আপনার জন্য ৩০,০০০ সেনা সকল ধরণের ইকুইপমেন্ট নিয়ে অপেক্ষা করবে!


গ্রানাইট মাউন্টেন


পাহাড়ের একেবারে ৬০০ ফুট গভীরে গড়ে উঠা এই ভল্টে রয়েছে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ছবি। ১৯৬৫ সাল থেকে মর্মন চার্চের তথ্যভাণ্ডার হিসেবে সেবা দিয়ে আসছে। ১৪ টন ওজনের মূল ফটকটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সাধারণ মাইন তো পরের কথা, এমনকি নিউক্লিয়ার বোমা মেরেও এর কিছুই করা যাবে না! ভেতরে ভল্টগুলো আরও অসংখ্য ভল্টে বিভক্ত। সেগুলোতে সাজানো রয়েছে গাদা-গাদা তথ্য। এখানে কেবল বৈধ মানুষজনই প্রবেশ করতে পারে, যার জন্য চার্চের সদস্যরাও এখানে প্রবেশ করতে পারে না।  কিন্তু কেন এমন গোপনীয়তা এই ভল্টের, যার জন্য এতো এলাহী নিরাপত্তা কারবার! সবার মতে, মর্মন চার্চের বংশপরম্পরায় আসা সকল মানুষের তথ্য এখানে লুকোনো আছে! কিছু মানুষের জন্ম-মৃত্যুর তথ্য লুকোবার জন্য এতো আয়োজন? মানুষ কিন্তু এসব কথা বিশ্বাস করতে রাজি নয়। অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র জন্ম-মৃত্যুর হিসাব নয়; বরং এখানে এমন সব তথ্য রয়েছে যেগুলো খ্রিস্ট ধর্মকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করার মতো ক্ষমতা রাখে।

তবে এসবের সত্যতা কেবল ভেতরের মানুষগুলোই জানে।


কেএফসি রেসিপি ভল্ট


এবার আসা যাক একটি খাবারের রেসিপি নিয়ে। খাবারের রেসিপিতে ভল্ট কোথা থেকে আসলো! এসেছে, কারণ রেসিপিটি বিখ্যাত এক  চিকেন ফ্রাইড তৈরির, যার উদ্ভাবক হলেন কেএফসি’র প্রতিষ্ঠিতা ডেভিড স্যান্ডার্সের। পৃথিবীব্যাপি কেএফসি’র ফ্রাইড চিকেনের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা দুটোই তুঙ্গে।

Image source: thesouthern.com

কিন্তু কী এমন মেশানো হয় যার জন্য রেসিপিটি এতটা গোপণীয়! অনেকের মতে, এটা কেবলই একটি বিজনেস পলিসি, ব্যবসাকে চাঙ্গা রাখার কৌশল। গোপন রেসিপিটি বর্তমানে আমেরিকার কেন্টাকি-তে সুরক্ষিত রয়েছে। রেসিপি যাতে মানুষের কাছে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সেজন্য এর উপাদানগুলো কেনা হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। হয়তো এখানে আহামরি কিছুই নেই, কেবল উপাদানগুলো মেশানোর কৌশলের গোপন নথি। কিন্তু সত্য হচ্ছে, মানুষ কেএফসি’র বানানো ফ্রাইড চিকেনগুলো গোগ্রাসে গিলছে, আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেএফসি’র বাজারো রমরমা।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবীর যেখানেই যতকিছু লুকিয়ে রাখা হোক না কেন, তার পেছনে সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তা রয়েছে। যার জন্যই এগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য এতো টাকা ঢালছে তারা। হয়তো আমাদের জানা তথ্যের আড়ালে বিশাল কিছু ঘটে চলছে। সেটা জানতে হলে পৃথিবীর ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কী!


তথ্যসূত্র:
১. Mentalfloss
২. The Daily Meal

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu