অনেকদিন ধরেই শুনে থাকবেন, নেটফ্লিক্সে ইমরান হাশমির একটা সিরিজ আসছে। অবশেষে সেটির দেখা মিলেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর নেটফ্লিক্সে এসে গেছে কাঙ্ক্ষিত “বার্ড অব ব্লাড”। এদেশে ভারতীয় এই নায়কের প্রতি মানুষের একটা বিশেষ টান আছে। সেটার বিশেষ কারণগুলোর মধ্যে তার বিশেষ প্রকৃতির অভিনয় কৌশল, চুম্বন দৃশ্য, তার সিনেমায় অন্তর্ভুক্ত হৃদয়স্পর্শী গান অন্যতম।
যাই হোক, অবশেষে এসে গেছে সেই কাঙ্ক্ষিত সিরিজ– তবে মানুষ যতটা উন্নত কিছু আশা করেছিল তেমন কিছু আসেনি। বেশিরভাগ মানুষের আশা ছিলো– স্যাক্রেড গেমসের মানের মতো একটা সিরিজ তারা উপভোগ করতে পারবে। কিন্তু বার্ড অব ব্লাড দেখে অনেকেই হতাশ হতে পারেন। বলছি না, এটা একদম বাজে একটি সিরিজ, তবে এটাকে খুব ভালো বলারও উপায় নেই। আমার মতে, ১০-এ ৬ রেটিং দেবার মতো সিরিজ এটি।
রিভু দাশগুপ্ত বার্ড অব ব্লাড পরিচালনা করতে গিয়ে যে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছেন, তা দর্শকরা দেখলেই বুঝতে পারবেন। যখন আপনি সিরিজটি দেখবেন, মনে হবে কিছু না কিছু মিসিং, থ্রিলারের পূর্ণ টেস্ট আপনি পাচ্ছেন না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, পরিচালক রিভু কিছু অসাধারণ অভিনেতাদের একত্র করেও তাদের সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। বিশেষ করে সিরিজের মূল অভিনেতা ইমরান হাশমিকে প্রকৃত গোয়েন্দার পরিবর্তে চলচ্চিত্রের ঠুনকো নায়কদের মতো দেখানো হয়েছে, হাশমির পোশাক নির্বাচনেও ভুল করেছেন বলে বোধ করি। দুর্বল স্ক্রিপ্টের দরুন প্রাণঘাতী দ্বন্দ্বকেও মিলিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে শেষদৃশ্যের চমৎকারিত্ব খুব একটা চমক বলে অনেকের কাছেই মনে হবে না– কেননা এতে নতুনত্বের কিছু নেই।
সিরিজের প্রথম সিজনের ৭টি ইপিজডের কাহিনি যদি বলতে বলা হয়, তাহলে ঘটনাটা এমন– পাকিস্তানে বেলুচিস্থানে চারজন ভারতীয় গোয়েন্দা তালেবানদের হাতে আটক হয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে চায় না। শেষমেশ কবির আনন্দ বেলুচিস্তানে ফেলে আসা তার দুঃসহ অতীতের ভুলকে শুধরাতে ছুটে যায় বেলুচিস্তান, সঙ্গী হিসেবে পায় বীর সিং এবং ইশা খান্নাকে। অবশেষে নানা কাহিনির আবর্তে শেষমেশ কবির আনন্দরা বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সহযোগিতায় তালেবানদের হাত থেকে রক্ষা করে ভারতের তিন গোয়েন্দাকে (একজনকে আগেই হত্যা করা হয়)।
পুরো সিরিজটি দেখার পরও অনেক কিছুই আপনার কাছে পরিষ্কার হবে না। যেমন, সাদিক শেখের কাছে পাঠানো তথ্যগুলো কী ছিল? অথবা, কেনই বা সাদিক শেখকে হত্যা করা হলো। একটি সিজনের মূল রহস্যগুলো সেই সিজনে সমাপ্ত না করলে দর্শকরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়। অথবা রহস্যগুলোর গভীরতা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত না করা হলে দর্শকের আগ্রহ কমে যায়।
এককথায় শাহরুখ খানের প্রযোজনায় “বার্ড অব ব্লাড” নামের সিরিজটিকে ঘিরে দর্শকদের মনে আশার যে সঞ্চার হয়েছিল তা তাদের তৃপ্ত করতে পারেনি। শুরুতে এটিকে রাজনৈতিক থ্রিলারধর্মী দাবি করা হলেও অ্যাকশনের আধিক্য এটিকে করে তুলেছে অ্যাকশনধর্মী। তবে কিছু বিষয় সিরিজটিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে– যেমন বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন ও তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার শক্তি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার গাফেলতি ইত্যাদি।
সিরিজটিতে পরিচালকের ব্যর্থতায় সকল চরিত্র তাদেরকে বিকশিত করতে পারেনি। ভিনিত কুমার সিং ভালো অভিনয় দক্ষতা দেখালেও তাকে বেশ বিক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুধুমাত্র সভিতা ধুলিপালাই ইশা খান্না চরিত্রে নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছে। হাশমির কথা আর নাই বললাম। এমন একজন মাস্টারক্লাস অভিনেতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারার দায় অবশ্যই হাশমির নয়।
বিলাল সিদ্দিকীর উপন্যাস “দ্যা বার্ড অব ব্লাড” থেকে এর কাহিনি নেওয়া হয়েছে। এখন কথা হলো দুর্বলভাবে শুরু হলেও এটি কি দ্বিতীয় সিজনে ঘুরে দাঁড়াবে আরও শক্তিশালীভাবে? নাকি বাকি গল্প না বলেই হারিয়ে যাবে নীরবে নিভৃতে। অবশ্য প্রথম সিজনে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে না পারা অনেক সিরিজই পরবর্তীতে খ্যাতনামা সিরিজে পরিণত হয়েছে, আবার অনেক সিরিজ মুখ থুবড়ে পড়েছে আজন্মের জন্য। এখন দেখার বিষয়, বার্ড অব ব্লাড দ্বিতীয় সিজনে আমাদের জন্য কী নিয়ে উপস্থিত হয়!