নয়ন মাহমুদ
কবি ও কথাসাহিত্যিক
নয়ন মাহমুদ

সব পেয়েছির দেশে: রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের নির্যাস

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

লেখকের সখেদে বেদনা জাগে, যদি কবি বইটি দেখে যেতে পারতেন! কেননা ততদিনে কবি লোকান্তরিত। আমরা যারা রবীন্দ্রনাথকে দেখিনি তাদের কাছে এই বই ফসিলের মতো। বারবার ঘেটে দেখতে ইচ্ছে করে, চেখে চেখে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের নির্যাস পেতে সাধ জাগে। যদিও এ কালে রবীন্দ্র বিরোধীতা একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে মন্তব্য করা খানিকটা মুশকিল। তবে মনে রাখা দরকার যে, রবীন্দ্রনাথের প্রভাবমুক্ত হয়ে লেখার প্রথম সূত্রপাত যিনি ঘটান, তিনি কিন্তু স্বয়ং বুদ্ধদেব বসু। তার কাছে রবীন্দ্রনাথ কোনো বিরোধী শক্তি নন, বরং তারা পরস্পর সমগোত্রীয় স্বাতন্ত্র্য আলাদা দুই সহযাত্রী, যারা বাংলা সাহিত্যে এসে পরস্পর একত্রে মিশে যান।

বুদ্ধদেব বসুর গদ্য অনবদ্য। শব্দ প্রয়োগে সচেতন প্রয়াস, কাব্যিক মনন, চিন্তাজগত জুড়ে আধুনিকতা, রবীন্দ্রনাথের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা, শান্তিনিকেতনের আবহে গুরুদেবের উপস্থিতি: সবমিলিয়ে ‘সব পেয়েছির দেশে’ বইটি অনন্য এবং সুখপাঠ্য।

‘শান্তিনিকেতন’ ও ‘রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক শিরোনামে বইটি দু্ই খণ্ডে বিভক্ত। শান্তিনিকেতনের প্রাকপর্বে আছে ১৯৩৮ সালের স্মৃতিচারণ এবং একটি ছবি। শান্তিনিকেতনে শ্যামলীর সম্মুখে তোলা ছবিটিতে আছেন সমর সেন, বুদ্ধদেব বসু, রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসুর কন্যা, প্রতিভা বসু এবং কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। বইটি জুড়ে আছে– জীবন কিনারে এসে ঠেকা রবীন্দ্র সান্নিধ্যে কাটানো কিছু মুহূর্ত, আতিথেয়তা, সংসার এবং শিল্পী মনের বিরোধ, রাজনীতি বিমুখতার সুপ্রসন্ন প্রতিচ্ছবি, তুচ্ছ কিছু ঘটনা যার সঙ্গে লেখকের আন্তরিকতা মিশে হয়ে উঠেছে অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ, আছে কবিগুরুর গান ও ছবির ওপর আলোকপাত। সূক্ষ্ণ প্রকৃতি বর্ণনায় অপরূপভাবে ফুটে ওঠে গ্রীষ্ম, বর্ষা, কোনার্ক, শ্যামলী, রতনকুঠি। বইটির রচনাকাল ১৯৪১ এবং বইটি উৎসর্গ করা হয় অমিয় চক্রবর্তীকে। শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন লেখক বইটি লেখার পরিকল্পনা করেন এবং কলকাতায় ফিরে এসে শুভস্য শীঘ্রম লিখে ফেলেন ‘সব পেয়েছির দেশে’।

টলস্তয় ও গ্যেটের মত মহান প্রতিভা চোখের সামনে জাজ্বল্যমান, যেন স্বর্গীয় অলৌলিক কোনো সত্তা রবীন্দ্রনাথ, যাকে ঘিরে গড়ে ওঠে শিল্প ও জীবনের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সারল্য এবং যাকে কেবল ভক্তির আসনেই বসানো যায়। বইয়ের শেষে আছে ভ্রমণ শেষে কবিগুরুর পাঠানো ০৪/০৬/৪১ তারিখের একটি চিঠি। মূলত ব্ইটি ভ্রমণ কাহিনীর এক চমৎকার আলেখ্য।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu