দর্পণ ডেস্ক
একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাগাজিন। শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক ম্যাগাজিন দর্পণ। ২০১৯ সালে ব্যতিক্রমধর্মী ম্যাগাজিন দর্পণ তার যাত্রা শুরু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দর্পণ "গল্পবাজ" ম্যাগাজিন আত্তীকরণ করে।
দর্পণ ডেস্ক

কবিতায় এপার ওপার-৫: ভিন্ন ভিন্ন স্বর, ভাবনা ও মোহে সন্নিবেশিত সংকলনগ্রন্থ

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

সাদেক সরওয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘কবিতায় এপার ওপার-৫’। কলকাতার মোহরকুঞ্জে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বইমেলা ২০১৯’-এ ‘কবিতায় এপার ওপার’-এর পঞ্চম সংকলন চলে এসেছে বইয়ের স্টলে। থাকবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া বইটি বাংলাদেশে পাওয়া যাবে বইচই.কম ওয়েবে।

দুই বাংলার উদীয়মান কবিদের এক সুতোয় গাঁথতে যে বিশেষ উদ্যোগ সাদেক সরওয়ার নিয়ে চলেছেন তা প্রশংসনীয়। সংকলনটি শুধু দুই বাংলার মাঝে কবিদের সেতুবন্ধন তৈরির জন্য করা তাও নয়, নবীন কবিদের উৎসাহ জাগাতে সংকলনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বোধ করি।

শুরু থেকেই কবিতার এপার ওপার সংকলন গ্রন্থের সম্পাদক বলে আসছেন, তার প্রয়াস ছিল শুধু দুই বাংলার তরুণ কবিদের একটি কাব্য কাননে একত্রিত করা– যেখানে তারা কবিতার শব্দগুলোকে ফুলের মতো ফুটিয়ে তুলতে পারবে স্বাচ্ছন্দ্যে! পঞ্চম সংকলনটি প্রকাশিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে, কিছুটা হলেও হয়তো তিনি তা পেরেছেন। বিবেচনার ভারটি যদিও সম্পূর্ণ পাঠকের উপর, তারপরও দীর্ঘ সময় ধরে কবিতার এমন সংকলন চালিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয় একথা যে কেউ স্বীকার করে নেবেন।

সম্পাদক সাদেক সরওয়ার, কবিতায় এপার ওপার

সংকলনটি পঞ্চম সংস্করণের সূচিপত্রে চোখ বুলালেই আপনি দেখতে পারবেন, এতে এমন কিছু লেখক আছেন, যাদের লেখা প্রথমবার বইয়ের মলাটে পাঠকের কাছে পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে যে জিনিসটা হবে সেটা হলো, সংকলনটি তাদের স্বপ্ন দেখার পরিসর ও আত্মবিশ্বাস একটু হলেও বৃদ্ধি করবে– যেটাই হয়ত পরবর্তীতে একজন উন্নত লেখক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

‘কবিতায় এপার ওপার-৫’ বইটিতে রয়েছে দুই বাংলা মিলিয়ে ৫৪ জন কবির ১০৫টি কবিতা। নতুনদের অনুপ্রেরণা প্রদানের জন্য সংকলনটিতে লেখা দিয়েছেন বর্তমান সময়ের পরিচিত কবিগণ। বাংলাদেশ থেকে রয়েছেন ওয়াহিদ ইবনে রেজা, ইমরান মাহফুজ, অনিন্দ্য টিটো এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে অর্পিতা সরকার, রেজমান, অনুব্রতা গুপ্তসহ অনেকে। এছাড়াও তরুণদের মধ্যে রয়েছেন তনময় শাহরিয়ার, আকেল হায়দার, অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য, অরুণাশীষ সোম, অর্কোপল দত্ত, ঋত্মিক বারুই, সাকিব রহমান, সোনিয়া ইতি, সোনালী নাগ, প্রসেনজিৎ মজুমদার, জামসেদ নাজিম, মিঠা মামুন, মাসুদ, অভিষেক দাস, অরিজিৎ বাগচী, সুদেষ্ণা ব্যানার্জী, শুক্লা সাহা তিথি, মোনালিসা নন্দী, সব্যসাচী চ্যাটার্জী, সহেলী রায়, শুভঙ্কর দেবসহ প্রমুখ নবীন কবি যাদের কাব্যের সুললিত ভঙ্গিমায় সংকলনটি হয়ে উঠেছে অনন্য সাধারণ।

এ সময়ের সার্থক চলচ্চিত্র নির্মাতা, কবি হাসিবুর রেজা কল্লোল বইটির ভূমিকায় বলেছেন– কবিতায় এপার ওপারের মতো বই নিয়মিত প্রকাশ খুবই সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ বলেই আমি বোধ করি।

একথা একেবারে মিথ্যে নয়। নিয়মিত লিটলম্যাগকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সংকলনের ভূমিকাও সাহিত্যে যে নেহাত কম নয় একথা অনস্বীকার্য।

অপর দিকে দুই বাংলায় জনপ্রিয় কবি রুদ্র গোস্বামীও বইটির মুখবন্ধে বলেছেন– ‘কবি’ আসলে একটি আশ্চর্য সুন্দর বোধযুক্ত পোশাক। ‘কবি’ পোশাকটি থাকে মানুষের মনে। তাই আমরা পোশাকটি দেখতে পাই না। যা দেখা যায় না তার নতুন পুরনো বলে কিছু নেই। মন কখনো নবীন অথবা প্রবীণ হতে পারে না। কবিও নবীন অথবা প্রবীণ নন।

রুদ্র গোস্বামীর এই কথা নিশ্চয়ই কবিদের নতুনভাবে কবিতা এবং কবিত্বকে নিয়ে ভাবতে উৎসাহ দেবে। কবিতা যে শেষ হয়ে যায়নি, কবিতার বই বাজারে বিক্রি কম হচ্ছে বলে কবি বা কবিতার মূল্য নেই, এই বোধ থেকে কবিদের বের হয়ে আসার যে চেতনার রসদ– তা এই সংকলন থেকে নবীন কবিরা নিতে পারেন।

সংকলনটির কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রচলিত অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, কারও কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে প্রেম। কারও কারও লেখার মূলভাব হিসেবে উঠে এসেছে দিন বদলের চেতনা। সব মিলিয়ে এই কাব্যসংকলনটি পড়ে একইসাথে বিভিন্ন অনুভূতির মাঝে একাত্ম হয়ে যেতে পারবেন পাঠক। এই যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা, স্বর, মোহের মধ্যে নিবিষ্ট হবার আনন্দ তা অনেক পাঠকের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়; একজন পাঠক নির্দিষ্ট করে বুঝতে পারে তাকে কার স্বর ডাকে, কার ছন্দ তাকে প্রচ্ছন্ন করে– একটি সংকলনের উদ্দেশ্য এটিই। ‘কবিতার এপার ওপার-৫’ বইটিকে এই হিসেবে সফলই বলতে হবে।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu