এ বছরের অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত একটি ফিল্ম জোকার। এটি নিয়েই আজকে কথাবার্তা হবে। প্রথমেই বলি– এই ফিল্মে কী এমন আছে যার জন্য আপনার এই ফিল্ম কোনো অবস্থাতেই মিস করা উচিৎ নয়। বিশেষ করে ডিসি ফ্যানদের তো নয়ই।
এ কথা আপনারা সবাই জানেন বেশ কয়েক বছর ধরে ডিসি তার ইউনিভার্সকে ঠিকভাবে উপস্থিত করতে পারছে না। মাঝে মাঝে ডার্ক নাইটের মতো দমদার ডার্ক ফিল্ম উপহার দিয়েছে, আবার ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যানের মতো হাস্যকর ফিল্ম। এই ইউনিভার্সে সুইসাইড স্কোয়ার্ড, ওন্ডারওম্যানের মতো এভারেজ ফিল্মও এসেছে। আবার এরপর আমরা একুয়াম্যান এবং শেজাম ফিল্ম দেখতে পায়। যেটা দেখে মনে হয়নি যে এটা ডিসি ইউনিভার্সের ফিল্ম। কেননা এটা ছিলো কালারফুল ফিল্ম। এটা দেখে ডিসি ফ্যানরা ভেবেছিল হয়তো ডিসি ইউনিভার্স থেকে ডার্ক শব্দটা উঠে যেতে পারে। কিন্তু যদি জোকার ফিল্মের কথা বলি– তাহলে এটা একটি ডার্ক ফিল্ম। হয়তো সামনের দিনে এমন হতে পারে ডিসি ফ্যানদের জন্য কালার এবং ডার্ক দুটি ইউনিভার্স বানাবে।
এবার যদি জোকার ফিল্মের কথা বলি, মানুষ মুক্তির আগে জোকার ফিল্ম নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করছিলো– এই ফিল্ম অনেক বেশি ভয়ংকর, এই ফিল্ম বাচ্চাদের নিয়ে দেখার মতো না। আমার মনে হয় না, ফিল্মে এমন কিছু আছে। যারা হলিউডের ফিল্ম দেখতে যায় শুধু অ্যাকশনের জন্য এই ফিল্ম তাদের খুব একটা পছন্দ হবে না এবং তারা খুব একটা বুঝতেও পারবে না, একথা ঠিক। এই ফিল্ম সব থেকে বেশি পছন্দ হবে তাদের যারা ডার্ক ফিল্ম দেখতে পছন্দ করে। যদি বলি– এই ফিল্ম এই বছরের সব থেকে সেরা সাইকোলোজিক্যাল সুপারহিরো ফিল্ম, তাহলেও সেটা কোনোভাবেই ভুল হবে না। সুপারহিরো ফ্যানদের কোনো অবস্থাতেই এই ফিল্ম মিস করা উচিৎ নয়। সুপারহিরো ফিল্মে যে পরিমাণে ভিএফএক্স ব্যবহার করা হয়, এই ফিল্মে ততটা দেখতে পাবেন না। ফিল্মের পরিচালক টড ফিলিপস চেষ্টা করেছেন এই ফিল্মকে যতটা পারা যায় রিয়েলিস্টিক করতে। এটা অন্য সব সুপারহিরো অথবা সুপারভিলেন সিনেমার মতো নয় একথা হয়তো এতক্ষণে আপনারা বুঝে গেছেন।
এই ফিল্মের মূল ক্যারেক্টর ডিসি কমিক্সের জোকার থেকে নেওয়া হলেও ফিল্মের প্লট কোনো কমিকবুক থেকে নেওয়া হয়নি। এটাই একমাত্র ফিল্ম যেটা জোকারের অরিজিন বর্ণনা করেছে– যেটা দর্শকদের স্বভাবতই আকর্ষিত করবে। কেননা বছরের পর বছর যে সুপারভিলেন আমরা দেখে আসছি তার অতীত সম্পর্কে জানার আগ্রহ সবারই আছে। ফিল্মটি দেখে বোঝা যায় জোকার কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তাই দেখার পর যদি বলা হয় ডিসি ইউনিভার্সের সব থেকে ভয়ংকর ভিলেন কে? তাহলে অনেকেই একবাক্যে বলে উঠতে পারে “জোকার”। যদি জোয়াকুইন ফিনিক্সের পারফর্মেন্সের কথা বলি– তাহলে জোয়াকুইন ফিনিক্স এই চরিত্রে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। এই দমদার একটিংয়ের জন্য এ বছরের একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে তো অবশ্যই জোয়াকুইন ফিনিক্সের নাম দেওয়া হবে। হতে পারে জোকার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আবারও অস্কার পেয়ে যাবে এর অভিনেতা।
এখন আসা যাক ফিল্মের পরিচালনার দিকে, এককথায় ফিল্মের ডিরেক্টর যে ডিরেকশন করেছেন, সেটার কোনো জবাব হয় না। একটি সুপারভিলেন চরিত্রকে কীভাবে বাস্তবতার সাথে মেলাতে হয়, জোকার ফিল্ম না দেখলে তা বলা সম্ভব নয়। এটা সম্ভব হয়েছে মূলত ফিল্মের অসাধারণ স্ক্রিপ্টের জন্য।
এখন যদি ফিল্মের প্লটের কথা বলি, তাহলে আপনাকে বলব, প্লটের কথা না শুনতে। যেহেতু আপনি এই ফিল্মের ট্রেইলার দেখেছেন, আপনাকে আর প্লট নিয়ে ভাবা উচিৎ নয়। সোজাসুজি হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখে আসুন। আর ফিল্ম দেখে বের হবার সময় আপনার মাথার মধ্যে একটা কথায় শুধু ঘুরপাক খাবে যে, আপনি এটা কী দেখলেন! আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না এই প্লটটি এমন হতে পারে। আর যদি তুলনার কথা বলি তাহলে সবাই মার্ভেল আর ডিসির মধ্যে তুলনা করতে পছন্দ করে। প্রকৃতপক্ষে এই সিনেমাটি মার্ভেল ফ্যানদের পছন্দ হবার কথা না। কারণ এই সিনেমাটি একদিকে কালারফুল নয়, আবার মারভেলের মতো অ্যাকশন দৃশ্যও নেই। কিন্তু যদি নিরপেক্ষভাবে তুলনা করা হয়, তাহলে বলতেই হবে মার্ভেলের কাছে জোকার ফিল্মের সাথে তুলনা করার মতো কোনো মাস্টারপিস নেই। তাই আমার মন্তব্য হলো কালারফুল না হওয়া সত্ত্বেও মার্ভেল ফ্যানদের এই সিনেমাটি অবশ্যই দেখা উচিৎ।
আপনারা খেয়াল করেছেন ট্রেইলারে ছোটো ব্রুস ব্যানারকে দেখানো হয়েছে। অনেকের মতে এটা ব্যাটম্যান ইউনিভার্সে সংযোগের একটা চেষ্টা। হয়তো জোকার ফিল্ম ব্যাটম্যান ইউনির্ভাসেরই ফিল্ম। তাছাড়া এটাও শোনা যাচ্ছে জোকার ফিল্ম ডিসিইইউ-এরই একটি অংশ। যতদিন পর্যন্ত ডিসি অফিশিয়ালি কিছু না বলছে, ততদিন তো কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না। আমার মতে যদি জোকার ফিল্ম ডিসিইইউ-এর অংশ হয় তাহলে তো এর কোনো জবাবই নেই, এটা অনেক খুশির একটা খবর। আর হ্যাঁ, যদি এই দৃশ্যটা সিনেমায় না ব্যবহার করা হতো, তবুও সিনেমাটির কোনো সমস্যাই হতো না, এখন প্রশ্নটা থেকেই যাবে, কেন এই দৃশ্যের অবতারণা? এটা জোকারের সোলো ফিল্ম। এই ফিল্মে গোথাম সিটিতে জোকারই হিরো। এটা কেন বলছি, সেটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখতে হবে। এটা এমন একটা সিনেমা যেটাকে কোনো অবস্থাতেই স্পয়লার করা উচিৎ নয়। আর আমিও চাই না আমার এই রিভিউয়ের জন্য আপনার ফিল্ম দেখার মজাটাই নষ্ট হয়ে যাক। তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করব, এই ফিল্মকে কম্পিউটার বা মোবাইল ক্রিনে দেখে আপনি মজা নেবার চেষ্টা না করে হলে গিয়ে দেখুন, যাতে ফিল্ম ভালো একটি ব্যবসা করতে পারে এবং পরবর্তিতে আমরা এমন সিনেমা আরও উপহার পেতে পারি। কেননা ডিসি এখন যে ধরনের ফিল্ম বানাচ্ছে তাতে আমার মনে হয় ডিসি ইউনিভার্সে ভবিষ্যতে এমন দমদার আরও ফিল্ম আমরা দেখতে পাবো।
সবশেষে একটা কথায় বলতে চাই, সেটা হলো জোকার শব্দটার অর্থ যাই হোক না কেন, ২০১৯-এর জোকার ফিল্মটি কখনোই হাস্যকর কিছু নয়। জোকারের জীবনের গভীরতম দহন এই ফিল্মে উঠে এসেছে। কেউ যদি সুপারভিলেন জোকারকে সিনেমার শেষে নায়ক ভেবে বসে থাকে, তবুও এখানে পরিচালকের কিছু করার নেই। আবার জোকার থেকে উৎসাহিত হয়ে অপরাধকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করারও কোনো মানে নেই। জোকার একটি ফিল্ম, অন্যান্য সিনেমার মতো এটাও আমরা নির্দ্বিধায় উপভোগ করতে পারি।
This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.