থ্রিলার জনরাটি সবসময়ই দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। এটি এমন এক ধরনের সিনেমা যা দর্শকদের অজানা উত্তেজনার মধ্যে রেখে, এক মুহূর্তও বিশ্রাম নিতে দেয় না। থ্রিলারের প্লট সাধারণত রহস্যময়, টুইস্টে ভরপুর, এবং মনের গভীরে ঢুকে যাওয়া সাইকোলজিক্যাল দিকগুলো নিয়ে খেলে। এখানে আমরা এমন ১০টি হলিউড থ্রিলার সিনেমার তালিকা দিয়েছি, যা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে এবং আজও বিশ্বব্যাপী শ্রেষ্ঠ থ্রিলার সিনেমা হিসেবে পরিচিত।
ডেভিড ফিঞ্চারের পরিচালিত এই ক্রাইম থ্রিলার এমন একজন সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে, যে তার শিকারদের সাতটি মহাপাপের উপর ভিত্তি করে হত্যা করে। ডিটেকটিভ সোমারসেট (মরগান ফ্রিম্যান) এবং ডিটেকটিভ মিলস (ব্র্যাড পিট) একত্রে কিলারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। টানটান উত্তেজনা এবং শেষ মুহূর্তের টুইস্ট এই সিনেমাটিকে কালজয়ী করে তুলেছে। সিনেমার শেষে ‘What’s in the box?’ দৃশ্যটি বিশেষভাবে আলোচিত।
জনাথন ডেম পরিচালিত এই সিনেমা হ্যানিবাল লেক্টার নামে এক ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার এবং এফবিআই এজেন্ট ক্লারিস স্টার্লিংয়ের (জোডি ফস্টার) মধ্যে চলা মানসিক খেলা নিয়ে তৈরি। লেক্টারের সাথে স্টার্লিংয়ের সংলাপগুলো আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে। অ্যান্থনি হপকিন্সের অসাধারণ অভিনয় এই সিনেমাকে শ্রেষ্ঠত্বে পৌঁছে দিয়েছে। সিনেমাটি থ্রিলার ও সাইকোলজিক্যাল হররের নিখুঁত মিশ্রণ।
আলফ্রেড হিচককের পরিচালিত এই সিনেমা আজও থ্রিলার ও হরর জনরায় অন্যতম প্রধান স্থান ধরে রেখেছে। নরম্যান বেটস (অ্যান্থনি পারকিন্স) এবং তার রহস্যময় ‘মা’ চরিত্র দর্শকদের মনজুড়ে থাকে। বিখ্যাত শাওয়ার সিনটি সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম সেরা দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি। “Psycho” শুধুমাত্র থ্রিলার নয়, সাইকোলজিক্যাল হররের অন্যতম প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
ক্রিস্টোফার নোলানের এই সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার একটি অত্যাধুনিক ও জটিল প্লট নিয়ে তৈরি। সিনেমার গল্প ড্রিম হ্যাকিংয়ের উপর ভিত্তি করে যেখানে বাস্তব এবং স্বপ্নের সীমারেখা মুছে যায়। ডম কাব (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও) এবং তার দলের সময়জটিত মিশন, ধাঁধার মতো কাঠামো এবং সিনেমার অসাধারণ ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট দর্শকদের মুগ্ধ করে।
এই ক্রাইম থ্রিলার মূলত একটি দল অপরাধীর গল্প যেখানে কে আসল অপরাধী তা দর্শকদের শেষে এসে বুঝতে দেয়। কেভিন স্পেসির অভিনীত কাইসর সোসে চরিত্রটি সিনেমার সবচেয়ে বড় টুইস্ট। সিনেমাটি অস্কার বিজয়ী এবং আজও থ্রিলার জনরায় তার অসাধারণ জায়গা ধরে রেখেছে।
ডেভিড ফিঞ্চারের আরেকটি মাস্টারপিস, যা গিলিয়ান ফ্লিনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমার গল্প এক নিখোঁজ স্ত্রীর (রোজামুন্ড পাইক) এবং তার স্বামী (বেন অ্যাফ্লেক) সম্পর্কিত, যেখানে সবকিছুই রহস্যময়। রোজামুন্ড পাইকের অভিনয় এবং প্লটের চমৎকার টুইস্টগুলো এই সিনেমাকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে আসে।
চাক পালানিকের উপন্যাস অবলম্বনে বানানো এই থ্রিলারে একজন নামহীন নায়ক (এডওয়ার্ড নর্টন) এবং তার বন্ধু টাইলার ডার্ডেন (ব্র্যাড পিট) এর গল্প। সিনেমাটি সমাজের প্রথাগত নিয়মগুলোকে প্রশ্ন করে এবং ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে তৈরি। এটি সিনেমা ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি।
ডেনিস ভিলেনিউভের পরিচালিত এই সিনেমা একজন বাবার (হিউ জ্যাকম্যান) তার মেয়েকে উদ্ধারের প্রচেষ্টার গল্প নিয়ে তৈরি। মেয়ের অপহরণের পর বাবা নিজেই অপরাধী হয়ে ওঠে। রহস্য, সাসপেন্স এবং নৈতিক দোটানায় পূর্ণ এই সিনেমাটি অত্যন্ত গাঢ় এবং দর্শকদের মনকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে।
স্টিগ লারসনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা একটি তদন্ত এবং একটি অন্ধকার পারিবারিক রহস্যের গল্প বলে। লিসবেথ সালান্ডার (রুনি মারা) চরিত্রটি তার অসাধারণ দক্ষতা ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের জন্য আজও স্মরণীয়।
মার্টিন স্কোরসেজির পরিচালিত এই সিনেমা একটি মানসিক হাসপাতালের রহস্যময় ঘটনা নিয়ে তৈরি। টেডি ড্যানিয়েলস (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও) নামের একজন ডিটেকটিভ হাসপাতালের রহস্য উদঘাটনের জন্য আসে, কিন্তু সে নিজেই মানসিক অস্থিতিশীলতায় ভুগতে থাকে। সিনেমার প্লটের টুইস্ট এবং সাইকোলজিক্যাল টেনশন এটি একটি অনন্য থ্রিলারে পরিণত করেছে।
থ্রিলার জনরার সিনেমাগুলো সবসময়ই দর্শকদের মনকে টানতে এবং উত্তেজনা ধরে রাখতে সক্ষম। উপরের তালিকায় উল্লেখিত সিনেমাগুলো শুধু তাদের সময়েই সাড়া ফেলেনি, বরং আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এই সিনেমাগুলো রহস্য, সাসপেন্স, এবং টুইস্টে ভরপুর, যা একবার দেখলে সহজে ভুলতে পারবেন না।