মুভি ফ্রিক তিথী

সর্বকালের সেরা ১০ অ্যাকশন সিনেমা

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

অ্যাকশন সিনেমা জগতের এমন এক বিশেষ ধারা, যা শুরুর দিন থেকেই বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মন ছুঁয়ে এসেছে। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই, চমকপ্রদ স্টান্ট, এবং অভূতপূর্ব বিশেষ প্রভাবের সমন্বয়ে অ্যাকশন সিনেমাগুলো সবসময়ই একটি বিশেষ আকর্ষণ ধরে রেখেছে। সময়ের সাথে সাথে অ্যাকশন সিনেমাগুলোর কাহিনিগুলো আরও উন্নত হয়েছে, এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বিশেষ প্রভাবও আরও নিখুঁত হয়েছে। এখানে তুলে ধরা হলো সর্বকালের সেরা ১০টি অ্যাকশন সিনেমা, যা প্রত্যেক অ্যাকশনপ্রেমীর দেখা উচিত।

১. Die Hard (1988)

পরিচালক: জন ম্যাকটিয়ার্নান
পটভূমি: জন ম্যাকক্লেন, একজন নিউ ইয়র্ক পুলিশ অফিসার, লস অ্যাঞ্জেলসের নাকাতোমি প্লাজায় ক্রিসমাসের রাতে একটি পার্টিতে যোগ দিতে আসেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় যখন একদল সন্ত্রাসী বিল্ডিং দখল করে এবং উপস্থিত সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। ম্যাকক্লেন নিজের বুদ্ধিমত্তা, সাহস, এবং কৌশলের মাধ্যমে একাই এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং একের পর এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন।
কেন দেখবেন: “Die Hard” অ্যাকশন সিনেমার একটি অবিস্মরণীয় ক্লাসিক। সাসপেন্স, থ্রিল, এবং নির্ভীক হিরোর লড়াইয়ের অসাধারণ মিশ্রণে এই সিনেমাটি অ্যাকশন ঘরানার জন্য একটি মানদণ্ড তৈরি করেছে। জন ম্যাকক্লেন চরিত্রটি একজন সাধারণ মানুষ, যার সঙ্কল্প তাকে অনন্য করে তোলে।


২. Mad Max: Fury Road (2015)

পরিচালক: জর্জ মিলার
পটভূমি: একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে পানি এবং জ্বালানির জন্য এক শাসক ইমোর্টান জো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ইম্পেরিয়েটর ফিউরিওসা, যিনি শাসকের হাত থেকে কয়েকজন নারীকে মুক্ত করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চান। তার সাথে যোগ দেয় ম্যাক্স, এক দুঃসাহসিক যোদ্ধা, এবং তারা একসাথে শাসকের ভয়ঙ্কর বাহিনীর মোকাবেলা করে।
কেন দেখবেন: “Mad Max: Fury Road” শুধু অ্যাকশন সিনেমার ইতিহাসে নয়, বরং চলচ্চিত্র ইতিহাসেই এক মাইলফলক। এই সিনেমার ভিজ্যুয়াল স্টাইল, দুর্দান্ত কার চেজ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাকশন দৃশ্যগুলো একে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।


৩. The Dark Knight (2008)

পরিচালক: ক্রিস্টোফার নোলান
পটভূমি: গোথাম সিটি ক্রাইমের দ্বারা আক্রান্ত, এবং এর মধ্যে উদ্ভব হয় এক রহস্যময় এবং মানসিকভাবে বিপজ্জনক অপরাধী, জোকারের। ব্যাটম্যান তার শত্রুদের ধ্বংস করতে এবং গোথামকে রক্ষা করতে সবকিছু বাজি রাখে। কিন্তু জোকারের অনিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ব্যাটম্যানের নীতির পরীক্ষায় ফেলে দেয়।
কেন দেখবেন: ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালনায় “The Dark Knight” অ্যাকশন থ্রিলার এবং মনস্তাত্ত্বিক নাটকের একটি অদ্বিতীয় মিশ্রণ। হিথ লেজারের জোকার চরিত্রটি সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সিনেমার গভীরতাকে আরও বৃদ্ধি করেছে।


৪. Terminator 2: Judgment Day (1991)

পরিচালক: জেমস ক্যামেরন
পটভূমি: সারা কনর তার ছেলেকে ভবিষ্যতের রোবটিক যুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে মরিয়া। এই সময়ে, একটি শক্তিশালী টার্মিনেটর পাঠানো হয় তাদের ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু একটি নতুন মডেলের টার্মিনেটর, টি-৮০০, সারা এবং তার ছেলেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
কেন দেখবেন: “Terminator 2” সাই-ফাই এবং অ্যাকশনের যুগান্তকারী সিনেমা। এর বিপ্লবী ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট এবং অনবদ্য অ্যাকশন দৃশ্য একে সেরা অ্যাকশন সিনেমাগুলোর মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।


৫. Gladiator (2000)

পরিচালক: রিডলি স্কট
পটভূমি: ম্যাক্সিমাস, এক সময়ের সম্মানিত রোমান জেনারেল, তার পরিবারের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এবং ক্ষমতার লড়াইয়ে অংশ নিতে গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে ফিরে আসে। সম্রাট কমোডাসের বিরুদ্ধে তার লড়াই রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়কে চিত্রিত করে।
কেন দেখবেন: “Gladiator” সিনেমার বিশাল স্কেল, ভিজ্যুয়াল, এবং নাটকীয় অ্যাকশন দৃশ্যগুলো একে একটি ঐতিহাসিক মাষ্টারপিসে পরিণত করেছে। রাসেল ক্রোর শক্তিশালী অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।


৬. The Matrix (1999)

পরিচালক: ওয়াচোস্কি ব্রাদার্স
পটভূমি: নিও, একজন হ্যাকার, আবিষ্কার করেন যে তার বাস্তবতা আসলে একটি কম্পিউটার-নির্ধারিত সিমুলেশন। মানুষের মস্তিষ্ককে দখলে রেখে একটি রোবটিক সভ্যতা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিও এবং তার দল এই সিস্টেম থেকে মানবতাকে মুক্ত করতে লড়াই করে।
কেন দেখবেন: “The Matrix” একটি বিপ্লবী অ্যাকশন সিনেমা, যা একসাথে সাই-ফাই, মার্শাল আর্ট, এবং ভিজ্যুয়াল ইফেক্টকে এমনভাবে মিশিয়েছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। সিনেমার ‘বুলেট টাইম’ এবং নতুন ধরনের স্টান্ট একে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।


৭. John Wick (2014)

পরিচালক: চ্যাড স্টাহেলস্কি
পটভূমি: জন উইক, এক প্রাক্তন হিটম্যান, তার প্রিয় কুকুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে এক অপরাধী গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে একক যুদ্ধ ঘোষণা করে।
কেন দেখবেন: “John Wick” এর স্টাইলিশ অ্যাকশন এবং কিয়ানু রিভসের চরিত্রে অভিনয় সিনেমাটিকে এক অনন্য আইকন বানিয়ে তুলেছে। বাস্তবসম্মত ফাইট কোরিওগ্রাফি এবং স্টান্টের জন্য সিনেমাটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।


৮. Inception (2010)

পরিচালক: ক্রিস্টোফার নোলান
পটভূমি: ডমিনিক কবে, একজন দক্ষ স্বপ্ন চোর, স্বপ্নের মধ্যে প্রবেশ করে মানুষের অচেতন মন থেকে গোপন তথ্য চুরি করেন। তবে তার সবচেয়ে কঠিন মিশন হয় যখন তাকে এক ধনী ব্যবসায়ীর মনে একটি ধারণা রোপণ করতে বলা হয়।
কেন দেখবেন: “Inception” এর জটিল প্লট এবং ধারণার জন্য বিখ্যাত। এতে অসাধারণ অ্যাকশন দৃশ্যের পাশাপাশি এক অনন্য কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের এক অন্যরকম সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা দেয়।


৯. Raiders of the Lost Ark (1981)

পরিচালক: স্টিভেন স্পিলবার্গ
পটভূমি: প্রত্নতত্ত্ববিদ ইন্ডিয়ানা জোনসকে আদিম ধর্মীয় নিদর্শন খুঁজে বের করতে পাঠানো হয়। জার্মান নাৎসিদের সাথে তার সংঘর্ষ, দুঃসাহসিক অভিযান এবং বিপদসংকুল পরিস্থিতি সিনেমাকে ভিন্ন মাত্রা দেয়।
কেন দেখবেন: ইন্ডিয়ানা জোনসের দুঃসাহসিক অভিযান এবং অ্যাডভেঞ্চার মিশ্রিত অ্যাকশন দৃশ্য এই সিনেমাকে সর্বকালের সেরা অ্যাকশন সিনেমাগুলোর মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।


১০. Casino Royale (2006)

পরিচালক: মার্টিন ক্যাম্পবেল
পটভূমি: জেমস বন্ড তার প্রথম মিশনে অংশ নেয়, যেখানে তাকে বিপজ্জনক জুয়া খেলার মাধ্যমে শত্রুদের পরাজিত করতে হয়। একই সাথে, সে প্রেম এবং বিশ্বাসঘাতকতার মুখোমুখি হয়।
কেন দেখবেন: ড্যানিয়েল ক্রেগের দুর্দান্ত অভিনয়, উচ্চমানের অ্যাকশন এবং উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যগুলো একে আধুনিক বন্ড সিনেমার সেরা উদাহরণে পরিণত করেছে।

অ্যাকশন সিনেমাগুলোতে শুধু উত্তেজনা ও শারীরিক শক্তির প্রদর্শন নয়, বরং দর্শকদের মনস্তাত্ত্বিক দিক এবং নৈতিকতার প্রশ্নও তুলে ধরা হয়। উপরোক্ত ১০টি সিনেমা অ্যাকশন সিনেমার ইতিহাসে যুগান্তকারী হিসেবে স্বীকৃত, যা অ্যাকশনপ্রেমীদের জন্য অবশ্যই দেখার মতো।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu