ফিচার আর্টিকেল এমন এক ধরনের নিবন্ধ যেটা সাধারণ কোনো সংবাদ উপস্থাপনের নিয়মে লেখা হয় না, আবার সেটি সম্পাদকীয় নিবন্ধের মতো জটিল গদ্যের নিবন্ধও নয়। সাধারণত ফিচার আর্টিকেল বলতে সেই ধরনের নিবন্ধকে বলা হয়, যে নিবন্ধ সহজে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে, যা পাঠে মানুষ বিনোদন পায়। আসলে দু’চার কথায় ফিচার আর্টিকেলকে সঙ্গায়িত করা সম্ভব নয়। তাই আসুন ফিচার আর্টিকেলের বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে জেনে নিই—
ফিচার আর্টিকেল কী, এটা আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে হলে ফিচার আর্টিকেল এবং সংবাদের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানা প্রয়োজন—
১) ফিচার আর্টিকেলের তিনটি মূল অংশ থাকে: ভূমিকা, প্রধান অংশ (Body), সমাপ্তি বা উপসংহার।
২) লেখাটি লেখকের চিন্তা-চেতনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
৩) উপস্থাপনার ভঙ্গি চমকপ্রদ এবং ব্যতিক্রমী হতে পারে।
৪) এটা মাঝে মাঝে লেখকের ব্যক্তিত্ব, মনস্তত্ত্ব এবং বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
৫) এটি গল্প বলার মতো করে বর্ণনা করতে হয়, যাতে প্রধান চরিত্র হয়ে ওঠে লেখার বিষয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি। বলতে গেলে এই কি-ওয়ার্ড বা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ নিয়ে খেলা করাই একজন ফিচার লেখকের কাজ।
৬) উৎস উল্লেখ করে প্রয়োজনে উদ্ধৃতির ব্যবহার করা।
৭) ফিচার আর্টিকেলে যুক্তির প্রাধান্য থাকলেও মাঝে মাঝে ফিকশনের কিছু উপাদান লেখকের লেখার শৈলীর কারণে চলে আসতে পারে।
৮) এতে বিভিন্ন ছবি, চার্ট, ডায়াগ্রাম, চিত্র প্রভৃতি প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ফিচার আর্টিকেল সাধারণত মানুষের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে লেখা হয় যেটাতে কোনো ব্যক্তি, স্থান, জিনিস বা ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়। বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ফিচার আর্টিকেলকে অন্তত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়।
১) সংবাদের গভীরের সংবাদ: এটা চলতি কোনো খবরকে তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ভেতরের খবর বলে দেয় বা দেবার চেষ্টা করে।
২) ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত: বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য এবং তাদের সম্পর্কে বিভিন্নজনের উক্তি এতে স্থান লাভ করতে পারে।
৩) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: নতুন নতুন আবিষ্কার এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাঠকেরা এই শাখার লেখা পড়ে পেতে পারে।
৪) মানবিক নিবন্ধ: মানুষের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে এটা লেখা হয়। কখনো কখনো চলতি ঘটনার উপর ভিত্তি করে এটা লেখা হয়, আবার কখনো কখনো ইতিহাস বা ফিকশন থেকেও এর উপাদান চলে আসে।
৫) ঐতিহাসিক এবং সংস্কৃতি সম্পর্কিত: ঐতিহাসিক ঘটনা, ঐতিহাসিক স্থান, সংস্কৃতি, প্রচলিত রীতিনীতি এই বিভাগের লেখার বিষয়বস্তু।
৬) “কিভাবে” এবং “কি করতে হবে”: এটা অনেকটা শিক্ষামূলক ফিচার। এটা কোনো কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পাঠককে জ্ঞান দিয়ে থাকে।
৭) ব্যবসা সম্পর্কিত: এতে ব্যবসার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
৮) লাইফস্টাইল: ফ্যাশনের পরিবর্তন ও আমাদের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পাঠকেরা বরাবর উন্মুখ থাকে, তাই ফিচার লেখার এই বিভাগটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
৯) বিনোদন: সিনেমা, সিনেমার অভিনেতা, সঙ্গীত, শিল্পী ইত্যাদি হচ্ছে এই বিভাগের আলোচনার বিষয়।
১০) ভ্রমণ: দেশ-বিদেশে ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষের সাথে মানুষের ইন্টারেকশন হয়, যেটা পাঠককে আকৃষ্ট করে বিধায় এটিও ফিচারের একটি আকর্ষণীয় বিভাগ।
১) একজন মনোযোগী পর্যবেক্ষক।
২) বিশ্লেষণাত্মক মন থাকতে হয়।
৩) বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে।
৪) দ্রুত লিখতে পারে।
৫) পরিষ্কারভাবে তার বার্তা লেখায় উপস্থাপন করতে পারে।
৬) চিন্তা ও বিশ্লেষণগুলো বিশেষ ধরনের লিখনশৈলীর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারে।
৭) ভাষা নিয়ে খেলা করতে পটু হতে হয়।
১) লিখন প্রস্তুতি
২) লিখন
৩) সংশোধন
প্রথম খসড়া প্রস্তুত করার পূর্বে আপনাকে যা যা করতে হবে: পরিকল্পনা, গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্য সজ্জা। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের কোন টপিক বা শিরোনামের উপর লিখবেন এটা ঠিক করা। কী বলতে হবে এবং কিভাবে বলতে হবে এটাও চিন্তা করতে হবে।
এই ধাপে যা যা করতে হবে: টপিক বা লিখনের নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু, লিখনের থিম বা কাহিনিচিত্র ঠিক করতে হবে, নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গভীর দৃষ্টি দিতে হবে।
এই ধাপে যা যা পাওয়া যাবে: থিম বা কাহিনিচিত্র, লিখনের বিষয়বস্তু, লিখনের শিরোনাম।
আপনার পাঠকের জ্ঞানের গভীরতা কতটুকু এই বিষয়টা মাথায় রেখে লেখা শুরু করতে হবে। আগে খুঁজে বের করতে হবে পাঠক কোন ধরনের ফিচার পড়তে চায়? তারা কী বিনোদনের জন্য ফিচার পড়ে? তারা কী তথ্য জানার জন্য ফিচার পড়ে? এসকল বিষয়গুলো আগে জানতে হবে, কারণ এগুলো জানলে ফিচারটিকে আরও জীবন্ত করে তোলা সম্ভব হবে।
একটি ফিচারের তিনটি অংশ থাকে— ভূমিকা, প্রধান অংশ (Body) ও উপসংহার; একথা আগেই আমরা জেনেছি। এখন জানবো এই তিনটি অংশ সম্পর্কে।
ফিচার লেখার শুরুটা এমনভাবে হবে যেন পাঠক প্রথমেই লেখাটি পড়তে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। পুরো লেখার রহস্য ভূমিকা দ্বারা উপস্থাপন করতে হবে যেটা প্রধান অংশে নানা যুক্তি, তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে খণ্ডন করা হয়।
ফিচার লেখার সময় কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত পাঠকের সাথে পুরোটা সময় যাতে সংযুক্ত থাকা যায় এটা নিশ্চিত করতে হয়। ফিচারের প্রধান অংশে এটা করা সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা, এটি বর্ণনাত্মক। তাই প্রধান অংশে পাঠকের দৃষ্টি ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় পাঠকে প্রশ্ন করা হয় বা বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। এছাড়া উদ্ধৃতির সংযোজন প্রধান অংশের ভার কমিয়ে দেয়। লেখকের নিজস্ব বিশ্লেষণধর্মী মতামত পাঠককে লেখার সাথে আরও সন্নিবেশিত করে তোলে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বই, ম্যাগাজিন, নিবন্ধের সহযোগিতা নেওয়া লাগতে পারে। ফিচারের প্রধান অংশ শুধু তথ্য দিয়ে ভরিয়ে তুললেই নিবন্ধটি সুন্দর হবে এমন নয়; তথ্য উপস্থাপনের কৌশল ফিচার লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী দিক। কম ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যে ফিচার লেখক যত দক্ষতার সাথে লিখনশৈলীর মাধ্যমে সফলভাবে উপস্থাপন করতে পারবে সে তত ভালো ফিচার লেখক হয়ে উঠবে।
ফিচার লেখার শেষটা হতে হয় নিখুঁত। কারণ সমাপ্তির সৌন্দর্যের উপরই নির্ভর করে পাঠক আপনার লেখাটি পড়ে কতটুকু সন্তুষ্ট হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ফিচার লেখক তাদের নিজস্ব উপায় খুঁজে নেয়।
প্রথম খসড়া প্রস্তুত হবার পরে লেখাটি পাঠ করে দেখতে হবে বানান, বাক্যের গঠন, ভাষাশৈলী ইত্যাদি ঠিক আছে কি না। যদি ঠিক না থাকে তাহলে তার সংশোধন করতে হবে। এছাড়া যেসকল তথ্য উপস্থাপন করা হবে, সেগুলো সঠিক কি না সেটাও পুনরায় যাচাই করে দেখতে হবে।
সবশেষে বলা যায়, ফিচার লেখা অতিশয় জটিল কোনো কাজ নয় আবার সহজও নয়। একজন লেখক বা সাংবাদিক কিছুদিন তার অধ্যবসায় ধরে রেখে চেষ্টা করলেই একজন উন্নত ফিচার লেখক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।