যেহেতু আবেগবিহীন সময়ের মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই সম্পর্কটিকে অস্তিত্বের মুকুরে বিম্বান্বিত করা সম্ভব নয় সেহেতু উভয়ই সামর্থের শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টিত থাকেন স্ব-স্ব প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সেই আবেগগুলোকে অক্ষুণ্ণ রাখবার। পাশাপাশি জীবনস্রোতে বহমান সুখ, দুঃখের অনুভূতিগুলিকে যদি আমরা একটি নান্দনিক মাত্রায় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে একীভূত করে নিতে চাই, সেক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবীরূপে যে বিষয়টিকে আমাদের প্রথম শর্তেই আত্মস্থ করে নিতে হবে— সেটি হলো শিক্ষা। শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা আমাদের মানসিক গঠনের প্রকৃতিকে যতটা স্বাস্থ্যবান এবং উন্নত করতে পারবো ঠিক ততটাই বাবা মায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কগুলো অটুট রয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হলো, শিক্ষা নামীয় এই সার্বজনীন এবং অপরিহার্য প্রত্যয়টিকে যদি আমরা আমাদের অন্তঃকরণে সর্বোৎকৃষ্ট উপায়ে প্রবিষ্টকরণে প্রবৃত্ত হই তবে যার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী এবং উদ্যত হবো সেই ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের গভীরতার মানদণ্ড কেমন হবে? সম্পর্কের মানদণ্ডের উৎকর্ষগত মাত্রা কিংবা গভীরতার ইতিবাচক সূচকের ওপরই নির্ভর করবে শিক্ষা গ্রহণে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সার্থকতা। আর এই পূরিত সার্থকতা দিয়েই কেবল সম্ভব পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ আসনে সম্মানিত করা।
শিক্ষা গ্রহণের মুখ্য উদ্দেশ্যটিই হলো— চরিত্র গঠন, মূল্যবোধের উৎকর্ষ সাধন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিবেকের জাগরণ। যে উদ্দেশ্যটি চরিতার্থ করবার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের অনন্ত ভূমিকা মহাকালব্যাপী উপলব্ধির আয়নায় স্পষ্টভাবে প্রতীত। একজন শিক্ষার্থী তার জন্ম থেকে স্কুলে প্রবেশ অবধি শিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক পাঠটি গ্রহণ করে থাকে তার বাবা মায়ের কাছেই। কিন্তু স্কুলে আসবার পর থেকেই সেই দায়িত্বের অধিকাংশ সময়টুকু সংরক্ষিত রয়ে যায় একজন শিক্ষকের হাতে। সুতরাং শিক্ষকের আদর্শিক শিক্ষা প্রদানের ওপরই নির্ভর করে থাকে একজন শিক্ষার্থীর পরিণত বয়সের সার্বিক আচরণের প্রতিফলনের অঙ্কুর। এক্ষেত্রে ইতিবাচক শিক্ষা গ্রহণই কেবল একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষকের নির্দেশিত আদর্শগুলো অনুসরণ করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এবং সব সময়ই সেই শিক্ষকের সঙ্গ প্রাপ্তির অভাবটি তাকে অনুভব করাতে বাধ্য করবে। অর্থাৎ প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করার ক্ষেত্রে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত একজন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের সেতু স্থাপন করাই যে একজন শিক্ষার্থী, সেই সাথে একটি শিক্ষানুরাগী জাতির প্রধান লক্ষ্য হওয়া– সেটি অবশ্যই অনিবার্য বলে বিবেচিত হবে।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের অলংকার। সেই অলংকারগুলো ততই খাঁটি ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে যতক্ষণ শিক্ষকবৃন্দ তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং বাস্তব অবস্থাকে উপলব্ধিপূর্বক উভয়ের মিথস্ক্রিয়া থেকে লভিত অভিজ্ঞতা অর্জন এবং শিক্ষার্থীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির কাজটিতে নিজেদের ব্যাপৃত রাখবেন। যেহেতু একজন শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের শুরুতেই তার অস্তিত্বজুড়ে শিক্ষার এই প্রকৃত লক্ষ্যটিকে সঞ্চারিত করবার কাজটি গ্রহণ করে থাকেন সেহেতু সেই শিক্ষকের দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে শিক্ষার্থীটির ভবিষ্যৎ পথচলা। একই সাথে শিক্ষার্থীর অন্তর্লোকে প্রোথিত মানসিক সৌন্দর্য ও প্রতিভার পূর্ণ প্রতিফলন নির্ভর করবে একজন শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের কতটুকু মমত্ববোধ, ভালোবাসা, চিন্তা, আবেগ, প্রত্যাশা এবং প্রতিশ্রুতি কিংবা বিশ্বাস রয়েছে তার ওপর। শিক্ষক যদি প্রথম দর্শনেই শিক্ষার্থীর মনোজগতে ইতিবাচকভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করতে সক্ষম হন, ঠিক তখন থেকেই সুশিক্ষা প্রদানের সড়কটি প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হয়ে উঠবে। ব্যত্যয় ঘটলে অলংকারগুলোতে মরিচা পড়ে তার প্রকৃত সৌন্দর্য, সম্ভাবনা ও বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধুর্য ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি কারোরই অজানা নয় যে, অট্টালিকার ভিত্তি মজবুত না হলে একদিকে যেমনতা ভেঙে পড়বার আশঙ্কা থেকে যায় অন্যদিকে তেমনি শিক্ষার্থীর শিখনের ভিতটি মজবুত না হলে সেই শিক্ষার্থীটির শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপটিতে পৌঁছুবার সড়কটিও অমসৃণ হয়ে যায়। সে প্রেক্ষিত বিবেচনায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের নেপথ্যে যে প্রকৃত স্বাদ অটুট রয়ে যাবে সেটি আর তার পক্ষে আস্বাদন করা সম্ভব হয়ে উঠবে না এবং যার প্রভাব অবশ্যম্ভাবীরূপে গিয়ে দৃশ্যমান হবে সেই শিক্ষার্থীর পেশাগত জীবনে। কিন্তু, কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রাথমিক ভিত একবার মজবুত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে তা সেই শিক্ষার্থীকে সৃজন ক্ষমতা, বৈষয়িক প্রজ্ঞা, মানবীয় গুণাবলির চর্চা সর্বোপরি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার মতো বিক্রম অর্জনের পথে সহজেই ধাবিত করবে।
সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষক প্রথম যেদিন শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করবেন ঠিক সেদিন থেকেই তিনি যে তার শিক্ষার্থীদের পাঠ প্রদানের নিমিত্তে ব্যাকুল ছিলেন তার শিক্ষার্থীদের মতোই, সেটি তিনি তার আচরণিক দক্ষতা দ্বারা প্রকাশ করার বিষয়টি বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। একটি বিষয় সবসময়ের জন্যেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষানুরাগী সবার মনে রাখা প্রয়োজন যে– শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হলো একটি প্রাণের সাথে আর একটি প্রাণের সম্পর্ক, একটি জীবনের আশা আকাক্ষার সাথে আর একটি জীবনের উৎসাহ, উদ্দীপনার সম্পর্ক এবং একটি পরিণত শুদ্ধ বিবেকের সাথে একটি নিষ্পাপ কিন্তু অপরিণত বিবেকের সম্পর্ক। সম্পর্কের এই নির্ভেজাল দিকটি সম্পর্কে যখন সবাই প্রকৃত অর্থেই অবগত হতে সক্ষম হবেন কেবল তখনই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর প্রাণের সাথে প্রাণের, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের এবং আত্মার সাথে আত্মার বন্ধন এতটাই দৃঢ় হবে যা চিরজীবনই অবিচ্ছিন্ন রয়ে যাবে। বিষয়টির যথার্থতা নিশ্চিতকরণে একটি উদ্ধৃতি প্রদানের দিকে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে–
উনিশ মাসের ছোট্ট শিশু হেলেন। নিষ্পাপ মুখাবয়ব হতে নিঃসৃত পুলকিত হাসি ও মৃদুমন্দ পায়ের শব্দ ফেলে দাপিয়ে বেড়াত গোটা বাড়ি। একদিন হঠাৎ গোসলের সময় অসাবধানতাবশত মায়ের হাত থেকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল শিশুটি। প্রচুর শুশ্রুষা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান এবং সীমাহীন কষ্টকর অপেক্ষার পর যখন জ্ঞান ফিরে এসেছিল তখন গায়ে প্রচণ্ড জ্বর থাকলেও কিছুটা ভারমুক্ত এবং নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন বাবা-মা উভয়ই। একসময় প্রত্যাশিতভাবে গায়ের জ্বরও পুরোপুরি সেরে গিয়েছিল। মহা আনন্দে উল্লসিত হয়েছিলেন বাবা আর্থার কেলার এবং মা ক্যাথরিন। কিন্তু, কিছুদিন পর যখন বাবা মা প্রত্যক্ষ করেছিলেন ছোট্ট হেলেন সুস্থ হয়ে উঠলেও পুরোপুরি দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছে, তখন দু’জনই হন্যে হয়ে চিকিৎসার জন্য দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, সব জায়গায় চেষ্টা করেও বিফল মনোরথ হবার পর ওয়াশিংটনের বিখ্যাত ডাক্তার আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানকে ভর্তি করিয়েছিলেন বোস্টনে অবস্থিত পার্কিনস ইনস্টিটিউশনে। যে প্রতিষ্ঠানটিতে অন্ধ শিশুদের ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশুনা শেখানো হতো। ডিরেক্টর মাইকেল এ্যাগানোস এর নির্দেশ অনুযায়ী হেলেনের চিকিৎসার ভার গ্রহণ করেছিলেন শিক্ষিকা মিস অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ড, যিনি নিজেও ছিলেন একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পার্কিনস ইনস্টিটিউট থেকে দু’বার অপারেশন করে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আজীবন অন্ধ শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করবার।
তারপর থেকেই আলোর পথে পরিব্রাজনের লক্ষ্যে সূচনা ঘটেছিল শিক্ষার্থী হেলেন কেলার এবং শিক্ষক অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ডের। ম্যানসফিল্ডের অদম্য প্রচেষ্টা ও উৎসাহের কারণে খুব অল্প সময়ের মাঝেই ব্রেইল পদ্ধতিতে কয়েকটি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জন করেছিলেন হেলেন। শুধু তাই নয়, ম্যানসফিল্ড যখন জানতে পেরেছিলেন যে, নরওয়ের একটি বাক প্রতিবন্ধী শিশু বিশেষ পদ্ধতিতে কথা বলতে শিখেছে, তখন উভয়ই দীর্ঘ এগারো মাস অনুশীলন করেছিলেন সেই পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে পৌঁছুবার। অবশেষে সেই প্রচেষ্টাটির সার্থক রূপ প্রত্যক্ষ করতে সক্ষমতা লাভ করে অপরিমেয় প্রশান্তি অনুভব করেছিলেন ম্যানসফিল্ড, যেদিন হেলেনের মুখে প্রথম শুনতে পেয়েছিলেন, ‘আজ থেকে আমি আর বোবা নই।’ হেলেনের প্রতিভার প্রাখর্য প্রত্যক্ষণে ম্যানসফিল্ড তাকে ভর্তি করিয়েছিলেন র্যাডক্লিফ কলেজে। সীমাহীন অধ্যয়নের মাধ্যমে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হয়ে হেলেন কেলার উক্ত কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাক লাগিয়েছিলেন পুরো বিশ্বকে। পরবর্তীকালে গোটা জীবনেই শিক্ষকের আদর্শকে অনুসরণ করে নিজের জীবনটি উৎসর্গ করেছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে। শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্যে কাজ করেছিলেন অবিরাম অত্যন্ত প্রসন্ন চিত্তে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অগণন দুস্থ মানুষের আর্তচিৎকার তাঁর হৃদয়ের কোমলতাকে অধিকার করেছিল। সামর্থের সর্বশেষ নির্যাসটুকু দিয়েই চেষ্টা করে গিয়েছিলেন তাদের কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করবার। আর শেষ জীবনে শিক্ষক ম্যানসফিল্ড যখন অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন তখন অণু পরিমাণ কষ্টের আঁচড় যাতে তাঁর হৃদয়ে রেখাপাত না করতে পারে সে জন্যে সবসময়ই সাবধানী ছিলেন হেলেন কেলার।
উদ্ধৃত বাস্তব প্রেক্ষিতটিকে নিখুঁত তুলাদণ্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রবৃত্ত হলে যে সত্যসারটি প্রতিভাসিত হয়ে ওঠে সেটি হলো-একজন শিক্ষক যদি তার শিক্ষার্থীর জীবনে ম্রিয়মাণ হয়ে আসা সম্ভাবনার আলোকশিখাটিকে তার সত্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন করে জ্বালাবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় ব্রতী এবং নিবেদিত হন তখন অবশ্যই সেই প্রচেষ্টাটি ফলবতী হবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। সেটি না হলে শিক্ষক ম্যানসফিল্ডের আকাশস্পর্শী ভালোবাসার মোহনীয় স্পর্শে হেলেন কেলারের মতো নিঃশেষ হয়ে আসা একজন শিক্ষার্থী পৃথিবীর মানবিক বৃত্তে একটি বৃহৎ দাগ কাটতে সক্ষম হতেন না। একইভাবে আমরা যদি ‘তারি জামিন পার’ চলচ্চিত্রে অভিনীত আট বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থী ইশানের শিক্ষকের কথা আলোচনায় নিয়ে আসি, তাহলে কি এটিই দেখতে পাই না যে, তিনিও তার প্রাণান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার শিক্ষার্থীকে আলোর পথের দিকে ধাবিত করতে সক্ষম হয়েছেন? একজন শিক্ষকের প্রতি কতখানি সজীব ভালোবাসা থাকলে একজন শিক্ষার্থী কখনো কখনো অভিভাবকের চাইতেও সেই শিক্ষককে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে পারে! চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যপটগুলি বিশেষত ইশানের পুরস্কার গ্রহণের সময়, শিক্ষকের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় এবং ইশানের বাবা মায়ের ইশানের শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অশ্রু বিসর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণটি আমাদের সামনে সেই সত্যটিকেই নতুন করে উন্মোচন করেছে?
এ প্রেক্ষিতটিকে বিবেচনায় নিয়ে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা কোথায় অন্তরিত? যদি এমন প্রশ্ন সবাইকে উদ্দেশ্য করে প্রক্ষিপ্ত করা যায় তবে ভাবনার অতল গহ্বরে পৌঁছে তার উত্তর অনুসন্ধানে নিমগ্ন হবার চেষ্টা করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়বে। যাপিত জীবনে প্রত্যেকেরই স্ব-স্ব কর্মে সার্থকতা অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে। সেই লক্ষ্যটি তার ইতিবাচকতার দিককেই নির্দেশ করবে। সবাই সেই লক্ষ্যটির পেছনে ছুটতে থাকবে সেটিকে অর্জন করবার কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজনে। এখন লক্ষ্য অর্জনের এই ইচ্ছেটির যথার্থতা নিশ্চিতকরণে এমন শিক্ষা গ্রহণ করবার দিকে ব্রতী হওয়া প্রয়োজনীয় যা সবসময়ের জন্যে আমাদের সকলের লক্ষ্যগুলোকে ইতিবাচক ও মহত্ত্বের দিকে ধাবিত করবে। এবং যখন মানুষ এই মহৎ লক্ষ্যের দিকে অনবরত ধাবিত হতে থাকবে ঠিক তখনই আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা অজস্র ম্রিয়মাণ প্রতিভাকে আমরা লালন করে বৈশ্বিক কল্যাণে তাদের কাজে লাগাতে সক্ষম হবো। বাস্তব প্রেক্ষিত বিবেচনায় এই ধরনের প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমেই মানুষ তখন অনুভবের সর্বোচ্চ মাত্রায় উত্তরিত হতে সক্ষম হতে পারবেন। অর্জিত এই অনুভব তার চেতনায় আজীবন স্থিত থেকে তাকে শুধু তার অতীত স্মৃতি রোমন্থনে আন্দোলিতই করবে না বরং অতীতের দায় থেকে অর্জিত কর্তব্যটি পালনে সচেষ্ট থাকবার সঞ্জীবনী প্রয়াস জোগাবে। পাশাপাশি মানুষ যে কখনোই কোনো দায় থেকে মুক্ত হতে পারেন না অথবা কোনো ভালো কাজের বিনিময় মূল্য কোনো কিছুর বিনিময়ে পরিশোধ করা আজীবনেও সম্ভব নয় সেই শিক্ষাটিও অর্জন করতে থাকবে।
প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব