বর্তমান সময়ে ছোটগল্পকে শুধুমাত্র একটা কথাতেই সঙ্গায়িত করা যায়, সে হচ্ছে, এগুলো ছোট।
কিন্তু এই ছোট অর্থ কিন্তু শুধুমাত্র শব্দসংখ্যা কম এমন নয়। এর অর্থ হচ্ছে, কাহিনীর গতিময়তা, এককেন্দ্রিক প্লট এবং নিঃসন্দেহে সংক্ষিপ্ততা। শুধু কী তাই? বর্তমান সময়ে অনেকে বলে থাকে, উপন্যাসের বিকল্প নাকি ছোটগল্প!
এখন আসা যাক একজন পাঠক কী কী কারণে ছোটগল্প পাঠ করবেন এই বিষয়ে।
প্রথমত, পড়ে শেষ করার নিশ্চয়তা
অনেক পাঠক আছেন যারা একটা উপন্যাস পাঠ শুরু করলে হয়তো ঘ্যানঘ্যানানি শুরু করেন, নাহ! এই উপন্যাসটা ভালো লাগছে না! উপন্যাসটার টোন ভালো নয়! ইত্যাদি! ইত্যাদি! কোনো কিছু পড়ার জন্য সময়ের স্বল্পতা উপন্যাসের বই পাঠে অনাগ্রহের একটা অন্যতম কারণ। কিন্তু ছোটগল্পের ক্ষেত্রে ওই ঝামেলাটা নেই। একজন পাঠক একবারে বসে এক নিঃশেষে মানসম্পন্ন একটা গল্প পাঠ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেন কিংবা সেই গল্পের সমালোচনা করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, সমাপ্তির অনুভূতি
উপন্যাসে একটা গল্প শেষ হতে বিলম্ব হয়। এমনকি একটি চরিত্রকে বর্ণনা করতেই লেখক ৪-৫ পাতা শেষ করে ফেলেন। আর সেই গল্পের সমাপ্তি পর্যন্ত পৌঁছানোর ধৈর্য অনেকের থাকে না। ছোটগল্পের সুবিধা হচ্ছে, পাঠক কিছু সময় পরেই একটা কাহিনীর সমাপ্তি পায়। এই সমাপ্তি পাঠককে আন্দোলিত করে।
তৃতীয়ত, বই পাঠে আগ্রহ সৃষ্টি
ছোটগল্প পাঠের মাধ্যমে পাঠকের গল্প পড়ার এক ধরনের নেশা দেখা দেয় অনেক সময়। জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ যখন তার ভিতর প্রবল হয়ে ওঠে, তখন সে হয়তো একটা আস্ত উপন্যাস পাঠও শুরু করে দিতে পারে। আবার একটি ছোটগল্প একজনের ভালো নাও লাগলে, তখন পাঠক লেখক পরিবর্তন করে আরেকটি গল্প পাঠ করতে পারেন সহজেই। এতে করে বহু লেখকের জীবনদর্শন তাকে অবাক করে দিতে পারে। এসব বিষয়গুলোর কারণে একজন পাঠক সহজেই বুঝতে পারেন, তার পছন্দের লেখক কে! পরবর্তীতে হয়তো সেই কথাসাহিত্যিক একটি উপন্যাস প্রকাশ করলেও তাতে তার আগ্রহ থাকবে।
চতুর্থত, নতুন ধারাতে পরিভ্রমণ
মনে করুন, আপনি রোমান্টিক ধারাতে উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন। কিন্তু আপনার মনে হলো, ভৌতিক কিছু পড়ে কেমন লাগে এটা জানা উচিৎ। তখন আপনি ভৌতিক বা হরর ধারার কিছু ছোটগল্প পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন, আসলে ওই ধারার গল্প কিংবা উপন্যাস আপনাকে তৃপ্ত করতে সমর্থ নাকি সমর্থ নয়।
পঞ্চমত, নিয়মিত সাহিত্য পাঠের অভ্যাস সৃষ্টি
আপনার যখন একটি ছোটগল্প পড়ে ভালো লাগবে, তখন আপনি হয়তো পরেরদিন আবার কোনো ওয়েব ম্যাগাজিনে ঢুঁ মারবেন ছোটগল্প পাঠের জন্য। আপনি যদি আবারও কোনো গল্পে মুগ্ধ হন, তাহলে ধীরে ধীরে আপনি নিয়মিত সাহিত্য পাঠে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। যেটা আপনার জীবনটাকেই বদলে দিতে পারে।
যাই হোক, শেষকথা হচ্ছে: ছোটগল্প হয়তো বইপোকা মানুষদের খিদে পূরণ করতে শতভাগ সমর্থ নয়। কিন্তু যারা মাঝে মধ্যে জীবনের নানা গল্পের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য শতভাগ পারফেক্ট সাহিত্যের বিভাগ হচ্ছে ছোটগল্প। আর আমরা তো জানিই, বর্তমান বাংলা সাহিত্যের লেখকদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে পাঠক সংকট। তাই ছোটগল্পই শুধুমাত্র পারে সেই মাধ্যম হতে, যেটা লেখককে পাঠকের দ্বারে পৌঁছে দেবে অতি সহজে।
***
( লেখাটি গল্পবাজ টিম কর্তৃক লিখিত )