পিন্টু রহমান
(‘স্বর্ণসন্তান’ গল্পটি শব্দঘর সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, পরবর্তীতে ‘কাঠপরানের দ্রোহ’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়)
স্বর্ণসন্তান– অনিঃশেষ গল্পযাত্রা এক; যে যাত্রার প্রাক্কালে গল্পকার রিপনচন্দ্র মল্লিক কৌতূহলী পাঠকের জন্য বয়ান করেছেন বহুমুখি সম্ভাবনার ইঙ্গিতময়তা। ইঙ্গিতময়তার যাতক আমি। স্বর্ণসন্তান খোঁজার অভিপ্রায়ে সপ্তপর্ণে গল্পের শরীরে প্রবেশ করেছি। যাত্রাকালে খানিকটা ধাঁধাও লেগেছে। ধাঁধাই বটে! অবুঝের মতো পথ হাঁটা পাঠক আমি নই। বোধের তীক্ষ্ণতায় আন্দাজ করেছি সম্মুখে কী অপেক্ষা করছে। কিন্তু ঠিকঠাক বুঝতে পারিনি; বুঝতে পারিনি স্বর্ণসন্তানই বা কে! সূচনাতে যা একটু জটিলতা তারপরই সরলপাঠ। মাটিবর্তী গল্পকার রিপনচন্দ্র মল্লিক বিশেষ অঞ্চলের মাটি ও মানুষকে উপজীব্য করে গল্পের কাহিনি বুনন করেছেন। সরল গল্পে উপভোগ্য উপমা, চিত্রকল্প, প্রকৃতির বর্ণনা ও ইতিহাসের খন্ডাংশ গল্পের শরীরে চিরায়ত বাংলার মসলিনের মতো জড়িয়ে রয়েছে। মসলিনের বয়সী গ্রামীণ একটি রাস্তাই গল্পের আখ্যান। দারুণ। এমন একটি বিষয় নিশ্চিত যাদুবাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যাদুস্পর্শে রাস্তাটি নিজেই কথকের ভূমিকায়। ব্যথাহতচিত্তে পাঠককে উত্থান-পতনের কাহিনি শোনায়। মনোযোগ দিয়ে সেসব কথা শুনি আমরা। জীবন এমনই। এমনই তার গতিধারা। যার উত্থান আছে তার পতনই বা থাকবে না ক্যানো!
পল্পপাঠে মনে হয়েছে গল্পকার যে যাপিত জীবনের উপাখ্যান উপস্থাপন করে তা বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা অঞ্চলের নয় বরং সমগ্র বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে। উপস্থাপনের ভিন্নতায় গল্পটি অনন্য। এমন কৌশল আরো অনেকের জন্য অনুকরণীয় বলে মনে করি। অনুকরণ করা জরুরিও। সমকালীন সমাজে সত্য বলা ও সত্য লেখা চরমতম বিড়ম্বনা। বিড়ম্বনা এড়াতে আমি ও আমরা গদ্যের শরীরে কৌশলে কাব্যিকতা মিশিয়ে দিচ্ছি। ফলে যা হচ্ছে পাঠককে ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেয়ে গল্প অনুসন্ধান করতে হচ্ছে। স্বর্ণসন্তানের বেলায় সেরকমটি লক্ষ করা যায় না।