দ্বীপ সরকার

ছোটোকাগজ ‘বাঁশতলা’ একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

বইয়ের ভেতর উপাদান থাকাটা জরুরি এবং সেটা সঠিক ও প্রাসঙ্গিক। পাঠক ততটুকু উপাদান খুঁজে না পেলে সেই বইটা আলগোছে যথাস্থানে রেখে দেয়। অথচ পাঠক প্রথমে একটা কিছু খোঁজার আগ্রহ নিয়ে বই হাতে নেয়। শিল্পসাহিত্যের ছোটোকাগজ ‘বাঁশতলা’ এই সময়ের একটা মননশীল লিটল ম্যাগাজিন, যেখানে পাঠক তার দৃষ্টিভঙ্গিটা অন্য দিকে  ফেরানোর জন্য– আবশ্যিক কিছু একটা পাবে। আমি বাঁশতলা দ্বিতীয় সংখ্যা-২০২৩ নিয়ে কথা বলছি। যেদিন প্রথম পত্রিকাটা হাতে পেয়েছিলাম আমি তখনই মনোমুগ্ধতাভরে নেড়েচেড়ে দেখেছি। প্রথমে তার টাইপোগ্রাফিটা আমার খুব মন কেড়েছে। টাইপোগ্রাফি করেছেন আইয়ুব আল আমিন এবং নির্ঝর নৈঃশব্দের করা প্রচ্ছদ অতি চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন। আমি ঠিক তখনি ভেবে রেখেছিলাম ‘বাঁশতলা’ নিয়ে যতকিঞ্চিত লিখবো পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

ছোটোকাগজ বাঁশতলা দ্বিতীয় সংখ্যায় যে উপাদানটা পত্রিকাকে বেশি গুরুত্ববহন করেছে সেটি দু’জন মহান উপন্যাসিকের ওপরে ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ে তাদের ওপরে গবেষণামুলক পাঠাবিস্কার ও পাঠকদের নিকটে স্মরণিকার ভূমিকা রাখে। তাঁরা হলেন, কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক ‘লালসালু’ উপন্যাসের রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং শক্তিমান কথাসাহিত্যিক ইউসুফ শরীফ। দুই তারকা লেখককের ওপর বিশেষ এই সংখ্যাটি সংগ্রহে রাখার মতো একটি চমৎকার সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।

বোধকরি- এই উপমহাদেশে যখন মানুষ ধর্মবৃত্তি করতো এবং ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে এক  শ্রেণির সুবিধাভোগী মৌলভী-মুন্সি সাধারণ মানুষকে একটা কুসংস্কারের দিকে নিপতিত করেছে, ঠিক তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরার সাহস করেছিলেন এই খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তাঁকে নিয়ে আয়োজন পত্রিকার প্রধান উপাদেয় হিসেবে ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি। ছোটোকাগজ বাঁশতলা এ প্রজন্মের পাঠককে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও ইউসুফ শরীফকে। মূলত এটাই এই পত্রিকার মুল এলিমেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। আমি মনে করি কবি  মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী’র এই সম্পাদনা ও পরিশ্রম কখনও বৃথা যাবেনা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন যথাক্রমে তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী জহিরুল ইসলাম, সৈয়দা নাজনীন আখতার। ইউসুফ শরীফকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, শেখ আব্দুল জলিল, হেলাল আহমেদ।

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অসীম সাহা, রেজাউদ্দিন স্টালিন, ঝর্না রহমান, মাহমুদ কামালসহ আরও অনেক বিদগ্ধ কবির কবিতা দিয়ে ‘বাঁশতলা’র প্রথম অংশ সাজানো হয়েছে। এ ছাড়াও অনেক নবীন কবিদের নাম সন্নিবেশিত হয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে বাঁশতলা দ্বিতীয় সংখ্যা (বইমেলা/২০২৩) নবীন ও প্রবীণের একটা সেতুবন্ধনের অনন্য ভূমিকা নিয়ে নান্দনিক একটি সংখ্যা পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন সম্পাদক ও কবি মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী । এ জন্য সম্পাদক মহোদয় নিশ্চয় প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখেন।

‘বাঁশতলা’ দ্বিতীয় সংখ্যার বিশেষত্ব হচ্ছে, নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে রয়েছে একক কবিতা, যুগল কবিতা, গুচ্ছকবিতা, দীর্ঘ কবিতা, অনুবাদ কবিতা, প্রবন্ধ,নির্বাচিত প্রবন্ধ, তারুণ্যের কোচকাওয়াজ (নির্বাচিত কবি ও কবিতা) হাইকুগুচ্ছ, গুচ্ছচিরকুট, পাঠপ্রতিক্রিয়া, ছোটোকাগজ আলোচনা (জলকন্যা)। এছাড়াও কবি মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী’র কাব্যগ্রন্থ ‘জলপাহাড়ের গান’ থেকে চমৎকার কিছু কবিতা এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০০ টাকা মুল্যের ২০৮ পৃষ্টার পত্রিকা অবশ্যই পাঠকপ্রিয়তা পাবে এবং দামটাও ক্রয় ক্ষমতার মধেই রয়েছে। সম্পাদক মহোদয় আতি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন এটা বলাই যায়। তাঁর যুগপৎ শিল্প বুনন চিন্তা এবং ছোটোকাগজ বাঁশতলা  প্রকাশে তাঁর শ্রম ও মেধা অবশ্যই বৃথা যাবে না । পত্রিকাটির উপদেষ্ঠা সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, ছিদ্দিকা রহমান চৌধুরী শিমু (কানাডা), কবি লুৎফুর রহমান (ইংল্যান্ড), রুমকি আনোয়ার এবং সহযোগী সম্পাদনায় রয়েছেন, কবি শফিকুল ইসলাম সোহাগ, সালেহা খানম, আরিফা রহমান, নূরজাহান শিল্পী, বিভাগীয় সম্পানায় রয়েছেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, সুলতানা রাজিয়া আছমা প্রমুখ। এতো চমৎকার একটি সংখ্যা পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য ছোটোকাগজ বাঁশতলা’র সম্পাদক, সহযোগী সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্টদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ প্রকাশ করছি।

 

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu