দিন দুপুর বা রাত দুপুর হোক। কাকের মুখে খবর পেলেই হংসেশ্বর হানা দেবেই। বাহন তার মাডগার্ডহীন সাইকেল। উলঙ্গ চাকা দেখে বোঝা যায় না, কোনটা সামনে গড়াবে। পাড়ার ছেলেরা প্রথম প্রথম এরকম মাডগার্ডহীন সাইকেল দেখে হাসত। এখন হংসেশ্বরের সাথে মজা করে।
হংসেশ্বরের এবারের টার্গেট এ গ্রামের আল্লারাখা। খবরটি জেনেছে বিশ্বস্ত সূত্রে। চায়ের দোকানের ঝুঁঝকো অন্ধকারে তারাপদ হাটীর কাছ থেকে পেয়েছে খবরটা। সেই সূত্রেই বিকেলের ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় করে মাডগার্ডহীন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে হংসেশ্বর।
সবে তাস খেলা শেষ করে শচীন-বিমল-দ্বিজপদ বসেছিল দোকানের পাশের চালাতে। বৃষ্টি পড়ছে ঝিরঝির। এই মুখ বোজা সময়ে আসবি আয়, একেবারে খোদ হংসেশ্বর। ওদের আসর তড়িৎ চনমনে হয়ে উঠল। বিমলই প্রথম দেখেছে— ‘আসুন হংসেশ্বর বাবু, আসুন।’
ঠাট্টা না সম্মান হংসেশ্বর তোয়াক্কাই করল না। টুকুস করে সাইকেল থেকে নেমে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করে— ‘হ্যারে, আল্লারাখার বাড়িটা কোন দিকে বল দেখি?’
ওরা ঠিক চিনতে পারে না। হংসেশ্বর বলে— ‘ঐ যে খুব বুড়ো লোকটা মজিদের কাকা।’
এবার ওরা চিনল। গায়ক-চালক আল্লারাখা। কোন যুগের গরুর গাড়ি করে লোকের ভাড়া বইত। মুখে থাকত রকমারি গান। জোয়ালের মোষ জোড়াটিও ছিল খুব মনিবপ্রিয়। তখনকার একহাঁটু কাদা রাস্তায় মোষ দুটি গাড়ি নিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করত। আল্লারাখা কোনোদিনও মোষের গায়ে লাঠি তোলেনি। ওর মুখে থাকত গান। মনিবের মতোই আমোদ-প্রিয় মোষজোড়া মাল বোঝাই গাড়ি টানত কাদা রাস্তায়। বড় বড় ‘দঁক’ থেকে ওঠার পর আল্লারাখা বিড়ি ধরিয়ে, বিড়ির ধোঁয়াটা ওদের মুখে দিত দু-চারবার। এতেই মোষ জোড়া ক্লান্তি সরিয়ে বল ফিরে পেত। আর আল্লারাখার গান শোনা যেত এক মাইল দূর থেকে। শচীন বিমলরা সেই জোয়ান গাড়োয়ানকে দেখেনি। ওরা দেখেছে বৃদ্ধ আল্লারাখাকে। অভাব অনটনে জর্জরিত সংসারের এক কর্তা। সে মোষও নেই। গরুর গাড়ির দিনও শেষ। এখন রিক্সা-ভ্যান-ট্রাক্টর ছুটছে রাস্তা দিয়ে। রাস্তায় সে কাদাও নেই। লাল কাঁকরের রাস্তা।
হংসেশ্বর এবার স্বেচ্ছায় ওদের পাশটিতে ঘাপটি মেরে বসে, চোখ মটকে চুপিচুপি বলে— ‘এখন গেলে পাওয়া যাবে?’
ওরা মজা পেয়েছে— ‘আরে বল না, কী মালের সন্ধান পেলে?’
— ‘শুনবি শুনবি। জিনিস আগে দেখি তো। তারপর সব বলব।’
বিমলরা আসর জমাতে চারটে হাঁকল। হংসেশ্বর নিজেই কোনো কথা বেশিক্ষণ রাখতে পারে না। চা-টা হাতে পেয়েই শুরু করে— ‘আল্লারাখার ঘরে একটা বদনা আছে জানিস? অনেক কালের জিনিস। ওটায় মাল আছে। কত গোপনে খবরটা জেনেছি। এখন কাউকে বলিস না। আগে জিনিসটা স্বচক্ষে দেখি।’
এ গ্রামের আজকের সব আড্ডাতেই পৌঁছে গিয়েছে হংসেশ্বরের আগমন বার্তা। হংসেশ্বর যতই গ্রামের ভেতর ঢুকবে ততই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বদনার খবর শুনবে।
কাজের ফাঁকে সামান্য সময় পেলেই হংসেশ্বর বেরিয়ে পড়ে। এ গ্রামে ও গ্রামে প্রাচীন কোনো বাসনপত্তরের খোঁজে। সবাই ওর কাছে লাখ টাকার গল্পই শুনেছে। কেউ কখনও বাসন-পত্তর দিয়ে ঐ টাকাটা পেয়েছে, এমন শোনা যায় না।
কয়েক বছর আগে— কত সালের তামার পয়সা ও রূপোর টাকা খোঁজার একটা হিড়িক এসেছিল এ গ্রামেও। সেদিন শচীন বিমলরা মায়ের পুরনো বাক্স সিন্দুক হাতড়ে তামার পয়সা রূপোর টাকার খোঁজ করেছিল। কে কিনছে তার নাম ঠিকানা কেউ জানে না। আদতে কেউ টাকা পেয়েছে এমন খবরও নেই। হংসেশ্বরের এই পাগলামিটা তখন থেকেই আরও বেড়েছে। পুরনো বাসন-কোসনের দিকেই ওর ঝোঁকটা বেশি। এখন কে মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে আল্লারাখার বদনার ভূত।
বৃষ্টির ভেজা আমেজে রফিকের ইমিটেশনের দোকানের দাওয়াটা ফাঁকা পেয়ে, একধারে বসে দড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে তারিণী খুড়ো। দোকান ফাঁকা। বৃষ্টিতে লোকজন নেই। তারিণী খুড়োর মুখ বন্ধ। বিকেলটা বিস্বাদ হয়ে যাচ্ছিল খুড়োর। এই মূহুর্তে হংসেশ্বরকে পেয়ে তারিণী খুড়ো আহ্লাদে দশখানা।
— ‘আরে হংস, এসো এসো, খবর আছে।’
ধেয়ে যাচ্ছিল হংসেশ্বর। সাইকেল থেকে পা নামিয়ে দাঁড়াল। খুড়ো বিগলিত হল— ‘নেমেই এস না, আরও বড় কাজের খবর আছে।’
হংসেশ্বর নিজের চাহিদা বাড়ার গর্বে, কসরত করে সাইকেল স্ট্যান্ড করে এগিয়ে এল। বাবুই দড়ির দিকে তাকিয়ে বলে— ‘বাবুই ঘাস পাওয়া যাচ্ছে এখনো?’
তারিনী খুড়ো হাসে— ‘বাবুই থাকবেক নাই, তাই কি হয়? যবুনা শোলের ‘পগারটা’ ভাঙল, বাঁধলাম কি করে? বাবুই গেঁড়ো-শর গেঁড়ো-কাশ গেঁড়ো পুঁতে ভাঙন ঘুচুইছি। বোদাই-এর বান এলেও আর পগার ভাঙে না।’
হংসেশ্বর উৎসুক— ‘পগারটা কত দিনের হল? খুব বেশি দিনের কি? তাহলে কিন্তু মাল থাকবেক।’
খুড়ো চমকে ওঠে— ‘মাল বলতে!’
হংসেশ্বর মোহন্ত সাজে— ‘ও বাব্বা, শুনো নাই বুঝি! চব্বিশ পরগণা জেলায়?’
তারিনী হাঁ করে শুনছে। বাঁ পায়ে চাপা দড়ির মুখ। ডান হাতে পাঁচ-ছ’খি বাবুই।
আবেগাপ্লুত হংসেশ্বর— ‘ইংরেজ আমলে সেটলমেন্টের মাপা জমি। মাঠের মাঝখানে মাঝখানে পয়েন্টগুলো। শিবের মতো। ঐ সেগুলোর একটাতেই…’, গুরুত্ব বুঝে হংসেশ্বর থামে। খুড়ো ওই অবস্থাতেই হাঁ করে তাকিয়ে,
— ‘কি হয়েছে সিখানে?’
— ‘তাও জানো না, কয়েক কোটি টাকা। ঐ ‘বাবা পোঁতা শিবের’ ভিতরে মাল। বিদেশের পার্টি এসে কিনে নিল। কয়েক কোটি টাকা।’
তারিনী ঠাট্টা করবে কি! আজ ও অবাক হয়ে গেল— ‘বাসান, তাই দিগি?’
হংসেশ্বর জাহির করে— ‘হেঁ-হেঁ বাবা, সেরকম পার্টির সঙ্গে আমার যোগাযোগ। তোমার, বাবুই পগারটা কুঁড়ে দেখো, থাকতে পারে।’
তারিনী খুড়োর ঘোর কাটে— ‘বসো বসো, বিড়ি খাও। তোমাকে একটা খবর দিই।’
হংসেশ্বর বিড়িটা ধরিয়ে উবু হয়ে বসে। তারিনী চোখ মটকে শুরু করে— ‘বহুকালের পুরনো। বদনা। আল্লারাখা…’ রস গ্রহণ করতে কথাগুলো কাটা কাটা ভাবেই বলল তারিনী।
হংসেশ্বর আর বসতে পারল না। তড়িঘড়ি করে ওঠে— ‘কথাটা অন্য পার্টির কানে যেন না যায়। আমিই ওটার ব্যবস্থা করব।’
তারিনী ছাড়তে চাইছে না— ‘শুন শুন, দরদাম কি’রম?’
হংসেশ্বরের তাড়া— ‘মালটা হাতে পাই। তা দেড় থেকে দু-লাখ।’
হংসেশ্বর উঠে গিয়ে সাইকেল ছুঁয়েছে। এ সময়েই রফিকের দোকানে আজাদ এল। চকচকে পোশাক আশাক, চেহারা। হংসেশ্বরের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হল। সাইকেল ছেড়ে, ফিরে এল খুড়োর কাছে। চোখের ইশারায় জানতে চাইল। খুড়ো আবার বসিয়ে দিল হংসেশ্বরকে।
— ‘আল্পু বসো, সব জানবে।’
ব্যাপার দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আড় চোখে আজাদকে দেখে। ভিনদেশী ঠাওরেছে। খুড়ো অধৈর্য্য হয়ে বলে— ‘থির হও।’
আজাদ বাবুই ঘাসের নামটা ভুলে গেছে। পুকুরের পাঁকে ডোবানো পনের দিনের কালো বাবুই গোছার দিকে তাকিয়ে। খুড়ো তাড়াতাড়ি বলে— ‘নামটা মনে পড়চেনি লয়, বাবুই ঘাস গো।’
আজাদ লজ্জা তাড়াতে বলে— ‘বাবুই ঘাস আবার না মনে থাকে খুড়ো। বাবুই-এর ‘সোঁটার’ কথা ভোলা যায়? মনসা পূজোর ভরমে ‘সোঁটা’ দিয়ে নিজেদের চাবকানোর কথা ভোলা যায়?’ তারিনী খুড়ো এতক্ষণে একটা কাজের কথা পেল। বেশ আহ্লাদিত হয়ে জিজ্ঞেস করে— ‘আচ্ছা বাপ ভাইপো, তুমাদের কলকাতা থেকে একবার টি.ভি-র লোক নিয়ে আসো না। মনসা পরবে ফটো লেক।’
আজাদ আক্ষেপ করে বলে— ‘আমার সঙ্গে যে টি.ভি-র লোকদের জানাশোনা নেই।’
সন্দেহপ্রবণ হংসেশ্বর তারিনী খুড়োর কানে কানে ফিসফিস করে। খুড়ো ঝাঁঝিয়ে ওঠে— ‘তুমার কুনো ভয় নাই। উ বড় চাকরে। তুমার মতো থালা বাটি গেলাস দেখে বেড়ায় নাকি?’
হংসেশ্বর এবার পুলকিত হয়ে আজাদের ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে।
— ‘আচ্ছা আজাদ ভাই, তুমি কলকাতায় কতদিন আছ?’
— ‘তা সাত আট বছর।’
হংসেশ্বর বোঝাতে চাইছে সেও ফ্যালনা নয়— ‘কলকাতায় আমারও কয়েকজন বন্ধু আছে। যে বিজনেসটা করি, তার পার্টনার।’
হংসেশ্বর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইল— ‘তা বন্ধুরা আমাকে বারবার যেতে বলে। মাত্র একবার গেছি। ভাল লাগে না। ‘
আজাদ মন দিয়ে শুনছে দেখে উৎফুল্ল হল— ‘ঐ একবার যেয়ে দেখেছি, ওরা সংসারে কোনো নটখটি পছন্দ করে না। বাইরের কেউ এসেছে। রাতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, এসব ওদের মধ্যে নেই। হয়তো স্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে একটা নটখটি হোক ওরা চায় না।’
হংসেশ্বরের শ্বাস দীর্ঘ হয়— ‘আর বাবা, আমার যা বিজনেস, কলকাতায় না গেলেও চলে। ঐ বাবুদিকে বিজনেসের খাতিরে আমার কাছে আসতেই হবেক।’
হংসেশ্বর এরকম মনযোগী শ্রোতা পেয়ে আরও খানিকক্ষণ চালাত। কিন্তু বাগড়া হল রফিক। হংসেশ্বর সহ্য করতে পারল না। ধাঁই করে সাইকেলে চেপে বসল।
আজাদ রফিকের কাছে হংসেশ্বরের পাগলামির কথা শুনে হেসেই খুন। রফিক বলে— ‘এবার আমাদের রাখো চাচাকে ধরেছে!’
— ‘রাখো চাচা?’ আঁতকে ওঠে আজাদ। মনে পড়ে গেল। বলে,
— ‘কী মর্মান্তিক অবস্থা। বড় ছেলে রব্বানির সঙ্গে চাচার তুমুল মারামারি। একটা থালা নিয়ে।’
তারিনী খুড়োও আঁতকে ওঠে— ‘এ্যাঁ মারামারি, বলিস কি রে? সেই আড়াই কেজি ওজনের বোকনো-থালাটা নিয়ে?’
তারিনী খুড়ো জানে ঐ থালাতেই মনিব ঘরে ভাত-মুড়ি খেত রাখো। গরুর গাড়িতে বস্তার মধ্যেই থাকত থালাটা। রাখোর বড় প্রিয় ঐ ‘বোকনো থালা’।
আজাদ বলে— ‘আর বলো না। ঐ থালাটাই রব্বানী কাঁসার দোকানে বিক্রি করবে। রাখো চাচা কি আর ছাড়ে! কথা কাটাকাটি থেকে মারামারি। মাথায় এমন মেরেছে। এই তো একটু আগে বাঁকুড়ার হাসপাতালে পাঠানো হল।’
ফিরে এল হংসেশ্বর। দশ পনের মিনিটেই ওর ঝোড়ো কাকের অবস্থা। দোকানের দাওয়ায় দড়াম করে সাইকেল ঠেসিয়ে তারিনী খুড়ো বুঝতে পেরেছে, তবুও মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলে— ‘কী হল বলবে তো? তা লয়, মুখটা জুঁদা পারা করে থেপসি গেড়ে বসল।’ হংসেশ্বরের ভিজে চুল বেয়ে জল। হয়তো চোখ থেকেও। টোকো মুখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে— ‘আমার চারিচুম্নে শত্তুর। পঁন্দে লেগেছে। আল্লারাখার ঘরে বদনা লয়, কাঁসার থালা একখানা। অনেক কালের পুরনো। ওর বড় ছেলে রব্বানী, অন্য পাটির পাল্লায় পড়েছে।’
আজাদ-রফিক-তারিনী খুড়ো ব্যপারটা মিলিয়ে নেয়। খুড়ো সাহস দেয়— ‘আরে বাবা, আমরা তো আছি। চিন্তা কী? হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরুক। বদনা লয়, সেই আড়াই কেজি কাঁসার থালাটা তো?’
হংসেশ্বরের আক্ষেপ— ‘তদ্দিনে কি থাকবেক? অন্য পার্টির হাতে চালান হয়ে যাবেক।’
রফিক সাহস দেয়— ‘হংসদা, আমরা তো আছি। থালা বেহাত হবে না। বুকে থুতু দিয়ে ঘুরে বেড়াও।’
হংসেশ্বর বিশ্বস্ত চোখে দেখছে রফিককে। তার চুল বেয়ে জল। হয়তো চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়ছে টপাটপ। এবার তারিনী খুড়োর একটা ‘হাই’ ওঠে। ফোকলা মুখে বহু কসরত করে ‘হাই’-টা ছাড়ল নীরবে। কাজটা শেষ হতেই, হংসেশ্বর তারিনী খুড়োর কানের কাছে ফিসফিস করে— ‘যাচাই করার বুদ্ধিটা বলে দিই। থালাটা পেলেই গোটাকতক ধান টুঙে চাল বার করবে। থালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ভিজে থাকবে না। চালগুলো থালার ভেতর তিনদিন রাখবে। একদম ছুঁয়ো না। নড়ানড়ি যেন না হয়। তিনদিনে দেখবে চালের রঙ। কালো যদি হয়ে যায়,কেল্লাফতে। বুদ্ধিটা কিন্তু পাঁচকান কর না। তোমার আমার আধাআধি। কব্জা করা চাই কিন্তু।’
তারিনী খুড়োর আলিস্যি এসেছে। একটু ব্যাজার মুখেই বলল— ‘তুমি যাও, আমরা তো আছি।’
উত্তরটা ভালো লাগল না হংসেশ্বরের। ওর গায়ে হাত দিয়ে তিন সত্যি করিয়ে নিল।
রাজ্যের চিন্তা মাথায় নিয়ে সাইকেলে চাপল হংসেশ্বর। তারিনী খুড়োও আজকাল কেমন ক্লান্তি অনুভব করছে। অন্যদিন আরও কয়েক ঘন্টা থাকে। বাবুই ঝাড় ও দড়ি গুটিয়ে নেয় খুড়ো।
রফিক বলে— ‘কি গো খুড়ো, এর মধ্যি?’
খুড়ো ম্লান হাসে— ‘কাল আসব, আজ খুব আলামারা লাগছে।’
পরদিন সকালেই গ্রামে খবরটা চলে এল। রাতেই স্ট্রোক হয়েছে হংসেশ্বরের। বাঁকুড়া হাসপাতালে পৌঁছেছে রাত দুটোয়। তারিনী খুড়ো খবরটা পেয়েই বলল— ‘ও শালা, আল্লারাখাকে ধরতে ঠিক হাসপাতাল পর্যন্ত গেল।’