মাহির তাজওয়ার
জন্ম চুয়াডাঙ্গায়। ছোটগল্প লেখক এবং ছড়াকার।
মাহির তাজওয়ার

তিনটি আত্মা ও ভ্রমজাল

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

আঁধারের বুক চিরে আলোর মিছিল। ঝোপের আড়ালে জ্বোনাকির খেলা। আমি কেবল আকাশ পানে চেয়ে। তারার পানে চেয়ে। তারাগুলো পিট পিট করে জ্বলছে। সেই সাথে জ্বলে জ্বলে উঠছে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণা। আমার হারিয়ে যাওয়া তেতাল্লিশটি বছর আমাকে পোড়ায়। আমার আমিকে দগ্ধ করে। আবার পৃথিবীতে ফেরার ইচ্ছা আমার আমিত্বকে নাড়া দেয়। আমার স্বল্প দিনের জীবন স্মৃতি টেনে আনে চোখের সামনে।

শোভা।

সদ্য বিবাহ হয়েছে।

তখনো হাতের মেহেদী মুছে যায়নি। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে। আমিও কথা রাখতে পারিনি। ফিরতে পারিনি সেদিন। সে দিন কেন আর কোন দিনই ফিরতে পারিনি। হাতুড়ির টুংটাং শব্দে আচমকা সম্বিত ফিরে এলো। বুঝলাম ভুল পথে এসেছি।  পথ যে ভুল হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি একটা অনেক বছরের পুরনো ঘরের মধ্যে গিয়ে দাড়ালাম। ঘরটা অন্ধকার। তারপরও যেন পরিস্কার। সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। ঘরের চারপাশে মাকড়শার জাল। দেওয়ালে এখনও অনেক বছরের পুরনো দৈনিকের কাগজ লেপ্টে আছে। কিছু কিছু উঠে গেছে প্রায়। কাগজগুলো লাল হয়ে গেছে। এই অন্ধকারেও আমার কাছে সবকিছু দিনের মত পরিস্কার। ঘরের ভিতরে তীব্র ঝাঝালো গন্ধ। আমি অবশ্য ওসব কিছু পাচ্ছি না। একটু পরেই আমার পাশে নড়া চড়ার শব্দ পেলাম। অনেকটা অস্পষ্ট। তাকিয়ে দেখি জয়নাল। জয়নাল আমার হাত চেপে ধরে। ভাইজান দীর্ঘদিন পর আমাদের দেখা। আমারে কি চিনছেন? আমার মনে পড়লো এ আর কেউ না বিষ্ণুপুরের জয়নাল। জয়নাল  বরাবরই ভালো আড্ডা দিত। জয়নালের সাথে আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগতো। আমার মনে পড়ে আমি বছরের পর বছর জয়নালের সাথে আড্ডা দিয়েছি। গল্প করেছি। আড্ডায় আড্ডায় কত রাত পার করেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। সেই জয়নাল কে এখানে দেখতে পেয়ে আমার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।

জয়নাল আমাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে চায়। আমি বলি চল লোকালয়ে যাই। জয়নাল মহা খুশি। আনন্দে লাফাতে থাকে। আজ দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর পর পৃথিবী জীবন। নিজের গ্রাম। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সব প্রস্তুতি যখন নিচ্ছি তখন শোভা আমার হাত চেপে ধরে সে কি কান্না! আজও আমি সেই ক্রন্দনের সুর শুনতে পায়। কানে বাঁজে। মায়ের চোখে জল। পাথর আমি। নিজেকে অতি কষ্টে সামলেছি। কথা দিয়েছি ফিরে আসার। বুকে পাথর চেপে চলে গেছি যুদ্ধে।  আমার মনে পড়ে সেই সব স্মৃতি। মার্চের সাতাশ। চুয়াডাঙ্গার যাদব পুর সীমান্তে আমরাই প্রথম পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন সাদেককে হত্যা করি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আহত হয়েছিল সেদিন। আমিও। এই দেখ আমার শাহাদাৎ আঙ্গুল নাই। আমি আঙ্গুল উঠিয়ে জয়নালকে দেখাই। জয়নাল চুপ করে থাকে। যদিও চুপ করে থাকার ছেলে জয়নাল না। সে বলে, মনে আছে যুদ্ধে হারিয়েছিলেন। আঠাশ তারিখে আমাদের সেবার জন্য রেডক্রস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের সাথে টেলিযোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। আমি বলে উঠি হ্যা আমরাই কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত করি। তারিখটা মনে আছে তোমার? মার্চের ত্রিশ উত্তর দিতে দেরি হয়না জয়নালের।

আমার সেই যুদ্ধের কথা মনে পড়ে। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। এখানে আর নয়। চল এখনই বেরিয়ে পড়ি। জয়নাল বলল চলেন যাই। যে স্বাধীনতার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। জীবন দিয়েছি। সেই দেশ কতটা স্বাধীন হয়েছে চলেন দেখে আসি।

বেরুতে গিয়ে হঠাৎ কিসের যেন একটা আওয়াজ শুনতে পায় জয়নাল। থমকে দাঁড়ায়। ভাইজান কে যেন আমাদের কথা কান পেতে শুনছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি একজন দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো, ভাইজান আমারে চিনেছেন। আমি আব্দুল আলিম। আলিমকে দেখে আমি চমকে উঠি। জীবিত থাকা অবস্থায় আলিমকে আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। আলিম আমার সবচে কাছের মানুষ ছিল। বন্ধু ছিল। যদিও আলিম আমার চেয়ে বছর দুয়েকের জুনিয়র ছিল। ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ব্যবস্থাপনার শেষ বর্ষের ছাত্র। ওর চোখে মুখে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। আলিম আমাকে ভাইজান বলে ডাকতো। শুধু আলিম না সকলেই ভাইজান ডাকতো। আগস্টে আলিমকে পাক বাহিনীরা ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ। এতোদিন পর আলিমের ভাইজান ডাক আমার ভালো লাগছে। আলিম বলল ভাইজান আমিও যাব আপনাদের সাথে। আমাকে সাথে নেবেন? কিন্তু বাঁধ সাধলো জয়নাল। যুদ্ধের সময় গোয়েন্দা ছিলাম। মুক্তি পাগলদের হয়ে কাজ করেছি। এই ব্যাটাকে তো দেখিনি। এই ব্যাটা মুক্তিযোদ্ধা না। একে সাথে নেব না। আমি তো রেগে আগুন। ধমক দিই। চুপ করো। কাকে এত ব্যাটা ব্যাটা করো। চেনো একে? চুয়াডাঙ্গার অভিজাত বংশের ছেলে। একটা গর্বিত বাবার সন্তান। গর্বিত মায়ের সন্তান। এরা আট ভাইয়ের মধ্যে পাঁচ পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। তুমি কি জানো আলিম অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ না করলেও তোমার মত মেধা দিয়ে যুদ্ধ করেছে। আমি লক্ষ করি জয়নালের মধ্যে কৌতুহলের মাত্রা বেড়ে গেছে।

আলিম এবার এগিয়ে আসে। ওর হাসি ফোটা ঠোঁটে এখনও হাসি লেগে আছে। কথা বলার সময় হেসে হেসে কথা বলে। আলিম বলল জয়নাল তুমি কেন অনেকেই জানে না আমি এবং আমার মত কত ছেলে গোপনে দেশের জন্য কত কি করেছি।

কথার মাঝে আলিমকে থামিয়ে দিই। রাত পোহাতে এখনো অনেক দেরি। চল ঘুরে আসি। এসে গল্প করা যাবে। একটু পথ পেরুতেই জঙ্গল। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। মধ্যরাত। আমরা একটা খোলা মাঠে এসে দাড়ায়। সেখানে সাত আটজন মেয়ের জটলা। তাদের চোখে ভয়। অন্তরে আতঙ্ক। মুখে করুণ আর্তনাদ। জয়নাল একটু এগিয়ে গিয়ে ব্যাপারটা কি জানার চেষ্টা করে। তারা আর কেউ নয়। একাত্তরে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন মুনছুর আলি কর্তৃক ধর্ষিত আট যুবতী। হয়তো কারো বোন। কারো সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। কিংবা কারো মেয়ে। আমার চোখে-মুখে কৌতুহল। কি বলতে চায় এই যুবতীগুলো। আমি একটু এগিয়ে যায়। একটু এগুতেই আতকে উঠি। সেখানে শোভা। তার সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত। হাতে লাগানো মেহেদী আর লাল রক্ত এক হয়ে একাকার। আজ তেতাল্লিশ বছর পরেও তাকে পরিস্কার চিনতে পারি। কিন্তু শোভা আমাকে পরিচয় দিতে চায় না। আমি একটু এগুতেই সে পিছিয়ে যায়। জয়নাল আমাকে থামিয়ে দেয়। ওদের ভেতরে যাবেন না ভাইজান। খোলা মাঠে মেয়ে ছেলে বড্ড ভয়ানক। আমি আবারও তাকে থামিয়ে দিই। কাকে মেয়ে ছেলে বল? সে আমার স্ত্রী। কথা শুনে জয়নাল চমকে ওঠে। কিন্তু ততক্ষণে শোভা পালিয়ে গেছে। আমি ওকে খুঁজতে থাকি। খুঁজে পাইনা। আমাদের বিয়ের আগে চার বছর চুটিয়ে প্রেম করেছি। স্বপ্ন ছিল ঘর সংসার করবো। সন্তান হবে। অনেক সুখের জীবন কাটাবো। তার কিছুই করতে পারিনি। বিয়ের দুদিনের মাথায় চলে যেতে হল প্রশিক্ষণে। মনে জোর ছিল দেশকে শত্রু মুক্ত করে ফিরবো। শত্রুমুক্ত করেছিলাম কিন্তু ফিরতে পারিনি।

আমার মৃত্যু পাকিস্তানিদের হাতে হয়নি। হলো এক বাঙ্গালীর হাতে। তাকে বাঙ্গালী পরিচয় দিতে ঘৃণা হয়। যুদ্ধের প্রায় শেষ মূহুর্তে ধরা পড়ে গেলাম। সেই বাঙ্গালী আর কেউ না ছাদেক আলি বিশ্বাস। ব্যাটা পাকিস্তানিদের গুপ্তচর ছিল। মুখে মুক্তি মুক্তি করলেও অন্তরে ছিল পাকিস্তান। মিষ্টি কথায় চিড়া ভেজাতে তার জুড়ি ছিল না। কিন্তু কে জানতো তার মিষ্টি কথার আড়ালে বিষ ছিল? আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। বরং তাকে ভরসা করতাম। বিপদে আপদে কাছে চাইতাম। কিন্তু সে-ই আমার গলায় ছুরি চালিয়েছিল। এমন সময় আলিম মুখ খোলে। এতক্ষণ সে চুপ করে ছিল। ঐ ব্যাটাই তো আমাকে ধরিয়ে দেয় ভাইজান। কুত্তা মুনছুরের সামনে আমাকে বেনয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। প্রথম দেখাতে আমিও চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। অবাক হয়েছিলাম। আমি আলিমকে জিজ্ঞেস করি, ও তোমাকে চিনলো কি করে। সোজা উত্তর আর দশজনের মত আমিও তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভরসা করেছিলাম।

জয়নাল আমাদের থামিয়ে দেয়। চলেন ভাইজান। এমন করলে ভোর হয়ে যাবে। ফিরতে পারবো না। আমরা দ্রুত এগুতে থাকি। কিছুদুর যেতে না যেতেই একটা কবর স্থান চোখে পড়ে। পাঁকা। মাথার কাছে নেইমপ্লেট দেওয়া। লেখা আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদেক আলি বিশ্বাস। আমি অবাক হই। এই শালার কোন দেশে বাস করছি আমরা। এরা রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দেয়। আমার মাথা গরম হয়ে যায়। এত কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করার মানে কি এই?

জয়নাল বড় অস্থির। দাঁড়াতে চায় না। পা চালান ভাইজান। ক্রমেই আমরা তিনজন এগিয়ে যাই সম্মুখে। কিছুদূর এগিয়ে বুঝতে পারি এটা নগর। বড় বড় দালান। মনটা ভালো লাগছে। জয়নাল বলল, দেখছেন ভাইজান আমার দেশ কত বড়লোক হৈছে। আমার মুখে হাসি। আনন্দের জোয়ার। কিছুদূর আসতেই দেখি আলিম নাই। ছেলেটি হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যায়। রাস্তার মোড়ে আসতেই কয়েকটি যুবকের জটলা দেখতে পায়। কাছে  এসে দেখি জটলা না। অস্থির কিছু যুবক। হাতে ভারি ভারি অস্ত্র। আধুনিক। চকচকে। বোমা, ভোজাল, ছুরি আরও অনেক কিছু। হঠাৎ প্রশ্ন জাগে মনে দেশে তবে আবার কি যুদ্ধ চলছে? জয়নালকে বলি, যাও দেখে আসো। জয়নাল এগিয়ে যায় সম্মুখে। আলিম কোথা থেকে যেন হাফাতে হাফাতে এসে বলে ভাইজান সর্বনাশ! আমি কৌতুহল ভরে আলিমকে জিজ্ঞেস করি ঘটনা কি? আলিম বর্ণনা দেয়, একটি মেয়ের গোঙানির আওয়াজ শুনে এগিয়ে যায় ভাইজান। কারা যেন ধর্ষণ করে ফেলে রেখে গেছে। মেয়েটি অসুস্থ। যন্ত্রনায় মাটিতে গড়াগড়ি খায়। আমার মনে ক্রমেই কৌতুহল বাড়ে। আমি আলিমকে পাঠাই। যাও। দেখে আসো ওরা কারা? আলিম চলে যায়। মনে মনে আশঙ্কা করি আবার কি দেশে নারীবাজ পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন মুনছুরের আগমন ঘটলো? দেশে কি আবার যুদ্ধ বাধলো?

জয়নাল ফিরে আসে। আমার কৌতুহলের মাত্রা বাড়ে। ভাইজান ওরা বেকার পোলাপান। আয়ে বিয়ে পাশ। চাকরি পায়নি। কর্মসংস্থান নাই। কি করবে? অস্ত্র নিয়ে ছিনতাই করে। পেট বাঁচাতে ডাকাতি। আলিম ফিরে এসে জানায় ভাইজান যুদ্ধ না। ওরা বিপথগামি পোলাপান। রাস্তায় বসে নেশা করছিল। মেয়েটি একটি অফিসে কাম কাজ করে। রাতে বাসায় ফিরছিল। একলা পেয়ে ধরে নিয়ে গেছে। এরকম নাকি প্রায়ই হয় এখানে।

আমি নিরব। আমার মুখে কথা ফোটে না। তাহলে আমার দেশ কোন পথে হাঁটছে। দেখার বিষয়। কিছুদূর হাটতেই আমরা শহর ছেড়ে গ্রামের পথ ধরেছি। গ্রামে পৌঁছে অবস্থা জানতে আলিমকে পাঠাই। আলিম জানায় গ্রামের কৃষকদের এখন করুণ অবস্থা। অভাব। কৃষি কাজ ছেড়ে দিতে চায়। প্রয়োজনে ভ্যান রিক্সা চালিয়ে দিন যাপন করবে। কৃষি কাজ করবে না। আমি তাদের অভিযোগ জানতে চাই। আলিম বলে কৃষকদের ফসলের দাম নাই। ন্যায্য মূল্য পায় না। ভূর্তকিও পায় না। ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। কৃষকেরা হতাশ। অভাবীরা আরও অভাবী। আমার বুঝতে বাকি নেই ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির মাধমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। বড়লোক হয়। মার খায় গরীবে। গরীব থেকে আরও গরীব হয়। জয়নাল আমাকে বলে ভাইজান একি হাল দেশের। দেশ তো অর্থনৈতিক হুমকির মুখে। অর্থনৈতিক স্বাধীন না হৈলে স্বাধীনতা কোথায়? ভাইজান কবে দেখবেন দেশে শিক্ষা নাই। সব অশিক্ষিতে ভরে গেছে।

আমি অবাক এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় এলো কি করে! জয়নাল বলে ভাইজান দেশে শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা বেশি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইও বেশি। শিক্ষিত হয়ে যদি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করতে হয় তাহলে এত পয়সা খরচ করে শিক্ষার প্রয়োজন কি? আলিম বলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। শিক্ষা না নিলেও অবশ্য অসুবিধা নাই। শুধু একখান সার্টিফিকেট দরকার। দেশ এখন সার্টিফিকেটে ভর করে চলে। সার্টিফিকেট নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি। দেখেন না ভাইজান একাত্তরে অনেকেই ভয় পেয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। তাদের অনেকেই দেশে ফিরে সার্টিফিকেট নেয়। মুক্তিযোদ্ধা। খোঁদ মুক্তিযোদ্ধা। ভ্যাজাল নেই। আমার চোখে মুখে বিস্ময়। এর সাথে বেকারত্বের কি বোঝাতে চাও?

ভাইজান যেভাবে সার্টিফিকেট বিক্রি চলছে! দেখবেন সেদিন বেশি দূরে নাই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করতেও বি,এ পাশের সার্টিফিকেট লাগবে। সেদিন এগুলো হবে মহান পেশা। এই পেশাতেও কোটা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা। জয়নাল বলে, ভাইজান আলিম মিথ্যা বলে নাই। দেশ স্বাধীন হইছে দেশের মানুষ স্বাধীন হয়নি। এখনও পরাধীন।

আমি হতাশ। এরই জন্য কি মুক্তিযুদ্ধ? নারী আজও পরাধীন। চলতে ফিরতে সমস্যা। চারিদিকে বেকারদের আর্তচিৎকার। আহাজারি। আমার হার্টবিটের ওঠানামা বেড়ে যায়। পা দুটো চলতে চায় না। মাথাটা ঘুরে আসে। ঘোর লাগে চোখে। আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি। সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। চারিদিকে সুনসান নিরবতা নামে। হঠাৎ করেই জোয়ারের মত অজস্র হাসির শব্দ কানে আসে। হাহা হিহি হোহো করে হাসছে সবাই। যেন অট্টহাসির পাল্লা। মনে হয় কেউ যেন ঠাট্টা করছে। পরিহাস করছে। আমি চিৎকার করে উঠি। কে? কে ওখানে? কিন্তু কারো হাসি বন্ধ হয় না। বরং তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হয়। উফ আর সহ্য করতে পারি না। চেনার আকাঙ্খা বেড়ে যায়। একটি প্রশ্ন বারংবার হৃদয়ের মাঝে আকুলি বিকুলি করে। আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে। আমাকে দগ্ধ করে। আমার কৌতুহলের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। ওরাই কি তাহলে একাত্তরের পাপাত্মা? আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সবকিছু আবছা হয়ে আসে। আমি ক্রমাগত চোখে অন্ধকার দেখি।


ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu