রিফাত মাহমুদ

নোনা অশ্রু

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

ই গল্পটি একটি দলকে নিয়ে। ছয় জনের একটি তরুণ দল। হাসান, জয়, রাসেল, শিবা, সুমিত ও প্রান্তদের দল। প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দলটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, মঞ্চনাটক ও নানান ধরনের সৃজনশীল কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।

 
তাহলে গল্পটি শুরু করা যাক…
 
আর মাত্র তিনদিন পর পহেলা বৈশাখ। বিষয়টি সকাল থেকে হাসানকে বেশ ভাবাচ্ছে। তার বারবার মনে হচ্ছে, এই দিনটাতে কিছু একটা করা উচিৎ। প্রতি বছর ঢাকার নানা স্থানে পান্তা ইলিশের অনেকগুলো স্টল খোলা হয়। তবে সে আয়োজনগুলো নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে থাকে। তাই হাসান ভাবছে এবছর তারা একটি স্টল খুলবে। সেখানে মাত্র ৭ টাকায় মরিচপোড়া ভর্তা দিয়ে এক থাল পান্তাভাত খেতে পাওয়া যাবে।
 
বিষয়টি নিয়ে হাসান দলের প্রত্যকের সাথে আলাপ করল। সকলের তাতে সম্মতিও পাওয়া গেল।
 
অবশেষে চলে এলো বৈশাখের প্রথম দিন– পহেলা বৈশাখ। হাসানের পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা একটি স্টলও খুলে ফেলল। সকাল থেকে অনেক গ্রাহকও এলো তাদের স্টলে। সময় যেতে থাকে। গ্রাহকদের চাপও কমতে থাকে। খাবারও প্রায় ফুরিয়ে আসে। হঠাৎ শিবার চোখ পড়ে ১০ থেকে ১২ বছরের একটি পথশিশুর উপর। শিশুটি অনেকক্ষণ যাবত এদিকেই তাকিয়ে আছে। শিবা শিশুটিকে ডাকল। অনেকটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সে এগিয়ে এলো  শিবার দিকে।
 
– কি রে, ভাত খাবি?
 
– না।
 
– না কেনো? খিদা লাগে নাই তোর?
 
শিশুটি কিছু বলল না। শুধু চোখগুলো নামিয়ে ফেলল। শিবা বুঝতে পেরেছে শিশুটির কাছে টাকা নেই। শিবা শিশুটির হাত ধরে টেনে স্টলের ভিতর নিয়ে এনে বলল– তুই বোস এখানে, তোর টাকা দিতে হবে না।
 
কথাটি বলেই শিবা চলে গেল শিশুটির জন্য খাবার নিয়ে আসতে। শিশুটি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শিবার দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিবা এক থাল পান্তা ও মরিচপোড়া ভর্তা এনে রাখল শিশুটির সামনে। শিশুটি তখনও একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো শিবার দিকে। শিবা অনেকটা ধমকের সুরেই বলে উঠলো– কী হলো, খাচ্ছিস না কেন? বললাম ত তোর টাকা দেয়া লাগবে না।
 
শিশুটি কিছু না বলে খেতে শুরু করল। শিবা তার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শিশুটির খাওয়া দেখছিল। তার খাওয়ার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, সে প্রচুর ক্ষুধার্ত। শিবার চোখ ভিজে উঠলো। আর নিজের অজান্তেই তার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু এসে পড়ল শিশুটির থালের উপর। শিশুটি তা দেখতে পেয়ে শিবার দিকে তাকালো। শিশুটির চোখে চোখ পড়েতেই শিবা অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে তার চোখ মুছার ব্যর্থ চেষ্টা চালাল। শিশুটি তখনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শিবার চোখের দিকে। শিবা লক্ষ করেছে যে তার চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু শিশুটির থালে পড়েছে আর শিশুটিও তা দেখতে পেয়েছে। তাই সে তড়িঘড়ি করে শিশুটির থাল নিতে গিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল– ওহ… ভাতটা নষ্ট হয়ে গেছে, দে বদলে নিয়ে আসি।
 
শিশুটিও থালটি আটকে ধরে বলে উঠলো– থাক ভাইজান লাগবো না। আমার মায় কয় চোখ্যের পানিত লবণ আছে। আর ভাতের লগে এট্টু লবণ না হইলে স্বাদ পাওন যায় না।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu