মিনহাজ শোভন
মিনহাজ শোভন। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওলামারী গ্রামে। পিতা নূরুল ইসলাম; মাতা আমেনা খাতুন। পড়াশুনা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএ অধ্যয়নরত।
মিনহাজ শোভন

স্বপ্ন কিংবা বাস্তব বিভ্রাট

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

মাঝে মাঝেই একটা দুর্বিষহ স্বপ্ন আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। স্বপ্ন এলে ভয়, রোমাঞ্চ আর অনিশ্চয়তা আমাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে। তখন আমি খুব করে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে চাই। কিন্তু আমি বের হতে পারি না। ধীরে ধীরে দুর্বিষহ সেই স্বপ্ন আমাকে গ্রাস করে ফেলে একেবারে। আমি অসাড় হয়ে দেখতে থাকি সেই দৃশ্য। এখন প্রশ্ন হলো আমার সেই স্বপ্ন কি আমার অবচেতন মনের কল্পনা? না আমার চেতন ভাবনা? আমি এই প্রশ্নের সমাধান শত চেষ্টা করেও বের করতে পারিনি। তবে যখন এই স্বপ্ন আসে তখন বাইরের জগৎ থেকে আমি একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি না। স্বপ্নের সাথে সাথে জামাল মাস্টারের বাসার ছাদ থেকে আসা কবুতরের ঘুমজড়ানো ডাক, হালকা মিহি সুরে ডেকে ওঠা পেঁচার সুর, আছাদুল্লাহর বড় মোরগটার প্রথম ডাক, খালের ওপারের কামার বাড়ি থেকে আসা লোহা পেটানোর ঠুং ঠাং শব্দ সবই আমার কানে আসে। বরং এই শব্দগুলো আমার স্বপ্নটাকে আরো ভৌতিক করে তোলে যেন। শব্দগুলোর সাথে ভোর রাতের স্তব্ধতা আর ভয়ংকর সেই স্বপ্ন সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে স্বপ্নেরর ভেতর থেকে ছিটকে বের হয়ে আসতে চাই কিন্তু সম্ভব হয় না। স্বপ্নের ভেতরে আমি কঠোরভাবে আটকে থাকি।

আমার এই স্বপ্নগুলো সাধারনত মধ্যরাত পার হলে তারপর আসে। সময় যেন নির্দিষ্ট থাকে। তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শুরুর সাথে সাথেই বিশাল লম্বা, সাদা দাড়ি আর থেতলানো মুখ নিয়ে এক বৃদ্ধ এসে আমার শিয়রে বসে। তার চোখদুটো কোটরের খুব গহীনে ঢুকে আছে। লাল টকটকে সেই চোখের রং। প্রথম যেদিন আমি দেখি সেদিনকার কথা আমার খুব ভালো মনে আছে। সেদিন আমি ভয় পেয়ে যেই চিৎকার দিতে যাব অমনি তার বিশাল হাত দিয়ে বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছিলো আমার মুখ। অনেক্ষণ ধরে রাখে এভাবে। তারপর আমার দম যখন বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয় তখন আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। আমি দম নিয়ে বাঁচি। এরপরে ভয় পেলেও আর কখনো চিৎকার করবার চেষ্টা করিনি। আর তারপর যখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম সে আমার কোন ক্ষতি করতে আসেনা তখন থেকে আমার মনের সমস্ত ভয় চলে গেছে।

প্রথমদিন আমার মুখ থেকে লোকটা হাত সরিয়ে নেবার পরে আমি যখন জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকি তখন লোকটা হাসতে আরম্ভ করে। তারপর বলতে থাকে, ‘মানুষদের এই এক সমস্যা। একটুখানি বাতাস বন্ধ কইরা রাখলেই কম্ম শ্যাস। এগো আবার হ্যাডাম দেখছেন? পুরা পৃথিবীটারে একেবারে নষ্ট কইরা দিল। ওপরওয়ালা ক্যামনে যে এইগুলারে বানাউছে হেইডা সেই ভালো জানে। আমরা মূর্খ। সব জ্ঞান সে নিজের কাছে রাইখা তার থেইকা একাটু একটু কইরা আমাগো মাঝে বিলায়ে দ্যান। সেইডা আবার সবাই পায় না। এই যেমন ধরেন একজন একেবারে গা এলাই দিয়া জীবন কাটাইতে থাকে। আর ক্যামনে মাইনশের সম্পদ লয়া বড়লোক হওয়া যায় এই চিন্তা নিয়া ব্যস্ত থাকে। স্রষ্টা বইলা যে কিছু একটা থাকবার পারে এগুলা তাগো মাথার মইদ্যেই নাই। এই লোক গুলান আল্লার এই জ্ঞানের ভাগ মনেহয় পায় না। এক্কেরে খালি মাথা লইয়া ঘুইরা ব্যাড়ায় সারাডা জীবন।’

লোকটা এই পর্যন্ত বলে থেমে যায়। শুধু থেমে যায় না। একেবারে হঠাৎ করে হারিয়ে যায়। আমি এদিক সেদিক তাকে খুজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তার দেখা মেলে না। আমার মনের ভেতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হতে থাকে। আমার মাথার মধ্যে রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করতে থাকলে আবার অল্প সময়ের মধ্যে আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলি। আবার গভীর ঘুমের মাঝে তলিয়ে যেতে থাকি।

ঘুম বললেই কি আর ঘুম হয়! এবার শুরু হয় আসল ঘটনা। আমি অন্ধকার ঘুমের মাঝে তলিয়ে যেতে থাকি। কিছুক্ষণ পরে আমার সামনে এক অপরূপ সুন্দর এক নদী উন্মোচিত হয়। আমি অবাক হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকি। চারিদিকে সবুজ বন। বনের মাঝদিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট সুন্দর এই নদী। আমি ঘুমের মধ্যে এই দৃশ্য দেখে বেশ পুলকিত হই। কিছুক্ষণ আগের আমার ভেতরের সকল ভয় আস্তে আস্তে এই সুন্দর পরিবেশের সাথে মিশে যেতে থাকে। তখন একটা ছোট পাহাড়ের দিকে আমার চোখ আটকে যায়। অপরূপ সেই পাহাড় থেকে বয়ে চলে আসা ঝর্ণাধারা। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকি। আমার মনে সহসা পাহাড়টা খুব কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে জাগে। আমি পবিত্র সবুজ তৃণলতা পায়ে মাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় পাহাড়ের দিকে। সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে সবুজ বন ভেদ করে দক্ষিণা বাতাসে ঝর্ণার শীতল জল ছুটে এসে আমার মুখে লাগে। আমি শিহরিত হয়ে পড়ি। ঝর্ণা, নির্মল জল, সবুজ- শ্যামল গাছ আর দক্ষিণা বাতাসে আমি বিমোহিত হয়ে পড়ি। আমি এক অন্যরকম মোহে পড়ে যায়। এর মাঝে হঠাৎ এক শিশুর কান্নার শব্দে আমার মোহ কেটে যায়। হঠাৎ ভেসে আসা এই কান্নার উৎপত্তিস্থল খুজতে থাকি আমি। একবার, দুইবার, তিনবার শোনা যায় সেই শব্দ। তারপরে থেমে যায়। তৃতীয়বার শব্দ শুনে আমার মনে হয় পাহাড়ের ওপর থেকে আসছে এই শব্দ। আমি পাহাড়ে ওঠার পথ খোঁজ করতে থাকি। একপাশে জলে ভেজা পিচ্ছিল পথ দেখতে পাই। পাহাড়েন গা বেয়ে পিচ্ছিল পাথরে পা রেখে খুব সাবধানে ধীরে ধীরে পাহাড়ে উঠতে শুরু করি। খুব বড় নয় কিন্তু পিচ্ছিল পাথর বেয়ে পাহাড়ে ওঠা কষ্টসাধ্য। আমার একবার মনে হচ্ছিল ফেরত যায়। কিন্তু এই রহস্যের সমাধান না পেলে আমার কখনো শান্তি হবে না সেটা খুব ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছিলাম। তাই ধীরে ধীরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে শুরু করলাম। অনেক কষ্টের পর পাহাড়ের চূড়ার কাছাকাছি উঠে যখন উপরে তাকালাম তখন অন্য এক পরিবেশ। অন্য এক যগৎ সেখানে। ক্লান্ত, ক্লিষ্ট লোকজনের এক বিশাল মিছিল আমার চোখে পড়লো। সবাই লোহার মতো শক্ত মাটি থেকে পানি বের করছে। সেই পানি সেচে পানির ঝর্ণা বানিয়েছে তারা। যে ঝর্ণাবাঁচিয়ে রেখেছে নিচের সমস্ত সবুজ সমারোহ। তাদের এই মহাআত্মত্যাগ কথা ভাবতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে ভেজা পাথরে পা পিছলে পড়ে যায় নিচের খাদে। খাদের পবিত্র জলে পড়বার সাথে সাথে জেগে উঠি আমি। জেগে ওঠার পরে আমার বুকের ভেতর ধড়ফড় করতে থাকে। আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে থাকে যেন। আমার মাথার ভেতরে শুধু আটকে থাকে বন, নদী, ঝর্ণা, পাহাড় আর পাহাড়ের ওপরের শক্ত মাটি খুড়ে পানি তুলতে থাকা সেসকল আত্মত্যাগী মানুষজনের কথা। আমি ভাবতে থাকি সৌন্দর্যের পিছনে লুকিয়ে থাকা হাজারো কষ্টের গল্পের কথা।


২.


সেদিন রাতের সেই স্বপ্ন দেখবার পর থেকে আমি এলোমেলো হয়ে যেতে থাকি দিন দিন। আমার মাথার ভেতরে শুধুমাত্র নদী, জল আর গাছপালার চিন্তা আটকে থাকে। তারপর থেকে শুকিয়ে ওঠা নদী, গাছ দেখলে আমার মনের ভেতর হাহাকার শুরু হয়ে যায়। আমার মনে হয় সাত সমুদ্রের থেকে জল এনে ভরিয়ে দেই সমস্ত নদীবক্ষ। সে জলের পরশে ধীরে ধীরে বেঁচে উঠুক মৃতপ্রায় সমস্ত গাছেরা। চারিদিক সবুজে সবুজে ভরে উঠুক। সবুজে ভরে ওঠার কথা বললেই তো আর সবুজ হয়ে যায় না সবকিছু। সবুজ বানাতে হলে পরিশ্রম করতে হয় কঠোর। চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে হয় এক ফোঁটা বৃষ্টির আশায়। সেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ধরে ধরে গড়ে তুলতে হয় জলের নহর। তবেই না সবুজ হয়ে উঠবে সবকিছু। সুন্দর হয়ে উঠবে চারিপাশ।

প্রথম রাতের পর থেকে প্রতিরাত আমি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে জেগে অপেক্ষা করি সেই বৃদ্ধের জন্যে। কিন্তু কোন লাভ হয় না। বৃদ্ধের দেখা মেলে না। আমি বিছানায় শুয়ে ঘরের সিলিং দেখতে দেখতে হিসেব কশতে থাকি জীবনের না মেলা অসংখ্য অঙ্কের। কিন্তু কি আজব! আমার সমস্ত অঙ্কের সমাধান আটকে যায় একটা সুন্দর ঝর্ণা আর খরস্রোতা নদীর সাথে সাথে। জীবন যেন এক খরস্রোতা নদী। এঁকেবেঁকে চলতে থাকে নিজের লক্ষ্যের দিকে। মানব জীবনের লক্ষ তো একটাই। মৃত্যু। মৃত্যু ছাড়া একটা জীবন কখনো পূর্ণতা পায় না। এটা দিনের আলোর মতো বাস্তব সত্য। যাকে অস্বীকার করার মতো সামর্থ আমাদের নেই। তবে আমাদের কি মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে থাকা উচিত? না কি মৃত্যুকে বুকে নিয়ে অনন্ত-অসীমের স্বপ্ন দেখা উচিত? এর উত্তর আমার জানা নেই। আমি বাঁচতে চাই জীবনের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে। সেই জীবনকে ভালোবেসে মৃত্যুকে আমন্ত্রণ করতে পারা অনেক সাধনার ব্যপার। আমি সাধনা করতে চাই। আমি রাতের পর রাত জেগে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকতে চাই।

কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে মৃত্যুকে ছাপিয়ে আমার স্বপ্নটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেই বৃদ্ধের অপেক্ষা করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে আমার চোখের নিচে কালচে দাঁগ পড়ে যায়। আমার শরীর দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছে। তবুও আমি অপেক্ষায় থাকি। স্বপ্ন আসবে, সাদা আলখোল্লা পরা বিশালদেহী সেই বৃদ্ধ আসবে। জীবনের সব জটিল প্রশ্নের সমাধান দিয়ে যাবে। সেই সমাধানে জীবন হয়ে যাবে সুন্দর। আমি অপেক্ষায় থাকি।

অনেক দিন এভাবে অপেক্ষায় থাকার পরে আমি যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকি সেই সময়ে আমার অপেক্ষা শেষ হয়। বর্ষার অন্ধকার এক ভোরে যখন আকাশে মেঘ করে চারিদিকে নিকশ কালো অন্ধকারে নেমে আসে, আকাশ থেকে ঝুম বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির ফোঁটা আমার ঘরের টিনের চালের ওপর আছড়ে পড়ে রোমান্টিক সুর তোলে। সেই সুরে মোহিত হয়ে আমার চোখ যখন ঘুমের আবেশে বন্ধ হয়ে আসে তখন সেই বৃদ্ধ আমার মাথায় হাত দিয়ে শিয়রে বসে। তাকে দেখার পরে আমার সমস্ত অস্থিরতা যেন নিমিশেই হারিয়ে যায়। আমি একেবারে শান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকি। পাশের ঘর থেকে মায়ের চাপা কান্নার শব্দ আমার কানে আসে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। চারিদিকে শমশমে শব্দ। আমি খুব প্রশান্তি নিয়ে বৃদ্ধের লালচে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। বৃদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে,

‘তোমরা মানুষেরা খুব অল্পতেই অধৈর্য হয়ে পড়ো। কোন একটা কিছুর অপূর্ণতা তোমরা মেনে নিতে পারো না একেবারেই। অপূর্ণতা দেখলেই তোমরা অধৈর্য হয়ে পড়ো। সেই অধৈর্যতা তোমাদেরকে একেবারে নিঃশেষ করে ছাড়ে। তোমাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য বিলীন হয়ে যায় তোমাদের সবকিছু।’

এই কথাটুকু বলেই বৃদ্ধ হারিয়ে যায়। আমার চোখে খুব আরামের ঘুম নেমে আসে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। আমার হালকা শীত করছে। পাশের কম্বলটা গায়ের সাথে জড়িয়ে নিলাম। আমি খুব ধীরে ধীরে গভীর ঘুমের ভেতর তলিয়ে যেতে থাকি। ঘুমের অন্ধকারে তলিয়ে যাবার কিছুক্ষণের মাঝে আমি একটা ফাঁকা প্রান্তরে নিজেকে আবিস্কার করি। চারিদিক ফাঁকা। পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। চারিদিক মরা গাছে ভর্তি। মরা গাছের ডালপালা মাড়িয়ে আমি এক পা, দু’পা করে এগোতে থাকি সামনে। হঠাৎ আমার নাতে তীব্র গন্ধ আসে। আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে চায়। খুব কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চারিপাশে ভালোভাবে দেখতে থাকি। মরা গাছের ভেতরে ভেতরে অসংখ্য মরা পশু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারই পঁচা গন্ধ নাকে এসে লাগছে। আমি ভয় পেয়ে ভাবতে থাকি – একোন মৃত্যুপুরী! চারিপাশে আগুনের মতো গনগনে রোদ। কোথাও কোন ছায়া নেই। ভ্যাপসা গরম আর বিকট গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। গরম মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সাথে সাথে আমার গায়ে ফোসকা পড়তে আরম্ভ করে। আমি আবার মাটি থেকে উঠে পড়ি। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তি আমার গায়ে থাকে না। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ি। তখন আকাশে বিশাল শব্দ হয়। আমি আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাই আকাশে একটুকরো মেঘ। আর মেঘের নিচে নিচে দাঁড়িয়ে আছে আলখোল্লা পরা সেই বৃদ্ধ। বৃদ্ধ আমাকে দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করে- পানি দরকার? বৃষ্টি নেবে?

আমি অবাক হয়ে বৃদ্ধের দিকে চেয়ে থাকে। বৃদ্ধ আবার আমাকে বলে- বৃষ্টির জন্য কোন কিছু ত্যাগ করতে হবে। পারবে?

আমি বৃদ্ধের কথায় সম্মতি জানায়। আমি বলি- আমি ত্যাগ করতে প্রস্তুত। এক ফোঁটা বৃষ্টি আমার খুব প্রয়োজন।

আমার কথা শুনে বৃদ্ধ হা হা করে হাসতে থাকে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে তোমাদের তো সবই ছিলো। পানি, গাছ, নদী, মেঘ সবই তো তোমাদের ছিলো। কিন্তু তোমরা সব নষ্ট করেছ। সবকিছুকে অবহেলা করেছ। এর জন্য তোমার জীবন ত্যাগ করলে তবেই বৃষ্টি পাবে।

আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি বৃদ্ধের মুখের দিকে। আমার ভাবনা শক্তি হারিয়ে গেছে। আমি কিছু ভাবতে পারি না। আমার এখন পানি দরকার। আমি বৃদ্ধের কথায় রাজি হয়ে যায়। আমি দেখতে থাকি খুব সন্তর্পণে আমার আত্মা আমার ভেতর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে থাকি। তারপর কী ঘটে আমার আর কিছু মনে থাকে না। আমি গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu