১.
অফিসের মোভমেন্ট খাতায় ডেভিড লেখে, গুলিয়াখালী। এখন অক্টোবর। কার্তিক মাস। শনিবার। আজ অফিস খোলার দিন। শহর থেকে বাসে আসতে আসতে দেখেছে, ধানক্ষেতের আলে সারি সারি সীম গাছ। সাদা আর বেগুনী ফুল। ফুলের উপর দোয়েল পাখির পেটের মতো সাদা কুয়াশা ঝুলে আছে।
মোভমেন্ট রেজিস্টারে গুলিয়াখালী লিখে প্রোগ্রাম অফিসার হারুন ভাইর কাছে যায় ডেভিড।
বলে, আজ গুলিয়াখালী শিশুমেলায় যাবে। চাইল্ড ম্যাসেজ পাঠাতে হবে ডোনারদের কাছে।
এবারের সাবজেক্ট- নিসর্গ। ফুল, পাখি, গাছ– শিশুদের এরকম কিছু একটা আঁকতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার ডোনার সংগঠনের মিটিং ছিলো ঢাকায়। সারা দেশের পাটনার সংগঠনগুলোকে চাইল্ড ম্যাসেজ ফর্ম আর বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছে সিলভিয়া আপা। সিলভিয়া আপা এ প্রজেক্টে ডোনার সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর।
হারুন ভাই একটা রিপোর্ট তৈরি করছিলো। আদিবাসী তরুনী ধর্ষণের উপর। ছোট দারোগাহাট পাহাড়ে ছয় পরিবার মিলে ছোট ত্রিপুরা পাড়া আছে। গত সোমবার রাতে পাড়ায় ভারতী ত্রিপুরা ধর্ষিত হয়। তার স্বামী রবীন্দ্র ত্রিপুরা গিয়েছিলো। ত্রিপুরাদের ভেতর মাইক্রো ক্রেডিডের কাজ আছে ডেভিডদের সংগঠনের। এর পাশাপাশি স্যানিটেশন, অধিকার বিষয়ক কাজও করে তারা। ধর্ষণের খবর পেয়ে ডেভিডদের অফিস থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
তারই একটা রিপোর্ট তৈরি করছিলো হারুন ভাই। ডোনার সংগঠনকে কাজের সব ডকুমেন্ট পাঠাতে হবে। আদিবাসী, শিশুশিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ গ্রুপগুলোর ভিতর অধিকার ভিত্তিক কাজ করে ডেভিডদের প্রজেক্ট। হারুনভাই এ প্রজেক্টের বস। ডেভিড হারুন ভাইকে গুলিয়াখালী যাচ্ছে বললে, হারুন ভাই বলে, যান। এমনভাবে চাইল্ড ম্যাসেজ পাঠাবেন যাতে ডোনাররা সন্তুষ্ট হয়ে প্রজেক্ট আরো দুবছর বাড়ায়।
একথা বলে ডেভিডের দিকে চোখে হাসি নিয়ে তাকায় হারুন ভাই। অফিস থেকে বেরুলে ডেভিড দেখে পিটপিট বৃষ্টি পড়ছে।
২.
গতকাল রাতেই রোকসানাকে ফোন দিয়ে ডেভিড বলেছিলো, সকাল নটার মধ্যেই কেন্দ্রে আসবে। রোকসানা গুলিয়াখালী শিশুমেলার ফ্যাসিলেটর। গতকাল বিকেলে তার বাড়িতে মগপুকুরীয়া থেকে ননদ এসেছে। সঙ্গে জা। বিয়ের পর এই প্রথম বাপের বাড়ি আসা। তাজা জাইল্লার মাছ দিয়ে বেগুন রেঁধেছিলো রাতে। ননদ বলে, ভাবী হজরে মেলা চিতল বানাইয়ো। জাইল্লার মাছ দি হুয়াদ হৈব।
ননদ আসাতে সকালে মেলা চিতল পিঠা বানায় রোকসানা। এর ভেতর স্কুলে যাবার তাড়া। অন্যদিন আধাঘন্টা দেরিতে গেলেও সমস্যা হয় না। আজ আবার তার বস ডেভিড ভাই আসবে বলে ফোন দিয়েছে।
যতটা সম্ভব গুছিয়ে আর বাকিটা ননদকে বুঝিয়ে দিয়ে বাইরে বেরুতে গিয়ে দেখে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এমন বৃষ্টি ছাতা না নিয়ে গেলে চুল ভিজবে আর নিয়ে গেলে মনে হবে আলাদা ঝামেলা। না পারা যায় ভিজতে না পারা যায় ছাতা নিতে। তারপরও ছাতা নিয়ে বের হয় রোকসানা।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদুর গেলেই স্কুল- শিশুমেলা। প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশুদের ছড়া শেখানো হয়। গান শেখানো হয়। দেয়া হয় বর্ণপরিচয়। তার সঙ্গে আছে ড্রয়িং। সব রোকসানাকেই করতে হয়। রোকসানা ইন্টার পাশ। প্রইমারী স্কুলে থাকতে খেলাঘরের গানের স্কুলে গান শিখেছিলো। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার গানের স্কুল হত। এইটে উঠার পর আর গান শেখা হয়নি। গাওয়াও না। প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারির পাশাপাশি তার বাবার মনের ভেতর এক ধরনের সুফীভাব ছিলো। ওরশ মেলায় ফকিরি গানের জলসা, ছ্যামা মাহফিলে যেতেন। চাইতেন মেয়েরা একটু গান জানুক।
তার স্বামী খোরশেদ ছিলো সেনাবাহিনীতে। সার্জেন্ট হিসেবে অবসরে আসে। মিশনে গিয়েছিলো সৌদি আরব। বিদেশে থেকে এসে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করে। লোকজন চেনে খুরশিদ মেম্বার হিসেবে। এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট।
রোকসানার বিয়ের পর আর গান গাওয়া হয়নি। বাপের বাড়ি থাকতে মাঝেমাঝে গলা ছেড়ে গান গাইতো। শ্বশুর বাড়ি আসার পর কখনো রান্না করতে করতে গুনগুন করে গেয়েছে কি না গেয়েছে মনে নেই। তবে এখন স্কুলের শিশুদের সাথে গায়। গলা ছেড়েই গায়।
রোকসানার বাড়ির ঘাটা পেরুলে ধানক্ষেত। জমির পর জমি শাইলখোন্দের ধান। অনেক দূরে ধানী জমির ভেতরেই তিনতলা বাড়ি। ছাদে সোলার। রোকসানা টিপটিপ বৃষ্টির ভেতর ছাতা খুলে দ্রুত হাটে। ডেভিড ভাই ঘড়ি ধরা মানুষ। ন’টার মধ্যেই স্কুলে এসে হাজির হয়ে যাবে।
হাঁটতে হাঁটতে তার চোখ যায় ধান না হওয়া নিচু জমিতে। মাছ চাষ করে জসিম। সেখানে কি সুন্দর কলমি শাক! এর ভেতর রোকসানা চলে আসে স্কুলের কাছাকাছি। প্রায় ত্রিশজন ছেলেমেয়ে আছে স্কুলে। বয়স চার থেকে পাঁচ বছর। রোকসানা কাজ করছে চার বছর ধরে। রোকসানা আসার আগেই স্কুলের সামনে চার-পাঁচজন ছেলেমেয়ে এসে দাড়িয়ে আছে। রোকসানা এসে স্কুল ঘরের দরজা খুলে দেয়। সামনের বাগানে দেখে ফুল ফুটেছে। নয়নতারা ফুল।
৩.
ডেভিডের অফিসের সামনে বিন্দারমার দীঘি। দীঘির ওপারে বড়বাজার। বড়বাজারেই ডেভিড ভাড়া থাকে। প্রদীপ ভট্টদের দোতালা বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায়। গোটা ছাদে একটাই ঘর। এটাচ বাথরুম। ঘরের উপর টিন শেড ছাদ। ফ্লাইউডের সিলিং। বর্ষায় ঝুপঝুপ বৃষ্টির শব্দ হয়। শীতকালে জোরে শিশির পরলেও টের পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার শহরের বাসায় যায়। শনিবার এসে অফিস করে। শহরের বাসায় মা, জোসনা আর দুটো ছেলেমেয়ে আছে। জোসনা ডেভিডের বউ। ছেলে সুবর্ণ মিশনারি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। মেয়ে যুক্তা ছোট। শনিবার অফিসে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই জোসনা ফোন করে, অফিসে পৌঁছেছতো?
আজ অফিসে পৌঁছেই গুলিয়াখালী যাবার তাড়া। জোসনার ফোন আসলেও চোখে পড়েনি। গুলিয়াখালী যাবার জন্য বেরিয়ে ফোন বের করলে দেখে মিস কল তিনটে। ডেভিড না ছাতা না ভেজা বৃষ্টির ভেতর হেঁটে গলির মুখে যায়। গলির মুখ থেকে রিক্সা নিয়ে যাবে কলেজ রোডের মুখে। বৃষ্টি না থাকলে হেঁটে যাওয়া যেত। ডেভিডদের অফিস গলির ভেতর।
গলির মুখে প্রতিমার দোকান। দোকানের বাইরের মেঝেতে লক্ষীর প্রতিমা রাখা। দোকান মালিক নিরুপমদা ভেতরে প্লাস্টিকের ফুল সাজিয়ে রেখেছে। গলি থেকে বেরিয়ে ডেভিড একটা রিক্সা দাঁড় করায়। বলে, কলেজ রোডের মুখে যাবে। কলেজ রোডের মুখে নেমে, একটু উত্তরে গিয়ে বায়ে মোড় নিলেই গুলিয়াখালীর ট্যাক্সি মেলে।
কলেজ রোডের মুখে ট্যাক্সি রিক্সা আর মানুষের ভিড়। এটা ঢাকা ট্রাংক রোডের পুরাতন অংশ। উপজেলা অফিসের সামনে থেকে টেকনো ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত বাইপাস রোড। বাইপাস রোড দিয়েই এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম, বসুর হাট, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ আন্তঃজেলার বাস ট্রাক যায়। তাতে পুরান রাস্তায় ভীড় না কমে আরোও বেড়েছে। টমটম, ট্যাক্সি, রিক্সার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা লোকাল বাসও থামে। ৮নং রুটের লোকাল বাস। ডেভিড রিক্সা থেকে নেমে বৃষ্টির ভেতর গুলিয়াখালী ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত আসে। হঠাৎ বৃষ্টি বলে রাস্তায় আজ লোকজানের ভিড় কম।
ডেভিড গুলিয়াখালীর ট্যাক্সিতে বসলে মাঝবয়সী এক লোক সাহায্য চাইতে আসে। পায়ে ঘাঁ। ডেভিডকে বলে, স্যার ডাক্তার বলছে চিকিৎসায় দশ হাজার টাকা লাগবে। একটু সাহায্য করেন। সাহায্য চাইবার সময় পায়ের ঘাঁ ডেভিডের দিকে এগিয়ে দেয়। যাতে ঘাঁ আরো ভাল করে চোখে পড়ে।
ডেভিড লোকটাকে চেনে। এবাদুল হক। ছেলে ফলের দোকান করে। ভাটিয়ারী বাজারে। কিন্তু এবাদুল হক ছেলের সঙ্গে থাকে না। জঙ্গল সলিমপুরে টিউবওয়েল পানির আর্সেনিক জরীপের সময় লোকটাকে দেখেছে। প্রতিদিন ঘর খেকে বেরুবার সময় সে ঘাঁটাকে খুব যত্ন করে। ঘাঁ যত বীভৎস দেখায় সেদিনের ইনকাম তত বেশি।
ডেভিড বলে, কি নাম আপনার ?
ও বলে, এবাদুল হক।
ডেভিড ট্যাক্সি ভর্তি হয়ে গেলে ড্রাইভারকে ছাড়বার তাড়া দেয়। ডেভিডের সাহায্য না পেয়ে লোকটা পাশের ট্যাক্সির অন্য পেসেঞ্জারকে ঘাঁ দেখায়।
৪.
প্রতি বছর চাইল্ড ম্যাসেজ পাঠাতে হয় ডোনারদের। অক্টোবর থেকে শুরু করতে হয়। একেক বছর একেক বিষয় ঠিক করা থাকে। গতবছর ছিলো আমাদের বাড়ি। ছন আর বেড়ার ঘর এঁকেছিলো সবাই। ডেভিড ভাই এবারের বিষয় নিসর্গ বলেছে।
শিশুমেলা স্কুলে শিশুদের প্রক প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়। গান, ছড়া এর পাশাপাশি পড়ালেখা।
আমপাতা জোড়া জোড়া
মরাব চাবুক চড়ব ঘোড়া
ওরে বুবু সরে দাড়াঁ
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া।
সপ্তাহে একদিন ড্রয়িং।
চাইল্ড ম্যাসেজের বিষয় ঠিক করে দেবার পর রোকসানা তাদের সপ্তাহ খানেক আকঁতে শেখায়।
ডেভিড ভাই রং নিয়ে আসেন। নভেম্বরের ভেতর সব চাইল্ড ম্যাসেজের ফর্মে ছবি এঁকে পাঠিয়ে দিতে হয় ডোনার সংগঠনের কাছে। ঢাকায়। চাইল্ড ম্যাসেজ ফর্ম মানে এক তা কাগজ দুভাজ করা। দামী কাগজ। জুঁই ফুলের সুঘ্রাণ বেরোয়। উপরে ইংরেজিতে বাচ্চার নাম, বয়স, গ্রাম, ডাকঘর, জেলা লেখা থাকে। রোকসানা চাইল্ড ম্যাসেজ ফরম হাতে পেলে আগে ঘ্রাণ নিয়ে দেখে। কী সুন্দর সুঘ্রাণ। এই ফর্মে বাচ্চারা আঁকে। এবার আঁকবে নিসর্গ।
রোকসানা শিশুমেলার বাচ্চাদের গুছিয়ে বসালে ডেভিড হাজির হয়। শিশুমেলার সামনে গুলিয়াখালী খাল। খালের পাড়ে বলাই গাছ। ডেভিড রোকসানাকে চাইল্ড ম্যাসেজে ফরম বুঝিয়ে দেয়। আর রং পেনসিল। বলে, এক সপ্তাহর মধ্যে সব একে ডোনারদের পাঠিয়ে দিতে হবে। শিশুমেলার পুরো মেঝেতেই বেতের পাটি পাতা। বাইরে নয়নতারা আর চন্দ্রমল্লিকার বাগান। ডেভিড ভাবে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বড় দিন। বড় দিনের আগে সব ছবি ডোনার সংগঠন পাঠিয়ে দেবে তাদের বিদেশী অফিসে। ডেভিডদের কাজ শেষ হলে ডোনারদের কাজ শুরু।
গুলিয়াখালী থেকে এক কিলোমিটার গেলেই সন্দ্বীপ চ্যানেল। বঙ্গোপসাগরের খাড়ি। ডেভিডদের সংগঠন প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালায় উপকূলীয় শিশুদের নিয়ে। নাম গুলিয়াখালী উপকূল শিশুমেলা। বিদ্যালয় চালানোর ফান্ড আসে ডোনারদের কাছ থেকে। প্রতি দুবছর অন্তর অন্তর চাইল্ড প্রোফাইল তৈরি করে ডেভিডরা ডেনারদের পাঠায়। ডোনাররা সেইসব চাইল্ড প্রোফাইল পাঠায় তাদের মূল সংগঠনের কাছে। এইসব মূল সংগঠনের হেডকোয়ার্টার ইংল্যান্ডে। সুইডেনে। আমেরিকায়। এসব চাইল্ড প্রোফাইল যায় সেসব দেশের গীর্জা, নানা স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানে।
লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথাড্রল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভলেনটিয়ার মারিয়া ফ্লেমিং গুলিয়াখালীর মরিয়মের ছবি গলায় নিয়ে দাঁড়ায়।
ভিক্টোরিয়া টিউবষ্টেশনের পাশে ওয়েস্টমিনিস্টার ক্যাথাড্রল। গম্বুজ আর ঘন্টা ঘরের স্থাপত্যে যেন এক টুকরো ইস্তাম্বুল। তাতে টমাস রো দাঁড়ায় চালতার বাড়ির জুলফিকারের ছবি গলায় ঝুলিয়ে।
সেখান থেকে কোনো কোনো শিশুকে বেছে নেয় গীর্জায় আগত ভক্ত বা স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের ভলেনটিয়াররা। নির্বাচিত শিশুদের জন্য আর্থিক সাহায্য, বড়দিনের উপহার পাঠায়। এই পাঠানো অর্থ থেকেই ডেভিডদের বেতন, সংগঠন চালানোর অর্থ আসে। এন্ড্রু ফ্লিনটফ হয়তো মরিয়মের ছবি দেখে গির্জায়। মরিয়মের জন্য সাহায্য পাঠায় সে। মরিয়ম গান শিখবে, ছবি আঁকবে। বড় দিনের আগে মরিয়মের আঁকা ছবি পৌঁছাতে হবে ফ্লিনটফের কাছে। ডেভিড নিজেও জানে না তার বাচ্চাদের আাঁকা ছবি কোথায় কোথায় যায়।
রোকসানা ভাবে এবার সে খাল পাড়ের একটা ছবি আঁকাবে চাইল্ড ম্যাসেজে। খাল পাড়ের পাশে বলাই গাছ। বলাই গাছের পাতায় একটা সোনা পোকা বসা। সোনা পোকার ডানায় উজ্জ্বল রোদ। গাছে হলুদ ফুল।
৫.
গুলিয়াখালী থেকে উঠে আসবার মুখে এবাদের সঙ্গে আবার দেখা হয় ডেভিডের। ট্যাক্সিতে ট্যাক্সিতে তার পায়ের ঘাঁ দেখিয়ে সাহায্য চাইছে। ঘাঁ যত বীভৎস সাহায্যের টাকা তত বেশি। গুলিয়াখালী থেকে উঠবার মুখে সবসময় জটলা লেগে থাকে। ট্যাক্সি, রিকসা, মানুষজনের জটলা। বাইপাসে লোকজন নেমে এ পথ দিয়েই বাজারে উঠে। গুলিয়াখালী, বশরতনগর, ভাটেরখিল, মুরাদপুরেরও ট্যাক্সি যায় এখান থেকে। তবে ডেভিড এবাদুল হককে আগে কখনো এখানে দেখেনি। আজই প্রথম।
এবাদুল হককে দেখে ডেভিডের শিশুমেলার শিশুদের কথা মনে পড়ে। তাদের করুণ চেহারা আর আঁকা সুন্দর ছবিতে প্রজেক্টের ডোনেশন বাড়ে। মেয়াদ বেড়ে দুবছর থেকে পাঁচ বছর হয়। এসব বেসরকারী সংগঠনের সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রজেক্টের মেয়াদ। প্রজেক্ট শেষ তো চাকরী শেষ।
কলেজ রোডের মুখ থেকে আসতে আসতে সে ভাবে, ডেভিডের নামই হয়তো এবাদুল হক। এবাদুল হকই হয়তো ডেভিড।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ভেতর অফিসে এসে ডেভিড তার নাম ভুলে যায়। মুভমেন্ট রেজিস্টারে তার নামের জায়গায় লিখে ফেলে এবাদুল হক।