নয়ন মাহমুদ
কবি ও কথাসাহিত্যিক
নয়ন মাহমুদ

শিব মূর্তি 

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

নয়ন মাহমুদের গল্প: শিব মূর্তি


মানুষটা তিন দিন থেকে বাড়িতে নাই। সতীনের কাছে গেছে। ছোটবেলা থেকে সে পরী ধরা।

সৈকতকে বলি, কিরে বাপ কি করিস?

– এইতো মা, ছবি আঁকি।

সংসারে অনেক কাজ।

– দেখি, কিসের ছবি আঁকলি।

– মা… আব্বায় কি আজ ফিরবো?

– কিরে, পৃষ্ঠা তো শূন্য।

– গরুর ছবি আঁকছি মা।

– তো গরুটা কই?

– গরুটা মাঠে খাইতে গেছে।

সৈকতের বাপ ফেরে রাতে। লোকে বলে, ‘তুমি নাকি বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াও। পরীর গল্পটা বানানো।’ ‘মানুষের কথায় বিশ্বাস করিস না বৌ। মানুষ বড্ড শয়তান। তারা তোর আর আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব চায়। বুঝতে পারছিস?’

– তাহলে তুমি সত্যিই পরী ধরা?

– সুষ্মিতা তোর জন্য নাকফুল পাঠাইছে।

– তারে আমার কথা বলছো?

– হুম।

– পরী সতীনটা তো বেশ ভালোই।

লোকটা রাত হলে গাজা টানতে বসে। মারফতি আলাপে মগ্ন থাকে। বাকি মানুষগুলা চলে যায়। জল পান করে সে বাতিটা নিভিয়ে দ্যায়। আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ে।

– পরীকে আমার কথা কি কি বলছো?

– বলছি, তুই সুস্মিতার চেয়েও সুন্দর।

– (নীরবতা)

কবুতরের বাক বাক বাকুম শব্দ শোনা যায়। নির্মল আকাশ জুড়ে নক্ষত্রের আনাগোনা।

– এই দু তিনদিনে তুমি অনেক শুকায় গেছো সৈকতের বাপ।


২.


গ্রীষ্মকাল। চাইলে নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে আসা যায়। বিন্দুমাত্র জল নাই। বটগাছের নিচে মানুষের জটলা। কায়সারকে সবাই পছন্দ করে। লিয়াকত বলে, ‘জন্মটাই যদি না হইতো তবে সবকিছু থেকে মুক্তি পাইতাম।’ কায়সার জবাব দ্যায়, ‘এই অনুভূতিটা বোঝার জন্য হলেও জন্মটা খুব দরকার লিয়াকত ভাই।’

– কিন্তু এই জন্মের ওপর তো আমার কোনো হাত নাই।

– তা অবশ্য নাই।

কায়সার সিগারেট ধরায়। আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়া দুঃশ্চিন্তা করছেন লিয়াকত ভাই?

– না, আসলে তেমন কিছু না।

– বলে ফ্যালেন।

গতকাল রাতে ঝমঝম বৃষ্টি। শ্যালিকা পাখি আমায় ফোন দিয়া আমার শ্বশুরের মৃত্যুর খবর জানায়। তখন রাত বারোটা বেজে সাতান্ন মিনিট। সিদ্দিকা মানে তোমার ভাবীকে ঐ সময় ডাকি। চা খেয়ে ‘সুবিমল মিশ্রে’-র একটা গল্প পড়ি। খামোকা রাতের ঘুম নষ্ট হবে। তাছাড়া সিদ্দিকার শরীরও কিছুদিন থেকে ভালো যাচ্ছে না। মৃত্যু তো তেমন অস্বাভাবিক কিছু না। সবমিলিয়ে তোমার ভাবীকে ইচ্ছা করে তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানাইনি।

– বেশ তো, সকালে জানাতেন।

সকালে ঘুম ভাঙছে দশটায়। চা নাস্তা করছি। কিন্তু শ্বশুরের মৃত্যুর খবর বেমালুম ভুলে গেছি। সিদ্দিকা গুনগুন করে গান গাইছে। হঠাৎ মনে পড়ামাত্র বলে ফেললাম, রাতে পাখি ফোন দিয়েছিল।

– কি বললো সে?

– বললো, তোমার বাবা মারা গেছেন।

– হোয়াট?

সিদ্দিকা কাঁদছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পোশাক বদলে সে হাজির।

– চলো।

– কোথায়?

– কোথায় মানে…

– তোমার বাবার দাফন হয়ে গেছে, গিয়ে লাভ হবে না।

এটাতো বিশাল জটিল কেস লিয়াকত ভাই। ভাবী এখন কোথায়?

– ঘরে বিছানায় শুয়ে কাঁদছে।

– সকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে কেউ ফোন দ্যায় নাই?

– দিয়েছিল।

– তাহলে?

– ফোন সাইলেন্ট ছিল।

– হুশ…


৩.


দুই/আড়াই মাস পর….

– ভাতিজা, তোমার আব্বা বাসায় আছে?

– জ্বি, না চাচা।

– আরে কায়সার যে। ঘরে এসো।

– কেমন আছেন ভাবী?

– ভালো। তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসছি।

– আচ্ছা।

কায়সার চায়ে চুমুক দিতে দিতে সব শুনলো।

– এখন বলো আমি কি করবো?

– দাঁড়ান, একটু ভেবে বলি।

সমাজে সবাই জানে স্বপন ভাই পরী ধরা। কিন্তু আমি এসব অলৌকিক কুসংস্কার মানি না।

– স্বপন ভাই আপনাকে যে নাকফুলটা দিছে ঐটা তো পরীর দেশ থেকে নিয়ে আসা?

– জ্বী। পরীর নাম সুস্মিতা।

– বেশ, আমায় নাকফুলটা দেবেন!

– একদম। কায়সার, আমার খুব ভয় হয়। যদি আমার সতীন সুস্মিতা তাকে আর কখনো আসতে না দ্যায়। রক্তমাংসের মানুষ হলেও হতো, সে তো পরী। সেখানে আমি তো কখনো যাইতে পারবো না। অন্যরকম জগত। পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রের স্রোত সেখানে। নাম না জানা অজস্র ফুল। ভাবলেও গা-টা শিউরে ওঠে।

– আপনি কোনো চিন্তা করবেন না ভাবী। সব ঠিক হয়ে যাবে।

– তাই যেন হয়।

– ভাতিজা, বসে বসে কী করো?

– ছবি আঁকি চাচা।

– কিসের ছবি?

– গরুর ছবি আঁকি।

– এখানে গরু কই? পুরাটাই তো ফসলের মাঠ।

– গরুটা মাঠে খাইতে আসছিল। কে যেন খোঁয়াড়ে দিছে।

– কি ব্রিলিয়ান্ট! হা হা হা।

কায়সার সৈকতের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।


৪.


লিয়াকত ভাই, দ্যাখেন তো নাকফুলটার আলাদা কোনো বিশেষত্ব আছে কিনা?

– নাই। খুবই সাদামাটা।

– এটা কোথায় পাওয়া যাবে?

– হঠাৎ নাকফুল নিয়া এত আগ্রহ।

– এমনি।

– শোনো কায়সার, আমার বোন লালমনিরহাটে আছে। কাল অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ। তুমি রংপুর থেকে সটান চলে যাও। বিকালে বন্যাকে নিয়ে চলে আসো।

– ট্রেনে গেলে কেমন হয়?

– মন্দ না।

ট্রেনে জার্নি আমার খুবই পছন্দের। গাছপালা, পুকুর, রাস্তা সব কেমন গতিশীল মনে হয়। আমি যে কামড়ায় উঠছি, সেখানে এক তরুণী। হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাকলো, কায়সার ভাই। আমি সত্যিই অবাক। কারণ আমি মেয়েটাকে চিনি না। রহস্য আমায় ভালো লাগলেও, লৌকিক ব্যাখ্যা খুঁজতে আমি অভ্যস্ত।

– উমম…কে আপনি?

– আমায় আপনি না চিনলেও আমি আপনাকে চিনি। ধুমেরকুঠিতে আপনার বাসা না?

– জ্বী। কিন্তু…

– আমি জুম্মন কশাইয়ের বৌ।

– ও আচ্ছা। কোথায় যাচ্ছেন?

– ন্যান, বাদাম খান।

বাদাম খেতে খেতে গল্প করি। মেয়েটা অনায়াসে প্রস্ফূটিত গোলাপের মতো নিজেকে সাবলীলভাবে মেলে ধরে।

– আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কায়সার ভাই?

– লালমনিরহাট। বন্যাকে নিয়ে আসতে।

– মহল্লায় তো আপনার অন্যরকম প্রভাব।

– যেমন?

– বাসর রাতে আপনার জুম্মন ভাই প্রথম যে শব্দটি উচ্চারণ করলো, সেটি কায়সার।

– ও আচ্ছা। তো আমার জুম্মন ভাই, আপনার কে?

মেয়েটি লজ্জা পেল।

– লজ্জা পেলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।

– স্বপনও তাই বলে।

– স্বপন বলতে আমাদের স্বপন ভাই। সৈকতের বাবা। যাকে মাঝে মাঝে পরীর দেশ পরিভ্রমণ করতে হয়।

সে আমতা আমতা করে বললো, না কিছু না। বাদ দ্যান। খেয়াল করলাম, অবচেতন মনের স্বপন যখন সচেতন মনে চলে আসছে, ঠিক তখন-ই সে কিছু লুকোতে চাচ্ছে।

– দেখুন তো নাকফুলটা চেনেন কিনা?

– একি, এটা তো আমার নাকফুল। দুই আড়াই মাস আগে হারিয়ে গেছে। কিন্তু আপনি পেলেন কোথায়?

– সিক্রেট। বলা যাবে না।

– প্লিজ বলুন।

– বেশ। আগে বলুন, স্বপন ভাইয়ের সাথে আপনার সম্পর্ক কিভাবে?

স্বপন আমাকে ভালোবাসে। আমার বাসা লালমনিরহাট। সে মাঝে মাঝে আসতো। স্রেফ আমার সাথে দ্যাখা করার জন্য। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই। কিন্তু তিনদিনের বেশি সে থাকতো না।

– তার মানে স্বপন ভাইয়ের পরীর দেশ লালমনিরহাট?

– তা বলতে পারেন।

– আপনার সাথে স্বপন ভাইয়ের প্রথম সাক্ষাত সম্বন্ধে বলুন।

– এই ট্রেনের কামড়ায়। আপনাকে দেখামাত্র যেভাবে গল্প জুড়ে দিলাম, সেরকম আরকি। আপনি বিরক্ত হচ্ছেন নাতো?

– একদমই না।

– আপনাকে একটা গোপন কথা বলি।

– ইচ্ছা হলে বলুন।

– আমার পেটে বাচ্চা।

– সেতো খুবই স্বাভাবিক। বিয়ে হলে বাচ্চা হবে।

– না। আসলে আমার পেটে বাচ্চার বয়স আড়াই মাস।

– আপনার বিয়ে তো হলো গতমাসে।

– এখানেই তো সমস্যা।

জানালার বাইরে নির্মল আকাশ। দিগন্ত বিস্তৃত খোলামাঠ। আমগাছ থেকে একটি শালিখ উড়ে গেল।

– জুম্মন ভাই জানে?

– হুম, জানে।

– আপনারা কি ডিভোর্সে যাচ্ছেন?

– না।

– তাহলে?

– মহল্লায় শোনেননি, জুম্মন কশাইয়ের বৌয়ের পেটে টিউমার?

– শুনেছি, কিন্তু…

আমরা গল্প করতে করতে কত দ্রুত লালমনিরহাট রেলস্টেশনে পৌঁছে গেলাম! এই বিস্ময় মেয়েটির চোখে লেগে আছে, কি সুন্দর– অমায়িক।


৫.


“নির্জনে একদিন ধ্যান করছি। মস্তিষ্কে পুরা গ্যালাক্সির প্যাটার্ন এসে হাজির। ন্যানো সেকেণ্ডেরও সিকিভাগ সময়। বেশ ভালো লাগা কাজ করা শুরু হলো। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই দু চোখ বুজে ধ্যান করি। কখনো কখনো ক্ষুদ্র আলোক বিন্দু দেখি। কোনোদিন কিছুই দেখি না। তো একদিন রবীন্দ্রনাথের দেখা। তিনি আমায় কি যেন বলতে চাইছিলেন। কিন্তু পরে একসময় ধ্যান করা ছেড়ে দিলাম। গুরুদেব তখন স্বপ্নে এসে হাজির। বললেন, শান্তিনিকেতনে এলে না যে। বললাম, ধ্যান মূলত মস্তিষ্কের বিভ্রম গুরুদেব। সেই থেকে উনি কস্মিনকালেও স্বপ্নে আসেননি। তবে সেদিন তিনি আমায় ‘রবীন্দ্রসমগ্র’ উপহার দিয়ে গেলেন। স্বপ্ন ভাঙ্গার পর এখনো ঘোর কাটেনি। কেননা বাস্তব জগতে বুক সেলফে দেখি আস্ত ‘রবীন্দ্র সমগ্র’।”

– আরে বন্যা, হঠাৎ তুমি…

– হ্যা। একটা জরুরি ব্যাপারে আসছি।

– কথাবার্তা পরে হবে রান্নাঘরে যাও গ্যাসের চুলায় চা রান্নাটা সেরে ফেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ঘরে আসবাব তেমন নেই। বুকসেলফে শুধু বই আর বই। বিছানাজুড়েও বই ছড়ানো। এলোমেলো।

– এত্ত বই।

– চা অনেক সুন্দর হয়েছে। চিনি, আদা দিয়েছো একদম পরিমাণ মতো। সিগারেট ধরাতে পারি?

– অসুবিধা নেই, ধরাও।

উফ.. বন্যাকে নিয়ে আর পারি না। আমি ওর চেয়ে প্রায় সাত আট বছরের বড়। অথচ তুমি করে কথা বলবে। অবশ্য শুনতে ভালোই লাগে।

– সিগারেট আর চা এই জুটিটা কেমন জানো?

– কেমন?

– যেন উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন।

– হা হা হা।

– হুম, এবার বলো তোমার জরুরি কথা।

– তুমি তো জানো, আমি এক মূর্তিকে ভালোবাসি। আমার দেহ, মন ঐ মূর্তিকে সমর্পণ করেছি।

– হু, জানি। কিন্তু মূর্তিকে নিয়ে তো সংসার করা যায় না?

– আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মূর্তিটা একদিন মানুষ হবে।

– আমি এমন অলৌকিকতায় বিশ্বাস করি না।

– জগত নিয়ে যে যেভাবে চিন্তা করে জগত তার কাছে ঠিক সেভাবে উদ্ভাসিত হয়।

– ইদানীং বই পড়া শুরু করছো নাকি?

– শোনো কায়সার ভাই, আমি চাই তুমি আমার বিয়েটা আটকাও। লিয়াকত ভাইয়াকে বোঝাও। ঐ মূর্তিটা যতদিন না মানুষ হচ্ছে, ততদিন আমি কাউকে বিয়ে করবো না, ব্যস।

– তাহলে তো একদিন তোমার ঐ মূর্তি দেখতে হয়।

– বেশ, দেখাবো।

ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে সে ‘রবীন্দ্র সমগ্র’ অংশটা পড়ে বললো…রবীন্দ্র সমগ্র কেনার পরে তুমি এটা লিখছো তাই না?

– হ্যা, ঠিকই ধরেছো।

– সেদিন তুমি ট্রেনে আসার সময় যে বললে, ‘সত্যের বাইরেও সত্য থাকে লুপ্ত অবস্থায়, খুঁজে নিতে হয় কঠিন সাধনার মাধ্যমে।’ লেখাটা ঠিক তেমন।

– বুঝলাম না।

– যেমন আমরা জানি স্বপন ভাই পরী ধরা। কিন্তু এর বাইরেও আলাদা একটি লুপ্ত সত্য আছে। আবার একইভাবে আমরা জানি, জুম্মন ভাইয়ের বৌয়ের পেটে টিউমার। কিন্তু…

– থাক আর বলতে হবে না। তবে লেখাটা কিন্তু কোনোভাবেই অমন না।

– ধ্যাত, আমাদের বাসায় এসো, চললাম। টা টা।

কায়সার হাসছে। তখন একটি গাঙচিল ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ে গেল, অপরূপ।


৬.


– বিয়েটা হঠাৎ হয়ে গেল। নেমন্তন্ন করতে পারি নাই কাউকে।

– আচ্ছা। ভাবীকে একা ছেড়ে দিলেন। লালমনিরহাট গেলেন না যে জুম্মন ভাই।

– সেদিন লিয়াকত বললো, তুমি নাকি ট্রেনে লালমনিরহাট যাচ্ছো। তাই প্রভাকে তোমার সঙ্গে পাঠালাম।

– বলেন কি? তবে সেটি কি আপনার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল?

– হ্যা।

– সব্বনাশ! অথচ আমি জানি না। তাই তো বলি, সে আমায় কখনো দেখে নাই, অথচ চিনে ফেললো কিভাবে?

– প্রভা তোমায় একদিন ডাকছে চা খেতে।

– বেশ, যাবো। ‘সত্যের নেপথ্যে থাকে লুপ্ত কোনো সত্য।’

– কিছু বললে?

– না, জুম্মন ভাই। আপনি বরং ব্যবসা করেন। পরে কথা হবে।

– একদম।

বিকেলে আমি বন্যার বাসায় গিয়ে হাজির। হিমশীতল সুন্দর বাতাস বইছে বারান্দায়।

– বন্যা একটি মূর্তিকে ভালোবাসে। জানো নিশ্চয়ই?

– জানি। কিন্তু মূর্তিটি আমি কখনো দেখিনি।

– মূর্তিটি শিবের।

– বন্যাকে বলুন এমন মূর্তি প্রায় সবখানে পাওয়া যায়। সমস্যা সমাধান।

– সে বিশ্বাস করে মূর্তিটি একদিন মানুষে রূপান্তরিত হবে।

– অমূলক বিশ্বাস।

– বিষয়টি তুমি অহেতুক সহজভাবে নিচ্ছো।

সিদ্দিকা ভাবী চা নিয়ে এলেন।

লিয়াকত ভাই জিজ্ঞেস করলেন, বন্যা কোথায়?

– ছাদে।

– কায়সার।

– জ্বী ভাই।

– বন্যাকে নিয়ে আমার খুব দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। সেদিন সিদ্দিকা শিবমূর্তির সামনে বন্যাকে নগ্ন অবস্থায় নৃত্য করতে দেখেছে।

চারপাশে থমথমে নীরবতা।

– মূর্তিটা এলো কোথা থেকে?

– মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্কারে ছিল। ভারত থেকে আসার পর আমার দাদু মূর্তিটি সংরক্ষণ করেন।

– মুসলিম হয়েও…

– আসলে মূর্তিটি ব্রোঞ্জের।

– এখন উপায়?

– বুঝতে পারছি না।


৭.


সে রাতে ছিল ঘোর অমাবস্যা। বন্যার জ্ঞান ফেরামাত্র সে ছুটে গেল ছাদে। ব্রোঞ্জের মূর্তির চোখ ধীরে ধীরে খুলছে। শিব মূর্তির সামনে নগ্ন এক তরুণী। এমন সুখ ও পুলক কখনো অনুভব করেনি বন্যা।

– আমি জানতাম একদিন তুমি প্রাণ ফিরে পাবে, প্রিয়তম।

– বন্যা।

শিবমূর্তিকে বন্যা ভালোবাসার আবেশে জড়িয়ে ধরে। এমন মিলন দৃশ্য প্রকৃতিতে কেউ কখনো দেখেনি।

পরিশিষ্ট:

একদিন বন্যা নৃত্য করতে করতে চেতনা হারিয়ে ফেলে। ব্রোঞ্জের মূর্তিটি জেলাপ্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তরুণ ডাক্তার ফরহাদকে সব বলার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, শিবমূর্তির জায়গায় বসে থাকবে সে স্বয়ং। কারণ ফরহাদ বন্যাকে বিয়ে করতে রাজী। ফরহাদ ছেলেটাও সবমিলিয়ে জোশ এবং বন্যা বিশ্বাস করে, ব্রোঞ্জের মূর্তিটি একদিন মানুষে রূপান্তরিত হবে। কিন্তু রাত বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও ফরহাদ আসে না। তখন লিয়াকত কায়সারকে বলে, ‘যদি বন্যা জ্ঞান ফিরে পাবার পর ব্রোঞ্জের মূর্তিটি না দেখে তখন কি হবে একবার ভেবে দেখো?’ আরেকটু অপেক্ষা করুন লিয়াকত ভাই, নিশ্চয়ই ডাক্তার ফরহাদ এসে পড়বেন। কিন্তু ডাক্তার ফরহাদ আসেনা। তখন বন্যা জ্ঞান ফিরে পায়। আমাকে ছাড়ো, আমি শিবমূর্তির কাছে যাবো। কায়সার এ যাত্রায় মহাবিপদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করে।

 ‘সমাপ্ত’

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu