কান্না শুনে মনে হচ্ছে রত্না মারা গেছে, অথবা মারা যেতে আর কয়েক মূহুর্তের অপেক্ষা মাত্র। রত্নার মায়ের আহাজারিতে ঘুমন্ত গ্রাম জাগতে শুরু করেছে। রত্নার মা, বাবা, নানি গড়াগড়ি খাচ্ছে নদীর পাড় দিয়ে। যন্ত্রণা কমাতে খামচে ধরছে নদীর পাড়ের মাটি। কান্নার মাঝে কথা আর সুর মিলিয়ে বলে যাচ্ছে মনের না বলা অনুভূতির কথা। কিছুই বোঝার উপায় নেই, শুধু রত্না শব্দটাই বুঝতে পারছি।
মানুষের কথা শুনে বুঝতে পারছি আশেপাশের সবাই প্রায় জমা হয়েছে আমদের পাশের উঠানে। রত্নার মাকে কেউ সান্ত্বনা দিয়ে বলে উঠল,”কাইন্দো না রত্নার মা, আল্লাহরে বুলাও। আল্লারে বুলাও, মায়ের চোহের পানি ফেল না যায় না।”
কেউ কেউ বলছে,”দিছিলা ক্যা শ্বশুর বাড়ি, আর কয়ডা দিন রাইহা দিবার পারলা না? মার মত কি আর কেউ যত্ন করবার পারে? মায়ের চাইতে আর কি কেউ ভালো চায়?”
“মার চাইতে যে ভালো চায়, হেরে কয় ডাইনি”, কথা শুনে মনে হলো জব্বর কাকার বউ-এর গলা।
রত্নার নানিকে উদ্দেশ্য করে কেউ বলে উঠল,”বুজি, তুমিও যদি কান্দো, ক্যামনে অয়, জায়নামাজ বিছাইয়া আল্লাহর কাছে কান্দো।”
কারো সান্ত্বণার কথাই কর্ণপাত না করে রত্নার মা, বাবা, নানি একইভাবে বুকফাটা আর্তনাদ করে যাচ্ছে। এই এত কিছু হচ্ছে আমার ঘরের পাশেই, আমি ঘরের মধ্যেই বসে আছি। বের হতে পারছি না বা বের হতে ইচ্ছে করছে না। গায়ে প্রচন্ড জ্বর। কাঁথা দিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেকে শুয়ে আছি। শুয়ে শুয়ে শুনছি সবার কথা। কিন্তু, মনে প্রাণে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছি, আমার কান পর্যন্ত যেন এ কান্না না পৌঁছায়, আমি যেন কিছু শুনতে না পাই। আমি বধির হওয়ার প্রার্থনা করতে লাগলাম। আমার সকল প্রার্থনাকে বিফল করে দিয়ে কান্না আমার কান থেকে হৃদয়কে বেশি তোলপাড় করে দিচ্ছিলো। জ্বরের থেকেও রাগ আমাকে অবশ করে দিয়েছে, অসহায় করে দিয়েছে। রত্নার মা বাবার কান্না আমার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ মঞ্চে নাটক করতে গিয়ে অতি মাত্রায় ইমোশনাল হয়ে অভিনয় করে যাচ্ছে। রত্নার মাকে ক্ষমা করতে পারব না কখনো আমি। চোখ বন্ধ করে রত্নার হাসিমাখা মুখখানা মনে করে এ কান্নাকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করতে লাগলাম।
বারো বা তেরো বছরের কিশোরী। কারণে অকারণে হেসে গড়াগড়ি খায়। ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। কোমর পর্যন্ত কোঁকড়া চুল। চোখে খুশির ঝিলিক লেগে রয়েছে সবসময়। একদিন স্কুল থেকে ফিরেছি মাত্র। রত্নার মা এসে বলল,”বুজি, এই নাও মাইয়া তোমারে দিয়া দিলাম, মারো কাডো যা খুশি করো। পড়াও তুমি। মাইয়া তোমার।” দেখি রত্না মাথা নিচু করে আছে। ভয়, লজ্জা, সংকোচ মেশানো মুখ, পা দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। আমি হেসে বললাম,”কি রে রত্না, এখন থেকে কিন্তু আমাকেই মা বলতে হবে।” রত্না এবার মাথা উঁচু করে হাসল। চোখ আনন্দে ঝকঝক করছে। মুখে নেই কোনো ভয় বা সংশয়। কী পবিত্র সে মুখখানা! সেই থেকে রত্না হয়ে উঠল আমার সব কাজের সাথী। রত্না আমার চুল বেঁধে দেয়, জোর করে মাথায় তেল দিয়ে ভরিয়ে রাখে। আমি রাগ করি, রত্না হেসে গড়াগড়ি খায়। রত্নাকে সাথে নিয়ে শাপলা তুলতে যাওয়া, মেলায় যাওয়া, পিকনিক করা আরো কত কী যে শুরু করলাম। বন্ধু পেলাম যেন আমি, নেমে গেলাম ওর বয়সে। বৃষ্টিতে ভেজা, আম গাছে চড়ে আম খাওয়া, চাইনিজ যাওয়া আরো কতো কী! মাঝে মাঝে থেকে যেত রত্না আমার কাছে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে তখন গল্প করতাম আমরা। রত্না ওর ঢাকার বন্ধুদের, স্কুলের গল্প শেনাতো আমাকে। সেভেনের গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান খুব মন দিয়ে পড়ে রত্না। ওর বিজ্ঞান পড়তে খুব ভালো লাগে বুঝে গেলাম কয়েকদিনে।
রত্নারা তিন ভাইবোন। রত্মা বড়। ভাই ওবায়দুর আর ছোটবোন স্বপ্না। ওরা এ গায়ে এসেছে এই প্রথম। ওরা ঢাকায় থাকত এর আগে। রত্নার মা গার্মেন্টসে কাজ করত আর বাবা ফেরি করে ফল বিক্রি করত। কিছু টাকা জমেছে হাতে তাই বাড়ি ফিরে এসেছে। ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে, আর কতদিন বাড়ির বাইরে থাকবে! এসেই নদীর পাড় ঘেঁষে নতুন টিনের ঘর দিয়েছে, বসিয়েছে টিউবওয়েল, একটা টয়লেট। রত্না বাড়ির সামনে দিয়ে লাগিয়েছে অনেক ফুলের চারা। অল্পদিনেই বাড়িটা খুব সু্ন্দর হয়ে উঠেছে। আমাদের বাড়ির সাথেই একটা খাল চলে গেছে নদী থেকে বড় রাস্তা পর্যন্ত, সেই খালের ওপাড়ে রত্নাদের বাড়ি। আর আমাদের ঘরের পাশের ঘর রত্নার নানা বাড়ি। রত্নার বাবা, মা ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করে ছেড়েছিল গ্রাম। এতবছর পরে ফিরে এসছে আবার গ্রামে। খুব ভালো সময় কাটতে লাগল আমার। রত্না খুব ভালো ছিল লেখাপড়ায়। একদিন রত্নাকে জিজ্ঞেস করলাম,”রত্না, তোর কোনো স্বপ্ন আছে?”
“খালা, আমার তো কত কত স্বপ্ন! কোনডা কবো খালা?” ওর কথা বলার ঢং-টা বড্ড মিষ্টি। ঠোঁট উল্টে কেমন আাদুরে গলায় কথা বলে, খুব ভালো লাগে শুনতে আমার। বললাম, বলনা তোর যেটা সবচেয়ে প্রিয় স্বপ্ন, সেটাই বল।
“খালা, আমি বড় হইলে আপনার মত স্কুলে পড়াবো, সুন্দর কইরা কথা কব, প্রতিদিন শাড়ি পইরা স্কুলে যাব, একটা ছাতি কিনব,আর লাল ফিতার একটা ঘড়ি, আর একটা চশমাও কিনব।”
আমি মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনি… বেঁচে থাকুক রত্নার স্বপ্নরা, বড় হোক স্বপ্নের চারাগাছ।
একমাস পরে হঠাৎ করে চিঠি এলো আমার ট্রেনিং-এর। ট্রেনিং শুরু হলো, দেড় বছরের জন্য, থাকতে হবে জেলা সদরে, ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। রত্না তখন অষ্টম শ্রেণিতে। একমাস পর পর বাড়ি আসি। এসেই রত্নার খোঁজ নেই। রত্নাও ছুটে চলে আসে আমার কাছে। রত্নাকে নিয়ে যাব আমার হোস্টেলে, ঘুরে বেড়াবো একদিন খুব করে। রত্না সারাদিন বলতে থাকে,”খালা, আপনি কার কাছে ঘুমান, আপনারে কে মশারি টানায়ে দেয়, সবাই এক সাথে খান, কত বড় পাতিলে রান্না হয়, কি কি করেন… খালা?
আমি হাসি, হেসে বলি,”তোকে একদিন নিয়ে যাবো, নিজেই দেখে নিস সব।”
রত্না খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। চোখে মুখে এক রাশ ব্যাকুলতা নিয়ে জানতে চায়,” খালা, মা যাইতে দিবো তো? ”
পরীক্ষার চাপ, অ্যাসাইনমেন্ট এর ঝামেলায় বেশ কিছুদিন বাড়ি আসা হয়নি সেবার। প্রায় দুইমাস পর বাড়ি এসে রত্নার খোঁজ নিতে গেছি, রত্না বাড়ি নেই। ওর মার কাছ থেকে জানতে পারলাম, শ্বশুর বাড়ি রত্না।
“এত ভালো ছাওয়াল, হাত ছাড়া করবার চাই নাইরে। কাউরেই কই নাই। বয়স কম, কিডা কোনহান দিয়া ঝামেলা পাকাইবো, তাই চুপচাপ বিয়া দিয়া দিলাম। বুঝনা… কেউতো ভালো চায় না… মাইয়া এত ভালো ঘরে বিয়া দিতাছি, পাঁচকান অইলে কুটনামি কইরা বিয়া ভাইঙ্গা দিবার লোকের আহাল নাই।”
আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না। হেঁটে বাড়ি আসার শক্তিটুকু পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না। রত্নার মা কী যেন বলেই যাচ্ছিল, আমার শুধু রত্নার হাসিমাখা মুখ মনে পড়ছিল। মা আমার চেহারা দেখে কী বুঝেছিল কী জানি, শুধু বলল,”তোর পরীক্ষা চলছিল, তোর কষ্ট হবে বলে ফোনে কিছুই জানায়নি আমি।”
আর দেখা হয়নি রত্নার সাথে। আমি রত্নার কথা কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করিনি। রত্নার হাসিমাখা মুখখানা মনের মধ্যে ভালোবেসে রেখে দিয়েছিলাম যত্নে। কেউ রত্নার প্রসঙ্গ তুললে,এড়িয়ে যেতাম আমি। একদিন রত্নার মা, নানি আর মামিরা রত্নাকে নিয়ে কথা বলছিল। আমার হাতে তখন সমরেশের সাতকাহন। বার বার ঘরের বাইরে চলে যাচ্ছিলো মনোযোগ।
“রত্নার শাশুড়ি চায় নাতির মুখ দেখবার, তারে আমি কেমনে দোষ দেই? হে কি কিছু ভুল চাইছে? আমরাওতো তাই চাই। ওই মাইয়া বেশি বুঝলে তো অবেনা।”
রত্নার খালার শ্বশুরবাড়ি রত্নার শ্বশুরবাড়ির কাছেই। মূলত রত্নার খালাই রত্নার বিয়ের ঘটক। সেই খবর নিয়ে এসেছে। রত্না তার শাশুড়ির সাথে মাঝে মাঝেই ঝগড়া করছে। মায়ের সাথে তর্ক করছে বলে স্বামী তাকে শাসন করতে গিয়ে দু একটা থাপ্পড় দিচ্ছে হয়ত, কিন্ত রত্না জিদ ধরে বসে থাকে, বন্ধ করে দেয় খাওয়া দাওয়া। স্বামীর সাথে কথাও বলে না।
রত্নার নানি বলে ওঠে,”মাইয়া মাইনসের এত জেদ ভালো না। আমারে কত মারছে তোগো বাপ, এহন তো আমি ছাড়া কিছুই বোঝে না। আমি যদি রাগ অইতাম, সংসার টিকত? মাইয়া মাইনসের সহ্য থাহা লাগে।”
কথা শুনতে শুনতে কখন যে বইটা হাত থেকে পড়ে গেছে খেয়াল করিনি। উঠে ঘরের সিঁড়িতে গিয়ে বসলাম। রত্নার মাকে বললাম,”আপা, রত্নাতো এখনো অনেক ছোট, ওকে কয়েক বছর পরে বাচ্চা নিতে বলেন। ওর ক্ষতি হতে পারে।”
রত্নার নানি খুব বিরক্ত হয়ে আমাদের সিঁড়ির সামনে এসে বলতে শুরু করল,”আমার আট বছরের কালে বিয়া হইছে, এই বাড়ি আইস্যা দাঁত পড়ছে, বড়ো ও অইছি এই বাড়ি আইস্যা। আমার ছয়ডা পোলাপান, আমার তো কিছু অয় নাই। ছয়ডা পোলাপানই বাড়িতে অইছে, এডা ডাক্তারও লাগে নাই। এহন যত নতুন নতুন হাদিস!”
আমি রত্নার মার দিকে আবার তাকিয়ে বলি,”আপা, রত্নার স্বামীকে আপনি বোঝাবেন রত্না ভুল করলে ওকে বোঝাতে, যেন ওকে না মারে, কতটুকু মানুষ! ও তো বড় ভালো মেয়ে। তা ছাড়া গায়ে হাত দেয়া অপরাধ। নিষেধ করবেন ওকে।”
এরপর রত্নার মা যা বলেছিল আমায় তাতে আমি কষ্ট পাইনি, কিন্তু আমার মা কেঁদেছিল আড়ালে,আমার চেখ এড়ায়নি। সবটা আজ মনেও নেই। আমি যেন রত্নার মাথায় এসব না ঢুকাই, স্বামীর বাড়ি মেয়েদের সব, ওরা গরীব মানুষ, ওদের মেয়ের সংসার যেন আমি না ভেঙ্গে দেই। আমি চাকরি করি, আমার সংসার না করলেও চলে, কিন্তু গরীব মানুষের মেয়ে বাপের বাড়ি আসলে বোঝা হয়ে থাকবে। এজন্যেই মেয়েদের পড়ালেখা করানো উচিত নয়, কম বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত, মেয়ে মানুষ বেশি বুঝলে সংসার হয় না। আরো কত কি! আমি সেদিনও কোনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। মা বলেছিল ভুলে যেতে রত্নার বিষয়। বলেছিল, “রত্নার মা বাবা আছে তাদের চেয়ে তো তুমি বেশি ভালো চাও না।”
এরপর থেকে রত্নার কোনো বিষয়ে আমার আর মায়ের সামনে আলোচনা করত না এরা। আমাকে দেখলেই থেমে যেত, হাসাহাসি করত। লেখাপড়া করে চাকরি করে কী লাভ যদি স্বামীর সংসারই না হলো! বৃথা সে জীবন। আমাকে দেখলেই এমন কথা বলতে শুরু করত। আমি নিজেকে ঘরের মধ্যে বইয়ের জগতে ডুবিয়ে রাখতে শুরু করলাম। ভুলে গেলাম প্রায় রত্নার কথা।
চৌদ্দ-পনের দিন আগের কথা। মা বলল, রত্নার অবস্থা খুব খারাপ। এ বাড়িতেই আছে, চল দেখে আসি। ইচ্ছে করছিল না, তবু কিসের টানে যেন ছুটে গেলাম রত্নাদের বাড়ি। শুয়ে আছে রত্না। কয়েক ঘন্টা আগে ওর একটা ছেলে হয়েছে। নেয় নি ডাক্তারের কাছে, নেয় নি হাসপাতলে। ডাকেনি বাড়িতে কোন ডাক্তার। গ্রামের এক মহিলার হাতে বাচ্চা প্রসব করেছে রত্না। বাচ্চার অবস্থা খুব খারাপ। শাশুড়ির সাথে কাজ করা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় রত্নার। স্বামী এসে রত্নাকে মারতে থাকে। একপর্যায়ে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় রত্না। সেই থেকে পেটে ব্যথা রত্নার। এছাড়া বাচ্চা বড় হয়ে যাবে বলে খাবার খুব কম দিয়েছে রত্নাকে। সমস্যা হয়তো তখনই হয়েছে, এসব কথা বলছিল বাড়িতে ভিড় করা মহিলারা।
সবাই ছেলেকে নিয়েই ব্যস্ত। আমি ঘুরলাম রত্নার দিকে, ফ্যাকাশে চেহারা, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, চোখ বন্ধ তাই ওর দৃষ্টি বুঝতে পারলান না। ঠোঁটটা কাঁপছে। এ কোন রত্নাকে দেখছি আমি? এই রত্নাকে আমি চিনি না। মানুষ নয় যেন বৃদ্ধ কোনো মানুষের ছায়া দেখছি আমি। প্রাণহীন, শুয়ে আছে। বিছানার সাথে লেপ্টে আছে শরীর। রত্নার মুখে হাত বুলালাম নিজের অজান্তেই, ও একটু একটু করে চোখ খুলল, চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল একফোটা অভিমান। কিছু একটা বলল রত্না, বুঝতে পারলাম না। মুখটা নিচে নামালাম। “খালা, ডাক্তার! খালা, বাঁচান আমার মানিক রে!”
মা হয়ে গেছে রত্না, নিজের কথা না বলে ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিতে বলছে। একটু ঘুরে বসতেই খেয়াল করি একটা রক্তের ধারা মাটি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বাইরে। চিৎকার দিয়ে সরে গেলাম আমি। কেউ খেয়াল করেনি, ছেলে নিয়ে এতই ব্যস্ত সবাই। রত্নার ব্লিডিং বন্ধ হয়নি। স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছে। কারো কথা না শুনে দ্রুত একটা ভ্যান ডেকে আনলাম, নিয়ে যাওয়া হলো উপজেলা সরকারি হাসপাতালে। সেখানে ওকে ভর্তি করল না, পাঠিয়ে দেয়া হলো জেলা সদর হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যুর সাথে কয়েকদিন থেকে লড়ছিল রত্না! রক্ত দিতে হয়েছে কয়েক ব্যাগ। আমিও এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে ভালোবাসার ঋণ শোধ করে আসলাম। আর যাইনি ওকে দেখতে, যেতে পারিনি। ওকে দেখার মতো সাহস ছিল না আমার।
হঠাৎ করেই কান্নার শব্দ বাড়তে লাগল, বাড়তে লাগল মানুষের পায়ের আওয়াজ। ঠিক তখনই নদীর ওপাড় থেকে দূরে কোথাও হিন্দি গান বেজে উঠল জোরে। রাতের অন্ধকার সরলেই নদীর ওপাড়ে বিয়ের আয়োজন শুরু হবে কোনো এক রত্নার। তারই আনন্দে এ হিন্দি গানের ঘোষণা। খুব অসহায় লাগছে আমার।
বুকের ভেতর থেকে কিছু একটা উঠে আসতে চাইছে, তোমরা তাকে কান্না বলো, আমি বলি হৃদয়ের রক্তক্ষরণ!