সৌমিত্র চৌধুরীর গল্প: ওরা সব পারে
ওরা সব পারে। একটু হুঙ্কার আর লাঠির বাড়ি। ব্যাস, পাঁচ মিনিটেই শেষ। বাজার খালি, এলাকা শুনশান।
সকাল দশটায় বন্ধ হয়ে যাবে সব। লকডাউনের ঘোষণা ছিল আগেই। এমনটাই তো দরকার। লোকজনের ভিড় থেকেই ছড়াচ্ছে করোনা রোগ। রোগের ভাইরাস মানুষের শ্বাসে। ঘুরছে বাতাসে। সব খানে আতঙ্ক। দমবন্ধ পরিবেশ। তাই থাকতে হবে ঘরে। বাজার হাট স্কুল অফিস মাঠ ময়দান কোত্থাও নয়। সকাল দশটা বাজল কি বাজল না। দোকান পাট যানবাহন বন্ধ করে দিচ্ছে পুলিশ।
সবে দশটা বেজেছে। বটতলা মোড়ে স্ট্যান্ডের পাকুড় গাছের ছায়ায় কয়েকটা অটোরিক্সা ঝিমোচ্ছিল। পুলিশ মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে গেল। সজোরে কান টেনে ধরে পেছনে পটাপট ডাণ্ডা। মার খেয়ে মুখ নিচু করে হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে গেল সবাই। বিল্টু স্বপন রাজু নিমাই।
দৃশ্যটা চোখে পড়তেই মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লেন ডলি মাসিমা। পাড়ার লোক ডাকে দজ্জাল মাসিমা। নাতনী সুসির হাত ধরে পাড়ার সরু রাস্তাটা পার হচ্ছিলেন। হাত ঝাঁকিয়ে সুসি বলল, ‘থামলে কেন দিদা। হাঁ-করে কী দেখছ?’
– থামতো। খুব পটর পটর হয়েছে তোর!
মুখ বেঁকাল সুসি। এবারের নতুন ভোটার। ইদানীং সেয়ানা হয়েছে খুব। থানার বড় বাবুর সাথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে ঝগড়া করেছে। বাবা-মা দাদু-দিদার কথা ফুতকারে উড়িয়ে মিছিল মিটিং করেছে ভোটের আগে। তবে গলা ফাটিয়েও ওর দলকে জেতাতে পারেনি।
সুসির মুখের দিকে তাকিয়ে নাকের উপর মাস্কটা আরেকটু চেপে বসিয়ে নিলেন মাসিমা। সুসির কথার উত্তরে বললেন, ‘ওদের দেখছি।‘
– পুলেশ দেখছো? এক ঝটকায় বাজারটা কেমন খালি করে দিল! ওরা সব পারে।
– পারে না ছাই!
– কেন, আর কী করবে?
– ভোটের আগে নেতা-মন্ত্রীদের মিছিল বন্ধ করেছে?
– কেন করবে? দেশের জন্য ভোটতো দরকার, দিদা!
– রাখ্ তোর ভোট। ওটার জন্যই ভিড়, মিটিং মিছিল। রোগটা ছড়িয়ে দিল।
– তো পুলিশ কি ভোট বন্ধ করবে?
– না পারুক। নেতাদের কানটা তো একবার ধরতে পারতো!
– কী যে বল! ধরলে কী হতো?
– অটো চেপে বাড়ি ফিরতাম। দুপুর রোদে নাকমুখ ঢেকে ভারি ব্যাগ বইতে হত না।